#মৃত_কাঠগোলাপ – ৩৬

0
486

#মৃত_কাঠগোলাপ – ৩৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
_____________________________
ধ্রুব ভয়ংকর রাগান্বিত! ওসমানকে ডেকে এনে ভীষন রকমের ঝেড়েছে। ফরাসি পুলিশরা পথে নেমেছে আয়েশীর খুঁজে। ধ্রুব বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী ফরাসিদের দেশে এসে কিডন্যাপ হয়েছে, কি লজ্জা ! কি লজ্জা! তাই ফরাসি পুলিশরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ধ্রুবর স্ত্রীকে খুঁজে দেওয়ার।
ধ্রুব হাতের মুঠোয় একটি কাঁচের গ্লাস নিয়ে তা চড়চড় করে ভেঙে ফেলল। ধ্রুবর হাতের মধ্যে কাঁচ ভেঙে ঢুকে গেছে। হাত কেটে র’ক্ত ঝরছে। অথচ ধ্রুব নির্বিকার! সে ব্যস্ত ফোনকলে। একে ফোন করছে, ওকে ফোন করছে! সে কি ভীষন অস্থিরতা তার! ধ্রুবর হাত কাটতে দেখে, ওসমান এগিয়ে এল। থরোথরো করে কেঁপে বলল, ‘ স্যার, আপনার হাত….’
ধ্রুব ওসমানের কলার চেপে ধরলো আহত হাতের মুঠোয়। ওসমানের কলারে ধ্রুবর হাতের রক্তে মাখামাখি! ওসমান ভয়ার্ত চোখে ধ্রুবর দিকে চাইল। ধ্রুব ভয়ংকর রেগে বলল,
‘ একদম চুপ শা’লার বাচ্চা! তুই বাইরে পাহারায় থাকলে ওরা আয়েশীকে কিডন্যাপ করত পারল কি করে? বল। ‘
ধ্রুব যাচ্ছেতাই বলে সবার সামনে অপমান করতে লাগল ওসমানকে। বাবার বয়সী এক লোককে এমন জঘন্যভাবে অপমান করতে দেখে রেস্টুরেন্টের সবাই হতভম্ব! রেস্টুরেন্টের মালিক এগিয়ে আসতে চাইলেন। তবে ধ্রুবর রক্তিম চোখ দুখানা দেখে তার গলা শুকিয়ে খা খা হয়ে গেল। তিনি সেখানেই দমে গেলেন। ওসমান চোখ ঘুরিয়ে আশপাশ পরখ করল। সবার তাদের দিকে চেয়ে আছে। সবার চোখে করুণা, ভয়, আতঙ্ক! ওসমানের আত্মসম্মানে আঘাত হানলো প্রবলভাবে। মাথা চাড়া দিয়ে উঠল ভয়ংকর রাগ, ক্ষোভ! ধ্রুব এবার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অনেক হয়েছে, আর না। ‘ সামনে থেকে সর কুত্তার বাচ্চা ‘ বলে ধ্রুব ওসমানকে ছেড়ে দিল। আচমকা ছাড়া পেয়ে, ওসমান দু কদম পিছিয়ে গেল। জুতো ছাড়া, খালি পা স্পর্শ করল মাটিতে থাকা কাঁচের টুকরোসমূহকে। তাৎক্ষণিক ওসমানের পা চ্যাক করে কেটে গেল। ওসমান মৃদু আর্তনাদ করে পা চেপে ধরে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল।
ধ্রুব রাগে ফুঁসছে। নাক দিয়ে ভুসভুস আওয়াজ বের হচ্ছে। মন চাচ্ছে,রেস্টুরেন্টে থাকা সবাইকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে। কিন্তু তা করতে পারছে না, তাই রাগটা সময়ের সাথে তরতর করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ হলে এখনি এখানের সবাইকে সে খু’ন করে ফেলতে তার হাত কাঁপতো না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটা বাংলাদেশ না, ফ্রান্স!
ধ্রুবর সেলফোনে কল এল। ধ্রুব কল রিসিভ করলে, শুনে,
‘ স্যার, আমরা খুঁজে পেয়েছি তাকে। ‘
ধ্রুব চোখ উল্টে মৃদু নিঃশ্বাস ছাড়ে। বলে,
‘ কোথায় সে? ‘
লোকটি ধ্রুবকে ঠিকানা বলে। ধ্রুব ফোন কেটে দেয়। দেরি না করে দ্রুত গাড়িতে চড়ে বসে। ওসমান পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে ধ্রুবর পাশের সিটে বসে।
প্রায় এক ঘণ্টার রাস্তা ধ্রুব পনেরো মিনিট পেরিয়ে আসে। ট্র্যাফিক পুলিশ অনেকবার ধ্রুবকে আটক করেছে। তবে ধ্রুব অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সহিত ট্র্যাফিক পুলিশকে সামলে নিয়েছে।
ধ্রুব গাড়ি থেকে নামে। ওসমান পেছন পেছন হেঁটে আসে। ধ্রুব দানবের ন্যায় বড়বড় পা ফেলে সামনে এগুচ্ছে। ওসমান কাঁটা পা নিয়ে ধ্রুবর নাগাল পাচ্ছে না। তাই সে যতটা দ্রুত সম্ভব ধ্রুবর নাগালে থাকার চেষ্টা করছে।

