সুখপাখি
৭.
চরম বিকট শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো শিমু। ভয়ানক চোখে আশেপাশে তাকালো। জানালার দিকে চোখ যেতেই দেখলো বাহিরে বিদুৎ চমকাচ্ছে। বজ্রপাতের বিকট শব্দেই শিমুর ঘুম ভেঙছে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো দরজা খোলা। আবিরের বন্ধু শাকিল যাওয়ার পর শিমু এসে সোফায় বসেছিলো। মনটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে গেছিলো। তখনই হয়ত চোখ লেগে এসেছে। ঘড়িতে দেখলো ভোর চারটা বাজে। বাহিরে ভিষণ বৃষ্টি।
শিমু ঘেমে জুবুথুবু হয়ে গেছে। চোখ বন্ধ করে বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নিলো। খুব ভয়ংক স্বপ্ন দেখেছে সে। পুরোটাই যেনো বাস্তব লাগছিলো। স্বপ্নটার কথা ভাবতেই পুরো শরীর থরথর করে কাপতে শুরু করে। ভয়ে চোখ দিয়ে পানি আপনা আপনি গড়িয়ে পড়ছে। শিমু দুই গ্লাস পানি খেলো। মনে মনে বললো,
— “উনি কি সত্যিই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে? এসব কি স্বপ্ন দেখছিলাম? নাকি আমি এখন স্বপ্নে আছি? উফ! মাথায় কিছু আসছে না। এতোটা বাস্তব কিভাবে ছিলো স্বপ্ন? এতোটা ভয়ানক স্বপ্ন। আল্লাহ।”
শিমু উঠে দাঁড়ায়। ওজু করে এসে আবার সোফায় বসে। তখনই বোরকা পরিহিত একজন মহিলা এসে শিমুর সামনে দাঁড়ালো। তাদের পেছনে শিমুর দাদি, চাচি এবং তাথইও আছে। শিমু মনে মনে ঘাবড়ে গেলো। কপাল বেয়ে চিকন ঘাম ঝরছে। সে মনে মনে ভাবছে,
— “স্বপ্ন কি সত্যি হয়ে গেলো?”
কয়েকটা ঢোক গিলে সামনের ব্যাক্তিটিকে সালাম দিলো। তিনিও সালামের উত্তর নিয়ে বললেন,
— “আপনি উপরে চলুন। আবির ভাইয়া কিছুটা সুস্থ আছে উনাকে নিয়ে আসা হচ্ছে।”
শিমুর প্রাণে যেনো পানি এলো। কথা না বাড়িয়ে তাদের সবাইকে নিয়ে অন্য একটা রুমে গিয়ে বসলো। তাথই দৌড়ে এসে শিমুর কোলে ঝাপ দিয়ে পরলো। শিমু তাথইকে কোলে নিয়ে দুই গালে চুমু দিয়ে তার চাচি এবং দাদিকে জিজ্ঞেস করলো,
— “কেমন আছো তোমরা?”
সৈয়দা খাতুন এবং রাবেয়া দুইজনেই হেসে উত্তর দিলো,
— “আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আবিরের এক বন্ধু আরফান নাম, সে বললো জামাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই আমরা চলে এসেছি। তুই চিন্তা করিস না জামাই এখন আপাতত সুস্থ আছে।”
শিমু বুকের ভেতর এক শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে এলো। মনটা আকুপাকু করছে এক নজর আবিরকে দেখার জন্য। কতটা ইনজুরড হিয়েছে সেটা দেখতে চাইছে। বোরকা পরিহিত মহিলা উনার নেকাব খুলে বসলেন। সৈয়দা খাতুন বললেন,
— “ও হচ্ছে আরফানের স্ত্রী আফরা।”
শিমু আফরার দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে আবারো সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— “ভালো আছেন?”
