#একমুঠো_রোদ_আর_প্রজাপতি_বিস্কুট সমাপ্ত
#মৌমি_দত্ত
বাসায় ফিরেই আবির ফ্রেশ হয়ে টিশার্ট পড়ে চলে গেলো ডিনার টেবিলে। মায়ের সাথে বসে মন ভড়ে ডিনার করলো। এরপর সোজা চলে গেলো আবির রাম্নাঘরে। আফিনা অবাক হলেন ছেলেকে রাম্নাঘরে দেখে।
– কিরে! তুই আমার রান্নাঘরে কি করিস? বের হ বলছি।
আফিনাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো আবির। এরপর নিজের মতো করে জিনিসপত্র নামাতে নামাতে বললো,
– তোমার ছেলে চাকরি ছেড়েছে। সামনে কোম্পানী খুলবে। এককথায় গরীব বলা যায়। তোমার ছেলে তাই তার বউকে গরীব ভাবে প্রোপোজ করবে। তবে আলাদা শানের সাথে।
আফিনা অবাক হয়ে বললো,
– কিভাবে?
উত্তর দিলো না আবির। শুধুই হাসলো বাঁকা। আফিনাও মৃদু হাসলেন। এরপর তিনি চলে গেলেন ঘুমাতে। আর আবির নিজের প্ল্যানিং করা কাজ সুন্দর ভাবে করতে লাগলো। কাজ শেষে সব গুছিয়ে গেলো হালকা ঘুম দিতে। কালকের সকালটা অনেক স্পেশাল।
.
.
সকালে মর্জিনা কেঁদেকুটে দরজা টোকা দিতে লাগলেন অনবরত। আবিরের জন্য মাকে কাঁদাতে পারবে না মিশু। তাই দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো ধীর পায়ে। তা দেখে পত্রিকার আড়ালে মোবাইল ধরে আবিরকে মিসড কল দিলো ইব্রাহিম।
আবির এই সময় অপেক্ষা করছিলো বাসায় কলের। মিসড কল এসেছে দেখেই আফিনাকে পা ছুঁয়ে সালাম করে সে বের হয়ে আসলো একটা প্যাকেট হাতে। প্যাকেটটা নিয়েই ছুটলো পাড়ার মোড়ের রাসেলের দোকানে। ওখানে বসেই সবাই চা খায় পাড়ার ছেলেরা। আর আবির চা খেয়েছে এতোদিন মিশুর সাথে। আচ্ছা মিশুকে ছাড়া তার লাইফের কোণা খালি আছে কি ১২ বছরের পর? ভাবতেই হাসি ফুটলো মুখে। রাসেলকে সবটা বলে প্যাকেটটা সাবধানে রাখতে বলে আবার ছুটলো মিশুদের বাজার উদ্দেশ্যে।
– মা খাবার দাও।
মর্জিনা চোখের পানি মুছে ইশারা করলেন ইব্রাহিমকে। ইব্রাহিম ইশারায় জানালেন কাজ হয়ে গেছে। মর্জিনা আস্তে ধীরে হাঁটলেন রান্নাঘর পর্যন্ত। যথা সম্ভব একদম ধীরে চলতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু উত্তেজনা ভেতরে প্রবল। ইব্রাহিমও টেবিলে এসে বসলো। নীরবেই নাস্তার পর্ব সাড়লো মিশু। ইব্রাহিম আর মর্জিনাও কিছু বললো না। মর্জিনা দরজা খুলেই রেখেছে মিশুর পাতে খাবার দিয়ে। কখন যে আবির আসবে!
মিশু খাওয়ার শেষ করে উঠে দাঁড়িয়েছে দেখেই আতকে উঠলো নীরবে ইব্রাহিম ও মর্জিনা। তখনই দরজা দিয়ে একদৌড়ে ঢুকে পড়লো ঘরে আবির। আর সোজা গিয়ে টেনে ধরলো সামনে আগাতে যাওয়া মিশুকে। আচমকা এমন হওয়ায় চোখ বুজে টেবিল ধরে নিলো মিশু। এরপর চোখ খুলে আবিরকে দেখেই তার সারারাত কান্না করে ফুলে যাওয়া লাল চোখ আবারও ছলছল করলো। তবুও নিজেকে সামলে মিশু বললো,
– বলো আবির ভাই!
