#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ১

0
1893

#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ১
-Farhina Jannat

১.
পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙল সিদ্রার। কি ব্যাপার? ঢাকা শহরে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙা তো কল্পনাই করা যায়না। অভ্যাসবশত আড়মোড়া ভাঙতে গিয়ে প্রচণ্ড ব্যাথায় আহ করে উঠলো। খেয়াল করে দেখে বিছানার রেলিঙ এর সাথে হাতদুটো দড়ি দিয়ে বাঁধা। পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানেও একই অবস্থা। এবার ঘুমটা যেন এক চটকায় ছুটে গেল। চোখ বুলাল চারিদিকে। এটা তো ওর ঘর না, এমনকি কোনদিন এমন আজব ঘর দেখেছে বলেও মনে পড়ছেনা। ঘরের দেয়াল কাঠের, চাল টিনের, মেঝেটা আবার পাকা। কোথায় আমি? এখানে কিভাবে আসলাম? ভাবতে গিয়ে আস্তে আস্তে সবটা মনে পড়তে লাগল।

প্রতিদিনকার মত হেঁটে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল সিদ্রা। বাসা থেকে মাদ্রাসা মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা। সকালবেলার মোটামুটি ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে ওর বেশ লাগে। বড় রাস্তার ভীড় এড়ানোর জন্য যে শর্টকাটটা ও ব্যবহার করে, সেখানে এই সময়ে কেউ থাকেনা বললেই চলে। যদিও ফাঁকা গলিতে একটু ভয় লাগে, কিন্তু গলিটা পার হতে ১ মিনিটের বেশি লাগেনা। গলিতে ঢুকতেই হঠাৎ একটা গাড়ি এসে ওর একদম গা ঘেঁষে ব্রেক করে। চমকে দাঁড়িয়ে যায় ও। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ড্রাইভিং সিট থেকে এক লোক নেমে এসে ওর মুখের ওপর একটা কিছু চেপে ধরে। তারপরেই আর কিছু মনে নেই।

এখন বুঝতে পারছে ওইটা ক্লোরফরম ভেজানো কিছু ছিল। আমাকে কি কেউ কিডন্যাপ করেছে? কিন্তু কিডন্যাপ তো ছোট বাচ্চাদের করা হয়। আমার মত একটা ২০ বছরের মেয়েকে কেউ কেন কিডন্যাপ করবে। তাহলে কি………. ভয়াবহ সম্ভাবনাটার কথা চিন্তা করে শিউরে উঠলো সিদ্রা। শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখে বোরকাটা গায়ে আছে কিন্তু মাথা ফাঁকা। এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও স্কার্ফটা চোখে পড়লনা। আল্লাহ্‌ জানে কতজন ওকে এই বেপর্দায় দেখে ফেলেছে, সবার প্রথমে এই চিন্তাই আসল মাথায়। আসবেনা কেন, সেই এতটুকু বয়স থেকে বোরকা পরে। নেকাব পরে ক্লাস ফাইভ থেকে। কোনদিন কোন পরপুরুষ ওর হাতগুলাও দেখেনি, চেহারা তো দূরের কথা! সেখানে ও এই বেশে কোথায় না কোথায় পড়ে আছে ভেবে এই প্রথম কান্না পেল ওর।

হাত পা মোচড়ামুচড়ি করে বাঁধন খোলার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু হাত পায়ে লাল লাল দাগ হয়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপকারই হলনা। বাধ্য হয়ে থামতে হল। আস্তে আস্তে ডাক দিল, “কেউ আছেন? ……আমাকে খুলে দিননা…..কেউ কি আছেন…..কেউ শুনতে পাচ্ছেন…..প্লিজ আমাকে বাঁচান……” ভয়ে গলার স্বর উঁচু হচ্ছেনা। কেউ আসছেনা দেখে আস্তে আস্তে গলার আওয়াজ বাড়াল। আরেকবার ভাল করে তাকাল ঘরটার দিকে। ওর নিজের ঘরের চার ভাগের একভাগ ঘরটার সাইজ। মেডিকেলের বেডের মত একটা খাটে ও শোয়া। খাট ছাড়াও একটা সস্তা কাঠের আলমারি আর একটা স্টিলের ট্রাংক চোখে পড়ল। মাথার দিকে আর ডান দিকে ছোট ছোট দুটো জানালা। পাল্লাগুলো খোলা, ঘন সবুজ গাছ দেখা যাচ্ছে, এতই ঘন যে উপরে আকাশও দেখা যাচ্ছেনা। ঘরের একটামাত্র দরজা, বন্ধ।

বাবা-মা আর বোনের কথা মনে পড়ল। বাসায় নিশ্চয় সবাই খুব টেনশন করছে। আম্মু-আব্বুর প্রেসার নিশ্চয় হাই হয়ে গেছে। চারদিক নিশ্চয় পাগলের মত ওকে খুঁজছে। কিন্তু আমি কোথায়? আমাকে যখন কিডন্যাপ করেছে, তখন কেউ কি দেখেনি, ভাবল ও। কিন্তু ওই সময় রাস্তার ওই অংশটা একদম ফাঁকা থাকে। ভয়ে আর আশংকায় বুক কাঁপতে লাগল ওর।

এসময় হঠাৎ দরজাটা নড়ে উঠল। দুচোখভরা আতঙ্ক নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকল সিদ্রা। দরজা খুলে প্রবেশ করল এক অচেনা লোক। গুণ্ডা টাইপের কাউকে দেখবে এমন চিন্তা ছিল ওর। কিন্তু প্রথম দর্শনে লোকটাকে আর যাই হোক, গুন্ডা লাগছেনা। দেখতে ভয়ংকর না হলে কি হবে, লোকটার চোখ দুটোতে যেন রাগ আর কৌতুক খেলা করছে। নিজের অবস্থার কথা স্মরণ হতেই কুঁকড়ে গেল সিদ্রা। বন্দী অবস্থার থেকে ওর বেপর্দা অবস্থা ওকে বেশী পীড়া দিচ্ছে।

“বাহ! ঘুম ভেঙেছে দেখছি।” কৌতুকের স্বরে বলল লোকটা। লোকটার পেছনে একটা মহিলাও ঢুকল ঘরে, অনেকটা ওর বড় খালার বয়সী। চোখ দিয়ে ইশারা করতেই মহিলাটা এসে ওর হাতের বাঁধন খুলে দিল। উঠে বসেই ও জিজ্ঞেস করল,

“আপনি কে? আমাকে কেন ধরে এনেছেন?”

“আস্তে…..’ হিশিয়ে উঠলো লোকটা, “এত তাড়া কিসের! সারাজীবন তো পড়ে আছে কথা বলার জন্য”

মাথাটা চোঁ করে ঘুরে উঠলো সিদ্রার। কি বলছে লোকটা! সারাজীবন মানেটা কি!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here