#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৪ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
নিকষ গভীর আঁধার রাত চারিদিকে কৃত্রিম আলোই ভরপুর হসপিটালের সামনের রাস্তায় জনজাট রাত গভীর হলেও মানুষের ব্যস্ততার শেষ নেই। ফিনাইলের গন্ধে ক্লান্ত চারি দিক। নির্ঘুম রাত চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে অক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়শীর দিকে। অস্থির মনে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে অপেক্ষা তার চোখ খুলে তাকানোর। মাথায় টিসটিস ব্যাথা নিয়ে জারা নড়েচড়ে উঠে শান মাথা থেকে হাত সরিয়ে নেয় জারা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায় ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখে চারিদিক বুঝতে অসুবিধা হলো না সে কোথায়। হঠাৎ নিজের ওপর বিরক্ত আসলো বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ‘চ’ শব্দ করে ঘুমঘুম কন্ঠে নিজেই বলল
-‘ জীবনে ভালো হবি না তুই সবাইকে টেনশন দিতে এতো ভালো লাগে তোর ওফ্ফ কাল আরও কয়েকটা ঔষধ খেলাম না কেন? তাহলে আর জ্বর আসতো না ‘
জারা মাথায় হাত দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। শান শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। ঘুম কন্ঠ শুনে তার হার্ট বিট যেনো কয়েকগুণ বেরে গেছে। শান নিজের বুকের বা পাশে হাত দিলো। নিঃশব্দে সাবধানে শ্বাস ফেলতে লাগলো।
হসপিটালের জারার সাথে কে আছে মাথায় আসতেই জারা চট করে চোখ খুলে নিলো চোখ ডলতে ডলতে পাশে তাকিয়ে শানকে দেখতে পেয়ে থেমে গিয়ে ঘুম কন্ঠে বলল
-‘ আপনি? এখানে? ‘
শান গলা ঝেড়ে বলল
-‘ অন্য কেউ থাকার কথা ছিল না-কি? ‘
জারা কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না এই লোকটা সবসময় ত্যাড়ামো করে কোনো কথা সোজাসাপটা উত্তর দিতে পারে না। যা বলবে সব ঘুড়িয়ে প্যাচিয়ে যা জারার মোটেও পছন্দ নয়। জারা অকপটে বলল
-‘ থাকার লোকের তার অভাব নাই তাই শুনছিলাম এতো ভালোবাসার লোক থাকতে আপনি ই কেনো? ‘
-‘ বাবা জানতাম না তো তোর এতো ভালোবাসার মিলিয়ন বিলিয়ন লোকজন আছে জানলে আর থাকতাম না ‘
জারা আর কিছু বলল না। কথায় কথা বাড়বে ঝগড়া লাগবে। ঝগড়া করার মুড বা মন মানসিকতা কোনোটাই নাই শরীরেও আর কুলাছে না। জারা চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। শান কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল
-‘ শরীর কি খুব বেশি খারাপ লাগছে? কিছু খাবে? ‘
জারা চুপ থেকে ভাবলো ২ মিনিট পর উত্তর দিলো।
-‘ খেতে ইচ্ছে করছে না ‘
জারার কথা শুনে শান বাইরে চলে এলো। জারা শব্দ পেয়ে চোখ খুলে দেখলো শান নেই। জারা বিরক্ত হয়ে নিজে নিজে বলল
-‘ আমার কথা যখন শুনবি না তখন জিজ্ঞাসা করার কি মানে খবিশ লোক কোথা কার এবার যদি আমারকে জোর করে খাওয়াতে এলে একটা কিক্ মেরে দিবো। দূর! বাসায় যাবো কাল-ই হসপিটালে কার ভালো লাগে? ‘
