#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_২
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
“তোর কাছে তো সবই এমন লাগে।এই চলনা,ছেলেটার সাথে একটু কথা বলি।”(মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে বলল)
“একদম ই না।আমার এসব পছন্দ না।আর তোদের প্রবলেম কি নতুন কোনো ছেলে আসলেই সবগুলো মেয়ে ঘুরঘুর করিস ওর পিছনে।”(রেগে বলল দ্বিধা)
“এই আমি তোকে প্রমিজ করলাম এই ছেলেটা যদি পটে যায় তাহলে এইটাই ফাইনাল।আর কারো দিকে তাকাবো না,ওর বাচ্চাদেরই খালামনি বানাবো তোকে।”
দ্বিধা ওর একটি চোখে টিপ্পনী কেটে ঠোঁট দুটো হালকা বাকিয়ে রিপ্তির আলুর মতো ফুলকো গাল টেনে বলল-
“তুই কি সত্যি পাগল হয়ে গেলি নাকি??চেনা নাই জানা নাই আর ওমনি একবার দেখে ওর বাচ্চার মা হতে চাস।”
রিপ্তি মুচকি হেসে বলল-
“বেবি,,ডোন্ট ওয়ারি।রিপ্তি কে আজ পর্যন্ত কেউ না করতে পারেনি।এই ছেলেকে তো আমার চাই ই চাই”।
বলেই দ্বিধার হাত ধরে টেনে ছেলেটির টেবিলের সামনে গিয়ে ছেলেটির সামনে রাখা চেয়ার ধপ করে বসে পড়ল।দ্বিধা টেবিলের কোনঘেসে দাঁড়িয়ে আছে।মাঝে মাঝে এই মেয়েটার এহেন কর্মকান্ডে ওকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়।রিপ্তি ছেলেটির দিকে একহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
“হাই,,,আই অ্যাম রিপ্তি।সি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড দ্বিধা।নাইস টু মিট ইউ”।
রিপ্তির এই কাজে দ্বিধার মনে হচ্ছিলো এখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে।
কিন্তু ওদের অবাক করে দিয়ে ছেলেটি ওদের কোনো কথায় কর্নপাত না করে দ্বিধার পাশ দিয়ে ক্যান্টিন থেকে সোজা বেরিয়ে গেল।ছেলেটি ওর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় এক অদ্ভুত সুগন্ধ ভেসে আসে ওর কাছ থেকে যা এক মুহূর্তে যেকোনো মানুষকে মাতাল করে দিবে।ওর কেনো যেনো মনে হলো এই সুগন্ধটা ওর চেনা। গত কয়েকদিন যাবৎ মাঝরাতে ঘুম ঘুম চোখে ওর মনে হয় কেউ যেন ওর পাশেই বসে আছে কিন্তু যখনি ও চোখ খুলে,কাউকে দেখতে পায় না শুধু এক অদ্ভুত ঘ্রাণ ওর পুরো কামরা জুড়ে বিরাজ করে যা এক নিমিশে কোনো মেয়েকে নেশাগ্রস্ত করে দিবে।হঠাৎ রিপ্তির গলার কর্কশ শব্দে ওর ভাবনার সুতোয় টান পড়ে–
“কিরে তুই এমন হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো??দুলাভাইকে কেও এভাবে দেখে?”
“দুলাভাই,,,,,,,(বলেই খিলখিল করে হেসে দিল দ্বিধা)।হাসতে হাসতে বলতে লাগল,,,,যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়াপড়শীর ঘুম নাই,,..চল এখান থেকে। ”
বেচারি রিপ্তি মনে মনে একদম ভেঙে একাকার হয়ে গেল।
বলল—
“ছেলে টা এমন না করলেও পারতো(বিড়বিড় করে)”
দ্বিধা আর রিপ্তি বসে আছে ক্লাসে।এখন ওদের ক্যামিস্ট্রি ক্লাস শুরু হবে।প্রফেসর অ্যান্ডি গোমস ক্লাসে ঢুকতেই সবাই উঠে দাড়ায়–
“গুড মর্নিং,প্রফেসর।”
“গুড মর্নিং।প্লিজ বি সিট।”
প্রফেসর অ্যান্ডি গোমস খুবই স্ট্রিক টাইপের।ক্লাস মিস করা তিনি মোটেও পছন্দ করেন না।তাই সকল স্টুডেন্ট তার ক্লাস অ্যাটেন্ড করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে।উনি লেকচার শুরু করতেই কেউ একজন দরজায় দাড়িয়ে বলল–
“ম্যায় আই কাম ইন,প্রফেসর??”
