অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-৯

0
465

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৯ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

নতুন স্নিগ্ধ সকাল। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে রোদের মিষ্টি আলো। বিশাল নীল আকাশে খন্ড খন্ড মেঘের ভেলা এদিক সেদিক ছুটে বেড়াছে। অভিমানি ফুল গুলো মৃদু বাতাসে দুলছে। বাগানের দোলায় প্যাচানল বাগানবিলাস গাছের ফুলগুলো দোলায় পরে নিচে ছড়িয়ে গোলাপী সাদা রংয়ের নতুন অদ্ভুত সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। জারা নিজের রুমের বেলকনি থেকে সবটা দেখছে ভেবেছে আজ দেরিতে নিচে নামবে। মনটা বিষন্নতা ছেয়ে আছে। মাথায় চিন্তা পোকাগুলো অনবরত নড়ছে। এখন বাসা থেকেও বের হতে পারবে না সকলে চলে গেলে তারপর বাসা থেকে বের হতে পারবে না কেননা শান এতো দিন পর বাসায় আসছে ব্যাপারটা দৃষ্টি কটু দেখায়। সকালে সকলে উঠার পর থেকে হইচই পড়ে গেছে। জারা আজ দেরি করে নিচে নামলো। সকলে শানকে ঘিরে বসে আছে সামনে দুইটা লাগেজ খোলা তাতে বিভিন্ন জিনিসপত্র জারা একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। জারাকে ওদিকে যেতে দেখে শান্তি ও এসে বললেন

-‘ কি রে মা তোর মাথা ব্যথা কমছে?’

-‘ হ্যাঁ মনি তোমরা সকালের নাস্তা খেয়েছ?’

-‘ হ্যাঁ আআমি আর তুই বাদে সবার খাওয়া শেষ তোর মাথা ব্যথা করছিল বলে তোকে আর ডাকিনি বস খেয়ে নে ‘

-‘ বসো তুমি ও খেয়ে নাও ‘

জারা আর শান্তি দু’জনে গল্প করতে করতে খেয়ে নিলো। শান্তির সাথে জারাও থালা বাসনগুলো পরিষ্কার করলো। ইশা এসে জারা আর শান্তিকে বসার রুমে নিয়ে গেলো জারা আসতে না চাইলেও ইশা জোর করে আনলো। ইশা হেসে বলল

-‘ কি রে ভাইয়া আপুর জন্য কি আনছিস দেখা আমাদের ‘

শান একবার জারার দিকে তাকিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ তোরা তো বলে দিয়েছিলি তোদের জন্য কি আনতে হবে অন্য কেউ তার বলে নি তাই আমার ওতো মনে ছিলো না ‘

জারা তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে ওপরে যেতে যেতে বলল

-‘ আমি কারোর কাছে কখনো একসেপ্ট ও করি না আর আমার কিছু লাগবেও না আল্লাহ আমাকে সামর্থ্য দিয়েছে নিজের জিনিসপত্র নিজে কেনার আর আল্লাহ না করুক অন্যর কাছ থেকে কিছু নেওয়ার আর যদি এমন পরিস্থিতি আসেও না ভিক্ষা করে খাবো তবুও অন্যর কাছে চাইবো না নিশ্চনতে থাকবেন’

শান চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইলো জারার যাওয়ার পানে। জারা যে প্রতিটা কথা শানকে উদ্দেশ্য করে বলছে সেটা সবাই বুজতে পারছে। সকলে একে অন্যর মুখের পরিবেশ শান্ত শান উঠে চলে গেলো। শান্তি বেগম হাসিমুখে দেখলেন সবটা । শানের অপমান দেখে তিনি হাসলেন না হাসলেন জারাকে দেখে। মনে মনে বললেন ‘মেয়েটা বড্ড বদলে গেছে আগের মতো আর সহজসরল নেই কি জানি মেয়েটার হঠাৎ কি হলো আর দুম করে পাল্টে গেলো আলহামদুলিল্লাহ আমি এমনটাই চেয়েছিলাম’

এদিকে ইশা মুখ গোমড়া হয়ে বসে রইলো তান্ডব বয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে ওর দোষী মনে হচ্ছে। ভরা সভা থেকে উঠে ইশা জারার রুমে গেলো। জারা তখন রুমে এসে কি যেনো খুঁজছিলো ইশা দরজায় নক দিয়ে বলল

-‘ আপু আসবো?’

জারা থেমে ইশার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল

-‘ রুমে আসবি তা পারমিশন নেওয়ার কবে থেকে’

ইশা গোমড়া মুখো হয়ে বিছানায় গোল হয়ে বসে বলল

-‘ আপু তুমি কষ্ট পেয়েছ না? ‘

-‘ ওমা আমি কেন কষ্ট পাবো?’

-‘ ঔ যে ভাইয়ার কথায় আমি না বুঝতে পারি নাই যে…..’