কথার মাঝে শায়রী আসলো সাথে শান ও। জারা তাকালো শায়রী দাঁত কেলিয়ে বলল
-‘ কি রে চাশমিশ কেমন আছে? হসপিটালে থাকবেন না কেনো হসপিটাল তো আপনার ফেবারিট জায়গা ‘
-‘ একেবারে ফাউল কথা বলবি না ‘
-‘ তাইলে খাস না কেন ঠিক মতো নিজের খেয়াল রাখিস না কেনো? ‘
-‘ তুই কথা না বলে ক্যানেলা খোল ‘
শায়রী জারার হাতের ক্যানেলু খুলতে খুলতে বলল
-‘ হুহ বুঝলাম আন্টিকে বলতে হবে তোর বিয়ের কথা বিয়ে দিলে তোর বর তোকে পি’টি’য়ে খাওয়াবে ‘
কথাটা বলে শায়রী আড়চোখে শানের দিকে তাকালো শান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে শায়রীর কথা জারার কানে গেলো ঠিকি কিন্তু প্রতিত্তোর করলো না। চোখ খিঁচে চাদর খামছে শুয়ে রইলো। ব্যাথা পেতেই ‘আহ’ করে উঠলো।
-‘ শেষ ‘
জারা চোখ খুলে বা হাত দিয়ে ডান হাত বুলিয়ে বলল
-‘ ডান হাতে দিসিস কেন বা হাতে দিতে পারিস নি ‘
-‘ তোর হাতের শিরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই ডান হাতেই দিসি ‘
-‘ খুব ভালো করছেন আপনি ‘
-‘ হ আমি জানি আমি সবসময় ভালো কাজেই করি তোর চোখে চশমা ছাড়া যে চোখে পরলো আমি ধন্য হয়ে গেলাম তো বলে ফেল কি খাবি কি খেতে ইচ্ছে করছে? ‘
-‘ তোরে খেতে ইচ্ছে করছে ‘
শায়রী লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে হেলে দুলে বলল
-‘ ছিঃ ছিঃ এসব কি কস আমার বর…’
শায়রী আর কিছু বলতে পারলো না জারা ধমক দিয়ে বলল
-‘ দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে ‘
শায়রী মুখ ভেংচি কেটে বলল
-‘ যাচ্ছি একেবারে বাড়ি যাচ্ছি আর আসবো না ‘
-‘ হ যা তোর তো আজ রাতে ডিউটি না তাহলে আছিস কে দূর হ কাল সকালে যেনো তোকে আমার সামনে না দেখি ‘
-‘ কিছু বললেন আপনি? ‘
শায়রী চলে গেলো চোখ বন্ধ করে নিলো। শান হটপট থেকে স্যুপ বোলে স্যুপ ঢেলে চামশ নিয়ে জারার পাশে বসলো। বাড়ি থেকে শান্তির পাঠিয়ে দিয়ে ফোন দিয়ে বলল দিয়েছে জারার ঘুম ভাংলেই জেনো জারাকে খেতে দেয়। শান বলল
-‘ উঠে বসো খেয়ে নাও ‘
জারা চোখ খুলে স্যুপ দেখে বলল
-‘ এটা কোথায় পেলেন এখন? ‘
-‘ বাসা থেকে পাঠিয়ে দিয়েছিলো ‘
-‘ ও কিন্তু আমার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ‘
-‘ খেয়ে নে তারাতাড়ি তোর সাথে ঢং করার কোনো ইচ্ছে বা শখ কোনো টাই নাই মা বলে দিয়েছিল বলে তোকে খেতে বলছি না হলে তাও বলতাম না ‘
জারার উল্টো প্রশ্ন করে বলল
-‘ আপনি খেয়েছেন? ‘
শান চুপ থেকে উত্তর দেয়
-‘ কেনো আমি খাবো না কেনো? আমার শোক লাগছে যে আমি খাবো না? বেশি কথা না বলে উঠে বস খেয়ে নে ‘
-‘ বমি করে দিলে ‘
-‘ করবি তাও খাবি ‘
জারা জানে শানের সাথে পারবে না যত যায় করে হক জারাকে যখন খাবাবে বলছে তখন খাবাবেই জারা উঠে বসে বলল
-‘ দিন খাচ্ছি ‘
শান ফট করে বলল
-‘ হা কর আমি খাইয়ে দিচ্ছি ‘
জারা চমকে তাকালো শানের দিকে শান জারা মুখে স্যুপ দিয়ে বলল