ইব্রাহিম আর মর্জিনার দিকে তাকিয়ে আবির দ্রুত হাত ছেড়ে দিলো মিশুর। এরপর হেসে বললো,
– চল না পাড়ার দোকানে চা খেতে।
ভ্রু কুঁচকে এলো মিশুর। এতো সকালে তো কখনো যায়নি শুক্রবার ছাড়া। আর আজকে আবির ভাই চাকরিতে গেলোনা কেন?
– প্লিজ লক্ষীটি, চল না।
আবিরের অসহায় মুখ দেখে মানা করবে এমন সাধ্যি কি আছে মিশুর। হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কৃত্রিম হেসে বললো,
– চলো।
.
.
দু’জনেই বেড়িয়ে এলো বাসার থেকে। ধীর পায়ে হাঁটছে দুজনেই। আবির আড়চোখে খেয়াল করছে মিশুর কাটা হাতের দিকে। না এখনো ব্যান্ডেজ লাগায়নি। পাড়ার মোড়ের দোকানে যাওয়ার আগে একটা ফার্মেসি পড়ে। আবির দ্রুত ঢুকে পড়লো ফার্মেসিতে। অবাক হলো মিশু। তবে নিজের মধ্যে আর কোনো ইচ্ছে বা আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে না তার। তাই চুপ থাকলো। আবির একটা ব্যান্ডেজ কিনে এনে জড়িয়ে দিলো মিশুর হাতের কাটা জায়গায়। তা দেখে মিশুর খুব কান্না পেলো। কেন এতো কেয়ার করবে তা নিয়ে নীরবে মনে মনে অভিযোগ করলো শুধুই চাহনি দিয়ে। আবিরের চোখে চোখ পড়তেই চোখ সড়িয়ে নিলো মিশু। আবির অসহায় ভাবে একটা নিঃশ্বাস ফেললো।প্রেয়সীকে এতো কষ্ট দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলো।
দু’জনেই এসে পৌছালো পাড়ার মোড়ের রাসেলের দোকানে। এখানে তারা আগেও এসেছে। কিন্তু তখন আর এখনের ওদের মাঝে অনেক পার্থক্য রাসেলেরই চোখে পড়লো। কোথায় চঞ্চল মিশু ছিলো। এখন খুউব শান্ত।
– মামা দুইটা চা দে, সাথে বিস্কিট।
অর্ডার দিয়েই মিশুর দিকে তাকিয়ে বত্রিশ দাঁত দেখিয়ে হেসে শিষ বাজাতে লাগলো আবির। মিশু কৃত্রিম হেসে অন্যদিকে তাকালো। বাইরের মিষ্টি রোদটা ভালোই লাগছে। শীতকাল তার ভালোই লাগে। রাসেল দ্রুত দুই কাপ মালাই চা এগিয়ে দিলো। সাথে একটা প্লেইটে দুটো বিস্কিট। হাত বাড়িয়ে সবটাই নিলো আবির। এরপর মুচকি হেসে মিশুর হাতে তুলে দিলো একটা বড়সড় বিস্কিট। যা দেখতে অনেকটা হাফ প্রজাপতির শেইপ। পাত্তা দিলো না মিশু। কোনো কিছুতে সে আগ্রহ বোধ করছে না। বিস্কিটটা হাত বাড়িয়ে নিতেই দেখলো তাতে আবির লেখা চকলেট দিয়ে। পাত্তা দিলো না তাতেও মিশু। হয়তো এটাও কোনো ডিজাইন। এই ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিস্কিটটা মালাই চায়ের মাটির কাপে ডুবাতে যাবে এমন সময় আতকে উঠলো আবির। ছো মেরে নিয়ে ফেললো বিস্কিটটা। অবাক হলো মিশু। এটা কী হলো??
– এতো খাই খাই অভ্যেস কেন তোর? দিয়েছি বলে না দেখেই খেয়ে নিবি?
মিশু ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করলো।
– অদ্ভুত তো! নিজেই দিলে। নিজেই কথা শোনাচ্ছো।
মিশুকে চটিয়ে দিতে চায় না আবির। তাই শুকনো ঢোক গিললো ভয়ে। এরপর ক্যাবলা হেসে বললো,
– আগে দেখ তো!