-‘ দূর পাগলি আমি জানি লোকের সম্ভব কথাবার্তা কখনো পাল্টায় না তারা আজীবনই এমন থাকে মানুষকে কষ্ট দিতে ভালোবাসে অন্যকে কষ্ট দিয়ে খুশি থাকে তাতে তোর দোষ কোথায় বলতো একদম আজেবাজে কথা বলবি না ‘

-‘ তবুও আমার মন খারাপ হচ্ছে ‘

-‘ তো বলে ফেলেন আপনার মন খারাপ কমানোর জন্য আমি কি করতে পারি? ‘

-‘ সত্যি বলছ তো পরে পাল্টি খাবে না তো?’

-‘ না তারাতাড়ি বলে ফেল’

-‘ আগে প্রমিজ করো’

-‘ ওফফ আচ্ছা যা প্রমিজ বল এবার ‘

-‘ শুনো না আজ না আমরা সবাই মিলে বিকালে পদ্মাসেতুর ওখানে যাবো তাছাড়াও আরো অনেক জায়গায় বেড়াতে যাবো তুমি ও যাবে আমাদের সাথে’

জারা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল

-‘ সেটা কখন হয় না ইশা আমি কথা ফিরিয়ে নিলাম আমি তোর একথাটা রাখতে পারলাম না’

-‘ এমন করছ কেনো আপু চল না প্লিজ আর ক’দিন পরে তো বিয়ে করে শশুর বাড়িতে চলেই যাবো তখন আর তোমাকে জ্বালাবো না তখন আর বলবো না বেড়াতে যাবার কথা ‘

-‘ এমন ইমশন কথা বলে লাভ নাই। আমি যাচ্ছি না প্লিজ জোর করিস না এমনিতেও শান ভাইয়া যাবে আমাকে খোঁচাবে সেটা আমি চাইছি না আশা করছি তুই ও সেটা চাস না’

ইশা চুপ হয়ে গেলো আর কোনো কথা বলল না ও ব্যাপারে কথা ঘুরিয়ে বলল

-‘ কাল রাতে রুহান ভাইয়া তোমাকে ফোনে না পেয়ে আমাকে ফোন করে তোমার কথা শুনছিল আমি বললাম মাথা ব্যথা করছে হয়ত ঘুমিয়েছে। তুমি কথা বলে নিও’

-‘ হ্যাঁ আমিও রুহানকে কল দেওয়ার জন্য সকালে ফোন হাতে নিয়ে দেখি চার্জ নাই’
__________

রাতের অন্ধকার আকাশে আজ পূর্ণ চন্দ্র। সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে খন্ড খন্ড মেঘেরা এদিকে ওদিকে ছুটে বেড়াছে। জারা ছাদের দোলায় বসে কানের পিটে কাঠগোলাম গুজে গুনগুনিয়ে গান গেয়ে সেদিকে আনমনে তাকিয়ে রইলো।

গান–তোমার জন্য নীলচে তারার একটুখানি আলো
ভোরের রং রাতের মিশে কালো
কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় মিশিয়ে দিয়ে ভাবি আবছা নীল তোমার ডাকে আলো

কারোর উপস্থিত টের পেতেই জারা চুপ হয়ে গেলো। ব্যাক্তিটির কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়েছে ফুলের ঘ্রাণের সাথে মিশে গেছে। সে ঘ্রাণ জারার মস্তিষ্কে গিয়ে লাগতেই হঠাৎ মাথা ঝিম ধরে গেলো। বুঝতে অসুবিধা হলো কে এসেছে। তবুও জারা নিজেও মতো বসে রইলো বাতাসে তার গম্ভির কন্ঠ কানে এসে বারি খেলো

-‘ কি করছিস এখানে? ‘

জারা চুপ না থেকে জবাব দিলো

-‘ দেখতে পারছেন না পাশের বাসার ছেলের সাথে প্রেম করছি’

শান এবার আর সহ্য করতে না পেরে জারার খুব কাছে গিয়ে জারার মুখ চেপে ধরে চোখে চোখ রেখে বলল

-‘ কাজকাল দেখছি তোর মুখে খই ফুটেছে খুব চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বের হচ্ছে যে মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না সে মুখে যদি আর কখনো আমার মুখে ওপর কথা বলিস তোর মুখ আমি ভে/ঙে দিবো’

দুইজনের গরম শ্বাস-প্রস্বাস একে ওপরের মুখের ওপর আচরে পরছে। হার্ট বিট বেড়ে গেলো। জারা প্রথমে চমকে গেলেও পরে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে শানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল

-‘ আপনি আমার কে হন যে আপনার মুখের মুখে কথা বলতে পারবো না মগের মুল্লুক পাইছেন না-কি? আপনার বাবার টাকার খেয়েছি পড়েছি আপনার টাকায় নয় তাই আপনি যেটা বলবেন সেটা শুনতে আমি বাদ্ধ নই। নিজে ও নিজের মতো থাকুন আর আমাকেও থাকতে দিন’

চলবে ইনশাআল্লাহ

কালও গল্প দিবো ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here