-‘ মটেও ভাববি না আমি তোকে ভালোবাসি তোর হাত ফুলে আছে ব্যথা তাই খাইয়ে দিলাম ‘
জারা কিছু বলল না খেয়ে নিলো। শান ঔষধ খাইয়ে দিলো জারা ঘুমিয়ে পড়লো।
সকাল ৭ টায় ঘুম ভাংতেই জারা শানকে বেডে হেলান দিয়ে ঘুমাতে দেখে কিছু বলতে গিয়েও বলল না। হাত বাড়িয়ে নিজের ফোনটা হাতে নিলো কোনো কাজ না পেয়ে গেম খেলতে লাগলো। হুট করে শান জারার ফোন কেরে নিয়ে বলল
-‘ ফোন দেখলে মাথা ব্যথা করবে ‘
-‘ করুক আপনি ফোন দিন ‘
-‘ নাহ ‘
জারা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো
-‘ তাইলে বাসায় নিয়ে চলুন আমার এখানে ভালো লাগছে না ‘
-‘ দেখছি ‘
১০ টার দিকে সকল কাজকর্ম শেষে জারা বাসায় ফিরলো। জারাকে দেখে শান্তি বেগম অস্থির হয়ে পড়লেন কি করবে না করবে দিক বেদিক ছোটাছুটি করতে লাগলো। জারা শান্তিকে শান্ত হতে বলল। তিনি শান্ত হলেন না। ইশা পরিক্ষা দিতে গেছে। আসলাম অফিসের জরুরি মিটিংয়ে গেছে। জারাকে বাসায় দিয়ে শানও কোথায় উধাও হয়ে গেলো। জারা সাওয়ার নিয়ে বাইরে এসে বলল
-‘ মনি কি করছ? এতো ব্যস্ত হওয়ার তো কিছু দেখছি না ‘
-‘ জানি তো আমরা তোর কেউ না ‘
-‘ এসব কথা কেনো বলছ?’
-‘ তোর যে হাত কাটছে একবারও বলছিস আমাকে? ‘
জারা শান্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
-‘ এমন করছ কেনো? তোমরা টেনশন করবে বলে কিছু বলি নি’
-‘ সর আমাকে মনি বলে ডাকবি না আমি তোর কেউ না ‘
জারা শান্তির অভিমান খুব কষ্টে ভাংগালো। শান্তি জারাকে খাইয়ে দিয়ে বললেন
-‘ রুমে গিয়ে রেস্ট নিবি একদম এই শরীর নিয়ে নিয়ে আসবি ‘
জারা মাথা নাড়িয়ে উঠে এসে শুয়ে পড়লো। কিন্তু ভালো লাগছে না শুয়ে থাকতে। উঠে ছাদে চলে আসলো আজ আকাশ মেঘলা জ্যোষ্ঠ মাসের শেষের দিকে জারা দেখলো নিচে অনেক গুলো কাঠগোলাপ পড়ে আছে জারা মাথায় বুদ্ধি আসলো খুশিতে লাফিয়ে দৌড়ে নিচে গিয়ে সুই সুতা এনে কাঠগোলাপ ফুলের মালা বানাতে লাগলো। হাতে সুই ফুটে আহ শব্দ তুলে হাত দিয়ে আংগুল ধরে দেখলো র-ক্ত পরছে। কোথা থেকে শান এসে জারার আংগুল ধরে গালে দিলো। জারা কেঁপে উঠলো। শান ছেড়ে দিয়ে বলল
-‘ দেখে কাজ করতে পারিস না? এটা কি করছিস? ‘
জারা এখনো অবাকের রেস কাটিয়ে উঠতে পারি নি শুকনো ঢোক গিলে বলল
-‘ মালা ‘
শান সুই সুতা নিয়ে মালা বানাতে বানাতে বলল
-‘ অকর্মা ঢেকি’
জারা আরো অবাক হলো। কি হচ্ছে এসব জারা কি স্বপ্ন দেখছে? বিষময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো শানের দিকে মালা বানানো শেষে শান জারার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলল
-‘ রুমে যা অসুস্থ না তুই মাথা ঘুরে পরলে আরেক কান্ড ‘
জারা হতভম্ব হয়ে রুমে আসলো। থম মেরে বসে রইলো অনেকক্ষণ। খুশি হবে কি দুঃখ পাবে বুঝে উঠতে পারলো না। জারা হাতের মালাটা ডাইরির মাঝে রেখে দিলো। লিখলো…
১৬ জুন ২০২২
ভালোবাসা আর কাঠগোলাপ
দুটোই খুব প্রিয়…❀
চলবে ইনশাআল্লাহ