#বাল্যবিবাহ
[৪র্থ পর্ব]
লেখক – আবির চৌধুরী
কিছুক্ষণ পরে নীলার শ্বাশুড়ি নীলার রুমে এসে দেখে নীলা শুয়ে আছে। এবার তিনি নীলাকে ডেকে ঘুম থেকে উঠাল।
— মা কিছু লাগবে?
— রাতের খাবার তো এখনও তৈরি করা হলোনা। রাতে কি খাবে সবাই?
— আচ্ছা আমি রান্না করে দিচ্ছি। আপনি যান।
এই দিকে নিলয় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সব দেখছে কিন্তু সেও কিছু বলছেনা। নিলয় ইচ্ছে করলেই অনেক কিছুই বলতে পারে। কিন্তু সে দাঁড়িয়ে শুধুই দেখে যাচ্ছে। নীলার শ্বাশুড়ি নীলার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। একটু পরে নীলা অসুস্থ শরীর নিয়ে রান্না করতে চলে যায়। রাতের খাবার রেডি করে সবাই খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলো।
নীলা নিজের খাবার খেতে বসল। কিন্তু মাথা ব্যাথার কারণে সে খাবার খেতে পারছেনা। নীলা সামান্য খাবার খেয়ে নিজের রুমে চলে গেল। রুমের ভিতরে গিয়ে দেখে নিলয় ঘুমিয়ে পড়ছে। এবার নীলা নিলয়ের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। ঘুমানোর সাথে সাথে ঘুমের দেশে হারিয়ে যায় নীলা।
মধ্য রাতে কারো হঠাৎ করে নিলয়ের ঘুম ভেঙে যায় কারো গোঙানির শব্দে। নিলয় ঘুম ঘুম চোখে পাশে তকিয়ে দেখে নীলা কেমন করছে। এবার নিলয় নীলার কপালে হাত দিয়ে দেখে নীলার শরীর জ্বরে ফুড়ে যাচ্ছে। নিলয় নীলাকে এমন অবস্থায় দেখে খুব মায়া হলো। নিলয় কি করবে বুঝতে পারছেনা। নিলয় এবার তার মায়ের রুমে গিয়ে তার মাকে ডাক দিয়ে বলল — মা নীলার শরীর জ্বরে ফুড়ে যাচ্ছে কি করব? একটু আসো তো প্লিজ।
— আরে একটু তো জ্বর আসছে এমনি ঠিক হয়ে যাবে তুই ঘুমিয়ে যা। সকালে ওষুধ এনে খাইয়ে দেন জ্বর না কমলে। আমাকে ঘুমাতে দে আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
এই কথা বলে নিলয়ের মা আবার শুয়ে পড়ল। তারপর নিলয় আবার নিজের রুমে চলে গেলো। নিলয় শুয়ে পড়ল আবার। কিন্তু নিলয় ঘুমাতে পারছেনা নীলার গোঙানির শব্দে। এবার নিলয় নীলার দিকে নিজের কান এগিয়ে দিয়ে শোনার চেষ্টা করল নীলা কি বলছে।
নীলার মুখ থেকে কিছু কথা বের হচ্ছে — ও আম্মা তুমি কোথায়? ও মাহ, তোমরা কেন আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলে? আমি তো আর পারছিনা মা। তোমরা আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে।
নিলয় বুঝতে পারল নীলার খুব কষ্ট হচ্ছে। নিলয় এবার নীলার কপাল মুছে দিতে থাকে। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না। এবার নিলয় নীলাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়।সকালে নিলয় তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে যায় না খেয়ে। ঘড়িতে ঠিক ১০ টা বাজে তখন নীলার শ্বাশুড়ি ঘুম থেকে উঠে নাস্তার টেবিলে গিয়ে দেখে কিছুই তৈরি হয়নি আজ। নীলার শ্বাশুড়ি তো রেগে গিয়ে নীলার রুমের দিকে চলে গেলো। নীলার রুমে গিয়ে দেখে নীলা এখনও ঘুমিয়ে আছে।
— এইযে নবাবজাদী এতো বেলা অব্দি শুয়ে থাকলে বাসার সব কাজ কে করবে? রান্না বান্না কে করবে? আমার ছেলেটা যে না খেয়ে অফিসে চলে গেছে সেই খেয়াল কি আছে?
— আসলে মা আমার শরীর টা খুব খারাপ লাগছে, আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছিনা। আজকে আপনি একটু কষ্ট করে রান্নাটা বসিয়ে দেন।
— কিহ! আমি কি তোমার চাকর নাকি যে আমাকে হুকুম দিচ্ছো?
— আমি আপনাকে কখন হুকুম দিলাম মা? বলছি আপনি একটু কষ্ট করে বসিয়ে দেন আমার শরীর টা ভালো না তাই।
— আমার ছেলে বাসায় আসুক তারপর এটার বিচার হবে। এখন এসব অভিনয় বাদ দিয়ে রান্না বসাও আমাকে নাস্তা বানিয়ে দাও আমার খিদে পেয়েছে অনেক। আমি আমার রুমে যাচ্ছি নাস্তা বানিয়ে আমার রুমে দিয়ে আসবে।
— আচ্ছা মা।
তারপর উনি নিজের রুমে চলে গেলো। এবার নীলা জ্বর নিয়ে নাস্তা তৈরি করতে গেল। নীলার শরীর কাপছে জ্বরের কারণে। অনেক কষ্ট করে নাস্তা বানিয়ে নিয়ে গেল তার শ্বাশুড়ির রুমে। তারপর নীলা তার শ্বাশুড়িকে নাস্তা দিল। উনি খাবার মুখে দিয়ে আবার বের করে ফেলে দিল। আর বলতে থাকে — এসব কি কোনো খাবার? এসব খাবার কোনো মানুষ খায় নাকি?
