#এটা গল্প হলেও পারতো
#পর্ব ১১
থ্রি টায়ার কামরার প্রায় অর্ধেকটাই ওদের, ট্রেন ছাড়ার পরে সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রয়েছে ছাত্র ছাত্রীরা। একটা সাইড লোয়ার বার্থে মুখোমুখি বসে কৌশিক আর রিয়া গল্প করছিলো, সকালের কথার জের যে এখনও রিয়ার মন থেকে যায়নি সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারছিলো কৌশিক।
এখনো মন খারাপ করে আছিস?
নরম গলায় বললো ও, রিয়া হাসলো একটু,
জানিস তো, আবার ওই বাড়িতে ঢুকতে হবে ভাবলেই আমার দম বন্ধ হয়ে যায়! ওখানে যে আমি কি করে থাকি সেটা আমিই জানি! মাঝে মাঝে ঠাকুমা, পিসিদের কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু মায়ের জন্যে যেতে পারিনা!
অতো বড় বাড়িতে তোর দম বন্ধ হয়ে যায়! ওরে বাবা! তাহলে তো আমাদের মতো ফ্ল্যাট হলে তুই থাকতেই পারতিস না!
পরিবেশটা হালকা করার জন্যে একটু মজার গলায় বললো কৌশিক, রিয়া কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে বললো,
অতো বোকা তুই নস! আমি জানি! বাড়ি বড়ো ছোটো হওয়ার সঙ্গে যে দম বন্ধের কোনো সম্পর্ক নেই সেটা নিশ্চয়ই তোকে বুঝিয়ে বলতে হবে না!
তোর ঠাকুমা তোদের সঙ্গে থাকেন না?
নাহ! ঠাকুমা নিজের বাড়িতে থাকেন! আমরা অন্য বাড়িতে! ঠাকুমা, পিসিরা আমাকে খুব ভালোবাসে, কিন্তু মা ওদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে দেয় না! তোকে সকালে বলেছিলাম না! যারা আমাকে ভালোবাসে, ঠিক তাদের কে কেউ না কেউ আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। একসময় আমরা ওই বাড়িতেই থাকতাম, কিন্তু মায়ের জন্যেই ওখান থেকে চলে আসতে হয়েছে!
রিয়ার গলায় ক্ষোভের সুর, কৌশিক স্বান্তনার সুরে বললো,
মায়ের সম্পর্কে ওইভাবে বলিস না, কাকিমার থেকে তোকে অন্য কেউ বেশি ভালোবাসতে পারে না!
রিয়া হাসলো, খুব কষ্টের গলায় বললো,
মা আমাকে সবার থেকে আলাদা করে দিয়েছে! মা যদি চাইতো তাহলে সব ঠিক হয়ে যেতো আমাদের! কিন্তু মা নিজেই কখনো চায়নি সেটা! আমি যখন ক্লাশ ফোরে পড়ি, তখন আমরা ঠাকুমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাই! আমি জানিস তো, মা কে লুকিয়ে ঠাকুমার কাছে যাই, ফোনে কথা বলি, মা জানলে ওটাও বন্ধ হয়ে যাবে!
এইরকম মাঝে মাঝেই কোথাও বেড়াতে চলে যাবি, তাহলে দেখবি ভালো লাগবে তোর,
সেই চেষ্টাই তো করি, কিন্তু একা যেতে কি ভালো লাগে বল!
জানি লাগে না! তাই তো তুই যখন শান্তিনিকেতন যেতে চাইলি, আমি সঙ্গে সঙ্গেই নিজেই উদ্যোগ নিয়ে ব্যবস্থা করলাম তো! ওদের ভরসায় বসে থাকলে কোনোদিনও হতো না আর!
রিয়ার মুখের কথা প্রায় কেড়ে নিয়ে বললো কৌশিক, আস্তে করে কৌশিকের হাতে চাপ দিলো রিয়া,
থ্যাংক ইউ রে! শান্তিনিকেতন বললি বলে একটা কথা মনে পড়লো, অর্ক স্যারের বউ না খুব সন্দেহবাতিক মহিলা। সেদিন ফেরার সময় স্টেশনে দেখা হয়ে ছিলো না! সব মেয়েদের দিকেই কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছিলেন, আমাকে তো নামও জিজ্ঞেস করলেন!
