ভালোবাসার সংসার পর্বঃ০৯

0
359

#ভালোবাসার_সংসার
#পর্বঃ০৯
#ফারজানা

সারাদিন কেটে গিয়ে সন্ধ্যে নেমে এসেছে।কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই তিন বাবা-ছেলের।সেই ঘটনার পর থেকেই আকস্মিকভাবে লা’পা’ত্তা তারা।সায়রার, এমনকি বাড়ির আশেপাশেও এই কয়েকঘন্টার একবারের জন্যও দেখা যায়নি তাদের।আশ্চর্যজনক বিষয় হলো যে জুলেখা কখনো একমুহূর্তের জন্যও সায়রাকে নিজের চোখের আড়াল করেনা আজ সেও প্রায় দুঘন্টার মতো লা’পা’ত্তা ছিলো।ফিরে এসেও সায়রাকে কিছু না বলেই ঘরের দরজা, জানালা সমস্ত কিছু বন্ধ করে দিয়েছে।সবকিছু মিলিয়ে কেমন একটা রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছে সায়রা।তিন বাবা-ছেলে মিলে আবারও কিছু একটা ঘো’ট পাকাচ্ছে আর এবার তাদের সঙ্গী হয়েছে জুলেখা।এরা সকলে মিলে কি করতে চাইছে তা জানতে তার মনটাও বড্ডো আনচান করছে।

কথাগুলো ভেবেই সায়রা তাকালো জুলেখার দিকে যে এখন নির্বিকারচিত্তে বসে আছে তার সামনে।তেল মালিশ করে দিচ্ছে তার হালকা ফুরে যাওয়া পায়ে।অসুস্থতার জন্য অসময়েই পায়ে পানি এসে গিয়েছে তার।ব্য’থাও হয মাঝেমধ্যে।তাই প্রায়দিনই এভাবেই তার পায়ে তেল মালিশ করে দেয়ে মেয়েটা তার ব্যথা উপশমের জন্য।এই অল্প পরিচিত মেয়েটা খুব অল্প সময়েই অনেকটা আপন হয়ে উঠেছে তার।কতোটা যত্ন করে তাকে।বয়সে তার থেকে অনেক ছোটো হওয়া সত্ত্বেও একদম বড়ো বোনের মতো আগলে রাখে তাকে।সায়রাও প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটাকে।সে তো ঠিক করেই রেখেছিলো তার কিছু হয়ে যাবার আগেই মেয়েটার জন্য একটা নির্ভরযোগ্য সুব্যবস্হা সে করেই দেবে।আর এখন তো আলভি চলেই এসেছে আলভিই ওকে দেখে রাখতে পারবে।..আলতো করে জুলেখার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো সায়রা।সায়রার স্পর্শে তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিলো জুলেখা।সেদিকে তাকিয়ে সায়রা হাসিমুখে নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস কললো,,,

–“হ্যাঁ রে! ওই তিন বাপ-ছেলে কোথায় রে?জানিস তুই?অনেকক্ষণ হয়ে গেলো দেখতে পাচ্ছিনা।”

সায়রার প্রশ্নের জবাবে আমতা’আমতা করে জুলেখা কিছু বলতে নিতেই কাঠের দেরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো।আওয়াজ শুনে জুলেখাও দরজার দিকে দিলো একদৌঁড়।সায়রা আলতো হাসিমুখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।

*************

সায়রা দাঁড়িয়ে আছে বরই গাছতলায়।জায়গাটি প্রতিদিনের মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন নয় বরংচ ছোটো ছোটো রঙবেরঙের ঝাড়বাতির আলোয় আলোকিত।বরই গাছটিতেও এসেছে পরিবর্তন। গাছের ডালে ডালে সুতো বেঁধে ঝুলানো হয়েছে নানা রঙের হাতে লেখা চিরকুট।সায়রা হালকা উঁচু হয়ে হাত বাড়িয়ে একটা চিরকুট হাতে তুলে নিলো। তার মধ্যে এবড়োথেবড়োভাবে লেখা আছে,,,

“অনেক ভালোবাসি আম্মু”

চিরকুটটা দেখতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো সায়রার।হাত বাড়িয়ে আরও কয়েকটা চিরকুট একসাথে তুলে নিলো সে।একটার পর একটা দেখতে লাগলো।

“ফিরে এসোনা মামনি প্লিজ।”
“We are sorry ammu”
“ভালোবাসি মায়াপরী”
“কান ধরছি তো সোনা,এবার অন্তত হাসো,নইলে আমার মেয়েটা তো তোমার মতো গোমড়ামুখো হবে”
“আর পারছিনা তোমায় ছাড়া থাকতে।”

