#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব৬

1
844

#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব৬
-Farhina Jannat

৬.
চা বানিয়ে মহিলার হাতে দিতেই লোকটা বলল, এবার তোর আর খালার জন্য চা বানা।

“আমি চা খাবোনা।“

“তোর ইচ্ছা কেউ জানতে চেয়েছে? আমি যেটা বলছি, চুপচাপ সেটা কর। নাহলে…….“ কথা শেষ করলনা লোকটা।

চড় থাপ্পড় মারবেন, এইতো…. মনে মনে বলল সিদ্রা। থাক বাবা, থাপ্পড় খাওয়ার থেকে চা খাওয়া ভাল, ভাবল ও। একবারে বললেই হতো! তবে ভালই হয়েছে, নিজেরটা এবার ভাল করে বানানো যাবে। চা বানাতে বানাতে বারবার লোকটার দিকে তাকাচ্ছে, চা খাওয়ার রিএকশন দেখার জন্য। কিন্তু লোকটা চা না খেয়ে ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।

সুন্দর করে চা বানিয়ে নিজের কাপটা যেই কাছে নিতে যাবে, অমনি লোকটা এসে ওর কাপটা নিয়ে নিল। সিদ্রা তো হা, কি হল এটা?

লোকটা আবার চেয়ারে গিয়ে আগের মত আয়েশ করে বসে নতুন চায়ে চুমুক দিল। আর খালাকে কি যেন ইশারা করল। খালা গিয়ে ওই আগের বানান চা টা ওর হাতে ধরিয়ে দিল।

“সবাই একসাথে খাই, কি বলিস! আর গরমটা থাকতে ঠাণ্ডা খাওয়ার কি দরকার, তাইনা?” বাঁকা স্বরে বলল লোকটা।

হায়! হায়! এতো বুমেরাং হয়ে গেল। লোকটার শয়তানের চোখ, নিশ্চয় দেখে ফেলেছিল। এখন আমি এই চা কেমনে খাব, ভাবছে সিদ্রা। আড়চোখে লোকটার দিকে তাকাতেই বলল, “চা টা খেয়ে নে, তারপর আমি তোকে তোর চালাকির মজা দেখাব”

“কিসের চালাকি!…… আ-আমি কোন চালাকি করিনি” মিথ্যা কথা বলতে গিয়ে কথা আটকে যাচ্ছে সিদ্রার।
“তাই নাকি!” ভ্রু নাচাল লোকটা। “তাহলে খাচ্ছিসনা কেন চা টা?”

আস্তে আস্তে কাপটা তুলে চুমুক দিল সিদ্রা। ইয়াক! কি তিতা!! পুরো বিষ মনে হচ্ছে। চিনিও মাত্র এক চামচ দিয়েছিল। একেই বলে কপাল! জীবনে কোনদিন দুষ্টুমি করেও কাউকে ঠকায়নি সিদ্রা, অথচ আজকে লোকটার উপর রাগ করে এমন করতে গিয়েই খেল ধরা। অনেক চেষ্টা করেও চেহারার বিকৃতি এড়াতে পারলনা ও।

“কি! এত টেস্টি করে চা বানিয়েছিস, এখন মুখ বাঁকাচ্ছিস কেন?”

কি আর বলবে, কথা খুঁজে পাচ্ছেনা সিদ্রা, ভুল তো করেছে, এখন আর মিথ্যে সাফাই গেয়ে কি হবে।
“স্যরি, আপনি আমাকে অযথা এত টর্চার করছেন, তাই আপনাকে একটু শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম” মিনমিন করে বলল সিদ্রা।

“তোর এতবড় সাহস! তুই আমাকে শাস্তি দিবি, আমাকে? এবার তুই এই বিষ চা গেল, নাহলে কিন্তু আমি গেলাব”

“ঠিক আছে ঠিক আছে” ভাত খাওয়ানোর কথা মনে পড়ে গেছে সিদ্রার,”আমি চা খেয়ে নিচ্ছি। আমি দোষ করেছি, স্বীকার করে নিচ্ছি। কিন্তু আপনিও আপনার ভুল বোঝার চেষ্টা করুন। আপনি আমাকে এভাবে শুধু শুধু আটকে রাখতে পারেননা।“

“আচ্ছা? আমি ভুল করেছি, তাই নাকি?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনি ভুল করছেন। আপনি আমাকে যেসব অপবাদ দিচ্ছেন, সেগুলা মিথ্যে। একজন পবিত্র মেয়েকে মিথ্যে অপবাদ দেয়ার গুনাহ কত আপনি জানেন? কুরআন শরীফের সূরা নূরে আল্লাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন।“