তাতে কোনো সন্দেহবাতিক বোঝায় না! নাম জিজ্ঞেস করাটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার,
রিয়া মাথা নাড়লো,
তোকে ঠিক বোঝাতে পারছি না! ওনার চোখের দৃষ্টি অন্য রকম ছিলো, এটা একমাত্র মেয়েরাই বুঝতে পারে, তুই ফিল করতে পারবি না!
আজও সকালে কিছু নিয়ে গন্ডগোল হচ্ছিলো ফোনে, বললি না তুই?
হ্যাঁ, নদীর ধারে তো! সেতো স্যার তাড়াতাড়ি উঠে গেলেন! ওই জন্যেই তো বললাম, মহিলা যেনো কেমন!
মাঝ রাতে ঘুমের মধ্যেই প্রচণ্ড যন্ত্রণায় খাটে উঠে বসলো দিতি, হে ভগবান! আর একটা দিন কেটে যেতে পারলো না! অর্কর ট্রেন কটায় ঢুকবে কে জানে! কোনো রকমে বাইরে বেরিয়ে এসে শাশুড়ির ঘরে নক করলো ও, প্রায় সাথে সাথেই রুমা দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন,
কি রে কি হলো? শরীর খারাপ লাগছে?
উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করলেন রুমা, স্ত্রীর গলা শুনে ততোক্ষনে সমরেশও এসে দাঁড়িয়েছেন দরজায়!
আমাকে হসপিটালে নিয়ে চলো মা, আর পারছি না!
বলতে বলতে সোফায় বসে পড়লো অদিতি। সঙ্গে সঙ্গেই হসপিটালে অ্যাম্বুলেন্সের জন্যে ফোন করলেন সমরেশ, দিতি কে নিয়ে যখন ও টি তে ঢোকানো হচ্ছে তখন রুমা অর্ক কে ফোন করতে চাইলেন। অদিতি নিজেই বাধা দিলো,
ও খুব নার্ভাস মা, ওকে এখন ফোন কোরো না! আগে হয়ে যাক সব কিছু তারপর জানিও!
রুমা একটু দোলাচলে ভুগছিলেন, চিন্তিত গলায় বললেন,
তবু, একবার কথা বলে নিলে তো তোরও ভালো লাগতো,
দিতি থামিয়ে দিলো,
কিন্তু তারপর এই মাঝরাত থেকে ও তো বসে বসে টেনশন করবে! তার থেকে একদম খবর দিও তুমি,
রুমা আর কিছু বললেন না, দিতি কে ও টি তে ঢোকানো হয়ে যাওয়ার পরে চেয়ারে এসে বসলেন দুজনে। কিছুক্ষন পরে অন্য মনস্ক গলায় বললেন রুমা,
মেয়েটা কতো রিসনেবল! অর্ক টেনশন করবে বলে খবরই দিতে দিলো না! এই মেয়েই কদিন আগে কি কান্ডটাই না করলো! আমি এখনও মেলাতে পারি না ঠিক!!
যথেষ্টই বুদ্ধিমতি মেয়ে ও, আজ পর্যন্ত তোমার সঙ্গেও তো কোনো সমস্যা হয় নি কখনও।তোমার ছেলে যে যথেষ্টই ইরেস্পনসিবল সেটা তুমি নিজেই জানো, বিয়ের আগে তো পৌঁছে ফোন করতে ভুলে যেতো প্রায়ই। তুমি কতো টেনশন করতে তখন, এখন কিন্তু ও খবর না দিলেও অদিতি নিজে ফোন করে খবর দেয় তোমাকে। তাই আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, সেই মেয়ে এরকম একটা বোকার মতো কাজ কখনই করতে পারে না। আমি ওদের সমস্যায় কথা বলতে চাইনি কখনো তাই বলিনি, কিন্তু আমার মনে হয় যে ফোন নম্বরটা ও দিয়েছিলো, সেটায় কথা বলে অন্তত দেখতে হতো একবার, তা না করে তোমার ছেলে কোন কলিগের পরামর্শে কাউন্সিলিং করে নিয়ে এলো!
