#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১১ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
চারিদিকে আঁধার আলোর ছিটে ফোটাও নেই। আধার অম্বরিতে চাঁদ তারার দেখা নেই। দূরে বা কাছ থেকে রাত পোকা আর শিয়ালের ডাক ভেসে আসছে। কাছে কোথা থেকে রজনীগন্ধা ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। কৌতুহলে ৬ মানব-মানবীর নিশ্বাসের যেন কয়েকগুন বেরে যাচ্ছে। জারা নিজেকে গড়ে তুলেছে পরিশ্রম করে। আজ সে এডভোকেট এটা তার দ্বিতীয় কেস। প্রথম কেসে সহজে জিতে গেলেও এই কেসটাই বড্ড কাঠ-খড় পোড়াতে হচ্ছে।পরশুদিন কেসের লাস্ট ডেট তার মধ্যেই সকল প্রমান জোগার করতে হবে। আর তাই সবাই মিলেই এসেছে সত্যউনেচ্চন করতে।
নিস্তব্ধ জায়গায় প্রীতি ব্যথাতুর শব্দ তুলে পা ধরে বসে বলল
-‘ আমার পা..’
সকলে থেমে গেলো প্রীতির দিকে সকলে স্থির দৃষ্টি দিয়ে সতর্ক বানী দিয়ে রুহান ফিসফিস করে বলল
-‘ হিশশ চুপ আস্তে কথা বল চিৎকার করছিস কেনো? কি হইছে? ‘
পলক প্রীতির পাশে গিয়ে বসে বলল
-‘ কি হইছে পায়ে দেখি ‘
পলক প্রীতির পা থেকে সু খুলে দেখলো জুতার সাথে কাচ বেঁধে পায়ে বিঁধে গেছে। পা বেশি কাটি নাই কিন্তু রক্ত বের হচ্ছে। জারা তারাতাড়ি করে ব্যাগ থেকে ফাস্টএডেট বক্স বের করে শায়রীর হাতে দিলো শায়রীও চটপট প্রীতির পায়ে ব্যান্জে করে দিলো। রুহান ধমক দিয়ে বলল
-‘ কেমনে হাঁটিস যে পায়ে কাচ বিঁধে যায়? ‘
-‘ আমি জানি। কাচে কেটে গেলে আমি কি করবো? ‘
রুহান বিরক্তিসুচক শব্দ বের করে বলল
-‘ এই পা নিয়ে হাঁটতে পারবি না তার চেয়ে এককাজ কর তোরা সকলে এখানে থাক আমি পজিশন বুঝে আসি ‘
জারা চাপা সুরে বলল
-‘ পাগল তুই? একা যাবি মানে কি? আমি ও যাবো ‘
সাইম চোখ মুখ কুঁচকে বলল
-‘ আমরা জানি তুই পুলিশ তাই বলে এমন ভাবে হিরোগিরি দেখাতে একা যাবি? আমিও যাবি ‘
পলক দাঁতে দাঁত চেপে বলল
-‘ আর আমরা কি ধুমা দিবো? ‘
সাইম মুখ চেপে হেসে বলল
-‘ না তোরা ডিম পাড় আমরা এসে পোস্ট করে খাবো ‘
শায়রী রেগে বলল
-‘ এখানে সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে আর তোরা? সব কিছু তোদের মজা লাগে না? ‘
জারা হাত তুলে ঝ’গ’ড়া থামানোর চেষ্টা করে বলল
-‘ স্টপ স্টপ আমি বলি তোরা কোনো কথা না বলে শোন পলক প্রী…’
পলক জারাকে থামিয়ে বলল
-‘ তুই আমার নাম আগে নিলি কেন? ‘
জারা বিরক্ত হয়েও ঠান্ডা গলায় বলল
-‘ ইনপ্টেন কথা হচ্ছে দয়া করে থাম
পলক চুপ করলো জারা আবার বলতে লাগলো
-‘ পলক, প্রীতি, শায়রী তোরা এখানে থাকবি আমি, রুহান আর সাইম যাবো তো…’
শায়রী অধৈর্য্যে গলায় বলল
-‘ কেনো আমি যাবো না আমার সাথে এমন করছিস কেনো? ‘
জারা এবার আর বিরক্তি প্রকাশ করে বলল
-‘ তোরা ঠিক কর তোরা কি করবি আমি চললাম ‘
বলে জারা হাঁটা ধরলে রুহান জারার হাত ধরে আটকে বলল
-‘ কি বলছিলি বল আর তোরা যদি একটাও কথা বলিস কথার মাঝে তার অবস্থান খারাপ হবে এর পরের কেসে তোদের আনা হবে না ‘
সবার চুপ হয়ে গেলো জারা বলল
-‘ শোন পলক তুই প্রীতি আর শায়রীকে গার্ড দিবি কেনো না আমরা বলতে পারছি না এই জঙ্গলে কোথায় কোন বিপদ লুকিয়ে আছে আর শায়রী তোকে নিয়ে যাচ্ছি না কারণ আমরা যদি কোনো ভাবে আঘাত পাই তুই ড্রেসিং করে দিতে পারবি কেন না তুই নার্স ‘
সাইম ফোঁন কেটে বলল
-‘ তুই নার্স আর তোর ভাব ডক্টরের ওপরের ডক্টর ‘
শায়রী চোখ বাঁকা করে তাকালো। জারা গম্ভীর কন্ঠে বলল
