#অপরিণত_ভালোবাসার_পরিণতি
লেখা : মান্নাত মিম
পর্ব : ৬
__________
“জানতে চাই।”
নিরব তার কণ্ঠস্বর পারলে নিরবতায় ছেয়ে দেয়, তবুও টুঁ-শব্দটিও যেন কারো কর্ণধারে না পৌঁছাতে দেয়। আলগোছে রুম ছেড়ে সে এখন চিপাগলির স্যাঁতস্যাঁতে পথ মাড়িয়ে রোডে উঠেছে। একটা প্রাণীও নেই। তবে বড়ো রাস্তায় ট্রাক যাওয়ার টুকটাক শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে। সময়টা ভোরের স্বপ্ন দেখার সুবর্ণ সময় পৌঁনে চারটা। কিন্তু তার স্বপ্ন তো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তথাপি একটা স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে, যদিও সে জানে বড্ড কঠিন সেই কাঙ্ক্ষিত পথের গন্তব্য। তবুও চায় তা হাসিল করতে। ফোনের ওপাশের ব্যক্তির কাছ থেকে আজও জানা হলো না ভেবে ফোন কাটতে নিলো এমন সময় ব্যক্তি বলে উঠল,
“আ… আপনি জানেন না, না?”
অভিমানী তার গলার স্বর। ওড়ন্ত শুকনো পাতার মড়মড়ে প্রাণবন্ততার মিশ্রণে যেন একমুঠো দমকা হাওয়ায় ফিসফিসিয়ে বলে গেল কথাটা কানে কানে। মন সেটা ধরে রাখল নিভৃতে যতনে। জানে নিরব কিন্তু স্বীকারোক্তি ছাড়া এগুবে না সে। মেয়েটার মুখ থেকে শুনতে চায় তাই বলল,
“আমি! কী জানব? জানার কথা ছিল নাকি?”
আহা! পরাস্ত হলো কিশোরী কন্যে। হাঁসফাঁস গলায় বলল,
“মজা করবেন না কিন্তু বলে দিলাম।”
অধিকারবোধ, শাসানোর ভঙ্গি নিরবকে আরো একবার ঘায়েল হতে বাধ্য হলো। হাসল খানিক সে। তবে ফোনের আড়ালে দেখতে পেল না কবিতা।
ভালোবাসার কথা মুখে জানান দিতে বেজায় নারাজ মেয়েটা। বুঝে তা নিরব, তবুও চায় মুখে বলুক যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তার সাথে সম্পর্কে জড়ায় কবিতা। তাই নিরব এবার ভাব গম্ভীরতায় ঢেকে বলে উঠল,
“আমি অতি সাধারণ একজন। পিতৃ পরিচয় দেওয়ার মতো আহামরি কিছুই নেই। মা, বোনের দায়িত্ব ঘাড়ে। বুঝেছ নিশ্চয়ই?”
শ্রবণেন্দ্রিয় দ্বারা সুক্ষ্মানুভূতিতে কথাগুলো পৌঁছালো। সে বুঝতে পারল নিরব তাকে কী বুঝাতে চাইছে। ভালোবাসার প্রকাশের চেয়েও বড়ো কিছু জিনিস আছে একটা সম্পর্কের মাঝে তা হচ্ছে দায়িত্ব, বিশ্বাস, পরিণতির কথাও মাথায় রাখতে হবে।
_______
বেশ কয়েকদিন আননোন নম্বর থেকে যে কলগুলো এসেছিল সেটা কবিতার। তারপর থেকে আস্তে-ধীরে মেয়েটার সাথে কথা বলে সহজ হয়ে নেয়। নম্বর কোথায় পেল জিজ্ঞেস করে অস্বস্তিতে ফালায়নি তবে সহজ হয়ে আসার পর একবার জিজ্ঞেস করেছিল আচমকাই। তখন ধরাশায়ী হয়ে বলে ফেলে যে, সে নিরব গ্রামে থাকাকালীন সময়ে নম্বর টুকে নিয়েছিল দিতির ব্যবহৃত রেখে যাওয়া ফোনে। তবে বলেনি কল দেওয়ার কারণ। কিন্তু নিরব নিজের অনুভূতি দিয়ে বুঝতে পেরেছিল না বলা কথাগুলো।
সময় গড়ায় কেউ-ই কাউকে বলেনি এখনো ভালোবাসার কথা। তবুও তাদের কথার মাঝে ভালোবাসা গোপন থাকে, অভিভূত করে একে-অপরকে সে-ই গোপনকৃত অনুভূতি। এরইমাঝে কবির আর নিরব-দের সাথে থাকে না। ফ্ল্যাটে উঠেছে। তবে এতটুকু শুনেছে যে, কবিরের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে, সেজন্যই এই স্থান-পরিবেশ বদল। এত ঘনিষ্ঠ বন্ধুও সময়ের পরিক্রমায় বদলে যায়। হাহ্!
