অন্ধকার মানব পর্ব-১৩

0
226

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_১২

লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি

চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। রুমের জানালাগুলোও বন্ধ।চাঁদের আলো এখানে প্রবেশ করার অধিকার নেই।ইরাজ ইরামের ভয়ার্ত চোখ দুটো অক্ষিকোটর থেকে বের হবার যোগার।হয়তো তার জায়গায় অন্য কেউ হলে প্রানআত্না এতোক্ষনে তাকে ছেড়ে পালিয়ে যেতো।কিন্তু ইরাজ জানতেন এমন কিছু তার জন্য অপেক্ষা করছে।হয়তো আজই তার শেষ দিন।

সামনে থাকা সুদর্শন ব্যক্তিটির ভয়াল রূপ তিনি আগেও দেখেছেন।কিন্তু তা যে এতটা ভয়ংকর হবে তা তিনি ভাবতে পারেন নি।
ব্যক্তিটি তার হাতের থাবায় চেপে ধরেছেন ইরাজের গলা।ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল–
“তোর এতো সাহস হলো কি করে আমার বিরুদ্ধে যাওয়ার?তুই কি ভেবেছিস, রিশালকে সব বলে তুই মায়াপরী কে আমার কাছ থেকে বাচাতে পারবি??ও ফিরে এসেছে শুধু আমার জন্য।”
“আমার প্রিন্সেস বাচবে,ওর প্রানদূত ওকে বাচাবে”।

ইতাফ তার হলুদ চোখের আগুন আরো তীব্র করে দেয়।হাতের বাড়ন্ত ধারালো নখ ধীরে ধীরে ইরাজের গলার মাংস ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে।ইরাজ ব্যথায় ককিয়ে উঠলো।সামনে থাকা ব্যক্তি নিজেকে পুলোকিত অনুভব করছে।
“তুই কি পাগল হয়ছিস এক রক্ত,মাংসে গড়া মানুষ আমায় হারাবে?সে কথা তুই ভাবলি কি করে।মায়াপরী আমার।ওর জীবনের উপর শুধু আমার অধিকার।আমিই ওর প্রানদেবতা।”
বলেই এক ঝটকায় ইরাজ কে ফেলেদিল।দেয়ালে সাথে লেগে মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল।

ইতাফ তেড়ে আসতেই অন্য একটি ছায়া এসে এক ধাক্কায় উরিয়ে তাকে দরজার বাইরে অন্য রুমে নিয়ে আসলো।নিকষ অন্ধকারে ইরাজ কিছুই ভালো করে দেখতে পেলেন না।ছায়াটি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।ইরাজ স্বস্তির ঢোক গিললেন।প্রানপাখি তার নীড়ে ফিরে এলো।

জাদ তার ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারন করলো।ইতাফ মুহূর্তেই এক ভয়ানক নেকড়েমানবে পরিনত হলো।জাদ ওর গলা চেপে ধরেছে।ইতাফ ওর হাতের এক ঝাপটায় ওকে দেয়ালের উপর ফেলে দেয়। জাদ ওকে পিছন থেকে আকড়ে ধড়ে।ইতাফ হাতের উল্টাপাশ দিয়ে ওর মাথা টেনে ধরে।জাদ ওর একহাত দিয়ে একটা সিলভারের চোখা দন্ড ইতাফের হৃৎপিন্ড বরাবর ঢুকানোর চেষ্টা করে।ইতাফ ওর হাত ঘুরিয়ে নিজেকে সোজা করে জাদের ওই হাত দেয়ালে চেপে ধরে,আর এক হাতে ওর গলা যা টেনে ছেড়ার চেষ্টা।জাদ ওর পা দিয়ে এক লাথি বসায় ওর পেটে।ইতাফ ওকে ছেড়ে নিচু হয়ে পেটে হাত দিতেই হাতে থাকা সিলভারের দন্ডটি ওর পিঠে ঢুকিয়ে দেয়।ইতাফ গর্জে উঠে,ওর নখের আচরে জাদ এর গলার পাশটায় নীল রক্ত বইতে শুরু করে।
ইতাফের পিঠ বেয়ে কালো গরম রক্ত গড়িয়ে পরছে।এই মুহূর্তেই পালিয়ে যাওয়া ছাড়া বাচার সম্ভাবনা নেই।ও সেখান থেকে এক নিমিষে হাওয়া হয়ে যায়।জাদ ওর পিছু নিতে চাইলে বাড়িটির দরজায় রিশাল আসার উপস্থিতি টের পায়।

