#একমুঠো_রোদ_আর_প্রজাপতি_বিস্কুটপর্ব_৩
#মৌমি_দত্ত
আবির বেচারা জানেও না। কি খেলাই না খেলা হচ্ছে তার সাথে।
.
.
রাতে আবির বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলো। মেজাজটা খিটখিটে হয়ে আছে তার। কি করবে কোনো মতে বুঝতে পারছে না সে। অনিন্দিতা তাকে যেন ইগ্নোর করছে খুব করে। আর ভালোবাসার মানুষ ইগ্নোর করলে রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এদিকে আফিনা আসার পর থেকে ছেলের সাথে কথা বলতে পারেনি। আবিরও ভাবলো মাকে একটু সময় দেওয়া উচিত। আবির তাই আফিনার রুমে গেলো। আফিনা চিন্তিত ভাবে বসে ছিলেন নিজের রুমের খাটে, ঘুরতে থাকা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে। আবির মৃদু স্বরে ডাকলো,
– আম্মু! কবে এলে?
আফিনার হুশ ফিরলো ছেলের ডাকে। মৃদু হেসে ছেলেকে ভেতরে আসতে ইঙ্গিত করলো। আবিরও মিষ্টি হেসে ভেতরে ঢুকলো রুমের। মায়ের পাশে খাটে বসলো। আফিনা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
– হুম করো না আম্মু!
আবির সাথে সাথেই উত্তর দিলো। আফিনা খুশী হলেন। এরপর হালকা গলা কেশে বললো,
– তুই কি কারোর সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে আছিস? মিশুর কাছে জানলাম তুই নাকি একজনকে ভালোবাসিস?
চমকে তাকালো আবির। সে তো মিশুকে কখনো বলেনি তার আর অনি’র কথা। তাহলে জানলো কিভাবে মিশু? আর মাকেই বা বললো কখন? আফিনা ছেলের দ্বিধা দেখে আজকে সকালের সব কথা খুলে বললেন। আবির কিছুক্ষন চুপ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি ভেবে নিলো। অনিন্দিতা তাকে ইগ্নোর করছে হয়তো এই জন্যেই, বিয়ের প্রতি আগাচ্ছে না বলেই। আর মিশু তো তার কাছে ভাগ্য করে আসা মানুষ, অমন একটা খেয়াল রাখারমানুষ ক’জনই বা পায়? আবির হয়তো লজ্জায় মাকে কখনোই জানাতে পারতো না ভালোবাসার কথা। মনে মনে মিশুকে ধন্যবাদ দিলো। তারপর আফিনাকে সব খুলে বললো যে তার সম্পর্ক আছে ৪ বছরের। ভার্সিটি লাইফ থেকে অনিন্দিতা শেখ নামে এক মেয়েকে ভালোবাসে। আফিনা খুশী হলেন, যাক ছেলে জানালো তো তাকে। খুশী হলেন মিশুর উপরেও। আফিনা ছেলেকে বললেন, কালই মেয়েটিকে নিয়ে আসতে ডিনারে। মেয়ের সাথে দেখা করবেন। আবিরও খুশী হলো মায়ের সাপোর্টে। এরপর আফিনা গেলেন রান্না করতে। এতোদিন না থাকলেও তার একটুও সমস্যা হয়নি। মিশু পুরো ঘ, রান্নাঘর, বাসন পত্র সব গুছিয়ে রেখেছে।
এদিকে আবির পায়চারি শুরু করলো প্রবল উত্তেজনায়। মিশু যখন জানবে তার আন্দাজে বলা কথা সত্যি, তার আবির ভাই একজনকে আসলেই ভালোবাসে। তখন মিশুর রিয়েকশনটা কি হবে এই প্রশ্নটাই মাথায় ঘুরঘুর করছে তার। আবির চোখ বুজে ভেবে নিলো কিছুক্ষন। কল্পনায় স্পষ্ট দেখলো মিশু ঠোঁট ফুলিয়ে মুখ ফুলিয়ে এক অবস্থা। মিহি স্বরে বলছে ” আমাকে কেন সবার আগে বললেনা আবির ভাই,, “। হেসে ফেললো আবির। কিন্তু একি! মিশু আজকে পড়তে এলো না কেন? না আর সওয়া সম্ভব না এই উত্তেজনা। মাকে বের হচ্ছে জানিয়ে চলে গেলো সোজা মিশুর বাসায়। কলিংবেল বাজানোর খানিক পরে মর্জিনা আখন্দ দরজা খুলে দিলো। আবিরকে দেখে অবাক হলো। তবুও ঢুকবার রাস্তা করে দিয়ে বললো,
– মিশুর জন্য এসছো তো?