ধ্রুব একটি কক্ষের সামনে আসে। পরিত্যাক্ত একটি কক্ষ। চারপাশে ভীষন নোংরা, আবর্জনায় ভরপুর। ধ্রুব আবর্জনা ঠেলে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
এ কি হলো?
ধ্রুবর চোখ আগুন হল। কান রাগে লাল হল। মস্তিষ্কের ভেতরে দাউদাউ করে ফুটতে লাগল। ‘ ইউ বাস্টার্ড’ বলে ধ্রুব ধপাধপ পায়ে এগিয়ে গিয়ে ছেলেটার কলার চেপে ধরল। তারপর, এক শক্ত ঘুষি পড়ল ছেলেটার নাকে। ছেলেটা নাকে হাত চেপে ধরল। ধ্রুব রাগে পাগল হয়ে গেছে। ছেলেটার গায়ে আবারও আঘাত করতে এগিয়ে গেল। তবে পারল না। ছেলেটা পাল্টা ধ্রুবর বুকে ঘুষি দিল। ধ্রুব আক্রমনে কিছুটা পিছিয়ে গেল। তবে হার মানল না। ছেলেটা আফ্রিকান! লড়াইয়ে অভ্যস্ত হাত চিনতে ধ্রুবর একটুও ভুল হল না। ধ্রুব সমান ভাবে আক্রমন করল নিগ্রো এই ছেলেকে।
পালাক্রমে আক্রমনের এই ধারায় আফ্রিকান ছেলেটা হার মানল। মাটিতে পড়ে ব্যথায় কুকিয়ে উঠল। ধ্রুব ছেলেটার পুরুষাঙ্গে লাথি দিয়ে বলল, ‘ নাও ইউ উইল সি ইউর ডেথ, ব্লাডি রা’স্কেল। ‘
ছেলেটা ব্যথায় অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। পুরুষাঙ্গ চেপে ধরে বারবার বলছে, ‘ আই অ্যাম সরি, সরি! প্লিজ ফরগিভ মি। ‘
তবে ধ্রুব ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। ধ্রুব ওসমানকে ডেকে বলে, ‘ যত টাকা লাগুক,এই কু’ত্তার বা’চ্চাকে , বাংলাদেশে পাঠা। একে আমি বাংলাদেশে দেখছি। বুঝা গেছে। ‘
ধ্রুবর চিৎকারে ওসমান কেঁপে উঠল। ওসমান দ্রুত মাথা হেলিয়ে লোকটিকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসে।
ধ্রুব কপাল চুলকে ঘাড় কাত করে পাশে ছটফট করতে থাকা আয়েশীর দিকে তাকায়। আয়েশীর মুখ বাঁধা, কথা বলতে পারছে না। তবে চোখের ইশারায় ধ্রুবকে নিজের কাছে ডাকছে। ধ্রুব ধপ করে আয়েশীর পাশে বসে। দু ঘণ্টায় আয়েশীর কি হাল হয়েছে! নিজের কামনা মেটানোর জন্যে জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছে ওই শু’য়োরের বাচ্চা। ধ্রুবর ন্যায় কঠিন মানুষের চোখেও আজ জল জমেছে। প্রিয়তমার এই দুর্দশা দেখে কষ্টে ধ্রুবর বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। ধ্রুব আয়েশীর মুখের বাঁধন খুলে দেয়। আয়েশী হাঁপাতে থাকে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে, মৃদু স্বরে বলে, ‘ আ-মি নিঃ-শ্বা-স নি-তে পার-ছি না। খু-ব ক-ষ্ট হ-চ্ছে আম….’
