#পূর্ণিমাতিথিপর্ব-৫২

0
844

#পূর্ণিমাতিথিপর্ব-৫২
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

তুই নিজের লাইফে মুভ অন করেছিস এটা দেখার পর নিজেকে অনেকটা হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে একটা অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেলাম। তুই ভাবির সাথে ভালো আছিস, সুখে আছিস এটা জানার পর আমাদের থেকে বেশি খুশি হয়তো কেউ হয়নি। এতোদিন ধরে একটা অপরাধবোধ আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। মনে হতো আমাদের জন্যই তোর লাইফটা এমন হয়ে গেছে। তুই তো প্রথমে অরির সাথে রিলেশনে যেতে চাসনি। আমাদের জন্যই রাজী হয়েছিলি। তুই যদি লাইফে কোনো দিন মুভ অন না করতি। তাহলে হয়তো আমরা নিজেদের কোনো দিন ক্ষমা করতে পারতাম না।

রুদ্র হাত দিয়ে নাইম ভাইয়াকে থামিয়ে দিল।

চুপ কর। এসব পুরোনো কথা না টানাই ভালো। আমি আমার লাইফে অনেক হ্যাপি আছি। তবে আমি অরির কাছেও কৃতজ্ঞ এবং তোদের কাছেও কৃতজ্ঞ। অরি যদি আমাকে ছেড়ে না চলে যেতো তাহলে হয়তো আমি রিয়ার মতো কাউকে নিজের জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পেতাম না। তোরা তো আমার ভালোর জন্যই বলছিলি। তোরা কী আর জানতি অরি এমন টাইপ মেয়ে। আমি আমার লাইফ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। রিয়ার মতো কাউকে নিজের লাইফ পার্টনার পাওয়ার পর কেউই আর খারাপ থাকতে পারে না। জীবনে হয়তো কোনো ভালো কাজ করেছিলাম তার বিনিময়ে হয়তো রিয়াকে পেয়েছি। মেয়েটা আমাকে ছাড়া কিছু বুঝে না। তার সব ভালো লাগা খারাপ লাগা আমাকে ঘিরেই।

ইলান ভাইয়া একটু আগ্রহী হয়ে বলেন, তোকে আমি প্রশ্নটা আগেও জিঙ্গেস করেছিলাম। আজকে আবার জিঙ্গেস করছি। তুই কী রিয়াকে ভালোবাসিস?

ভালোবাসা রং বদলায়। সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসা কমে যায় বা বেড়ে যায়। বাট সি ইজ মাই লাইফ। এই যে বুকের বা পাশটা দেখতে পাচ্ছিস। এখানে সবটা জুড়েই ওর বসবাস। রিয়া আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে। ওকে ছাড়া আমার পক্ষে বাঁচা সম্ভব না। জানিস ওর চোখের এক ফোটা অশ্রু আমি সহ্য করতে পারি না। ওর অশ্রুতে টই টম্ভুর চোখ দুটো দেখলে বুকের বা পাশে চিন চিন ব্যথা হয়। ওর চোখ থেকে এক ফোটা অশ্রু যদি আমার জন্য গড়িয়ে পড়ে তাহলে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।

এনাম ভাইয়া আলতো হেসে বলেন, ইলান আমাদের বন্ধু ভাবির প্রেমে মজনু হয়ে গেছে। এই যুগের মজনু ড. আরাফ আয়মান রুদ্র। এই শহরের প্রতিটি বিল বোর্ডে আমি লিখে দিব এই যুগের মজনু ড. আরাফ আয়মান রুদ্র শুধু রিয়ার।

আমি আমার ওখানে দাঁড়ালাম না। দ্রুত পা চালিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে এলাম। সোফায় এসে বসতে না বসতেই আমার ফোনটা বেজে ওঠলো। ফোনটা আর কেউ নয় ত্রয়ীই করেছে। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্নার শব্দ আমার কর্ণগোচর হলো। আমি অস্থির হয়ে বলে ওঠলাম,

এই ত্রয়ী কী হয়েছে? তুই কাঁদছিস কেনো? বল আমাকে।

ঐ রিয়া।

কী?

আজকে আমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসছে। আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করবো না।

গাধা মেয়ে দেখতে আসলেই কী বিয়ে হয়ে যাবে? ওরা তো যাস্ট তোকে দেখতে আসছে। পছন্দের একটা ব্যাপার স্যাপার আছে না। তোকে ওদের পছন্দ হলে পরে তো বিয়ের কথা। তোদেরও তো পাত্র পছন্দ হতে হবে।

আমি এতকিছু বুঝি না। পাত্রপক্ষ আমাকে দেখতে আসলে আমি সুইসাইড করবো।

কথাটা বলেই ত্রয়ী কল কেটে দিল। আমি ত্রয়ীকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বার বার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। এখন আমার টেনশন হচ্ছে। ত্রয়ী যা জেদী মেয়ে। জেদের বশে কিছু করে না বসে। আন্টি ফোন দিচ্ছে। আমি ফোনটা রিসিভ করলাম।

আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

ওয়ালাইকুম আসসালাম মামুনি। কেমন আছো তুমি?

এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আন্টি আপনি কেমন আছেন?