— কি হইছে মা? খাবারে কি কোনো সমস্যা হইছে?
— সমস্যা হইছে মানে কি? আমাদের কি ঘরে কি লবণ নেই নাকি? একটুও তো মনে হয় লবণ দেও নি।
— আসলে মা জ্বরের মুখে কিছু বুঝতে পারিনি তাই সমস্যা হয়েছে। আচ্ছা আমি আবার নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি।
এই কথা বলে নীলা আবার নতুন করে নাস্তা বানিয়ে তার শ্বাশুড়িকে দিল। এবার তিনি নাস্তা করে শুইয়ে পড়ল। নীলা অনেক কষ্ট করে বাসার সব কাজ শেষ করল। কাজ শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো। দুপুর হতেই নীলার জ্বর আরো বেড়ে গেছে। নীলা এবার তার শ্বাশুড়ির রুমে গিয়ে বলল নিলয়কে একটা ফোন দিতে। ফোন দিয়ে যেনো বলে নীলার জন্য কিছু ওষুধ নিয়ে আসতে।
সন্ধ্যার পরে নিলয় বাসায় ফিরে আসল। সাথে করে নীলার জন্য ওষুধ নিয়ে আসছে। নিলয় নিজের হাতে নীলাকে ওষুধ খাইয়ে দিল। একটু পরে নিলয়ের মা নিলয়ের রুমে আসে।
— নিলয় কি করিস তুই?
— কিছুনা। তুমি কি কিছু বলবে?
— হুম তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
— কি কথা?
— আগে বল আমি কি তোর বাড়ির কাজের চাকর নাকি?
— কাজের চাকর হতে যাবে কেন তুমি? কি হইছে সেটা বলো?
— সকালে তোর বউকে বলছি নাস্তা বানিয়ে দিতে সে উল্টো আমাকে হুকুম দিয়ে বলে আমি যেনো নিজের নাস্তা নিজে বানিয়ে খাই সে নাস্তা বানিয়ে দিতে পারবেনা।
এই কথা বলে ঢং করে কান্না করে দিল। এটা দেখে নিলয়ের রাগ উঠে গেলো। নিলয় রাগ করে কাওকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
একটু পরে নীলার শ্বাশুড়িও বের হয়ে চলে গেলো।
নীলার শ্বাশুড়ি এসব বলার কারণ টা ক্লিয়ার করি। ত চলুন ফ্ল্যাশব্যাক থেকে ঘুরে আসি।
ফ্ল্যাশব্যাক
______________
নিলয় যখন বাসায় ঢুকছে তখন নিলয়ের হাতে কিছু খাবার আর ওষুধ ছিল।যেগুলো নীলার জন্য আনা হয়েছে। এগুলো নিয়ে আসতে নিলয়ের মা দেখে ফেলে। আর নিলয়ের পিছনে আসতে থাকে। আর আড়াল থেকে সব দেখে।
নিলয় — নীলা উঠো তোমার জন্য কিছু খাবার আর ওষুধ নিয়ে আসছি।
— আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা।
— ইচ্ছে না করলেও খেতে হবে তোমাকে।
এবার নিলয় নীলাকে যত্ন করে উঠে বসাল। আর নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিতে থাকে। এসব নিলয়ের মা আড়াল থেকে দেখতে পাচ্ছে। তার খুব হিংসা হতে থাকে।
এবার নিলয় নীলাকে যত্ন করে খাইয়ে দেয়। তারপর ওষুধ খাইয়ে দিয়ে। নীলার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। তারপর নীলাকে ঘুনাতে বলে। নীলার প্রতি নিলয়ের ভালোবাসা টা যেনো নিলয়ের মায়ের সহ্য হচ্ছেনা। এবার উনি নিলয়ের রুমে চলে আসে। তারপরে সব তো আপনারা জানেন। এবার বাস্তবে ফিরে আসি।
রাত প্রায় ১২ টা বাজে কিন্তু নিলয় এখনও বাসায় ফিরে আসল না৷ কই গেল নিলয়? নীলা অসুস্থ শরীর নিয়ে নিলয়ের অপেক্ষা করে বসে আছে। কিন্তু নিলয়ের কোনো খোঁজ নেই। এবার নীলা তার শ্বাশুড়ির রুমে গিয়ে বলে নিলয়কে একটা কল দিতে। তারপর তিনি নিলয়কে কয়েকবার কল দিল কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছিলনা। আরো কয়েকবার কল দেয় তাও সেম অবস্থা। এই দিকে নীলা খুব ভয় পাচ্ছে।
এবার নীলার শ্বাশুড়ি নীলাকে বলল,,,
চলবে,,,