আইভান ইন্দ্রিয়াজ এর হাতের ছোয়ায় ধীরে ধীরে জাদ এর গলার ক্ষতটা গায়েব হতে শুরু করলো।
“এইসবের মানে কি?”
ফ্রিদা ইন্দ্রিয়াজ স্বামীর কথায় একমত পোষন করে বলে–
“তোমার কাজ নবনীযুক্তা কে প্রটেক্ট করা,তার পরিবারের সদস্যদের নয়।আর ইতাফ কোনো সাধারন নেকড়েমানব নয়।আর নবনীযুক্তার অতীত তুমি ভালো করেই জানো।তাহলে তুমি কিভাবে এমন করতে পারো।একা যাওয়ার কি প্রয়োজন ছিল তোমার??”
“আই সে স্টপ মম।
ইতাফ,,,,,আপনি কি ভেবেছেন ওকে আমি ভয় পাই?
অতীতে যা হয়েছে তা এইবার হবে না।”
জাদ ফ্রিদার চোখে তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে আবার বলে–
“নবনীযুক্তা বাচবে।ওকে আমি বাচাবো।ভ্যাম্পায়ার আর নেকড়ে দের মৃত্যু যজ্ঞে আমি আর কোনো নিরাপরাধ মানুষের জীবন যেতে দিবোনা”

আইভান,জাদ এর মুখের সামনে এসে ওর চোখে চোখ রেখে বলে—
“কে মরলো কে বাচলো আই ডোন্ট কেয়ার।আমি শুধু ওই মেয়েকে চাই।আজ ২৫০বছর অপেক্ষা করছি।আমাদের এই অপক্ষার ফল বৃথা যেতে পারে না”।
জাদ শান্ত হয়ে বলে–
“আই উইল ডু মাই ওয়ার্ক।প্লিজ লিভ মি এলোন।”

লাইব্রেরি জ্ঞানপিপাসু মানুষদের জন্য সবচেয়ে শান্তির স্থান।তবে প্রেম করার জন্য এটি অনেক উপযুক্ত ।চারদিক নিরব।সবাই যার যার বই এর মধ্যে ডুবে থাকবে।
রিপ্তি তাই জাদ কে কাছে পাওয়ার আশায় লাইব্রেরি কেই বেছে নিলো।কিন্তু হিতে বিপরীত।জাদ এসে একটা বই নিয়ে বসেছে তো সেখান থেকে চোখ সরানোর সময় নেই।
“কিরে তোকে সারা ক্যাম্পাস খুজে মরছি আর তুই এখানে কি করছিস”।
“শিশিশিশি,,,,,,আস্তে।এটা লাইব্রেরি।
দ্বিধা জীভে কামড় বসায়।ওর কাছে এসে বলে–
“সরি রে,,,।
ফিসফিস করে ওর কানের কাছে গিয়ে বলে—
“রিশাল ক্যান্টিনে তোর জন্য ওয়েট করছে।”
“কেনো?”
দ্বিধা ভ্রু ভাজ করে বিরক্তি নিয়ে বলে —
“আমি কি করে বলবো।তুই গিয়ে জিঙ্গেস কর।”
“আচ্ছা”।
রিপ্তি উঠে যেতেই দ্বিধা জাদ এর পাশে বসে পরে।একদম ওর কাছে।দুজনের মধ্যে এক ইঞ্চির ব্যবধান।জাদ সামনের দিকে তাকিয়ে।দ্বিধা ওর দিকে মুখ করে বসে সামনে পিছনে তাকিয়ে দেখলো সেখানে যারা আছে সবাই বই এর ভিতর ডুব মেরে আছে।
দ্বিধা ওর কানের সাথে মুখ লাগিয়ে বলে–
“আপনি আমার কল কেন রিসিভ করছিলেন না?
জাদ এর সোজা উত্তর —
“ইচ্ছে হয়নি তাই”।
“মানে?
জাদ ওর মুখ দ্বিধার দিকে ফেরায়।আরেকটু হলেই ওর ঠোঁট দ্বিধার ঠোঁট ছুইয়ে দিত।দ্বিধা নিজেকে একটু সরিয়ে নেয়।
“আপনার বাবা কেমন আছে?”
“ভালো,,,কিন্তু এইটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়।আর আপনি কি করে জানলেন পাপা অসুস্থ??”
“রিশাল বলেছে”।
দ্বিধা ঢোক গিলে।
“সত্যি করে বলুন তো রিশাল আপনাকে আর কি কি বলছে।যাই ই জিঙ্গেস করি সবই কি রিশাল আপনাকে আগে থেকে বলে দেয়।