আছি এক রকম মা। এই পাগল মেয়েকে নিয়ে কী আর ভালো থাকা যায়। মেয়েটা আমার একটা কথাও শুনে না।

আমি বিষয়টা জানি তবু না জানার ভাণ করে জিঙ্গেস করলাম,

কী হয়েছে আন্টি? কোনো সমস্যা।

আর বলো না ত্রয়ীর জন্য একটা ভালো বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলেটা ডক্টর। তুমি হয়তো চিনবে। তোমাদের মেডিক্যালেরই ডক্টর। ছেলেটার নাম ইফাদ। কিন্তু মেয়ে আমার এখন কিছুতেই বিয়ে করবে না। আমি বললাম তোকে এখন বিয়ে করতে তো আমরা বলছি না। তুই পাত্রপক্ষের সামনে যা। ছেলেটাকে দেখ। যদি পছন্দ না হয় আমাদের বলে দিবি। আমরা উনাদের না করে দিব। আমরা তো আর তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ছেলেটার সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিব না। কিন্তু মেয়ে তো আর আমার কথা শোনার পাত্রী না। ওর এক কথা না এখন বিয়ে করবে আর না পাত্রপক্ষের সামনে যাবে। রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। তুমি একটু এসে ত্রয়ীকে বুঝাও। জানি এখন তোমার বিয়ে হয়ে গেছে এভাবে হুট হাট শ্বশুরবাড়ি থেকে আসা যায় না। কিন্তু আমি নিরুপায় হয়ে তোমাকে ফোন করেছি। ও যদি এখন বিয়ে করতে না চায় তাহলে আমরাও বিয়ে দিব না। কিন্তু পাত্রপক্ষের সামনে না গেলে আমাদের মান-সম্মান থাকবে না।

আমি হাসিমুখে বললাম, আন্টি এটা আমার শ্বশুরবাড়ি না আমার খালামনির বাড়ি। যখন তখন যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারি।

আচ্ছা তাহলে তুমি আসো।

জ্বী আন্টি আমি আসছি।

ফোনটা রেখে আমি মামুনিকে উদ্দেশ্য করে বললাম, মামুনি আমি একটু ত্রয়ীদের বাসায় যাচ্ছি।

রুদ্রকে সাথে নিয়ে যা। রুদ্র না গেলে ড্রাইভার নিয়ে যাবি। রিক্সা করে যাওয়ার একদম চেষ্টা করবি না আর সাবধানে যাবি।

আচ্ছা।

__________________

আমি দ্রুত রুমে চলে আসলাম। এনাম ভাইয়া, ইলান ভাইয়া, নাইম ভাইয়া আর রুদ্র আড্ডা দিচ্ছে। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কাবার্ড থেকে জামাকাপড় বের করতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ড্রেস নিয়ে পিছনে ফিরতেই রুদ্রকে দৃষ্টিগোচর হল। রুদ্র আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন, তুমি কী কোথাও বের হচ্ছো?

আমি কিছু বলার আগেই ঐ পাশ থেকে নাইম ভাইয়া বলে ওঠলেন, হ্যাঁ গো মজনু তোমার লাইলি এখন বের হবে।

রুদ্র উনাদের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাল। কিন্তু এতে উনাদের কোনো হেলদুল নেই। উনারা উনাদের মতোই হাসিতে মত্ত। রুদ্র আবার আমাকে প্রশ্ন করল,

কোথায় যাবা?

ত্রয়ীদের বাসায়। ইফাদ স্যার বিয়ের প্রস্তাব পাঠাইছে ত্রয়ীদের বাসায়। ত্রয়ী রেগে গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।

চল আমি যাই।

আপনি কোথায় যাবেন?

কেনো তোমার সাথে ত্রয়ীদের বাসায়।

আপনি গেলে ব্যাপারটা কেমন দেখাবে না।

আমি কী তোমাকে একা যেতে দিব নাকি? তোমাকে আমি একদম একা ছাড়ব না। ত্রয়ীদের বাসায় না যাই তোমাকে ত্রয়ীদের বাসা পর্যন্ত ঢ্রপ করে দিয়ে আসি চল।

অহো বউয়ের প্রতি কতো প্রেম।

তিনজন একসাথে সুর মিলিয়ে বলে ওঠলো। আমি লজ্জা পেয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।

_________________

উনি শেষ পর্যন্ত আমার সাথেই আসলেন। এক ধ্যানে আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবতেই অবাক লাগে এই সুদর্শন পুরুষটা শুধু আমার। এই মায়াময় মুখশ্রী দেখার অধিকার শুধু আমার আছে আর কারো নেই। হুট করে গাড়ি থেমে যাওয়া আমার ভাবনাচ্ছেদ হলো। আমি প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাই। উনি কিছু না বলে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন মাথা থেকে উড়নাটা সরিয়ে খোপা করা চুলগুলো এক টানে খুলে ফেললেন। আমি ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনার কোনো কর্মকাণ্ডই আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

এতোদিন ধরে দুজন একসাথে থাকি। কিন্তু এতোদিনেও তোমার এই সৌন্দর্যময় চুলের হদিস পাইনি। গতরাল রাতে যদি না দেখতাম। তাহলে তো জানতেই পারতাম না আমার প্রেয়সীর চুল এতো সুন্দর।

উনার হাতের বেলি ফুলের মালাটা আমার চুলে জড়িয়ে দিলেন। ভালোবাসাময় কন্ঠে বলে ওঠলেন,

আমার এলোকেশরী কন্যা।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here