আবির মুচকি হেসে বললো,
– হ্যাঁ আন্টি। আজ পড়তে আসলো না যে?
মর্জিনা মুখ গোমড়া করে বললেন,
– কেঁদেকেটে একশো দুই জ্বর নিয়ে ছাদে গেছে। মনে হয় না আজ আর যাবে।
চমকালো আবির। মিশু কেন কাঁদলো? আর কান্না নিয়ে তো মিশু যেকোনী বিষয়ই হোক না কেন, তার কাছে ছুটে। আজ গেল না কেন?
আবির মর্জিনাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো সোজা ছাদে। মিশু নীল সাদা শাড়ি পড়ে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। আবির হালকা রাগ করলো। মাথায় ফুল টুল দিয়ে জ্বরের মধ্যে এভাবে সাজলো কেন মেয়েটা? রাগ নিয়ে ছাদে পা রাখতেই পায়ের শব্দে মিশু ঘুরে তাকালো ছাদের দরজার দিকে। আবির সেখানেই থেমে গেলো। মিশুকে আজ তার একটু বেশিই বড় লাগছে। মিশু কি ঐ পিচ্চি থেকে বড় হয়ে গেলো? সেদিনও তো কাঁধে পিঠে করে ঘুরেছে। আজ কি সে অন্য কেও? আবির থমকেই থাকলো। মিশুই এগিয়ে আসলো অবাক হয়ে। পড়নে নীল পার, সাদা শাড়ি। হাতে গাঢ়ো করে আলতা দেওয়া। চোখে কাজল আর আইলাইনার দিয়ে চোখ এঁকেছে। কপালে কালো টিপ, নাকে নাকফুল, কানে আর গলায় হালকা স্বাভাবিক কিছু গয়না। চুলগুলো খুলে তাতে মাতাল করা বেলী ফুল গুঁজা। পায়ের নুপুর হালকা উঁকি ঝুঁকি করছে। আবির মুগ্ধ হয়ে দেখছে আজকের এই মিশুকে। একদম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। এভাবে হয়তো অনিকেও সে দেখেনি। কখনোই দেখেনি।
চাঁদের আলোয় মিশু দেখছো তার রাজপুত্তুরকে। ৬ ফিট ৩ ইঞ্চি লম্বা আবিরের বুকের একটু নিচ পর্যন্ত হাইট তার। মাথা উঁচিয়ে দেখতে হয় মিশুকে আবিরের দিকে। বর্তমানে ফর্সা সুদর্শন এই যুবকটির পড়নে কালো টিশার্ট আর জিন্স প্যান্ট। যুবকটাকে সে খুব বেশি ভালোবাসে। এটা কি যুবকটা বুঝে না?
.
.
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে দু’জন, আবির আর মিশু। আবিরই মুখ খুললো,
– পড়তে গেলি না কেন?