চিরকুটগুলো বুকে জড়িয়ে নিলো সায়রা।প্রচন্ড আনন্দ হচ্ছে তার।প্রচ্ছন্ন ভালোলাগায় হৃদয়টা ছেঁয়ে গেছে।চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখতে পেলো ঘরটাকে কেন্দ্র করে একটার পর একটা গাছের সাথে সুতো বেঁধে বৃত্তকার একটা জায়গা বানানো হয়েছে।ঝাড়বাতিও টানানো হয়েছে।সুতোর সাথে এখানে-সেখানে নানা রঙের কাগজও লাগানো হয়েছে।কোনোটিতে লেখা আছে সায়রার প্রতি মানুষগুলোর ভালোবাসার কথা, তাদের কাছে ফিরে পাবার আকুতি।সায়রা কাগজগুলো আলতো হাতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলো সায়রা।কিছুটা সামনে এগোতেই দেখতে পেলো কিছু ইট জড়ো করে মাঝখানের একটা জায়গা বেশ উঁচু জায়গা তৈরি করা হয়েছে।আর তার উপরে রাখা আছে তিনটে ছোটো ছোটো কাঁচের বল।আস্তে আস্তে সেদিকে এগোতেই দেখতে পেলো তিনটে বলের ভিতরে রাখা আছে তিনটে ভাঁজ করে রাখা চিরকুট।মি’ষ্টি একটা হাসির রেখা মুখে নিয়েই হাতের চিরকুটগুলো পাশে রেখে কাঁচের বল থেকে একটা চিরকুট তুলে নিলো সায়রা,,,

–“মামনি!!অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে।তুমি তো জানো বলো?তবুও কেনো চলে এলে আমাদের ছেড়ে?..রোজ তোমাকে কতো খুঁজতাম আমরা জানো।বাবা অফিস থেকে এলে আমরা তিনজন মিলে অনেক রাত অব্দি রাস্তায় রাস্তায় তোমাকে খুঁজতাম, কিন্তু খুঁজেই পেতামনা।বাবাকে অনেক ব’কা দিতাম তখন কেনো তোমাকে খুঁজে আনেনা আমাদের কাছে।বাবার সাথে রা’গ করে থাকতাম, আবার বাবাকে জড়িয়ে ধরেই কাঁ’দ’তা’ম তুমি ছিলেনা জন্য।..আল্লাহর কাছে অনেক অনেক প্রে করতাম।তুমিই তো আমাদের শিখিয়েছিলে না যে গুড বয় হয়ে থাকলে, কোনো দুষ্টুমি না করলে, আল্লাহ’র কাছে আমরা যা চাইবো আল্লাহ আমাদের তাই দেবেন।তাই আমরা কোনো দুষ্টুমি করতামনা। একেবারে গুডবয় হয়ে আল্লাহ’র কাছে শুধু তোমাকে চাইতাম।আর দেখো আল্লাহ আমাদের প্রে রেখেছেন।তোমাকে আমাদের খুঁজে দিয়েছেন।..তুমি আমাদের সাথে চলো মামনি!তুমি দেখো আমরা অনেক গুডবয় হয়ে থাকবো।একদম কোনো দুষ্টুমি করবোনা।সাইরিফকেও দুষ্টুমি করতে দেবোনা।তাহলে তুমি যাবে তো মামনি আমাদের সাথে?
ইতি
~আদনান~”

–“আম্মু, তুমি আমার উপর খু–ব রা’গ করে আছো তাইনা?আমি তোমার কথা শুনিনি।খুব দুষ্টুমি করেছি, জ্বা’লা’ত’ন করেছি তোমাকে।পঁচা পঁচা কথাও বলেছি।তোমাকে চলে যেতেও বলেছিলাম।তাই বুঝি তুমি আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে এসেছো?..আর যেতে চাইছোনা আমাদের কাছে?..আই এম ভেরি ভেরি সরি আম্মু। আমি আর কোনোদিন এরকম করবোনা দেখো তুমি।তুমি আর রাগ করে থেকোনা।..জানো আম্মু,, তুমি যখন ছিলেনা তখন না আমার, আদনানের খুব ক’ষ্ট হতো।তুমি না খাইয়ে দিলে তো আমরা কখনো খেতামনা তাই তুমিও ছিলেনা আর আমরাও খেতে পারতামনা।তুমি পাশে থাকতেনা বলে ঘুমও আসতোনা।কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগতোনা।দুষ্টুমি করতেও ভালো লাগতোনা।শুধু তোমার কথাই মনে পড়তো।জানো,, তুমি আমাদের কাছে ছিলেনাতো তাই তোমার ছবি, শাড়ি এগুলো জড়িয়ে ধরে থাকতাম আমরা।যদি তোমাকে খুঁজে পাই, কিন্তু পেতামনা।একদম পেতামনা।খুব খুব কাঁ’দ’তা’ম তখন।বাবাও না আমাদের সাথে সাথে খু–ব কাঁ’দ’তো।

