#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১৩ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
-‘ তুই আর শান কি ঝগড়া করছিস? ‘
-‘ তেমন কিছুই না মনি। তোমার এসব কে বলল মনি? ‘
-‘ আমাকে কে বলবে আমি শুনতে পাইছি রুম থেকে ‘
-‘ খালা বলছে না? খালা…’
সুমী রুমের বাইরেই ছিল জারা ডাকতেই রুমে আসলো। জারা সুমীর দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-‘ তুমি আমার সাথে কথা বলবে না খালা ‘
-‘ ও আম্মা কি কও এসব ‘
-‘ ওকে বকছিস কেনো? কি হইছে সেটা আমাকে সরাসরি বল নাহলে আমি বুঝবো কেমন করে ‘
-‘ তেমন কিছুই হয় নি মনি তোমার ছেলে সারাক্ষণই আমার সাথে পাগলা ষাঁড়ের মতো হমড়িতমড়ি করে বাদ দাও তো পাগলা ষাঁড়ের কথা আমি ধরি না ‘
শান জারার রুমের সামনে দিয়েই যাচ্ছিল। তখনি জারার কথা শুনে থেমে যায় রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুমে ডুকে বলল
-‘ কি বললি তুই? আমি পাগলা ষাঁড়! ‘
জারা ঘাবরালো না। জারা মুখ বাকিয়ে বলল
-‘ ওমা আমি কখন বললাম আপনি তো নিজেই নিজের মুখে শিকার করলেন আপনি পাগলা ষাঁড় ‘
শান্তি বেগম আর সুমী মুখ টিপে হাসলো ওদের হাসতে দেখে শান রেগ বলল
-‘ তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো ‘
জারা কোনো কিছু না ভেবেই ভাব নিয়ে বলল
-‘ পরে কেনো দেখবেন এখনি দেখেন আমি আপনার সামনেই দাড়িয়ে আছি। ‘
শান বাঁকা হেসে বলল
-‘ উহুম না থাক এখন দেখলে তুই লজ্জা পাবি পরেই দেখে নিবো ‘
বলে চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো। শান কি মিন করছে সকলে বুঝতে পারলো জারা লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো মুখে রক্তিম আভা ফুটে উঠলো। শান্তি বেগম কিছু না শোনার ভান করে চলে গেলেন সাথে সীমাকেও নিয়ে গেলে সকলে চলে যেতেই জারা বিরবির করে বলতে লাগলো
-‘ অ’স’ভ্য বেহা/য়য়া নি/ল/জ্জ ছেলে একে বারে ঠোঁট কাটা কোথায় কি বলতে হয় জানে না। বিদেশের ছোঁয়া লাগছে তো এমন তো হবেই ‘
জারার বিরবিরের মাঝে নিচ থেকে ডাকলো। শান্তি খেতে ডাকছে। আসলাম আর ইশাও চলে এসেছে। জারা চিৎকার দিয়ে বলল
-‘ আসছি ‘
জারা কিছুক্ষণ পর পরই নিচে নামলো শান্তি বেগম সার্ভ করে দিচ্ছিলেন। জারা ইশা পাশে বসে পড়লো উল্টো পাশে শান বসেছে। জারা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে ইশাকে প্রশ্ন করলো
-‘ পরিক্ষা কেমন হলো? ‘
-‘ হয়েছে মোটামুটি জানি না কি হবে ‘
শান ফোড়ন কেটে বলল
-‘ ফেল করলে বাসা থেকে বের করে দিবো ‘
ইশা রেগে বলল
-‘ তুই চুপ কর শান ‘
-‘ আমি তোর বড় রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবি ‘
-‘ পারতাম না ‘
আসলাম বললেন
-‘ আহা হচ্ছে টা কি? ‘
-‘ তোমার ছেলেই তো আমাকে খেচাছে কেনো? ‘
আসলাম কৃত্রিম কপট রাগ দেখিয়ে বলল
-‘ শান চুপ করে খাও ‘
ইশা শানের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিলো।
জারা বলল
-‘ আর কয়টা এক্সাম আছে? ‘
-‘ আর দুইটা ‘
শান্তি বেগম ভাজি দিতে দিতে বলল
-‘ জিহানের মা ফোন দিয়ে ছিল আমাদেরকে ওদের বাসায় যেতে বলছিল ইশার এক্সাম শেষ হলে এনগেজমেন্টটা করিয়ে রাখতে চাইছেন আমি তেমন কিছুই বলতে পারলাম না তোমার আর শানের কাছে শুনে বলবো বলছি ‘
ইশা স্থির হয়ে গেলো। শুকনো ফাঁকা ঢোক গিললো। অস্বস্তি আর লজ্জায় টইটম্বুর হয়ে গেলো। মাথা নিচু করে বসে রইলো ইশা অবস্থা দেখে জারা মুচকি হাসলো কিছু বলল না সব মেয়েরাই বিয়ের কথা শুনলে লজ্জা ভয়ে আরোস্ট হয়ে যায়।
