#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৮ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
সময় আর স্রোত বহমান এরা কারোর জন্য অপেক্ষা করে না বা কেউ এদেরকে থামাতে পারে না এরা নিজ গতিতে চলতে থাকে। দিন যায় আরো একটা সুন্দর দিন আসে সেই সুন্দর দিনটা কারো জন্য ভালো বা কারো জন্য খারাপ। দেখতে দেখতে আজ ৭ টা বছর পার হয়ে গেলো। বদলে গেছে অনেক কিছু পাল্টেছে শহরতলীর অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট বদলেছে মানুষের মনমানসিকতা বদলেছে ভালোবাসার আকাশের রং। থমকে আছে দুজনের মিলন। অনুভূতি গুলো শূন্যে ভাসছে।
আজ সাত বছর পর বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরছে বাসার পরিবেশটা অন্য রকম সকলের মন হয়ে আছে পুলকিত। বাসায় আত্নীয় স্বজনে ভরপুর। শানের বাবা আসলাম আজ আর অফিসে যায় নি সব কিছু তদারকি করছে। শান্তি বেগম তো ছেলে কি খাবে না খাবে তা নিয়ে রান্নায় ব্যস্ত তিনি সব রান্না করছে সাথে জারা আর ইশা হেল্প করছে। জারার মুখে কোনো কথা নেই তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে খুশি হয়েছে কি কষ্টে আছে। সে আর আগের মতো নেই পাল্টে গেছে। আগের মতো আর অবুঝ নেই বুঝতে শিখেছে, খোলামেলা বইয়ের মতো নেই, চুপচাপ, শান্তশিষ্ঠ, উদাসিন।
সন্ধ্যায় শানকে পিক করতে গেলো কাজিনমহল, শানের বাবা,মামা, চাচা। ইশা জারাকে এতো করে যেতে বললেও জারা গেলো না। শান্তি বেগম কিছু বললেন না কি-ই বা বলবে এখন ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে বুঝতে শিখেছে তাদের ওপরে কি আর সেই আগের মতো জোর খাটে। জারা রুমে গিয়ে একটা গল্পের বই নিয়ে বসলো কিন্তু বইয়ের পাতায় তার মন নেই বুকে চলছে অজস্র মিশ্র অনুভূতির খেলা বইয়ের পাতায় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। চোখের গোল ফ্রেমর চশমাটা খুলে চোখ কোচলে উঠে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছাঁদে চলে এলো ছাদের রংবেরংয়ের আলো গুলো বন্ধ করে দিলো। বুক ক্রমশ কাঁপছে জারা অন্ধকারে রেলিং ধরে নিচে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর বাসায় পরপর তিনটা গাড়ি এসে ডুকলো জারার বুকের ধুকপুকানি বারতে লাগলো। ক্রমশ শ্বাস-প্রশ্বাস এলোমেলো হয়ে যেতে লাগলো। জারা উশখুশ চোখে তাকিয়ে রইলো একে একে সকলে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। সকালের শেষে ফ্রন্ট সিট থেকে বেড়িয়ে এলো শান। শানকে দেখে শ্বাস আঁটকে এলো। আগের রোগা পাতলা ছেলেটা এখন বলিষ্ঠ সুপুরুষ হয়ে উঠছে। কয়েক মুহুত তাকিয়ে থাকলো শানের দিকে সকলে বাসার ভিতরে চলে গেলে জারা চোখ বন্ধ করে রেলিং ঘেঁষে বসে পড়লো। তোমাকে দেখার তৃষ্ণা কভু না মেটে।
জারা রুমের দরজা আটকে শুয়ে আছে। নিচ থেকে হইচই চেচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে। জারা চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। রাতের বেলা ইশা খেতে ডাকলো জারা গেলো না। শান্তি কয়েকবার ডাকলো জারা গেলো না বলল মাথা ব্যথা করছে।
জারা চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো জারা নিজেও জানে না। রাতে তার ঘুম হয় না কিছু অতিত তারা করে বেড়ায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিছু অদ্ভুত দৃশ্য। জারার ঘুম ভাংলো রাত তিনটার দিকে চোখ খুলতেই মাথা দপদপ করে উঠল আস্তে আস্তে উঠে বসে মাথা হাত দিল চোখ কচলে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে চশমা পড়ে নিয়ে মাইগ্রেরিয়ামের ঔষধ ছিলে হাতে নিতেই দেখলো জগে বা গ্লাসে পানি নাই। জারা অলস পায়ে