#পূর্ণিমাতিথিপর্ব-৫৩
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
এতক্ষণ আন্টির মিষ্টি কথায় হচ্ছিল সেখানে আমি এসে কিছু কলিজা জ্বলানো কথা বলতেই ত্রয়ী এসে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলে দিতেই আমি ত্রয়ীকে ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকে পড়লাম। আমার পিছন পিছন আন্টিও আসলো। আন্টি মোলায়েম গলায় বলল,
ত্রয়ী মা আমার কথাটা একটু শুন।
আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না।
আন্টি এই মেয়ে ভালো কথা শোনার মেয়ে না। মিষ্টি কথা বলেও লাভ নাই। মিষ্টি কথা বলে তো কোনো কাজ হয়নি এখন আপনার উচিত ওকে ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পড় মেরে বুঝানো ।
রিয়া তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে আমার সাথে এমন করছিস?
তুই এমন ঢং করছিস কেনো? দেখতে আসলেই কী বিয়ে হয়ে যায়? নাকি তুই নিজেকে বিশ্বের সেরা সুন্দরী মনে করিস? যে তোকে কেউ দেখতে আসলে তোকে বিয়ে না করে তোর বাসা থেকে এক পা নড়বে না।
দেখতে আসলেই কী বিয়ে হয়ে যায়? এই কথা ওপর ভরসা করেই বাংলাদেশের ৫০% মেয়ে ফেসে যায়।
আন্টি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে চলে গেলেন। উনি হয়তো বুঝে গেছেন উনার মেয়েকে বুঝানোর সাধ্য কারো নেই। আন্টি রুম থেকে চলে যেতেই আমি দুই হাত ত্রয়ীর গাল আঁকড়ে ধরলাম।
এই মেয়ে আমার দিকে তাকা আচ্ছা যা তাকাতে হবে না। আমার কথাটা তুই একটু শোন। তুই ছাড়া তোর বাবা মার আর কোনো সন্তান নেই। তুই জানিস তোর বাবা অসুস্থ। আর কতদিন বাঁচবে তার গ্যারান্টি নেই। আংকেল তোর চিন্তায় চিন্তায় আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তুই শুনলে হয়তো অবাক হবি আংকেল এর সপ্তাহ আগে আমার কাছে ফোন দিয়ে কান্না-কাটি করেছে। আংকেলের কন্দনরত গলা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। উনি বার বার একটা কথায় বলছিলেন, আজ আমার যদি কিছু হয়ে যায় আমার স্ত্রী আর মেয়েকে কে দেখবে? কে ওদের খেয়াল রাখবে? কে ওদের এই স্বার্থপর ভয়ঙ্কার সমাজ থেকে রক্ষা করবে? আমি মারা গেলেও ওদের টাকা পয়সার অভাব হবে না। আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে অনায়সে ত্রয়ী আর ত্রয়ীর মার সারা জীবন কেটে যাবে। হয়তো তোমার মনে হচ্ছে আমি মেয়েদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছি। তা কিন্তু মোটেও নয় আমাদের এই সমাজ যতই বলুক নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তা হয় না। কারণ এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। এই সমাজে মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু। একটা মেয়ে আরেকটা মেয়ের ভালো দেখতে পারে না। তোমার আন্টিই বা আর কয়দিন বেঁচে থাকবেন। একা একটা মেয়ে বেঁচে থাকা যে কতোটা কঠিন সেটা আমার মেয়ে বুঝতে পারছে না। তুমি জানো আমি যে কাজ করতাম সেই কাজে আমার শত্রুর অভাব ছিল না। এখন নেই তা কিন্তু নয়। সুযোগ পেলেই আমার পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে ওরা পিছপা হবে না। প্রতিশোধের নেশায় ওরা অন্ধ হয়ে আছে। এরকম একটা অবস্থায় নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে ফেলে রেখে যে আমি মরেও শান্তি পাব না। আমি তো ত্রয়ীকে বিয়ে দিয়ে মেয়ের জামাই না একটা ছেলে নিয়ে আসতে চাইছি। যে আমার অবর্তমানে ত্রয়ী আর ওর মায়ের খেয়াল রাখবে।
আমি ত্রয়ীর মুখটা নিজের দিকে ঘুরালাম, এখনো চুপ করে থাকবি কিছু তো বল। আংকেল তোর জন্য টেনশন করতে করতে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আংকেলকে এই সময় টেনশন মুক্ত রাখতে হবে।
ত্রয়ী কিছু বললো না বুঝলাম মৌনতা সম্মতির লক্ষণ। আমি ত্রয়ীকে কালো রঙের একটা শাড়ি পড়িয়ে দিলাম। ত্রয়ীকে হালকা করে সাজিয়ে দিলাম। এর মাঝে আন্টি একবার এসে দেখে গেছে। ত্রয়ীকে রেডী হতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। কিছুক্ষণ পর আন্টি এসে বলল উনারা চলে এসেছেন। আর ত্রয়ীকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
আমি ত্রয়ীকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে এলাম। ত্রয়ী মাথা নিচু করে আছে। মাথা নিচু রেখেই সালাম দিল। আমি ত্রয়ীকে সোফায় বসিয়ে দিলাম। হুট করে ত্রয়ী সামনে তাকাল বসা থেকে ওঠে দাঁড়াল। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না ত্রয়ী ইফাদ স্যারকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেছে। ত্রয়ী ইফাদ স্যার আর আমার দিকে একবার তাকিয়ে হন হন করে ড্রয়িংরুম ত্যাগ করলো। আমিও সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে ত্রয়ীর পিছনে দৌড় দিলাম। ত্রয়ী বিছানায় উল্টো ঘুরে বসে আছে। আমি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললাম,
এসবের মানে কী ত্রয়ী? তুই এভাবে চলে এলি কেনো? এটা কোন ধরনের অসভ্যতামো?