ক্লাসের সবাই সেই অচেনা কন্ঠের দিকে তাকালো।রিপ্তি দ্বিধার কানে ফিসফিস করে বলল–
“আরে এইটা তো সেই ছেলে(অবাক হয়ে)।তাহলে ও আমাদের ডিপার্টমেন্টে।ইয়াহু,,এইবার তো ওকে আমি বিয়ে করেই ছাড়বো।”
দ্বিধা মুখে সামান্য বিরক্ত নিয়ে বলল–
“তুই থামবি??”
প্রফেসর অ্যান্ডি ছেলেটি কে বললেন –
“ইয়েস কাম ইন মাই বয়”।
কেনো যেনো প্রফেসরের কথা শুনে দ্বিধার মনে হলো ছেলেটি তার পূর্ব পরিচিত।ছেলেটি ক্লাসে ঢুকতেই তিনি ওকে নিজের কাছে নিয়ে দাড় করিয়ে বললেন–
“হি ইজ জাদ ইন্দ্রিয়াজ।হি ইজ ফ্রম সাউথ কোরিয়া।”
তারপর তিনি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললেন-
“প্লিজ টেক ইওর সিট।”
ছেলেটি কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা পিছনের একটি বেঞ্চে বসলো।ছেলেটির চোখে এখনো সেই কালো সানগ্লাস।দ্বিধা তা দেখে কেমন যেনো অস্বস্তি বোধ করলো।ও দাঁড়িয়ে বলল—
“প্রফেসর,ক্যান আই আসক ইউ আ কোয়েশ্চেন??”
প্রফেসর অ্যান্ডি গোমস কিছু একটা আচ করতে পারলেন,,,,তাই বললেন—
“ইউ ক্যান স্পিক ইন বাংলা”।”
দ্বিধা তার কথায় অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলো।দ্বিধা বলল-
“প্রফেসর,,আমি শুনেছি কোরিয়ানরা নাকি তাদের চোখের পাতার জন্য নাকি ঠিক করে দেখতে পায় না?”
প্রফেসর মৃদু হেসে জাদ কে উদ্দেশ্য করে বললেন—
“তুমি কি তোমার সানগ্লাসটা খুলতে পারবে??”
“ইয়েস,প্রফেসর।”
বলেই সানগ্লাস টা খুলে নিচে রাখলো।
দ্বিধা এক দৃষ্টিতে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে যেনো ওই চোখ তার হাজার বছরের চেনা।হালকা বাদামি রঙের চোখের মনি দেখে মন হয় যেন কতদিন ধরে কারো আশায় পথ চেয়ে আছে।ওর তো এমন আগে কখনো হয়নি।কেন যতবারই ছেলেটিকে দেখে ওর মনে হয় কোনো এক অজানা চুম্বকীয় শক্তি ওকে ওর দিকে আকর্ষিত করে।ছিহ্,,,,,এইসব কি ভাবছি আমি(নিজেকে বলে)।
“আশা করি তোমার প্রশ্নের উত্তর তুমি পেয়েছ।প্লিজ বি সিট।”
তিনি আরও বলতে লাগলেন—
“তোমরা হয়তো ভাবছো আমি কি করে জানি?জাদ এর বাবা,মা দুজনই ডক্টর।তারা দুজন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলোতে যেখানে চিকিৎসা সেবা দুর্লভ সেখানকার মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে।এর ফলে তাদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করতে হয়।কাজের সুবিধার্থে অনেক ধরনের ভাষার চর্চা আছে ওদের।”
বিশাল এক বাড়ি।আশেপাশে পাহাড় ঘেরা আর সবুজ গাছের এক মিলন মেলা।ঘুটঘুটে অন্ধকার।দেখলেই এক অদ্ভুত গা শিউরে উঠা অনুভূতি হয়।মানুষের পক্ষে এমন জায়গায় থাকা কোনো পক্ষেই সম্ভব না।বাড়ির মেইন ফটক খুলে একটি ছায়া এক পা এক পা করে বাড়ির ভিতরের দরজায় এসে কড়া নাড়ে।দরজা খুলে ভিতর থেকে এক সুরম্য রমণী দরজা খুলে অন্ধকার ছায়াটিকে বাড়ির ভিতরে আসতে আমন্ত্রণ জানায়।
“ওয়েল কাম মাই,সন।হাউ ইজ ইউর ডে??”
