#পথান্তরে_প্রিয়দর্শিনী পর্বঃ পনেরো
#মম_সাহা
নতুন একটি দিনের আবির্ভাব ঘটলো। সময়টা ঠিক সুন্দর, স্বচ্ছ সকালের পরের ভাগ। মায়া নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদের গ্রিল ধরে। আজ তার ভেতর চাঞ্চল্যতা নেই। কেমন নিষ্প্রাণ তার দৃষ্টি। চোখেরা আজ ভাষাহীন। তন্মধ্যেই পাশের ছাদে লম্বাটে ছেলেটা হাজির হয়। কোঁকড়ানো চুল গুলো এলোমেলো, ঢিলেঢালা শার্ট জড়ানো শরীরে। মুখে একটা কৌতুক হাসি বিদ্যমান। সেই হাসিটা বজায় রেখেই সে তাদের ছাঁদের কার্নিশ ঘেষে দাঁড়ালো। একদম মায়ার সম্মুখে।
মায়ার ধ্যান ভাঙলো না, নির্জীব দৃষ্টি উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ হলো না। পেট ফেটে বেরিয়ে এলো না মজার কোনো বাক্য।
মায়ার আচরণে ভ্রু কুঁচকায় ছেলেটা। অদ্ভুত কণ্ঠে বিষ্ময় প্রকাশ করে বলে,
“কিরে,তোর ধ্যান কোথায় আজ? হা করে আকাশে তাকিয়ে রইলি যে? কোনো জরুরি কিছু দেখাচ্ছে নাকি আকাশে? সেটা না দেখলে কী তোর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে?”
মায়ার ধ্যান ভাঙলো। বিবর্ণ এক হাসি দিয়ে বললো,
“কি বলো এসব হৈমন্ত ভাই? তোমার কাছে সবসময় উদ্ভট কথাবার্তা। তা,কখন এলে ছাদে? টেরই পেলাম না যে?”
“এমন হা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে তো টের পাবিও না। আকাশ না যেন মাছের মাথা। চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। তারা গুনছিলি নাকি দিনের আকাশে?”
মায়া রিনরিনে কণ্ঠে হেসে উঠলো। চোখ ঘুরিয়ে বললো,
“তুমিও না হৈমন্ত ভাই। আকাশের সাথে মাছের মাথার তুলনা করছো! একমাত্র তোমার দ্বারাই এমন কথা বলা সম্ভব।”
“হ্যাঁ, যত দোষ হৈমন্ত ঘোষ। তা মাছের মাথা প্রেমী মায়াবতী,আজ যে আপনার এসএসসির রেজাল্ট বেরিয়েছে সে খবর আছে?”
মায়ার হাসিখুশি চেহারাটা এক নিমিষেই আঁধারে ঢেকে গেলো। ফ্যাকাশে হলো গোলগাল ছোট্ট মুখটা। মনে হচ্ছে এখনই অশ্রু বৃষ্টি নামবে চোখ আকাশের বুক থেকে। তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো ঝুলন্ত লা’শ, এলোমেলো ঘর,র’ক্তা’ক্ত চিঠি আর বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হওয়া এক কিশোরীর করুণ আর্তনাদ।
মায়া নিজের কান চেপে ধরলো, উদভ্রান্তের মতো বলে উঠলো,
“দিভাই,দিভাই। আমার দিভাইটা কই গেলো? হৈমন্ত ভাই আমার দিভাই টা।”
মায়ার পরিবর্তনে বিচলিত হলো হৈমন্ত। কোনোরকমে নিজের হাত এগিয়ে নিয়ে মায়ার মাথায় রাখলো। কণ্ঠে শীতলতা রেখে নিবিড় ভাবে বললো,
“শান্ত হ,মায়া। শক্ত হ। কথা কিন্তু এটা ছিলো না। ভুলে যাচ্ছিস নিজেকে দেওয়া কথা? মায়া,চুপ কর একদম। যদি এখন না থামিস তবে তোকে আমি এখান থেকে নিয়ে যেতে বাধ্য হবো। তুই কী সেটা চাচ্ছিস?”