শান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
-‘ হুম ছেলে ভালো আমি খোঁজ নিয়েছি আর ইশাও যখন ছেলেটাকে ভালোবাসে তখন আর না করার কিছু নাই আম্মু ‘
আসলাম বলল
-‘ ওরা সুখী হলেই সব আর যেখানে ইশার অমত নেই ছেলেও ভালো না করার কোনো প্রশ্ন আসছে না ‘
আর কেউ কিছু বলল না পরিবেশটা গুমোট হয়ে গেলো। একটা মেয়ের যখন বাসায় বিয়ের কথা উঠে তখন সেটা সুখের আবার অন্য দিকে বিদায়ের কষ্ট সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি।
_____________
হাতে ব্যথায় জারার রাতে জ্বর আসলো। জারা অল্প জ্বরেই ঔষধ খেলো তবুও জ্বর কমার নাম নেই। জারার যত বারই জ্বর আসুক না কেনো ততো বারই হসপিটালে ভর্তি হতে হয়েছে। হসপিটালে ভর্তি না হলে যেনো সে জ্বর কমতেই চাই না কি অদ্ভুত সে জ্বর।
সকালে উঠে জারার জ্বর একটু কমেছে তবুও মাথা ঝিম ধরে আছে। মাথায় ব্যথায় টিসটিস করছে। কিন্তু শুয়ে থাকলে তো চলবে না আজ কেসের লাস্ট ডেট সব প্রুফ পেস করতে হবে কোটে। জ্বর জারাকে দমাতে পারলো না জারা জ্বর গায়ে চলে গেলো কোটে সকালে খাই ও নি কেউ জানেও না জারার জ্বর।
কোটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জারা রুহানের অপেক্ষায় কিন্তু রুহান এখনো অপরাধীদের নিয়ে আসি নি। জারার দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তবুও দাড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পররেই রুহান এলো।
-‘ কি রে ওরা মুখ খুলেছে কিছু বলছে ‘
-‘ না রে দোস্ত তোদেরকে এতো মা’র’ছি কাল রাতে তবুও মুখ খুলে নি ‘
-‘ কিন্তু এখনো তো ১জন অপরাধী মিসিং ভিকটিমের দেওয়া ছবির বননার সাথে দুই জনের মিল আছে আর একজন কে সে? আর এর পিছনে এদের বস কে? ‘
-‘ হুম কিন্তু ও বলছি ৫ জন ছিল তার মধ্যে থেকে আমরা তিনজনকে পাইছি এখনো দুইজন মিসিং ‘
-‘ কি হবে তাহলে এই কেসটায় ‘
-‘ জানি না আর এতো টেনশন নিতে পারছি না ‘
-‘ আচ্ছা দেখা যাক কোটের রায় কি আসে আরো কয়দিন ডেট বারায় ‘
-‘ হুম দেখা যাক তুই কি অসুস্থ? চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো? ‘
-‘ আরে দূর না আমার কি হবে? চল ভিতরে চল ‘
কোটের জারা একে একে সকল প্রমান কোটে পেস করলো। জারা তাকালো দূরে বসে থাকা ভয়ার্ত কিশোরী মেয়েটার দিকে মেয়েটার নাম ও পুতুল দেখতেও পুতুল গায়ের রং শ্যামলা হলেও চেহারা একটা মায়া আছে যে মায়ায় জারাকে খুব করে কষ্ট হয়। এতটুকু মেয়ে এই বয়সে কি-না এতো বড় দাগ লাগলো তার জীবনে। মেয়েটার তো এখন হেসেখেলে জীবন কাটানো উচিত কিন্তু না তার জীবনের পৃষ্ঠা ভিজে উল্টো পাল্টা হয়ে গেছে কিছু জা/নো/য়া/রদের জন্য।
কোলাহল সৃষ্টি হলো জারা পুতুলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে দেখলো অপরাধীগুলো নিচে পড়ে আছে। জারা চমকালো। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কি হলো বুঝতে পারছে না এইতো ঠিক ছিল আবার কি হলো? রুহান জারার কাছে এসে বলল
-‘ সব শেষ দোস্ত ওরা সু/ই/সা/ই/ড করছে’
জারা মাথা ব্যথা বারতে লাগলো। কোটের ভিতরে হইচই চেচামেচি বেঁধে গেলো লা-শ গুলো বাইরে নিয়ে গেলো।
★
ল্যান্ড লাইনে ফোন বাজছে সুমি এসে ফোন রিসিভ করলো পুরোটা না শুনেই কান্নাকাটি জুড়ে দিলো। বাসার সকলে জড়ো হলো এক জায়গায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