-‘ সাইম এতো লাফাস না তোকেও নিয়ে যেতাম না তোর কাছে ক্যামেরা আছে বলে তোকে নিয়ে যাচ্ছি ‘
সাইম বলল
-‘ যা যাবো না ‘
জারা বিরক্ত হয়ে বলল
-‘ ভাব দেখাস না চল ‘
রুহান বলল
-‘ দাঁড়া পলক শোন শায়রী,প্রীতিকে নিয়ে তুই গাড়িতে গিয়ে বস এখানে তোরা সেভ নস পলক তুই ড্রাইভিং সিটে বসে থাকবি সব রেডি করে যেনো আমরা আসলেই গাড়ি এস্টেট দিতে পারিস ‘
সকলে রুহানে কথায় সাই দিলো।
জারা, রুহান, সাইম এগোলো গভীর জঙ্গলে আব্দেও প্রাণ নিয়ে ফিরবে তো। গিয়ে পৌঁছালো সঠিক গন্তব্যে বুক ঢিপঢিপ করছে অজানা অচেনা আতংকে। রুহান পুরনো অন্ধকার আচ্ছন্ন ভুতুড়ে বাড়িটার চারিদিকে ঘুরে এসে ফিসফিস করে বলল
-‘ শোন আমাদের ভিতরে যেতে হবে কোনো শব্দ করলে চলবে না দ্বিতীয় তালায় আলো জ্বলছে। আর সাইম শোন তুই ক্যামেরা অন রাখ ‘
দুরুদুরু বুকে সকলে নিঃশব্দে বাড়ির ভিতরে ডুকলো জারার দুইপাশের দুজন। একপাশে সাইম আর একপাশে রুহান জারার হাত ধরে রাখছে। উপরে গিয়ে কয়েকজনে কথার আওয়াজ শুনতে পেয়ে ওরা থেমে গেলো। সাইম ক্যামেরার ভিডিও রেকর্ড অন করে দিয়ে লুকিয়ে ভিডিও করতে লাগলো কিছুক্ষণ পর চারজন লোক বেড়িয়ে গেলো রুহান জারাকে ইশারায় লুকিয়ে থাকতে বলে ওখান থেকে কই যেনো গেলো। জারা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শক্ত করার প্রয়াশ চালানোর চেষ্টা করছে। তখনি কারোর ব্যথাতুর আওয়াজ ভেসে আসলো সাথে কয়েক জন পুলিশ ইউনিফর্ম লোক এসে কয়েকজনকে ধরলো। জারা থাকতে না পেরে বেড়িয়ে এলো দেখলো দুজন লোক কি যেনো মুখে পুরে দিলো আর কয়েক জন দিতে গেলে ধরে ফেললো পুলিশ গুলো। হঠাৎ কোথা থেকে একজন এসে জারার গলায় চু/রি ধরে বলল
-‘ ছেড়ে দে ওদের না হলে এর গলায় চু/রি চালিয়ে দিবো ‘
সকলের মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট জারা ভয়ে দোয়া পড়তে লাগলো এই বুঝি শেষ দিন রুহান দু-হাত তুলে বলল
-‘ ওকে ওকে ছেড়ে দিবো আগে ওকে ছেড়ে দাও ‘
-‘ না না সেটা হচ্ছে না তোরা পুলিশরা হচ্ছে পাল্টিবাজ আগে তোরা ছাড়…. ‘
আর কিছু বলতে পারলো না লোকটা। সাইম এসে পিছন দিক থেকে লোকটার মাথায় বারি মা/র/লো লোকটা নিজস্তেস হয়ে গেলেও জারাকে আ/ঘা/ত করতে ভুলল না। জারা ব্যাথায় ব্যথাতুর শব্দ তুলল।
.
.
শানের সারারাত ঠিক মতো ঘুম হলো না পায়চারি করেই রাতটা পার করে দিলো। সকালে ক্লান্ত হয়ে থাকতে না পেরে ঘুমিয়ে গেছিল। শান্তি বেগম রাতে উঠে শানের রুমে লাইট জালানো দেখে আনমনে হেসে দিয়ে নিজ মনেই বলল
-‘ ছেলেটা বউ পাগল হয়ে যাচ্ছে দেখছি। কত অস্থিরতা তার জন্য ‘
______________
জারা সকালে বাসায় এসেছে। তখন সকলে ঘুমে জারা নিজের রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে ফ্রিজ থেকে আপেল নিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তখন সুমি উঠে ছিল জারা বলে দিয়েছে যেনো কেউ ডিস্টার্ব না করে।
সকালে সকলে নাস্তা করতে বসলো তখন ইশা বলল
-‘ আম্মু আপু কখন আসবে ফোন করে কিছু জানিয়েছে ‘
-‘ জারা সকালেই বাসায় এসেছে সুমি বলল ‘
ইশা খাবার ছেড়ে উঠে বলল
-‘ আচ্ছা পরে খাবো আগে আপুকে ডেকে আনি একসাথে খাবো ‘
-‘ না বস ও রেস্ট নিচ্ছে ওর সময় হলে ও আসবে নি তোকে যেতে হবে না সারারাত জাগা মেয়েটা এখন তুই যাচ্ছিস জ্বালাতে বস ‘
ইশা মুখটা পেচার মতো করে বসে পরলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