ডাইনিংরুমের দিকে এগোলো এখন পুরো বাড়ি শান্ত কেউ জেগে নেই সারাদিনের ক্লান্তিতে এখন সবাই ঘুমে। জারা পানির সাথে ঔষধটা গিলে ফেললো। কিছুক্ষন ড্রায়ইংরুমের চেয়ারে বসে উঠে দাঁড়ালো পেটে ক্ষুদা অনুভব করলো কিন্তু ওর খেতে ইচ্ছে করছে না কিছু মাথাটাও ঘুরছে এখন আবছা আলোয় সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যারা ফ্রিজ খুলে একটা জুসের মিনি বোতল আর চকলেট নিলো রুমে গিয়ে খাবে বলে। জারা রুমের দিকে পা বাড়ালো কষ্ট করে ধরে ধরে সবগুলো শিরি বেরে উপর উঠে দাঁড়াতেই মাথা চক্রর দিয়ে উঠলো নিজেকে আর সামলাতে পারলো না হাত থেকে চকলেট আর জুসের মিনি বোতলটা ঠাস করে পড়ে গেলো শান্ত বাড়িতে ঠাস করে শব্দ হলো। সে শব্দে কারোর ঘুম ভাংবে না। জারা শিরি দিয়ে পড়ার আগেই কোথা বলিষ্ঠ হাত এসে জারাকে আকরে ধরলো জারা চোখ বন্ধ করে রইলো মনে মনে ভাবলো আজ-ই বোধহয় শেষ দিন যা হবে মেনে নিবো অবশ্য আমার কিছু হলে কারোর কিছু যায় আসবে না বরং সকলে দায়িত্বের হাত থেকে বেঁচে যাবে। জারা ব্যথা না পাওয়ায় আশ্চর্য হলে আস্তে আস্তে পিটপিট করে চোখ খুললো নিজের খুব কাছে কোনো পুরুষকে অনুভব করে ছিটকে দূরে সরতে চাইলো কিন্তু পারলো না। বলিষ্ঠ হাতটি নিরাপদ জায়গায় জারাকে দাঁড় করিয়ে দূরে সরে দাড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
-‘ কি হচ্ছিল এখানে? ‘
জারা চমকালো! থমকালো! দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে হলো কিন্তু পা জোড়ায় যেনো আটা লেগে আছে নড়াচড়া করতে পারছে না। শরীরে অদৃশ্য কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। যার থেকে পালাতে চাই তার কাছে এসেই পরলো এ কেমন বিচার? জারাকে কিছু বলতে না দেখে পূনরায় গম্ভীর কন্ঠে বলল
-‘ কি হলো? একটা কোয়শ্চন করছি এন্সার দিতে হয় জানো না? ‘
জারা কেঁপে উঠলো। কম্পিত কণ্ঠে উত্তর দিলো
-‘ আ আ স লে মাথা ঘুরছিল ‘
শান নিচে পড়ে থাকা খাবারগুলো দেখে বলল
-‘ অন্য জন্য নিজের ক্ষতি করা আমি সমর্থন করি না ‘
জারা শানের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে বলল
-‘ মানে? ‘
-‘ মানে কিছুই না নিজের কাজ করো ‘
শান গটগট করে নিচে চলে গেলো। জারা আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। পরে শানের কথা বুঝতে পেরে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। নিচে পড়ে যাওয়া জিনিসগুলো হাতে নিয়ে শিরি দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। শান কিচেনে কিছু বানাছে জারার ভ্রু কুচকে এলো। নিচে আসতে গিয়ে পা বারাতে গিয়েও পিছিয়ে নিলো। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সে-ও আর কৌতুহল দমাতে না পেরে নিচে এসে কিচেন গিয়ে বলল
-‘ কি বানাছেন? দিন আমাকে আমি করে দিচ্ছি ‘
শান গম্ভীর কন্ঠে বলল
-‘ নো নিড ‘
জারা আর কিছু বলল না দাঁড়িয়ে রইলো শানের পাশে বেশ দুরত্ব নিয়ে শান আগের মতো করে বলল
-‘ এখানে কি? বললাম না নিজের কাজে যেতে ‘
জারা আর দাঁড়ালো না। বিরবির করে বকতে বকতে চলে গেলো নিজের রুমে। রুমে গিয়ে খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে তখনকার কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মুখ রক্তিম আভায় ছড়িয়ে গেলো। বুকের ধুকপুক বেড়ে গেলো। নিজ মনেই বলল
-‘ আচ্ছা আপনি কি আগের মতোই আছেন না-কি পাল্টে গেছে? কি জানি? যেমন-ই হন না কেন আমি ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি সব কিছু থেকে আপনাকে মুক্ত করে দিবো ‘
কথাটা বলেই জারা মলিন হাসলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