জাদ হাসে,যে হাসির মানে দ্বিধার অজানা।
জাদ এর শরীরের তীব্র ঘ্রাণ দ্বিধাকে পাগল করে দেয়।
“আপনি এটা কোন ব্র্যান্ডের পারফিউম ইউস করেন বলুন তো??”
“কেনো বলুন তো।”
“আমার ভালো লাগে তাই।ভাবছি যখন আপনি আশেপাশে থাকবেন না তখন সেইটা স্প্রে করে দিবো যাতে মনে হয় আপনি আমার আশেপাশেই আছেন।”

দ্বিধার চোখে এক অভূত মায়া দেখতে পায় জাদ যা সে প্রথমবার মাহনুর এর চোখে দেখেছিল।কিন্তু ও তো মাহনুর নয়। তবে কেন ও বারবার মাহনুর কে দেখতে পায় ওর মাঝে।

জাদ ওর ঠোঁটে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে—
“তাহলে আমাকেই জড়িয়ে নিন আপনার শরীরে।”
দ্বিধা লজ্জা পেয়ে বলে–
“ছিহ,,,এইটা কি ধরনের কথা।”
“আপনিই তো বললেন।”
দ্বিধা জাদ এর হাত টেনে বলে–
“আচ্ছা চলুন ক্যান্টিনে,কিছু খাবেন।”
“আমার খিদে নেই।'”
দ্বিধা চোখ বাকিয়ে বলে–
“আপনার কি কখনই খিদে লাগে না??
“লাগে তো।”
“কই?”
“এই যে আপনার রক্তের।আপনার রক্তের ঘ্রাণ কিন্তু খুব মিষ্টি।আমার যে আপনাকে দেখলে পিপাসা পায়।”
জাদ ওর ঘাড়ের কাছে নাক নিয়ে এক বৃহৎ শ্বাস ভিতরের দিকে টেনে নেয়।
দ্বিধা ওর মুখ হাত দিয়ে সরিয়ে বলে—
“এইসব কি ধরনের রসিকতা!!মানুষ কখনো রক্তের ঘ্রাণ পায় নাকি??”
“এই যে আমি পাই,আপনার রক্তের ঘ্রাণ একদম মতিচূরের লাড্ডুর মতো।”
“এমন ভাবে বলছেন যেনো আপনার(মুখটা জাদ এর সামনে নিয়ে এলো)অভ্যাস আছে।”
“আছে তো।”
দ্বিধা ওর ঠোঁট দুটো গোল করে একটু বাকিয়ে বলে—–
“ইশশশশশ,,,,,,.,মহারাজ যেনো মানুষ নয়।আস্ত একটা ভূত।(বলেই মিটিমিটি হাসে)

জাদ ওর কন্ঠ শক্ত করে বলে–
“ঠিক ই বলেছেন,,,,আমি কোন মানুষ নই।
দ্বিধা দাড়ানো অবস্থায় চোখ ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

“রিশাল তুমি যাই বলো আমার মনে হয় প্রফেসর ইতাফ দ্বিধার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।আরে,,ভার্সিটির কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকায় না।কিন্তু একমাত্র দ্বিধা ই সেই মেয়ে যে আজ পর্যন্ত প্রফেসর এর ল্যাবে যেতে পেরেছে।”
রিশাল গম্ভীর হয়ে মনে মনে বলে–
“তাকাবে কি করে,ওর চোখ দেখলেই মেয়েরা এমনে ভয়ে মরে যাবে।”
“তুমি কি কিছু বললে??”
“কই নাতো।”

“তোমরা দুজন এখানে তো সুধানিধি কোথায়??”
“আমি তো ওকে ভার্সিটির ভিতরে যেতে দেখেছি।বাইরে তো এখনো আসেনি।”
“আসলে দ্বিধা প্রফেসর এর ল্যাবে গেছে।আমাকে বলল রিশাল কে যেন এখানেই অপেক্ষা করতে বলি।”
জাদ রেগে বলে—
“হোয়াট???”
বলেই ভার্সিটির ভিতরে যেতে থাকে।
“আরে,,,,,,তুমি কোথায় যাচ্ছ??”
রিশাল রিপ্তির হাত ধরে বলে,
“ওকে যেতে দাও”।