মায়ার চোখের সামনে বীভৎস ভাবে অতীত ফুটে উঠেছে। তবুও সে নিজেকে শান্ত করলো। মাত্র ষোলো বছরের মেয়েটা কীভাবে এমন শক্ত হলো সে অতীত বার বার তার চোখে ভেসে উঠলো। সেদিন তার বয়স কতই বা ছিলো? এগারোর এপার-ওপার। কিন্তু যেই ভয়ং’কর চিত্র সে দেখেছিলো তা আজও তাকে তাড়া করে বেড়ায়। দুই বেনী করা মায়া স্কুল ড্রেস পড়া, মাত্রই স্কুল থেকে এসেছিলো। বোনের ঘরের সামনে গিয়ে অনবরত দরজা খুলতে বলছিলো কিন্তু অপরপাশ থেকে কোনো উত্তর এলো না। বিচলিত হয়ে অবশেষে বাড়ির বড়রা দরজা ভাঙলো। ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকতে দেখলো তাদের বাড়ির এক রাজকন্যাকে। এরপর থেকেই মায়া শক্ত হয়ে গেলো। বদলে গেলো তার সবটা।
হৈমন্ত মায়াকে সামান্য ধাক্কা দিলো, অতঃপর ধ্যান ভাঙলো মায়ার। কতক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সময় দিলো। ধীরে ধীরে তার মুখভঙ্গি বদলানো শুরু করলো। মুখমন্ডলে তখন মন খারাপের ঘন মেঘ সরে গিয়ে জায়গা নিলো রহস্য। সেই রহস্য মাখা দৃষ্টি নিয়ে মায়া হৈমন্তের দিকে তাকালো। বিভীষিকাময় হাসি দিয়ে বললো,
“ভাগ্যিস তুমি সেই অতীত মনে করিয়ে দিয়েছো, হৈমন্ত ভাই। নাহয় আমি তো ভুলতেই বসে ছিলাম। জানো আজকে আমার শ্বশুর বাড়ির সবার আঁধারিয়া মুখ আর করুণ আর্তনাদ দেখে আমারও মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। একটা সময়ের জন্য আমি তাদের প্রতি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু না,এই দুর্বলতা ভুল জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে তাই না বলো? আর যাই হোক,এমন মানুষের জন্য কী আদৌও দুর্বলতা মানায়? এখনও আমার অনেক কিছু জানা বাকি। এখানে যার জন্য এসেছি তার রহস্য উন্মোচন করা বাকি। এত তাড়াতাড়ি দুর্বল হলে হবে নাকি!”
হৈমন্ত হাসলো। মায়ার বয়স আবেগের। সে আবেগে পরে যেতে পারে সেটা হৈমন্তের জানা আছে। তাই তো সে সবটা সামলে নেওয়ার জন্য এতদূর অব্দি মায়ার সাথে এসেছে। মায়ার ভবিষ্যৎ অন্তত ওর বড় বোনের মতন হতে দিবে না হৈমন্ত।
মায়া কতক্ষণ চুপ থাকে। তারপর ধীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“আমার রেজাল্ট কী,হৈমন্ত ভাই?”
হৈমন্ত ভ্রু কুঁচকায়। তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে,
“এতক্ষণে রেজাল্টের কথা মনে পড়লো? আর রেজাল্ট কীইবা হবে বল? পড়াশোনা তো করতিস না ঠিকমতন। এখন রেজাল্ট কী হবে তা তুই ই আন্দাজ কর।”
মায়ার মুখটা শুকিয়ে ছোট্ট হয়ে গেলো। তবে কী তার রেজাল্ট অনেক খারাপ হয়েছে!
মায়ার মুখের পরিবর্তন দেখে হেসে উঠে হৈমন্ত। মায়ার মাথায় টোকা দিয়ে বলে,
“পাশ করে গেছিস। এখন আর আমসির মতন মুখ খানা করতে হবে না। যা পড়াশোনা করেছিস তাতে যে পাশ করেছিস সেটাই শুকরিয়া জানা। এ প্লাস আসে নি তবে ভালো রেজাল্ট হয়েছে। প্রতিশোধের নেশায় বুদ না হলে হয়তো আরও ভালো হতো।”
মায়া “ইয়াহু” বলে লাফিয়ে উঠলো। ধপ করে শব্দ হলে বাড়ির ছাদে। পরক্ষণেই মোহনার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। মায়া দ্রুত মুখ চেপে ধরলো নিজের। হৈমন্ত চোখ রাঙিয়ে বিরক্তির স্বরে বললো,
“তুই আর মানুষ হবি না। যা নিচে যা। নাহয় তোর ডা’ই’নী শাশুড়ি ঝা’ড়ু মারবে তোকে। যা।”
মায়া “আসছি” বলে ছুট লাগালো। ছাঁদের দরজার কাছাকাছি আসতেই হৈমন্ত আবার ডেকে উঠলো,
“মায়া!”