বিরক্ত গলায় বললেন সমরেশ, রুমা চুপ করে গেলেন। কিছুক্ষন পরে আস্তে আস্তে বললেন,
কাউন্সিলিং করে তো উপকার হয়েছেই, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই! যাকগে যা হয়ে গেছে তা ভুলে যাওয়াই ভালো, এখন আজকে সব কিছু ঠিক মতো হয়ে গেলে দেখো, সব গন্ডগোল মিটে যাবে ওদের!
মিটে যাবে না! সাময়িক ধামা চাপা পড়বে! তোমার ছেলে কে এবার একটু সাবালক হতে বলো! ওই কলেজ স্টুডেন্টদের মতো, আজ মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে, চার্জ নেই, কাল সাইলেন্ট মোডে ছিলো ভুলে গেছি, এইসব যদি চলতে থাকে তাহলে এসব ঝামেলা চলতেই থাকবে। এখন আর ছোটো নেই ও, সব ব্যাপারে গা এড়িয়ে চলার এই ব্যাপারটা যতদিন থাকবে, ততদিন সমস্যা আবার তৈরি হবে! বউ কে নয়, তোমার ছেলেকেই আগে কাউন্সিলিং করানো উচিত ছিলো!
সেতো জানিই! কিন্তু কি করবো বলতো? অতো বড় ছেলে কে আর কিই বা বলা যায়! নিজেরই তো বোঝা উচিত সবটা! বাপ্পার বিয়েতে গিয়েই কি কান্ডটা করলো বলতো! শেষে কিনা খুঁজতে বেরোতে হলো! আমি তো ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলাম যে ও ফিরলে দিতি আবার কি অশান্তি শুরু করে কে জানে! কপাল ভালো অল্পের ওপর দিয়ে গেছে, নাহলে আমাদের সম্মান বলে আর কিছু থাকতো না!
এবার সমরেশ আরো বিরক্ত হলেন,
ঘুরে ফিরে এটাই বললে যে তোমার বউ অশান্তি করেনি তাই তোমার সম্মান বেঁচে গেছে! কিন্তু সম্মান আদৌ বেঁচেছে কি? নিজের ছেলের কথা ভাবো একটু, তাকে বিয়ের দিন খুঁজতে বেরোতে হলো। সেটা খুব সম্মানের বুঝি? কি ভাবলো আত্মীয়স্বজন? একটা চাকরি করা বিবাহিত ছেলে এতটাই ইরেস্পন্সিবল যে, তার মা, বউ কে তাকে রাস্তায় রাস্তায় খুঁজে বেড়াতে হয়!
সমরেশের কথা শেষ হবার আগেই ও টির দরজা খুলে ডাক্তারবাবু বেরিয়ে এলেন, তাঁকে দেখেই দুজনে একসাথে উদগ্রীব হয়ে উঠে দাঁড়ালেন।
ট্রেনে উঠেই ওপরের বার্থে উঠে শুয়ে পড়েছিলো অর্ক, দোলানি তে চোখদুটো কখন যে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো নিজেও টের পায়নি। ঘুম ভাঙলো প্রায় ভোরের দিকে,
স্যার, আপনার ফোন বাজছে অনেকক্ষন থেকে, দুবার মিসড কল হয়ে গেছে,
ওরই একজন স্টুডেন্ট ওকে ধাক্কা দিচ্ছে ঘুমের মধ্যেই বুঝতে পারছে ও। অনেক কষ্ট করে চোখ খুলে ফোন টা কে পকেট থেকে বার করে নিয়ে কানে ধরলো অর্ক,
ছেলে হয়েছে অর্ক, দিতি কে এক্ষুনি বার করলো ও টি থেকে,
মায়ের উচ্ছসিত গলার আওয়াজে লাফ দিয়ে উঠে বসলো অর্ক, এই মুহূর্তে চোখে আর একটুও ঘুম নেই ওর। অর্ক যখন হাসপাতালে পৌঁছালো, তখন দিতি এবং ছেলে দুজনেই ঘুমোচ্ছে। রুমা অর্ক কে দেখেই এগিয়ে এলেন, ইতিমধ্যেই তিনি বেয়াই মশাইকে খবর দিয়ে দিয়েছিলেন, অর্ক পৌঁছানোর আগেই তিনিও পৌঁছে গেছেন। বাড়িতে একটা আনন্দের পরিবেশ তৈরি হলো, গত কয়েক মাসের ঝড় ঝাপটা কাটিয়ে নতুন করে শান্তি ফিরলো।