ইন্টারের ফাইলাম পরীক্ষা মাসেক তিন বাকি কবিতার। ঘেমে-নেয়ে কলেজ থেকে ফিরল মেয়েটা। এমনই সময় দরজা থেকেই তার মা টেনে নিয়ে যায় ঘরে। কবিতার তখন কলিজা কেঁপে ওঠে। কোনোভাবে কি জেনে গেল নাকি নিরবের কথা? রুমে এসে তার মা হাতে শাড়ি নিয়ে জলদি ফ্রেশ হয়ে পরতে বলে চলে যান, দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কবিতা। তবে পরক্ষণেই বিষয়টা বোধগম্য হয়। তখন সে মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। এক ভয় না কাটতেই আরেক ভয় ঝেঁকে ধরে। নিরবকে ফোন দিতে হবে ভাবনাটা আসতেই রুমের দরজা আটকে দিয়ে কল লাগায়৷ রিং হয়ে কেটে যায়। এমন করে বিশবার দেওয়া হয়ে গেল। সহ্যর সীমানায় পৌঁছে, মন চাইল ফোন আছাড় মারতে। অসময়েই ফোন রিসিভ করল না অথচ আগে একবার কল দিলেই উলটো কল কেটে ফিরতি কল দিত ছেলেটা। দরজা টোকা দিচ্ছে কেউ। এখন আর কথা বলার সময় বা সুযোগ কোনটাই নেই। নিরাশাজনক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দরজা খুলে দিলো। তমা দাঁড়িয়ে কবিরের বউ। কবির ঢাকা থেকে এসে বিয়ে করে রেখে গেছে, মাঝে মাঝে আসে। মেয়েটা আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গোলগাল চেহারার শ্যামলা রঙের। এসএসসি দিলো গেল বছর।
“এখনো তৈরি হওনি?”
“ক্লান্ত লাগছিল।”
“আচ্ছা, তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি রেডি করে দিচ্ছি।”
বলে মিষ্টি হেসে চলে গেল তমা। অসহায়ত্বে ঘেরা কবিতা দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইল।
______
“আরে কান্না করছ কেন? বলবা তো।”
নিরব আকুলতার সহিত শুধালো অথচ মেয়েটা নির্বিকার চিত্তে কান্নার বহর তুলে রয়েছে৷ কারণটা না বললে জানবে কীভাবে?
“আরে আমি ফোন ধরতে পারিনি কারণ গ্রামে গিয়েছিলাম। জানোই তো আমার ছোট্ট বোনটার বাচ্চা হয়েছে, আমি মামা হয়েছি। অথচ এক সপ্তাহ হয়ে গেল দেখতে যেতে পারিনি হাত ফাঁকা ছিল। কিছু কেনাকাটা করে গতকাল রাতেই রওনা দিলাম। তোমাকে বলার সুযোগ পাইনি অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল।”
কান্না থেমে গেলেও ফুঁপানো রয়ে গেছে। হৃদয়ে শেলের মতো বিঁধে মেয়েটার কান্নার সুর। দম ফালানো শ্বাস ছেড়ে আবারো শুধালো নিরব,
“কী হলো কথা বলবে না? আচ্ছা, বাবা সর্যি। তাও ক…”
“আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”
ভুল সময়, ভুল কথা বা মজার ছল কিংবা ভ্রম স্বপ্ন মনে হলো। উত্তপ্তকর দাবদাহে নিঃসাড় ঠেকছে সবকিছু। চারপাশের যানবাহন চলাচলের শব্দ বদলে কেমন ‘টুন্উউ’ শব্দ কানে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মিথ্যা বলছে, হ্যাঁ মিথ্যা বলছে। কিন্তু মেয়েটার কান্না তো মিথ্যা না। তাহলে সত্যি …
“বয়ে চলা সময়,
জীবন বড়োই ছন্দময়,
আকাঙ্ক্ষিত বস্তু ধরতে চায়,
গতিপথ আঁধারে ডুবায়।”
চলবে…
গ্যাপ দিয়ে লেখা, তাই খাপছাড়া লাগতে পারে। বিভিন্ন সমস্যায় লেখা হয়ে উঠে না।