— “জ্বী আলহামদুলিল্লাহ। আপনি আমার পাশে বসুন। আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই।”
শিমু তাথইকে নিয়ে আফরার পাশে বসলো। তাথই কোল থেকে নেমে গেলো। সৈয়দা খাতুন এবং রাবেয়া দুইজনে বেরিয়ে গেলো। আবিরকে নিয়ে আসা হয়েছে। রুমে শুইয়ে দিয়েছে। আরফান এবং শাকিল দুইজনে মিলে আবিরের কাপড় বদলে ভালো থেকে কাপড় পরিয়ে দিলো। তাথই দৌড়ে গিয়ে আবিরের মাথার পাশে বসে পরে। রাবেয়া এসে নিয়ে যেতে চাইলে আবির থামিয়ে দিয়ে বললো,
— “থাক না চাচি। বসুক আমার পাশে।”
আরফান এবং শাকিল আবিরের পাশে বসলো। সৈয়দা খাতুন এবং রাবেয়া নিচে এসে রান্নাঘরে গিয়ে স্যুপ বানাতে লেগে যায়।
—————————————-
— “আপনাদের মাঝে কি কয়েকদিন ধরেই মনমালিন্য চলছে?”
শিমুকে প্রশ্ন করলো আফরা। শিমু মেঝের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “আমি যতটুকু পারছি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ইদানীং অত্যাচার একটু বেড়েই গেছে। উনি যা করে আমি সেটার অভিযোগ তুলছি না কিন্তু উনার বন্ধুদের নিয়ে এসে…। ”
— “হুম! আবির ভাইয়ার এটা ঠিক হয়নি। তবে আপনি চাইলে উনাকে সুধরাতে পারেন। আপনার জন্য যোগ্য স্বামী হিসেবে উনাকে গড়ে তুলতে পারেন।”
— “এভাবে থাকা সম্ভব না। এর চেয়ে বিচ্ছেদই ভালো।”
— “ক্ষমা করা যায় না? আরেকবার সুযোগ দেয়া যায় না?”
শিমু আফরার দিকে তাকিয়ে বললো,
— “বিনা কারণে মারধর, অত্যাচার এসব কিভাবে ক্ষমা করে দি? আর আমার জায়গায় আপনি হলে কি করতেন?”
আফরা হাসলো। শিমুর হাত ধরে বললো,
— “আপনি আমার ছোট তাই তুমি করেই বলছি। আচ্ছা শিমু তুমি বনী ইসরাইলের ১০০ খুন করা সিরিয়াল কিলারের ঘটনা শুনেছো? যে তার জীবনে ১০০ খুন করার পর আল্লাহকে ভয় করতে শুরু করে। আল্লাহর ভয়ে সে ভেতরে অনুতপ্ত হয়। তার শুধু অনুতপ্ত হওয়ার কারণে সে জান্নাত পেয়েছিলো। তওবা করারও সুযোগ পায়নি তার আগেই মৃত্যু তার দুয়ারে চলে এসেছিলো।”
শিমু খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো কথাটা। আফরা আবার বললো,
— “মক্কায় হিজরতের সময় রাসূলের উপর যারা অত্যাচার করেছেন। যাদের কারণে তিনি মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন মক্কা বিজয়ের পর তিনি কি করেছেন জানো? তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। ইতিহাসে তিনিই একজন যার উপর এতো অন্যায়, অত্যাচার হওয়ার পরেও তিনি মুচকি হেসে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।”
শিমুর গালে হাত রেখে বললো,