আম্মু,, ফিরে চলোনা আমাদের সাথে।তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারবোনা আমরা।ম’রে’ই যাবো।..যাবে আম্মু আমাদের সাথে?তোমার কাছে থাকা আমাদের ছোট্ট বোনকে নিয়ে?..প্লিজ আম্মু..প্লিজ!!
ইতি,,,
~সাইরিফ~”

বাচ্চাদের হাতে লিখা চিরকুট দুটো পড়ে চোখ পানিতে ভরে এসেছে সায়রার।ইশ!..তার সোনামানিকেরা কতোটা কষ্টই না পেয়েছে।তখন অবুঝের মতো অভিমান করে কেনো চলে এলো সে সেটা ভেবেই এখন প্রচন্ড আ’ফ’সো’স হচ্ছে তার।কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে ছেলেদের ক’ষ্টে’র সময়ের কথা ভেবে।তিন নাম্বার বলটা থেকে কাঁপা হাতে ভাঁজ করা চিরকুটটা বের করলো সায়রা,,,

–“মায়াবিনী!! রা’গ করে আছো আমার উপর?নাকি অভিমান জমিয়ে জমিয়ে প্রকান্ড পাহাড় গড়ে তুলেছো?দূরে সরে যেতে চাইছো আমার থেকে, আমাদের থেকে?কেনো গো?শা’স্তি দিতে বুঝি?..হ্যাঁ শাস্তিই তো। কারণ তুমি তো জানতে তোমাকে ছাড়া আমরা তিনটে মানুষ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বো। বিষাদের নীল য’ন্ত্র’ণা আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে, একেবারে শেষ করে দেবে।অসহনীয় য’ন্ত্র’ণা’র বি’ষা’ক্ত তী’র ক্রমাগত হৃদয়কে র’ক্তা’ক্ত করে তুলবে।আমরা না জানলেও, না বুঝলেও তুমি সেটা খুব ভালো করেই জানতে।তাই বুঝি য’ন্ত্র’ণা’র আঘাতে জর্জরিত করে একেবারে নিঃশেষ করে দেবার প্রয়াসেই এরকমটা করলে তুমি?একবারও ভাবলেনা আমার কথা, আমাদের ছেলেদের কথা।তোমাকে ছাড়া ওই ছোট্ট দুটো প্রাণ যে কতোটা কষ্টে ছিলো তা যদি তুমি দেখতে!ছেলেদুটো ঠিকমতো খেতোনা, ঘুমোতনা।অসম্ভব চঞ্চল ছেলেদুটো একেবারে নিষ্প্রাণ হয়ে গেছিলো।বাবা হয়ে ছেলেদুটোর করুণ কান্না নিজের চোখে দেখে নিজেকে অমানুষ বলে মনে হতো।শুধু ভাবতাম কেনো তোমার সঙ্গে ওমন করেছিলাম আমি?আমিতো এমন ছিলামনা।তোমাকে ছাড়া আমি তো কিছুই বুঝতামনা, এখনও বুঝিনা।এই কয়েকমাসের দূরত্বে আমি উপলব্ধি করেছি তুমি ছাড়া আমি কিছুই না, পুরোপুরি অস্তিত্বহীন নির্জীব একটা মানুষ।তোমাকে বলেছিলাম আমাকে মুক্তি দিতে, আমার থেকে দূরে সরে গিয়ে আমাকে শান্তি দিতে।কিন্তু বিশ্বাস করো সত্যি সত্যিই যখন তুমি চলে এলে আমায় ছেড়ে আমি যেনো কেমন হয়ে গেলাম।পাগল পাগল লাগতো আমার।চারিদিকে শুধু তোমায় খুঁজতাম।বিছানার বা পাশের জায়গাটিতে তোমায় না পেয়ে অস্হির অস্হির লাগতো।বুকটা চিনচিনে ব্য’থায় জর্জরিত হতো।মনে হতো এই য’ন্ত্র’ণা’র চেয়ে মৃ’ত্যু য’ন্ত্র’ণা’ও বোধহয় কম হবে।একটা জীবন্ত লা’শ হয়ে বেঁচেছিলাম আমি ওই কয়েকটা মাস।…মায়াপরী!ফিরে চলোনা গো আমাদের সাথে।এবারের ক্ষমা করে দেওনা আমায়।আর কোনোদিন তোমায় কোনো কষ্ট পেতো দেবোনা প্রমিস করছি।শত ব্যস্ততা থাকলেও আমাদের মধ্যে আর কখনো কোনো দূরত্ব আমি আসতেই দেবোনা তুমি দেখো।..তোমার কোমল হাতের শীতল স্পর্শে আমার হৃদয়ের উত্তপ্ততা বিলীন করে দিয়ে আমায় বাঁচাও মায়াপরী।তোমার আদর, ভালোবাসায় জড়িয়ে নেও ছেলেদুটোকে।আগের মতো করে দাও আমায়, আমার ছেলেদেরকে।..প্লিজ মায়াপরী!!আমায়, তোমার আদরের ছেলেদের বাঁচানোর জন্য হলেও ফিরে চলো।তোমায় ছাড়া আর একমুহূর্তও আমরা বাঁচতে পারবোনা বিশ্বাস করো।অনেক প্রতীক্ষার পরে তোমায় খুঁজে পেয়ে আবার হারিয়ে ফেললে এবার মরেই যাবো।