“আচ্ছা, তো হাফেজ সাহেবা আমাকে এখন কুরআনের জ্ঞান দিবেন।“ লোকটা দুহাত দিয়ে তালি বাজালো। “আর পবিত্র মেয়ে কে, তুই!” হা হা হা…..”তো হাফেজ সাহেবা, এত জ্ঞান যখন আছে আপনার, কুরআনে ছেলেদের রূপের ছটায়, কথার জ্বালে ভুলিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে পাগল করার কোন শাস্তির উল্লেখ নাই?“

রাগের চোটে উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিল সিদ্রা। কিন্তু গায়ে কোন ওড়না নেই মনে পড়তেই চট করে বসে পড়ল আবার। একটু ঘুরে বসে বলল,
“আপনি আবার একই কথা বলছেন। আপনার কাছে কি প্রমাণ আছে, যে আমি ওইসব করেছি। আর যদি করেও থাকি, তার শাস্তি দেয়ার আপনি কে?”

ওর কথা শুনে এমনভাবে গলা ফাটিয়ে হাসতে লাগল লোকটা যেন এর থেকে মজার কথা আর শোনেনি। পরক্ষণেই চোখ মুখ শক্ত করে বলল, “আমি কে? আমিই তো দিব।“ চায়ের কাপ রেখে সোজা হয়ে বসল লোকটা। বুকে হাত দিয়ে বলল, “তুই আমার কলিজাতে হাত দিয়েছিস। তুই দুনিয়ার সব ছেলেদের পেছনে লাগলেও আমি দেখতে আসতামনা। কিন্তু তুই……..” হঠাৎ থেমে গেল লোকটা, দৃষ্টি সরিয়ে নিল সিদ্রার দিক থেকে। সিদ্রার লোকটার চোখে যেন পানির আভাস পেল।

একটু অবাক হল সিদ্রা, কিন্তু তাতে রাগ কমলোনা এক ফোঁটাও, “থামলেন কেন? বলেন। নাকি মিথ্যে গল্প আর খুঁজে পাচ্ছেননা”

“তোকে কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য না।“ উঠে দাঁড়াল লোকটা। “ আর মিথ্যে গল্প আমি বলছি, না তুই? খুব সতী সাজছিস তো, দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা“ এই বলে লোকটা পাশের ঘরে ঢুকল।

সিদ্রা কি করবে বুঝতে না পেরে দৌড় দিল ওর ঘরের দিকে। মাথায় প্রথম চিন্তা, গায়ে কিছু দিতে হবে। তাড়াতাড়ি কোনরকমে চুল খোপা করে স্কার্ফটা পেচাতেই লোকটা ঘরে ঢুকল।

ওর এই তাড়াহুড়ো করে স্কার্ফ পরা দেখে লোকটা হাসল। “হায়রে নারী, এক অংগে কত রূপ! বেপর্দা ছবি ফেসবুকে দিতে গায়ে বাধেনা, আর এখানে উনি আমার সাথে পর্দা করছেন!!”

“আমার ছবি, ফেসবুকে! আর কি কি বানিয়ে বলবেন আপনি আমার সম্পর্কে!!” আরেক দফা অবাক হল সিদ্রা।

“বানিয়ে বলছি বুঝি! তাইলে কিভাবে চিনলাম আমি তোকে!! নাটকটা এবার বন্ধ কর। আমি আর নিতে পারছিনা তোর নাটক” লোকটা ওর দিকে এগিয়ে আসতেই সিদ্রা খেয়াল করল, লোকটার হাতে একটা লম্বা শিকল। ভয়ে পিছিয়ে গেল সিদ্রা, কি করতে চাচ্ছে লোকটা!

পেছাতে পেছাতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল, বুকের ওপর দুই হাত দিয়ে আড়াল করে চিল্লান দিল “কি করতে চাইছেন আপনি!” লোকটা কিছু না বলে বসে গিয়ে ওর পায়ে শিকল পরিয়ে দিল। এরপর শিকলের অন্য প্রান্ত ধরে টান দিল। হেঁচকা টানে পড়ে গেল সিদ্রা।

“আয় আমার সাথে, না হাঁটলে ছেঁচড়াতে ছেঁচড়াতে নিয়ে যাবো কিন্তু।“

কোনমতে উঠে লোকটার পেছন পেছন হাঁটা শুরু করল সিদ্রা। ঘর থেকে বের হয়ে জংগলের ভেতর হাঁটা শুরু করল লোকটা।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here