মায়ার পা থামলো। পিছে ঘুরে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে বললো,
“কী?”
“শুভ জন্মদিন,মায়াবতী। ষোড়শীর কন্যা সপ্তদশে পা রাখলো অবশেষে। যে বিরাট দায়িত্ব মাথায় নিয়েছিস তা পূরণ করতে যেন পারিস, আশীর্বাদ রইলো। আর হ্যাঁ, ঐ বিপ্রতীপের প্রতি দুর্বল হতে দিস না ছোট্ট মনটাকে। কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবি না।”
হৈমন্তের কথা শেষ হতেই গটগট পায়ে বেরিয়ে গেলো নিজেদের ছাঁদ থেকে। মায়া কেবল চেয়ে রইলো নির্বাক। অতঃপর ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বললো,
“মায়ারা কেবল হৈমন্তদের। বিপ্রতীপরা বড়জোর মোহ হতে পারে এর বেশি কিছু না।”
_
গ্রামের এক বিয়েতে দর্শিনীদের বাড়িসুদ্ধ সবাই হাজির হয়েছে। দর্শিনীর বাবা গ্রামের স্কুলের শিক্ষক ছিলেন বিধায় তাকে গ্রামের মানুষ একটু বেশিই সম্মানের চোখে দেখে। সেই সুবাধে তাকে গ্রামের সব অনুষ্ঠানেই থাকতে হয় সবার মনরক্ষা করার জন্য।
দাস পাড়ায় এক বিয়েতে এসেছে সবাই। দর্শিনী,তার বাবা-মা,দুই ভাই,বড় বৌদি, বৌদির পরিবার, ছোট বৌদি, ছোট বৌদির পরিবার,তৃণা। নিধি এবং নিপার বাবা-মা মূলত প্রতাপ সাহাকে দেখতে এসেছিলো। তাই বিয়ের নিমন্ত্রণে তারাও এসেছে।
রাত বাজে আট টা। হিন্দু বিয়ে সাধারণত রাতেই হয়। হয়তো গোধূলি লগ্নতে নয়তো মধ্যরাতের দিকে। এই বিয়েটা মধ্য রাতেই হবে। বিয়ে বাড়ি তুমুল জমজমাট। দর্শিনী প্রথমে আসতে চায় নি, এই ভীড়ের মাঝে তার কেমন জানি অস্বস্তি হচ্ছিলো। তবুও দর্শিনী সবার জোড়াজুড়িতে এক প্রকার আসতে বাধ্য হলো। গ্রামের লোক কেমন দৃষ্টিতে যেন তাকাচ্ছে তার দিকে। সে জানতো এমন কিছুই হবে তাই সে আসতে চায় নি। এসেই যখন পড়েছে আর এত কিছু ভেবে লাভ নেই।
দর্শিনী হঠাৎ অনুভব করলো তার পিছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। পাশের মানুষটার শরীরের সুগন্ধিটারর সাথে সে পরিচিত। দর্শিনী পাশ ফিরে তাকালো। এক পলক দেখেই সে চোখ নামিয়ে নিলো। ভিনদেশী পুরুষের এ কী সর্বনাশা রূপ! দর্শিনীর মতন নারীর চোখ আটকে গিয়েছিলো সে রূপে? ভাবা যায়!
দৃষ্টান্ত হাসি মুখে দর্শিনীর পাশে এসে দাঁড়ালো। মিষ্টি কণ্ঠে বললো,
“কী ব্যাপার, প্রিয়দর্শিনী? আমাকে দেখেও দেখলেন না যে?”
দর্শিনী নিজেকে একটু ধাতস্থ করলো। বুকের মাঝে ঢিপঢিপ শব্দটা ক্রমশ বাড়ছে। এমনটা কেনো হচ্ছে? আগে তো কখনো এমন হয়নি। তাহলে আজ কেনো?
দর্শিনী নিজেকে ধাতস্থ করেই নিবিড় কণ্ঠে বললো,
“কে বলেছে দেখি নি? ভাবলাম আপনি এমনিই দাঁড়িয়েছেন তাই কিছু বলি নি। তা আপনাকেও নিমন্ত্রণ করেছে?”
