#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ১৯

0
615

#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ১৯
-Farhina Jannat

১৯.
চোখটা খুলেই সিদ্রা বুঝলো, সামনের কটা দিন খারাপ যাবে। সামনেই আলমারিতে ঠেস দিয়ে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু, লোকটার ডাক শুনে ঘুম ভেঙেছে এমন তো মনে হচ্ছেনা। কতক্ষণ হল এসেছে লোকটা! খালার মত ধড়মড় করে উঠে বসল সিদ্রা, মাথায় হাত দিল ওড়না ঠিকঠাক আছে কিনা দেখার জন্য। খালা যদি কালকের ঘটনা বলে দিয়ে থাকে, আমার কপালে দুঃখ আছে, ভাবল সিদ্রা।

“বাইরে আয়” বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল লোকটা।

তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে মনে হল, ধুর! এত বাধ্যতা দেখানোর কি আছে, বলে দিলে দিবে। এমনিতেই তো এত টর্চার করছে, এর বেশি আর কি করবে?

“কথা কানে গেলনা? দেরী হচ্ছে কেন?”

লোকটার হুঙ্কার শুনেও ধীরেসুস্থে নেমে দরজার কাছে গিয়ে হালকা ঠেস দিয়ে দাঁড়াল সিদ্রা।
লোকটা বাইরে পায়চারি করতে করতে খালাকে বলল, “তুমি তো ওকে আরাম দিয়ে দিয়ে অলস বানিয়ে দিয়েছো, খালা! আমার কথা মেনে চলছোনা কিন্তু তুমি। তুমি কি চাচ্ছো আমি তোমার জায়গায় অন্য কাউকে এপয়েন্ট করি?”

সজোরে মাথা নাড়লো খালা, কিন্তু সিদ্রার চেহারা ভাবলেশহীন, খেয়াল করলো লোকটা।
আর সিদ্রা ভাবছে, লোকটাকে দেখে এক্সট্রা রাগ করে আছে বলে মনে হচ্ছেনা। খালা মনে হয় কিছু বলেনি। থ্যাংকইউ খালা, মনে মনে বলল ও।

“আমি বরং তোমার জায়গায় হাসানকে এপয়েন্ট করি, ছেলেটা খুবই ভাল, আমার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে, কোন চিন্তা করতে হবেনা আমার”

মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল সিদ্রার।

“ক-ক্কি বলছেন কি আপনি? এই জঙ্গলের মধ্যে আমাকে একটা ছেলের কাছে রাখবেন?” মুখ দিয়ে কথাগুলো বের হয়ে যেতেই আফসোস হল ওর, ইশ! নিজের দুর্বলতা নিজেই প্রকাশ করে দিলাম!

“কেন? সমস্যা কি? তোর বাকি কিউরিওসিটিগুলোও নাহয় ওকে দিয়ে মিটিয়ে নিবি!”

লোকটার নোংরা ইঙ্গিত বুঝতে একটুও কষ্ট হলনা সিদ্রার। রাগী চোখে তাকাল ও লোকটার দিকে। জবাব দিতে গিয়েও থেমে গেল, বেশি কথা বলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

লক্ষ্য করছিল লোকটা ওর প্রতিক্রিয়া, বলল, “আর তুই যদি সেটা না চাস, তাহলে খালার ভালমানুষীর সুযোগ নেয়া বন্ধ কর। তুই কি করিস না করিস, আমি কিন্তু সবই জানি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে…… হঠাৎ করে একদিন দেখবি, খালার জায়গায় হাসান বসে আছে”
সিদ্রা ভয়ঙ্কর বিষয়টা কল্পনাতেও আনতে চাইলোনা। আল্লাহ্‌ আমাকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। বেশ, আমি এখন লোকটার কথামতই চলবো। তারপর সুযোগ বুঝে আবার পালানোর চেষ্টা করব, সিদ্ধান্ত নিল সিদ্রা।

খালা ওর হাতে এসে কিছু একটা ধরিয়ে দিতেই চিন্তার জ্বাল ছিন্ন হল সিদ্রার। তাকিয়ে দেখল, একটা লন্ড্রি বাস্কেট ভরা কাপোড়চোপড়। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে খালার দিকে তাকাতেই জবাব আসল লোকটার কাছ থেকে, “আমার জামা কাপড় গুলো ভাল করে ধুয়ে দে”

সিদ্রার ইচ্ছে করল, বাস্কেটটা ছুঁড়ে মারে লোকটার মাথায়। কিন্তু বেচারি সিদ্রা! শুধু একটা অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করেই ক্ষান্ত হতে হল ওকে। ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড়গুলো ভিজিয়ে পানির ড্রামের দিকে এগোতেই লোকটা এসে ড্রামটা উলটে দিল। এমনভাবে ফেলল যে পানি তো পড়ে গেলই, ছলকে গিয়ে সিদ্রার নিচের দিকটাও অনেকটা ভিজে গেল।