ত্রয়ী আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো আমাকে প্রশ্ন করে বসলো, তুই সবকিছু আগে থেকেই জানতি তাই না? তুই জানতি ইফাদ স্যার আমাকে দেখতে আসছে?
আমি ত্রয়ীর প্রশ্নের কী জবাব দিব ভেবে পাচ্ছি না। মিথ্যা বলেও লাভ নেই। আমতা আমতা করে বললাম, হ্যাঁ।
আমার হ্যাঁ বলতে দেরি হলেও ত্রয়ীর আমার ওপর ঝাপিয়ে পড়তে দেরি হলো না। ত্রয়ী আমার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলে, তুই আমার সাথে এটা কী করে করতে পারলি? আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে আমার সাথে এমন বেঈমানি করতে পারলি।
ওর কোনো দোষ নেই। যা করার আমি করেছি।
ইফাদ স্যারের কন্ঠসর কর্ণগোচর হতেই ত্রয়ী তড়িৎ গতিতে উল্টো ঘুরে গেল। আমি পিছন
ফিরে তাকালাম। ত্রয়ী শক্ত গলায় বলে,
আপনি এখান থেকে চলে যান। আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না। আপনি এখান থেকে চলে যান।
আমি তোমার সাথে আলাদা করে কিছু কথা বলতে চাই।
আমি চলে আসতে নিলেই ত্রয়ী আমার হাত ধরে আটকে দিল। ত্রয়ী আমার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে, খবরদার তুই যদি এখান থেকে এক পা নড়িস তোর পা ভেঙে আমি ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিব।
রিয়া তুমি থাক। তোমার সামনেই বলতে আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি কী দেখতেই এতোটা খারাপ যে আমাকে ভালোবাসা যায় না? আমার ভালোবাসাটা হয়তো কোনোদিন তোমার সামনে প্রকাশ করা হয়নি। আমার ভালোবাসার গভীরতা মাপার ক্ষমতা তোমার নেই। তোমার যদি আমার প্রফেশন নিয়ে প্রবলেম হয়। তাহলে আমি ছেড়ে দিব আমার প্রফেশন। তোমার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি। আর যদি প্রবলেমটা আমাকে নিয়ে হয়ে তাহলে আমাকে না হয় নিজের মতো করে গড়ে নিয়ো। আর না হয় আমিই তোমার মনের মতো হয়ে ওঠবো। আমাকে দুইটা মাস সময় দাও। তুমি যখন কিছু বলছো না তখন আমি মৌনতাকেই সম্মতির লক্ষণ ধরে নিলাম। আসি। ভালো থেকো।
__________________
আমি রুমে আসতেই উনি ধাক্কা দিয়ে আমাকে বিছানায় ফেলে দিলেন। আমাকে ফেলে দিয়ে নিজেও আমার পাশে শুয়ে পড়লেন।
কী করছেন কী আপনি?
হুসস। নো মোর টক। তোমার সবার দিকেই খেয়াল আছে শুধু আমার দিকেই নেই। সারাদিনে একবারও তোমার এই রুদ্র নামক ব্যক্তিটার কথা মনে পড়ে না তাই না?
আপনাকে ভুলে গেলাম কবে যে আপনার কথা মনে পড়বে?
মাঝে মাঝে তো ভুলেই যাও যে তোমার একটা বর আছে। যে চাতক পাখির ন্যায় তোমার অপেক্ষায় বসে থাকে।
তিনি আমার গালে আলতো করে আঙ্গুল ছুঁয়ে দিতে দিতে কথাগুলো বললেন। উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আরেকটু কাছে টেনে নিলেন। আমার গলায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলেন। আমি উনার শার্ট খামছে ধরলাম।
________________
রুদ্র শুধু রিসেপশনের কথা বলতেই সেই কথার ঘোর বিরোধীতা করলেন এনাম ভাইয়া আর নাইম ভাইয়া। উনাদের মতে রুদ্র বিয়েতে কেউ উপস্থিত থাকতে পারেনি তাই বিয়ের সকল অনুষ্ঠানই করা হবে। অনুষ্ঠান হিসেবে সিলেক্ট করা হয়েছে শহর থেকে অদূরে নাইম ভাইয়াদের বিলাশ বহুল দাদার বাড়ি। নাইম ভাইয়ারা সপরিবারে দেশের বাইরে থাকে। তাই ঐ বাসা খালিই পড়ে আছে।
চলবে…………
[গল্পটি ভালো লাগলে অবশ্যই আমার এই পেইজটিতে লাইক করবেন, তাহলে পরের সব পর্বগুলো সবার আগে পাবেন।]