— “ভাবো একবার, মদখোর স্বামী মাতাল হয়ে ঘরে এসে স্ত্রীর উপর যখন অত্যাচার, জুলুম করে সেই স্ত্রী কি চায়না তার স্বামী সুপথে ফিরে আসুক? যীনায় (পরকিয়া) লিপ্ত স্ত্রী সুপথে ফিরে আসুক তার স্বামী কি চায়না? একসাথে ভালোবাসা আদান প্রদান করে বাকিটা জীবন পার করুক এটা কি চায়না তারা বলো? আমরা যে গল্প পড়ি বা শুনি সেখানে শেষে কিন্তু নায়ক মানে স্বামী কিন্তু স্ত্রীর প্রেমে পড়ে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তব জীবনে এমনটা হয়না। বাস্তব জীবনে কতজন পুরুষ আছে যারা আল্লাহর ভয়ে রাসূলের সুন্নাহ মেনে সুপথে ফিরে আসে? তুমি চাইলেই পারো আবির ভাইকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে। কারণ আবির ভাইয়া তোমরা প্রতি খুবই ডেসপারেট।”
শিমু কিছু বললো না। চুপচাপ শুনলো। মনের মধ্যে এসব নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করলো। আফরা আবার বললো,
— “তুমি তো জানোই আল্লাহ সঠিক পরিকল্পনাকারী। আমাদের পরিকল্পনা থেকে তাঁর পরিকল্পনা অনেকগুণ সুন্দর। তোমাদের দুজনের বিয়ে হয়েছে। দুজন পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আছো। এটা কি আল্লাহর পরিকল্পনা নয়? তুমি যত ইচ্ছা শাস্তি দাও আবির ভাইকে তবে সেটা তার সাথে থেকে। ছেড়ে যেও না। ছেড়ে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। আরেকটা কথা। আবির ভাইয়ার মা হয়ত উনাকে ছেড়ে চলে গেছিলেন তাই উনি সেই ধাক্কাটা সামলাতে পারেনি। আজকাল তো দুই তিনদিন প্রেম করেই বেগানা নারী /পুরুষ একজন আরেকজনের জন্য দেবদাস হয়ে যায়। সে জায়গায় উনার মা চলে গেছে ব্যাপারটা একটা শিশু বাচ্চার মনে খুব দাগ কাটে।”
আফরা আবার বললো,
— “রাসূলের মহৎ গুণ ক্ষমা করে দেয়া। সুন্নাহ মেনে সেটা না হয় করে দাও।”
শিমু কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো। আফরাও তার সাথে মুচকি হাসলো। শিমুকে বললো,
— “একটু পানি খাওয়াবে আমায়? পিপাসা পেয়েছে।”
শিমু উঠে গিয়ে গ্লাসে করে পানি আনলো। আফরা পানি খেয়ে বললো,
— “ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে শিমু। নামাজ পড়েনি চলো।”
শিমু হেসে জবাব দিলো,
— “জ্বী।”
আফরা বোরকা খুলে ফেলে। আফরার পেটটা একটু উঁচু। শিমু কয়েকবার তাকিয়েছে আফরার পেটের দিকে। আফরা হেসে বললো,
— “নতুন একজন সদস্য আসছে আমাদের।”
শিমুও হাসলো। দুজন একসাথে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়।
—————————————-
— “কেনো করিস এমন নিষ্ঠুরতা মেয়েটার সাথে? মেয়েটার এখন বয়স কত ভালো করেই জানিস। তারপরেও এমন করলি কেন?”