– এমনিই।
উত্তর দিলো মিশু। সন্তুষ্ট হলো না আবির। এরপর মৃদু হাসলো ঠোঁট কামড়ে। তারপর বললো,
– তুই বড় হয়ে গেছিস রে মিশু।
মিশুর গালে লজ্জার আভা পড়লো। আবির তা না দেখেই বুঝতে পারলো। মৃদু হেসে বললো,
– তোর এই সাজগোজ আজকে থেকে ব্যান করলাম।
মিশু অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলো। আবির তা মন ভরে দেখলো। আজকের শেষ প্রহর কি ” মুগ্ধ দিবস “?
– আচ্ছা শুন না! এদিকে তাকা।
মিশু না চাইতেও তাকালো আবিরের দিকে। আবির মৃদু হেসে বললো,
– যদি জানিস আমি ভালোবাসি?
বুকের ঢিপঢিপ আওয়াজ শুনা যাচ্ছে খালি কানেই। মুচকি হেসে বললো,
– সত্যি বলছো?
– আমি একজনকে ভালোবাসি।
মিশুর চোখে আশা। আবির তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো,
– কালকে ডিনার আমাদের ওখানে। সারপ্রাইজ আছে তোর জন্য। বেস্ট গিফট এভার হবে ওটা।
আবির চলে গেলো ছাদ ত্যাগ করে। আশায় আর খুশীতে চোখ ছলছল করে উঠলো মিশুর।
.
.
একটা নতুন সকাল। আজকে স্কুলে না গিয়ে সারাদিন ছুটোছুটি করলো মিশু খুশীতে। কিন্তু মায়ের মন মর্জিনার, কেন যেন মনে মনে সে আশংকায় আছে। মেয়েটার মন ভাঙ্গতে চলেছে নাকি?
ইব্রাহিম সাহেবও কম বেশি অনেকটাই জানেন মেয়ের আবিরকে ভালো লাগার কথা। মেয়ের মাঝে এমন চঞ্চলতা দেখে খুব ভালো লাগছে তার। বন্ধু তাকে বলেছিলো তার ঘরের পুতুল নিজের ঘরে নেবে। সে বেঁচে না থাকলেও তার ইচ্ছে পূরন হবে।
.
.
আয়াশ আর অনিন্দিতা আজ অনেক সকাল সকাল এসছে। দুইজনেই প্ল্যানিং করেই এসছে সবটা। কি ধামাকা আজকে করবে। আবিরের মুখে শান্ত ভাব। অথচ বাঁকা হাসিও ঝুলছে। নিজের কাজ বেশ মন দিয়েই করছে সে। এমন সময় শুনলো আয়াশ বস সবাইকে হলে ডাকিয়েছে। সেও গেলো সবার সাথে। দেখলো আয়াশ আর অনিন্দিতা পাশাপাশি স্টেইজে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই হলে জড়ো হতেই মাইকের সামনে হাসিমুখে দাঁড়ালো আয়াশ খান।
– হ্যালো এভরিওয়ান। আজকে আমি আপনাদের কাছে আমার সব থেকে খুশীর মূহুর্ত শেয়ার করতে চলেছি। সো এভরিওয়ান, মিট মাই লাভ, মাই ফিউচার ওয়াইফ, মাই ফিয়ান্সে, অনিন্দিতা শেখ।
অনিন্দিতা এনাউনস্মেন্ট শুনে মুখ চেপে লাজুক হাসলো।
চলবে,
#ছদ্মবেশে_লুকানো_ভালোবাসা #সিজন_২ দেবোনা কে বললো? একটা গল্প টানা লিখতে গিয়ে একঘেয়ে লাগছিলো। কারণ এইবার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি ২ পর্ব একসাথে করে দিয়ে আপনাদের খুশী করার। যদিও আমার রিচ বাড়েনি। আর তা নিয়ে ভাবতেও চাইনা।যাই হোক! #ছদ্মবেশে_লুকানো_ভালোবাসা #সিজন_২ দেবো এই গল্প শেষ হলেই।
পর্ব ৪:
https://www.facebook.com/263481925517338/posts/423527486179447/