“হ্যাঁ, আমি আর দৃষ্টান্তও নিমন্ত্রিত। তা আপনাকে বকুল ফুলের মতন লাগছে আজ। শুভ্র শাড়িতেও কাউকে এত সুন্দর লাগে জানতাম না।”
দর্শিনী চুপ করে থাকে। এই পুরুষের সাথে আর চোখ মিলিয়ে কথা বলা তার পক্ষে সম্ভব না। সে এতদিন এই ভিনদেশী মানবকে এতটা গভীর ভাবে খেয়াল করে নি কিন্তু আজ খেয়াল করতেই ঝংকার দিয়ে উঠলো হৃদয় কোণ। ছেলেটার মাঝে বিদেশি একটা ভাব আছে। শরীরের রঙ,গঠন,সুদীর্ঘ দেহ, রাজকীয় চালচলন যেন বলে দিচ্ছে সে ভিনদেশী। সব মিলিয়ে সুদর্শন পুরুষ বলা যায়।
হঠাৎ ই দর্শিনীদের সামনে হাজির হয় হরমোহন সেন। কেমন কুৎসিত হেসে প্রতাপ সাহা’র উদ্দেশ্যে বললেন,
“নমস্কার প্রতাপ। পুরো পরিবার নিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছো দেখে ভালো লাগলো। তা প্রতাপ,জমির ব্যাপারটা ভেবে দেখেছো তো?”
সবার হাসি হাসি মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেলো। দৃষ্টান্তও তন্মধ্যে সেখানে প্রবেশ করলো। নিজের বাবাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে দেখে ঘৃণায় চোখমুখ কুঁচকে ফেললো।
প্রতাপ সাহা উত্তর দেওয়ার আগেই প্রিয়দর্শিনী তার নিবিড় কণ্ঠে ঝংকার তুলে বললো,
“জেঠামশাই,আপনাকে তো কাল-ই বলা হয়েছে এ ব্যাপারে। আর নতুন করে পুরোনো কাসুন্দি ঘাটছেন কেনো? ও জমি আমরা দেবো না।”
“এই মেয়ে, এই, তুমি বড়দের কথার মাঝে কেন কথা বলছো? অলক্ষী মেয়েছেলে। নিজের সংসার খেয়ে বাপের ঘরে এসে উঠেছে, এখন বাপের কপালও পুড়াবে নিশ্চিত।”
হরমোহনের স্ত্রী রমলার কথায় দর্শিনীর মুখটা অপমানে ছোট হয়ে গেলো। প্রতাপ সাহা মেয়ের অবস্থা বুঝে সেই মহিলার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“প্রণাম নিবেন বউঠান। তা আজকাল আমি বাদে দেখছি সবাই আমার মেয়েকে নিয়ে এত ভাবছে! ব্যাপার কী? আপনার কোনো অধিকার নেই আমার মেয়েকে এসব বলার।”
“রমলা কোনো ভুল বলে নি, প্রতাপ। তোমার মেয়ে অতিরিক্ত বেড়েছে। এর মাশুল না আবার দিতে হয় দেখো। এই যে বাড়ির বউরা, তোমাদেরও না আবার মাশুল দিতে হয় দেখো।”
হরমোহনের কথার বিপরীতে দর্শিনীর বড় ভাই প্রদীপ কথা বললো। এমন এক কথায় দু কথায় বিরাট ঝামেলা সৃষ্টি হলো। তর্কাতর্কি গাড়ো হতেই গ্রামের লোক তাদের আলাদা করে দিলো। প্রতাপ সাহা বিচক্ষণ মানুষ,অন্যের অনুষ্ঠানে তার জন্য ঝামেলা হোক সে চায় না। তাই সে নিজেও চুপ হয়ে গেলো।
তর্কাতর্কির পর বিয়ে বাড়ি কিছুটা শান্ত হয়ে গেলো। প্রতাপ সাহাদের ডাক পড়লো খাবার খাওয়ার জন্য। সবাই সেদিকেই অগ্রসর হলো। মৃত্যুঞ্জয় ভাবলো,এবার তাকে কিছু করতে হবে।
_
খাবারের কাছে আসতেই দর্শিনীর মাথা ঘুরে উঠলো। খাবারে ঘ্রাণে পেট মোচড় দিয়ে গড় গড় করে বমি করে দিলো এক কোণায়। সবাই দর্শিনীর হঠাৎ অসুস্থতায় হতবাক। কী হলো মেয়েটার?
সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো। দর্শিনী সবাইকে শান্ত হতে বললো। মনে মনে কিছুটা ভয়ও পেলো,সবাই না আবার বুঝে যায়।
সবাই যেখানে দর্শিনীকে নিয়ে ব্যস্ত, মৃত্যুঞ্জয় সেখান নিশ্চুপ। সে দূর হতে দর্শিনীকে তীক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। সে কয়েকদিন যাবতই দর্শিনীকে খেয়াল করছে। কিছু তো একটা খটকা লাগছে তার। তার মস্তিষ্ক কিছু জানান দিচ্ছে কিন্তু মন মানতে চাইছে না।
সবাইকে ব্যতিব্যস্ত হতে দেখে দর্শিনী বললো,
“বাবা,আমি বাড়ি চলে যাই। তোমরা থাকো। আমি বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবো।”
মেয়ের কথায় ঘোর প্রতিবাদ জানালো প্রতাপ সাহা,
“কী বলো মা? তুমি একা একা চলে যাবে? না। গেলে আমরা সবাই যাবো।”
“না না, বাবা। তোমরা তো খাও নি এখনো। তোমরা খেয়ে দেয়ে আস্তে-ধীরে আসো। আমি পারবো।”
দর্শিনীর কথা শেষ হতেই নিধি বলে উঠলো,
“আমি যাচ্ছি তোর সাথে। চল।”
নিধির কথা শুনে ধৃষ্ট হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। সে বিয়ে না দেখে কিছুতেই যাবে না। কতক্ষণ বাক-বিতর্কের পর ঠিক হলো তৃণা আর দর্শিনী যাবে। মেয়েটাকে একা ছাড়ার চেয়ে তৃণা সাথে গেলে সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচবে।
অবশেষে দর্শিনীর বড় ভাই তাদের রাস্তা অব্দি দিয়ে গেলো। দুই রমনী পথ ধরলো বাড়ির দিকে। দর্শিনীর নিজেকে একটু বেশিই ক্লান্ত লাগছে। হয়তো প্রেগন্যান্সির লক্ষণ গুলো দেখা দিচ্ছে।
দর্শিনীরা বেরিয়ে যেতেই হরমোহন তার সাথের চাকরটাকে কিছু ইশারা করে পৈচাশিক হাসলেন। খুব বাজে কিছু হবে।
_
রাত বারোটা। ধৃষ্ট ঘুমিয়ে গেছে বাবার কোলে। সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এবার বাড়ি ফিরতে পারবে। ছেলেটার জন্য এতক্ষণ কেউ জায়গা থেকে নড়তে পারে নি। মৃত্যুঞ্জয়ও বেশ আকর্ষণ নিয়ে বিয়ে দেখছে। তার বরাবরই বাঙালি বিয়ে দারুণ লাগে।
হঠাৎ কোথা থেকে গ্রামের এক ছেলে ছুটে আসলো। হাঁপাতে হাঁপাতে প্রতাপ সাহার সামনে দাঁড়ালো। কোনোরকমে উচ্চারণ করলো,
“কাকা,কাকা,আপনাদের বাড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। সব পুইড়া ছারখার।”
প্রতাপ সাহা যেন কিছুক্ষণের জন্য তব্দা খেয়ে গেলেন। পরক্ষণেই চেয়ার থেকে উঠে ছুট লাগালের বাড়ির দিকে। তার পিছু পিছু সব ছুটতে শুরু করলো। শত্রুকে পাশে দেখেও কীভাবে সে নিজের চোখের মনিকে একা ছাড়লো? মেয়েটা বোধহয় আর নেই।
হরমোহন এক পৈচাশিক হাসি হাসলেন। বড় মাশুল দেওয়া শুরু এখন থেকে।
#চলবে
[ভেবেছিলাম চৌদ্দের বর্ধিতাংশ দিবো। পরে ভাবলাম পুরো একটা পর্বই দিয়ে দেই। তাই দেরি হলো একটু। আর অনেকে বলছে গল্পটা টেনে টেনে আর কত বড় করবো,শেষ করে দেই যেন। গল্পটা আমি ভেবেছিলাম ছোট হবে, কিন্তু রহস্যের জাল বিছাতেই আমার এত গুলো পর্ব লেগে যাচ্ছে। তা গুটিয়ে নিতে আরও সময় তো লাগবে। তাই দুঃখীত আমি তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে পারছি না। একবার পাঠকদের কথা শুনে আমার একটা উপন্যাস তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নষ্ট করেছি। এটা আমি যত্নে লিখতে চাই। ধৈর্য না ধরতে পারলে লিভ ইট।]