আরফান আবিরের উদ্দেশ্য কথাটা বললো। শাকিল তাথই এর সাথে গল্প করছে, খেলছে। আবির মিনমিনে স্বরে বললো,
— “জানিনা আমার হঠাৎ কি হয়ে যায়। নিজের মধ্যে থাকি না। আমার মনে হয় আমি তখন অন্য কোনো দুনিয়ায় আছি। সবাইকে মারতে ইচ্ছে করে।”
— “শুন আবির। স্ত্রী হলো কাচের গ্লাসের মতো। কাচের গ্লাস যেমন সাবধনতার সাথে ধরতে হয়, রাখতে হয়, ব্যবহার করতে হয় একজন স্ত্রী হলো ঠিক তেমন। কাচের গ্লাস জোরে ঠাস করে রাখলে যেমন ভেঙে যায় মেয়েদের মন তেমন। কোমল হয় মেয়েদের মন। স্বামীর কটু আচরণে ভেঙে যায়। তাদের সাথে কোমল আচরণ করতে হয়। ভালো ব্যবহার করতে হয়। বাহিরের মানুষের কথা শুনে ঘরে এসে হাঙামা করিস না। মানুষ অন্যের সুখে জ্বলে।”
আবির চুপ করে আছে। মনে মনে অনুশোচনা হচ্ছে খুব। আরফান আবার বললো,
— “একজন পুরুষের কাছে বাড়ি, গাড়ি এসব থেকেও সবচেয়ে দামি হলো তার স্ত্রী। রাসূল বলেছেন, একজন পুরুষের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো তার নেককার স্ত্রী। আর ভাবিকে দেখলাম যথেষ্ঠ দ্বীনদার। প্লিজ আর এমন কোনো আচরণ করিস না। সুন্নাহ মেনে চল ভালোবাসায় ভরপুর হবে জীবন।”
আবির মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। সৈয়দা খাতুন স্যুপ এনে আবিরের পাশে রাখলো। আবিরের চোখ শুধু শিমুকে খুজচ্ছে। সৈয়দা খাতুন বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললেন,
— “শিমু নামাজ পড়ছে। কোর’আন পড়া হলে তোমার কাছে আসবে।”
— “দাদি তাহলে স্যুপটা তখন দিয়েন।”
সৈয়দা খাতুন কিছু বললেন না। মুচকি হেসে স্যুপের বাটি নিয়ে গেলো। দরজার বাহির থেকে আফরা ইশারায় আরফানকে ডাকলো। আরফান রুমে এলে শিমু উল্টোদিকে ঘুরে বসে। আরফান বললো,
— “ভাবি কিছু মনে করবেন না কিছু কথা জিজ্ঞেস করছি। আবিরের এই আচরণ কোনদিন থেকে?”
শিমু ক্ষীণ স্বরে বললো,
— “যেদিন আমাদের বিয়ে হয় সেদিন ঠিক ছিলো। তবে প্রথম রাতেই উনার আচরণ অদ্ভুত ছিলো। পরে ঠিক হয়ে যায়। পরেরদিন রাত থেকেই কেমন যেনো উদ্ভট আচরণ করত। কখনো হাসতো আবার কখনো হুটহাট রেগে যেতো।”
আরফান চিন্তায় পরে গেলো। বললো,
— “এমন হবার কারণ কি? ও ড্রিংক করলে বা ড্রাগ নিলে নেশা হয়না ওর। কিন্তু এমন করার কারণ তো বুঝতে পারছি না।”
— “একটা ড্রাগ নেয় যেটা নেয়ার দু ঘন্টা পর আচরণ বদলাতে শুরু করে।”
আরফান আতংকিত কণ্ঠে বললো,
— “কিহ! ও আবার এই ড্রাগ নিচ্ছে? কখন থেকে নিচ্ছে? এইজন্যই তো এমন করে।”
শিমু চমকালো সাথে মনে প্রশ্নও জাগলো। প্রশ্ন চেপে রেখে বললো,
— “কখন থেকে নেয় সেটা তো জানি না।”
— “দুই বছর আগে এই ড্রাগ নিয়েছিলো ও মাহিনের মাধ্যমে। এক মাস নেয়ার পর ওর অবস্থা এতোই খারাপ ছিলো যে ওকে একমাস ধরে আই সিউ তে রাখা হয়েছিলো। এখন আবার নিচ্ছে। ভাবি আপনি প্লিজ ওকে একটু সাহায্য করুন। আপনিই পারবেন ওকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে। না হলে আবির খুব শীঘ্রই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
শিমুর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে। ভয় পেয়ে যায় খুব। সে মনে মনে বললো,
— “আমি আছি উনার পাশে। উনাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবোই।”
আরফান ইতস্তত করে বললো,
— ভাবি আরেকটা কথা। যদিও সে আপনার ভাই তারপরেও বলছি আবিরকে মাহিনের সাথে মিশতে দিবেন না প্লিজ। এতে আপনার এবং আবিরের জন্য ভালো হবে।”
মাহিনের নাম শুনতেই শিমুর রাগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। তার কারণেই আজকে সংসারে এতো ঝামেলা। যত্তসব বাজে লোক। আরফান এবং আফরা বেরিয়ে গেলো। শাকিলও বের হয়ে গেলো। যাওয়ার আগে শাকিল তার বিয়ের দাওয়াত দিয়ে গেলো। শিমুর দাদি এসে বললেন,
— “স্যুপ নিয়ে যা। জামাই তোর হাতে খেতে চাইছে। আমাদের হাতে খাবে না।”
কথাটা বলে সৈয়দা খাতুন এবং রাবেয়া হাসতে শুরু করে। শিমু কোনোরকম পালিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। রান্নাঘরে গিয়ে স্যুপের বাটি নিয়ে আবিরের কাছে আসে। রুমের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায়। কেমন যেনো জড়তা কাজ করছে ভেতরে যেতে। তাও গুটি গুটি পায়ে হেটে গেলো।
—————————————-
— “কি বুঝলে আবিরের বউ এর সাথে কথা বলে?”