দেখতে দেখতে দু মাস কেটে গেল, এই সময়টা কলকাতাতেই কাটালেন সমরেশ আর রুমা, তাঁদের ওদিকে ডাক্তার বদ্যির সুবিধা কম থাকায় দিতি কে নিয়ে যাবার বদলে তাঁরাই এখানে থেকে যাওয়া মনস্থির করলেন। তাছাড়া আরো একটা কারণ ছিলো, আগের বার একা থাকার সময়েই সমস্যা দেখা দিয়েছিলো, তাই রুমা ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন, পাছে একাকীত্বের জন্য আবার নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়।
ইতিমধ্যে একটু হলেও অধৈর্য্য হয়ে উঠছিলেন সমরেশ, নিজের খোলামেলা বাড়িতে থেকে অভ্যস্ত তিনি। তাঁর পক্ষে এই দু কামরার ফ্ল্যাটের চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না আর, তিনি বাড়ি যাওয়ার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অর্কর বেশ কিছু ছুটি পাওনা ছিলো, বাবা, মা থাকায় বেশি ছুটি নেবার প্রয়োজন হয় নি ওর এতোদিন, বাবা ব্যস্ত হয়ে উঠছেন দেখে ও নিজেই একদিন মা কে ফিরে যাবার জন্যে বললো।
খুব অসুবিধা হবে না তো তোর?
একটু কুণ্ঠিত গলায় বললেন রুমা, অর্ক ঘাড় নাড়লো,
আমার ছুটি জমে আছে অনেকটাই, আমি ম্যানেজ করে নেব, তুমি চিন্তা কোরো না। বাবা যখন থাকতে চাইছেই না আর, তখন তোমরা চলেই যাও,
রুমা তাও মনে মনেই একটু লজ্জিত হচ্ছিলেন, আজ দিতির মা হলে হয়তো চলে যেতে পারতো না এই ভাবে। তিনি একটু আলাদা ভাবে স্বামী কে একা পেয়ে সেকথা বললেন,
বাচ্চাটার মাত্র দু মাস হলো, দিতি ওকে সামলাতে পারবে! ওর নিজেরই তো অপারেশনের পরে শরীর এখনও ঠিক হয় নি তেমন!
সমরেশ বিরক্ত হলেন,
তুমি থাকো তাহলে! আমার আর ভালো লাগছে না! অনেকদিন এসেছি, এবার বাড়ি ফিরবো। আমরা কি সারাজীবন এখানেই থেকে যাবো? বরং তোমার ছেলে কে ঠিক করে বোঝাও একটু, ও তো বাবা হয়েছে এখন, এবার একটু গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করুক। দায়িত্ব নিতে শিখুক একটু!
সেতো ও বলছেই, ওর ছুটি আছে অনেক! কিন্তু আমাদেরও তো একটা দায়িত্ব থেকেই যায়!
সে দায়িত্ব তো পালন করেছি, আর কতো? কতোদিন হয়ে গেলো এসেছি বলতো?
স্ত্রী কে থামিয়ে দিয়ে বললেন সমরেশ, তাঁর গলা রীতিমত অর্কর বেডরুম থেকেও শোনা যাচ্ছিলো। তাঁকে খুব উত্তেজিত দেখে দিতি একসময় ঘর থেকে বেরিয়ে এলো, শাশুড়ি কে উদ্যেশ্য করে বললো,
বাবার হয়ত সত্যিই আর ভালো লাগছে না এখানে মা, তোমরা বরং কিছুদিন বাড়ি থেকে ঘুরে এসো, আমরা সামলে নিতে পারবো।
এবার সমরেশ একটু লজ্জিত হলেন, দিতি কে বললেন,
রাগ করিস না মা, মাসখানেক একটু ঘুরে আসি বাড়ি থেকে, তারপর আবার এসে থাকবো না হয়। বাড়িটা প্রায় দু মাস ধরে খালি পড়ে আছে, কি জানি কি অবস্থা দেখবো গিয়ে!