এই বলেই চোখ দিয়ে তার হাতের দিকে ইশারা করলো। মিশু খানিকটা বিরক্তি নিয়ে আবিরের হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো। তার ভাগের বিস্কিটটা ছিলো অর্ধেক প্রজাপতি। আর অর্ধেক ভাগ নিয়েছিলো আবির। দুটো মিলিয়ে একটা প্রজাপতি। দুই ভাগের এক ভাগে লেখা ” আবির ” আর এক ভাগে লেখা ” মিশু “। অবাক হয়ে আতকে উঠলো মিশু। আবির তার চিড়ল দাঁতের হাসি হেসে বললো,
– এই মিশু! ঐ একমুঠো রোদ সাক্ষী রেখে, প্রজাপতি বিস্কুট দিয়ে তোর গরীব আবির ভাই তোকে ভালোবাসি জানাচ্ছি। বিস্কিট দুটো পেটে চালান করে হ্যাঁ জানিয়ে দে তো। এগুলো কিন্তু রাত জেগে বানিয়েছি।
মিশুর চোখে মুখে বিষ্ময়। কি হচ্ছে এসব? এই যে কাল শুনলো অনিন্দিতা নামটা? মূহুর্তে রঙ পাল্টালো মিশুর মুখের। চিৎকার করে বললো,
– আমি বাড়ি যাবো।
– আচ্ছা যাবো তো বাবা। আগে নাহয় খে..
– আমি বাড়ি যাবো মানে যাবো।
মিশুর রাগ আর জেদ দেখে ভড়কে গেলো রাসেল আর আবির। দু’জনেই শুকনো ঢোক গিললো। মিশু উঠে দাঁড়ালো। রাসেলকে টাকা দিয়ে বিস্কিট হাতেই হাঁটা দিলো পিছন পিছন আবিরও। মিশুর বাসার দরজা খোলাই ছিলো। আর ড্রয়িং রুমে উদ্বিগ্ন হয়ে বসেছিলো আফিনা, ইব্রাহিম আর মর্জিনা। মিশুকে ধুপধাপ পা ফেলে নিজের রুমের দিকে যেতে দেখে, আর পিছন পিছন অসহায় মুখ করে আবিরকে আসতে দেখে তারা দাঁড়িয়ে পড়লো।
মিশু নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছিলো দেখে আবিরের মুখে অসহায় ভাব ফুটলো। তখনই আবার দেখলো হাফ বাঁধা দরজাটা ধুপ করে খুলে আবিরের হাত থেকে ছো মেরে বিস্কিট নিলো মিশু। এরপর আবিরের মুখের উপর ধুপ করে বন্ধ করে দিলো দরজা। দরজা বন্ধ করেই দরজা ঘেষে দাঁড়ালো মিশু। বুক তার একটু আগের বিষয়টা নিয়ে ধুপধুপ করছে। হাতের দিকে তাকাতেই দেখলো প্রজাপতি বিস্কিট খানা। মুচকি হাসলো মিশু। বিস্কিট দুটোতেই আলতো কামড় দিয়ে খেয়ে দেখলো। এরপর ” ইয়েসসসসসসসসসসসসসস ” বলে চিৎকার করে উঠলো আর লাফাতে লাগলো।
এতোক্ষন বাইরের থেকে কান পেতে সবটা শুনছিলো দরজায় ঘেষে দাঁড়িয়ে আবির। মিশুকে লাফাতে আর উল্লাস করতে শুনে মুখে হাসি ফুটলো তার। সেও ” ইয়েস ” বলে একটা মৃদু চিৎকার দিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখলো আফিনা, মর্জিনা আর ইব্রাহিম দাঁড়িয়ে। আবির হালকা খানিক লজ্জা পেলো। এরপর মাথা চুলকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলো। তার একমুঠো রোদ আর প্রজাপতি বিস্কুটের ভালোবাসা সে পেয়ে গেছে।
ভালোবাসা গুলো এমনই সুন্দর হোক। আপনারাও ভালো থাকুন এই ইদের আনন্দমুখর দিনে। আর আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবেন সকলের হাসিমুখ ও সুস্থতার। কালকে ঈদের দিনেই পাচ্ছেন #ছদ্মবেশে_লুকানো_ভালোবাসা #সিজন_২ পরবর্তী পর্ব। এই ইদে অনেক ভালো কাজের ভীড়ে আমার পেইজ প্রোমোটিংয়ের কাজটাও করে দিন। 😐😐
ঈদ মোবারক সবাইকে। 🥳🥳🥳🥳🥳
সমাপ্ত