প্লিজ ফিরে এসো আমার মায়াপরী। তোমার যাদুকাঠির ছোঁয়ায় আবার আমাদের জীবনটা ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দাও।..প্লিজ!!

ইতি
~তোমার আলভি~”

চিরকুটগুলো হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে আছে সায়রা।কী এক নীল বেদনার অনুভূতি তাকে গ্রাস করেছে তা সে নিজেও জানেনা।দম বন্ধ লাগছে তার।বুকটা প্রচন্ড গতিতে ঢিপঢিপ করে চলেছে।মনে হচ্ছে তার হৃদয়ে কেউ ক্রমাগত ছুরি চালাচ্ছে।সারা শরীরে যেনো বি’ষা’ক্ত তীরের ফলা গেঁথে রয়েছে।তিনটে মানুষের অব্যক্ত কথাগুলো পাগল করে দিচ্ছে তাকে।চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছে।বাঁশপাতার ন্যয় কম্পমান শরীরটা নিয়ে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা সে।মাথাটা য’ন্ত্র’ণা’য় ফেটে যাচ্ছে। চিৎকার করে কাঁদতে চাইছে কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দই বেড়োচ্ছেনা তার।

জুলেখা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পেরে তার গায়ে নিজের সমস্ত ভার ছেড়ে দিলো সায়রা।জুলেখাও তৎক্ষনাৎ আগলে ধরলো তাকে।জুলেখাকে আঁকড়ে ধরে সামনের দিকে তাকাতেই দেখতো পেলো তার প্রিয় মানুষ তিনটি একসাথে এগিয়ে আসছে তার দিকে।তাদের হাতে ধরে রাখা আছে তিনটে প্ল্যাকার্ড।মানুষগুলো একদম সামনে এসে উপস্থিত হতেই প্ল্যাকার্ডগুলোর লিখা স্পষ্ট হয়ে উঠলো সায়রার চোখে,,

–” We are really very sorry…Please come back to our life… We love you very very very much”

আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা সায়রা।চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।চিৎকার করে কেঁদে হৃদয়ে জমে থাকা সমস্ত ক’ষ্ট-য’ন্ত্র’ণা বের করে দিতে চাইলো।সায়রার কান্না শুনতেই হাতের প্ল্যাকার্ড ফেলে দৌড়ে এলো তিন বাবা-ছেলে।জুলেখার থেকে সায়রাকে ছাড়িয়ে নিজের বুকে আগলে নিলো আলভি।সাইরিফ, আদনানও তাদের ছোটো ছোটো হাত দিয়ে দুপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো তাকে। প্রিয় মানুষগুলোর ছোঁয়া পেয়ে সায়রার কান্না আরও বেড়ে গেলো।আলভির বুকের কাছের পাঞ্জাবীর অংশটুকু দুহাত দিয়ে শক্ত করে খাঁ’ম’চে ধরে নিজের য’ন্ত্র’ণা’গুলো বিসর্জন দিতে লাগলো।সায়রার খাঁ’ম’চি’তে ব্য’থা লাগলেও টু শব্দটি করলোনা আলভি।স্নিগ্ধ এক প্রশান্তিতে তার হৃদয়টা ভরে গেলো।তার চোখ বেয়েও পানি গড়িয়ে পড়ছে।তবে তার কান্নাটা বি’ষা’দে’র নয় প্রশান্তির, প্রিয় মানুষটিকে কাছে পাবার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ।