ইতাফ ওর ল্যাবের ছয় ফিটের টেবিলের উপরে রাখা পেপারওয়েট ঘুরাতে ঘুরাতে বলে–
“আমি আপনার কাছ থেকে এমনটা আশা করিনি।”
“আই অ্যাম সরি,প্রফেসর।”
ইতাফ সামনে এসে দাড়ায়।
“মায়াপরী,আপনি জানেন আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি।সবকিছু যেনেও কি করে পারলেন এমন করতে।
কোথায় ছিলেন সেদিন আপনি??জাদ এর সাথে??
দ্বিধা বিস্ময়ভরা চোখে ইতাফের দিকে তাকায়।
“প্রফেসর আমি,,,,

ইতাফ ওর পাশের টেবিলের উপরে রাখা কাচের টিউব রাখার স্ট্যান্ড ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।গলা উচিয়ে
বলে —
“হাউ কুড ইউ ডু দিস??
ওকে স্পর্শ করতে গেলেই জাদ দ্বিধাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে নেয়।ইতাফের কলার ধরে বলে–
“আর একবার সুধানিধি কে ছোয়ার চেষ্টা করলে তুই ভাবতেও পারবিনা আমি তোর সাথে কি করবো।”
ওকে নিয়ে বের হয়ে আসে।

কেমিস্ট্রি ল্যাবের ভিতরে নিয়ে দ্বিধা কে দেয়ালে ঠেকিয়ে হাত দিয়ে ওর দুগাল চেপে ধরে জাদ।
“কতবার বলেছি ওই ইতাফের কাছে না যেতে।আমার কোনো কথা তোমার কানে যায় না??ভাবো কি তুমি নিজেকে??
পাশে থাকা বেঞ্চগুলো লাথি মেরে ফেলে দেয়।দেয়ালে এক ঘুসি মারাতে সেখানে ফাটল ধরে।ওর চিৎকারে দ্বিধার কর্নগহ্বর ফেটে যাবে মনে হচ্ছে।গালের ব্যথায় ওর চোখ দিয়ে পানি এসে যায়। ও নিজের অক্ষিযুগল বন্ধ করে নেয়।
ওর মুখের দিকে তাকাতেই জাদ এর মনে হয় এ যেন বিলের জলে সদ্য ফোটা পদ্মফুল।
জাদ নিজেকে শান্ত করে।দ্বিধার গাল থেকে হাত নামায়।ওর কপালে আলতো করে ওর অধর ছুইয়ে দেয়।
জাদ এর ছোয়ায় ওর বুকের ধুকধুকানি কমে আসে।ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায়।জাদ জড়ানো কন্ঠে বলে–
“কেনো এমন করেন আপনি??
কেনো আমায় এতো পাগল করেন?কি চান আপনি?? আমি আপনার কারনে পাগল হয়ে যায় এটাই চান??
চুপ করে আছেন কেনো,বলুন?
দ্বিধা নিশ্চুপ।

জাদ ওকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাড়ায়।
“চলে যান,রিশাল আপনার জন্য ওয়েট করছে।”
দ্বিধা ওকে পিছন থেকে আকঁড়ে ধরে।ফুঁফিয়ে কেদে উঠে ও।
“প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন।আমাকে আপনার কাছ থেকে আলাদা করবেন না।
জাদ ওর হাত সরিয়ে ওকে নিজের সামনে এনে দাড় করায়।চোখের জল আর নাকের জলে পুরো মুখে চুল লেপ্টে আছে।মুখের উপর থেকে হাত দিয়ে ওর চুল সরিয়ে দেয়।ওর থুতনিতে ধরে মুখটা উচু করে,ফু দিয়ে কপালের চুল সরিয়ে দেয়।
“কাদবেন না।আপনার প্রতিটি অশ্রুজল আমার বুকে তীরের মতো বিধে তা আপনি বুঝতে পারেন না?

দ্বিধার মনে হচ্ছে ও কোনো ঘোরের মধ্যে আছে।নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।শক্ত করে জাদ কে জড়িয়ে ধরল।জাদ এক হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে রেখে অন্য হাতে ওর চুল আওড়াতে থাকলো।
“পাগল একটা”।
দ্বিধা ওর বুকে নাক ঘষে বলে–
“উহু,,,,,,,,,পাগলি।
“পাগলি সুধানিধি”।
“হুম।

দ্বিধার কাছে মনে হলো —–ভালাবাসা বুঝি এমনই হয়, যে সব কষ্ট এক নিমিষে মুছে দেয়।সত্যিই ভালোবাসা পবিত্র।
ঠিক ততটা যতটা পবিত্র হয়””মায়ের গর্ভ থেকে সদ্য জন্ম নেওয়া নবজাতক”।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here