আফরা আরফানের কাধে মাথা রাখলো। তারপর বললো,
— “একজন মানুষ পাপের সাগরে ডুবে থাকলেও আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে আল্লাহ মাফ করে দেয়। কিন্তু মানুষ মানুষকে একটা থাপ্পড়ের জন্যেও মাফ করে না।”
আরফান বললো,
— “ভাবি যথেষ্ট দ্বীনদার। উনি ঠিকই আবিরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবে। আবিরের শুধু নেশা করার বদ অভ্যাস বেশি। এছাড়া আর কোনো বদ অভ্যাস নেই। শিমু ভাবি ঠিকই পারবে।”
আফরা হেসে বললো,
— “তাই হোক।”
আবিরকে স্যুপ খাওয়ানো শেষ হলে শিমু উঠে যেতে নিলেই আবির শিমুর হাত ধরে। শিমু আবিরের মুখের দিকে তাকালে আবির বললো,
— “শিমু আমাকে একটাবার কি ক্ষমা করা যায় না? একবার সুযোগ দেয়া যায়না? আমি মানছি আমি অনেক অন্যায় করেছি সেই অন্যায়ের কি মাফ পাবো না?”
শিমু কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। মনের মধ্যে খচখচ করছে। স্বপ্নটার কথা বারবার মনে পরছে। স্বপ্নেও এভাবেই মাফ চেয়েছিলো আবির। শিমুর ভেতরে আতংক ভর করে।
পরেরদিন শিমুর দাদি, চাচি এবং তাথই চলে যায়। শিমুও নিজের মতো করে আবিরের দেখভাল করেছে। আবির অনেকবার কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু শিমু হু, হা ছাড়া কিছুই বলেনি।
রাতে দুজনে ঘুমিয়ে পরে। মধ্যেরাতে আবিরের ঘুম ভেঙে যায়। তার পাশে হাতরে যখন শিমুকে পেলো না ঘাবড়ে যায়। পরক্ষণেই খেয়াল করে দেখলো শিমু নামাজ পড়ছে। সম্ভবত তাহাজ্জুদ। আবির অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পরে। পরিবেশটা কেমন ভারি হয়ে এলো। শিমু জায়নামাযে বসে কান্না করছে। যা আবিরের কান পর্যন্ত পৌছে যাচ্ছে। শিমুর প্রতিটা গুন গুন কান্নার আওয়াজ, প্রতিটা বুকভরা ভারি নিঃশ্বাস আবিরের ভেতরে তোলপাড় করে দিচ্ছে। আবির বামহাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। শিমুর কান্নায় আবিরের বুকটাও ভারি হয়ে আসে। ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে আবিরের। শিমুর প্রতিটা কান্নার আওয়াজ আবিরের পাথর মনটাকে মোমের মতো গলিয়ে দিয়েছে। আবির সেই রাতে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে দুজনের ভালো রয়েছে।
চলবে,,,
® নাহার।
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)