“এটা কি করলেন আপনি?” রাগী স্বরে বলল সিদ্রা।

“আমি চাইনা বাসি পানিতে আমার পোষাক ধোয়া হোক” বলে আগের মত করে টেবিলের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে পড়ল লোকটা।

রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে পানি আনার বালতিটা নিয়ে সিদ্রা ঝর্ণার দিকে রওনা হল। লোকটার ইশারায় খালাও পিছু নিল ওর।

তিন বালতি পানি এনে এতগুলা পোষাক ধুয়ে নেড়ে দেয়ার পর সিদ্রার শরীরে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই। ধপ করে বারান্দায় বসে পড়ল ও। এদিকে পানিতে আর ঘামে ভিজে নিজের অবস্থা তো পুরো খারাপ, কিন্তু গোসল করার জন্যে পানি আনতে যেতে হবে ভাবতেই গোসলের ইচ্ছা উবে যাচ্ছে। লোকটার উপরে ওর রাগ চরমে পৌঁছে গেছে, সারাক্ষণ সামনে বসে থেকেছে বদমাশটা। না পেরেছে মাথার কাপড় নামাতে, না পেরেছে জামার হাতাটা একটু উপরে তুলতে। সুখের ব্যাপার এটুকুই যে খালা রান্না বসিয়েছে, ওকে অন্তত আর ওই কাজটা করতে হচ্ছেনা।

চেয়ার ছেড়ে উঠে দুহাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙল লোকটা। বলল,
“খাওয়ার আগে গোসলটা সেরে ফেলি” সিদ্রার দিকে তাকিয়ে বলল, “যা, আমার গোসলের জন্য পানি নিয়ে আয়”

জ্বলন্ত আগুনে যেন ঘি পড়ল সিদ্রার, “পারবোনা আমি। ড্রামের পানিটা উলটে দেবার আগে এটা ভাবা উচিত ছিল। নিজের গোসলের পানি আনার শক্তি নাই, আর উনার জন্য পানি এনে দিচ্ছি, হুহ!”

লোকটা হা হয়ে গেল, এমন জবাব মনে হয় আশা করেনি। কিন্তু পরক্ষণেই সামলে নিয়ে বলল, “বেশি কথা বলে আমার মাথা গরম করিসনা বলছি। চুপচাপ বালতি নিয়ে হাঁটা শুরু কর”

সিদ্রা তাও উঠছেনা দেখে সত্যি সত্যি রেগে গেল লোকটা। চোখ পাকিয়ে বলল, “উঠবি, নাকি শিকল দিয়ে টেনে নিয়ে যাবো?”

রাগের সাথে উঠে বালতি নিল সিদ্রা। এবার লোকটা নিজেই ওর সাথে চলল পানি আনতে।

*****
বালতি ভরে উপরে উঠতেই দেখল লোকটা শার্ট এর বোতাম খুলছে।

“কি করছেন কি আপনি?” আঁতকে উঠে বলল সিদ্রা।

“আমি ঝর্ণাতে গোসল করব। তুই পানি নিয়ে যা। খালার রান্না শেষ হলে আমার জন্য তোয়ালে আর শুকনা কাপড় নিয়ে আসবি”

লোকটা ততক্ষণে শার্ট প্রায় খুলে ফেলেছে, তাড়াতাড়ি করে উল্টো দিকে ঘুরে গেল সিদ্রা। যা ইচ্ছা তাই করুক, আমার কি, বিড়বিড় করে ফিরতি পথ ধরল ও। আহ! এখন এই পানি দিয়ে আমি গোসল করতে পারবো, ভাবতেই মনটা খুশি হয়ে গেল সিদ্রার।

দিনের পর দিন যে মাত্র এক বালতি পানি দিয়ে গোসল করা যায়, সিদ্রা এটা স্বপ্নেও ভাবতে পারতোনা। কিন্তু এখন এটুকুই অনেক মনে হয়। চুলে চিরুনি পড়েনি কতদিন, তেল শ্যাম্পু তো দূরের কথা, ভয়ে চুলে হাতই দেয়না সিদ্রা, সবসময় খোপা করে রাখে। আর কয়দিন পরে মনে হয় সন্ন্যাসীদের মত জটা লেগে যাবে, কথাটা মনে হতেই হাসি পায় সিদ্রার। যেখানে জীবনের ঠিক নেই, সেখানে চুলের চিন্তা করছি আমি!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে পড়ল লোকটার হুকুম তামিল করতে। সদ্য শুকানো একটা গেঞ্জি-প্যান্ট, তোয়ালে আর আবার পানি আনার জন্য বালতি নিয়ে ঝর্ণার কাছে আসল সিদ্রা। কিন্তু লোকটাকে কোথাও দেখতে পেলনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here