অবশেষে সবকিছু গুছিয়ে হাতের কাছে রেখে, রান্নার দিদি কে পই পই করে কামাই না করতে বুঝিয়ে দিয়ে রুমা, সমরেশ বাড়ি ফিরে গেলেন। অর্ক বেশ কিছুদিনের জন্য ছুটি নিলো, দুজনে মিলে মোটামুটি চারদিক ম্যানেজ হয়ে যাচ্ছিলো।
এমন সময় একদিন অরিন্দমের বিয়েতে বৌভাতের নিমন্ত্রণ হলো ওদের দুজনের, অতো ছোটো বাচ্চা নিয়ে সামলাতে পারবে না বলে শেষ পর্যন্ত দিতি বৌভাতের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। অর্ক যদিও বলেছিলো যে সে পারবে তবু দিতি একটু ভয় পেলো, বারবার বলা সত্বেও দিতি না যেতে চাওয়ায় শেষ পর্যন্ত অর্ক একাই বৌভাতে উপস্থিত হলো।
অরিন্দম আর তার স্ত্রীর হাতে উপহার তুলে দিয়ে এক কাপ কফি হাতে নিয়ে একটা সোফায় গিয়ে বসলো অর্ক, এদিক ওদিক তাকিয়ে চেনা মুখ খুঁজছিলো ও। বেশির ভাগই দু পক্ষের বাড়ির লোক, কলেজের কাউকেই ও দেখতে পাচ্ছিলো না, সম্ভবত এখনও কেউ এসে পৌঁছায় নি। ও একটু আগেই এসে পড়েছে, দিতি কে একা বাড়িতে রেখে বেশিক্ষন যাতে বাইরে না থাকতে হয় তাই একটু তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেছে এখানে।
কখন এলে?
বলতে বলতে ওর পাশে বসে পড়লেন সমর দা, অর্ক এই প্রথম বার জীবনে সমর দা কে দেখে খুশি হলো। একা একা বসে থাকাটা সত্যিই খুব অস্বস্তির, হেসে বললো,
এই তো এক্ষুনি! আপনি কখন এলেন? বৌদি আসেন নি?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, এসেছে তো, ওই যে ওইদিকে সব মহিলাদের সঙ্গে মিশে গেছে! বউ ছাড়া আমি কোথাও যাইনা!
বলেই নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে উঠলেন সমর, অর্কও বাধ্য হয়েই হাসলো একটু। কয়েকমিনিট নীরবতার পরে হটাৎ করেই গলাটা নামিয়ে প্রায় অর্কর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন সমর,
তুমি তো একাই এসেছো দেখছি! শুনলাম সব! কি আর করা বলো!! এরকম সন্দেহবাতিক বউ কে নিয়ে কোথাও না যাওয়াই ভালো, বলা যায়না কখন আবার কি করে বসে!
অর্ক চমকে উঠলো, নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
এসব কি বলছেন! সন্দেহবাতিক কিসের! ছোটো বাচ্চা, তাই ও আসেনি!
শাক দিয়ে আর মাছ ঢেকো না! কলেজে সবাই সব জানে! কি আর করবে, ফেলে দিতে তো আর পারবে না! এই করেই বাকি জীবন টা চলতে হবে, তবে ভাই, সন্দেহ জিনিসটা এমনই শুরু হলে আর থামানো মুশকিল! মনের মধ্যে গেঁথে যায় একেবারে!
মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছিলো অর্কর, অরিন্দম কে বিশ্বাস করার এই পরিণতি! এতো নিচু মনের ও! গোটা কলেজে এইভাবে রটিয়ে দিলো সব!
কফিটা তিত লাগছে, কাপটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো অর্ক, এখানের খাবার মুখে তুলতেও ইচ্ছে করছে না আর। সমর দা পেছন থেকে ডাকলেন,
খেতে বসবে কখন?
পরে খাবো, আপনি বসে যান!
সমর দা কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আস্তে আস্তে সরে এসে, অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো ও।
ক্রমশ