“ইটস ফাইন,মম।”
ভিতরে প্রবেশ করা ব্যক্তিটি সামনে পা বাড়াতেই আরেকজন প্রশ্ন করল–(কোরিয়ান ভাষায়)
“গেউলেউল বোয়াস নি?(তুমি কি তাকে দেখেছো??)”
“য়ে।(হ্যাঁ )”
“গেউনয়েওনিউন গোয়ায়েনচাননাহ্?(সে কি ঠিকাছে??)
“য়ে।(হ্যাঁ )
বোসোং দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ছোট তবে অতি রমণীয় রাজধানী।এটি চা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। চা উৎপাদনের পাশাপাশি এখানে রয়েছে পোড়ামাটির খামার আর অসংখ্য পাহাড়।প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই জায়গাটি ভ্রমণ করতে আসে।কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ পাহাড় ঘেরা এই এলাকার বিভিন্ন স্থানে এখানে ঘুরতে আসা ভ্রমণপিপাসু মানুষদের নিথরদেহ পাওয়া যায়। সেই সব লাশের সবকিছু অখ্যাত পাওয়া গেলেও তাদের দেহ রক্ত বিহীন থাকে।তাই ইন্দ্রিয়াজ পরিবার সেখান থেকে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য এখানে এসেছে।জাদ, আইভান ইন্দ্রিয়াজ ও ফ্রিদা ইন্দ্রিয়াজ এর একমাত্র ছেলে।তারা আলোর চেয়ে অন্ধকার রাতকে বেশী পছন্দ করে।জাদ,আইভান ইন্দ্রিয়াজের করা প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।ফ্রিদা ইন্দ্রিয়াজ হাতে একটি সুপ্রাচীন পাত্র হতে লাল রঙের এক ধরনের তরল পদার্থ দুটি ওয়াইন গ্লাসে ঢাললেন। মিসেস ইন্দ্রিয়াজ গ্লাসটিতে চুমুক দিয়ে এক অন্যরকম তৃপ্তি অনুভব করলেন।মি.ইন্দ্রিয়াজকে বললেন–
“তোমার কি মনে হয়,জাদ তার কাজটা ঠিকভাবে করতে পারবে??”
তিনি গ্লাস থেকে চুমুক উঠিয়ে মৃদু হেসে বললেন–
“জাদ নামের অর্থ বোধহয় ভুলে গেছো?জাদ মানে জয়ী।আর আমি নিশ্চিত আমাদের ছেলে তার নামের যথার্থতা বজায় রাখবে।”
এই বলে দুজন এক রহস্যময়ী হাসি দিলেন।
নিজের ঘরে গিয়ে বারান্দায় উপচে পড়া চাদের আলোয় ওই দূর জঙ্গলের দিয়ে আনমনে তাকিয়ে থাকে জাদ।যে চোখের চাহনিতে এক না পাওয়ার আর্তনাদ ফুটে উঠে।হঠাৎ কি মনে করে রুমের ভিতরে এসে ডিভানের উপর রাখা গিটারটা হাতে নিয়ে আবার বারান্দায় চলে যায়।গিটারের টুং টাং শব্দে সুর তুলে গাইতে থাকে–
“ইটস ইমপসিবল ফর মি টু এক্সপ্রেস
উইথ দ্যা ওয়ার্ডস ওফ দিস আর্থ
দিস ওভারহিলিং ফিলিং
আই কিপ অন হ্যাবিং ফর ইউ
ইটস ইমপসিবল টু ফেদম
উইথ দ্যা স্প্রিংস ওফ দিস ওয়ার্ল্ড
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,……………..,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,………………..,,,,,,,.,,,,,,,,,,,,
ইউ আর মাই এভরি….
মাই এভরিথিংক
ইউ আর মাই এভরিথিংক
লাভ ফর ইউ…
চলবে,,,