কতোটা সময় যে কেটে গেলো তার কোনো হিসেব নেই মানুষগুলোর।সায়রা এখনো কেঁদে চলেছে।তার কান্না বিন্দুমাত্র থামারও নাম নিচ্ছেনা।এভাবে কাঁদতে থাকলে যে শরীর খারাপ করবে মেয়েটার ভেবেই সায়রার মুখটা নিজের বুক থেকে তুলে দুহাতে নিলো আলভি।কেঁদে কেঁদে ফর্সা মুখশ্রী টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করেছে।চোখদুটো ফুলে গেছে।সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে।আলভি এক গভীর ভালোবাসামাখা স্পর্শ এঁকে দিলো সায়রার কপালে।আবেশে চোখ বুজে নিলো সায়রা।চোখের কার্নিশে জমে থাকা পানিগুলো গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। আবার চোখ মেলে আলভির দিকে তাকালো সায়রা।মানুষটার চোখও পানিতে টলটল করছে।শুভ্র মুখশ্রী কেমন একটা ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে।নিজেকে শক্ত করে নিলো সায়রা।আলভির পাঞ্জাবির কলার ধরে হাঁপিয়ে ওঠা কন্ঠে বললো,,,

–“ফি.ফিরে যাও প্লিজ।..ও..ওদের নিয়ে এখান থেকে চ..চলে যাও।”

অবাক হয়ে সায়রার দিকে তাকিয়ে রইলো আলভি যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।শান্ত, ধীরস্থির কন্ঠে বললো,,,

–“এখনো এ কথা বলছো?”

আলভির কথায় আবারও ঝরঝরিযে কেঁদে ফেললো সায়রা।আলভির কলার ছেড়ে দিয়ে তার হাত আঁকড়ে ধরলো।ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো ঘরের দিকে।আলভিও যন্ত্রচালিত মানুষের মতো সায়রার সাথে সাথে চললো।বারান্দা পেরিয়ে নিজের রুমে এসে থামলো সায়রা।বড়ো বড়ো শ্বাস নিতে লাগলো।এটুকু আসতেই হাঁপিয়ে উঠেছে সে।তা দেখে আলভি পেছন থেকে পুনরায় আগলে নিলো তাকে।কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকার পরে কাঁপা কন্ঠে আলভিকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,

–“আ..আমাকে একটু ওই আলমারিটার কাছে নিয়ে চলো।”

রুমের এককোনায় রাখা কাঠের আলমারির দিকে নির্দেশ করে সায়রা বললো।আলভিও বিনাপ্রশ্নবানে খুবই ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে যেতে লাগলো সেদিকে।সায়রার শরীর প্রচন্ড পরিমাণে কাঁপছে।মাথার মধ্যে কেউ যেনো হাঁতুড়ি পেটাচ্ছে।একা একা চলার ক্ষমতা হারিয়েছে সে।এরপর কি হবে?আলভি, সাইরিফ, আদনানের কি অবস্হা হবে?ভাবতেই বুক কেঁপে উঠছে তার।

আলমারির সামনে এসে দাঁড়াতেই আলভির দিকে একবার তাকিয়ে আলমারির পাল্লাটা খুললো সায়রা।ড্রয়ার খুলে বের করে আনলো একটা কাগজ।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কাঁপা হাতে কাগজটি বাড়িয়ে দিলো আলভির দিকে।আলভিও তাকিয়ে আছে কাগজটির দিকে। কেনো যেনো ভয় হচ্ছে তার।বুকটা কাঁপছে ভয়ে।চোখ তুলে সায়রার দিতে তাকালো আলভি।কিন্তু সেই চোখ বড্ডো নিষ্প্রাণ। বড়ো করে একটা শ্বাস নিয়ে সায়রার হাত থেকে কাগজটি নিলো আলভি।কারো হসপিটালের রিপোর্ট।পেশেন্টের নামের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সায়রার নাম লেখা।ভিতরের লেখার দিকে ভালোভাবে তাকাতেই দুনিয়া ওলোট-পালোট হয়ে গেলো আলভির। যেখানে বড়ো বড়ো করে লেখা,,,

–“POSITIVE ”

অর্থাৎ সায়রার ব্রেইন টি’উ’মা’র হয়েছে..

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here