আয়েশীর আর বলতে হয় না। ধ্রুব তার ফ্যাসফ্যাসে ঠোঁট চেপে ধরে আয়েশীর ঠোঁটে! আয়েশী জোরে নিঃশ্বাস নেয়। ধ্রুব তার ভেতরের নিঃশ্বাস আয়েশীর ঠোঁটে নির্গত করছে। আয়েশী কাঁপছে থরথর করে। ধ্রুব তাকে ঘনিষ্ট ভাবে স্পর্শ করছে, আয়েশীর তা বোধগম্য হচ্ছে না। আয়েশী ধ্রুবর কাধের টিশার্ট শক্ত করে মুঠোয় পুড়ে ক্রমাগত নিঃশ্বাস নিচ্ছে। একসময় আয়েশী সহজ হয়ে আসে। আয়েশী ধ্রুবর থেকে ঠোঁট ছাড়িয়ে নিতে চায়। তবে দুর্বলতার কারনে পারে না। ধ্রুব এবার আয়েশীর ঠোঁটে মেতে উঠেছে। ধ্রুবর হাত আয়েশীর পিঠে বিচরন করছে। ধ্রুবর বেসামাল স্পর্শে আয়েশী কেঁপে কেঁপে উঠছে। সম্পূর্ণ আশ্চর্যজনক ভাবে আয়েশী এখন লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় আলুথালু হয়ে জমে গেছে তার মাখন ন্যায় শরীর। আয়েশী তো ধ্রুবকে ঘৃনা করে। ধ্রুবর স্পর্শে এমন তো হওয়ার কথা না! তবে কেন এমন হচ্ছে? আয়েশী কেন ধ্রুবর স্পর্শে আরাম লাগছে, সুখে ভেসে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে। তাহলে মৃদুল? আয়েশীর এই অনুভুতির দ্বন্ধে মৃদুল কোথায়? না, না! মৃদুল নেই। কোথাও নেই। মৃদুলকে আয়েশী ঘৃ’না করে। প্রচন্ড ঘৃ’না!
আয়েশী আর ভাবতে পারছে না। ধ্রুবর ঠোঁট প্রবলভাবে আয়েশীর ঠোঁটে প্রবেশ করছে। আয়েশীর ভাবনার সাগর ধ্রুবর স্পর্শে ভেসে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে, অতলে ডুবে যাচ্ছে। জীবনের এই কঠিন দ্বন্দ্বের কথা চিন্তা করে, আয়েশীর চোখের কার্নিশ বেয়ে জল প্রবাহিত হয়। ধ্রুবর দেওয়া সুখ, কেন যেন আয়েশীর কষ্টকে ভুলাতে পারছে না। আয়েশীর কষ্ট মেঘালয়ের মত! দূর থেকে দেখলে মনে হয় অতি ক্ষুদ্র!
কিন্তু যে কাছে আসে, বসে, আয়েশীর হাতে হাত রাখে, সে জানে আয়েশীর কষ্টের গভীরতা কতটা তীব্র! আয়েশীর এই কষ্ট দেখে সবার বুক কেঁপে উঠে। ধ্রুবর কাঁপে কি?

#চলবে
এই পর্ব রোমান্টিক ছিল বিধায়, আগামীকাল দুপুরে দেওয়া যেত না। তাই আজ দিলাম। এই প্রথম এত রাত করে গল্প দিলাম। জানিনা পর্বে রেসপন্স আসবে কি না। আপনারা একটু জানাবেন। যদি রেসপন্স ভালো আসে, তবে আগামীকাল থেকে রাতেই গল্প দিব।

গত পর্বের কমেন্ট বিজয়ী,
@miftahul mun
@farhana tabassum
@reha zaman
@sumaiya oishee
@এলোমেলো স্বপ্নকন্যা

বাকিদের নাম আমার গ্রুপে পোস্ট করা হবে
গ্রুপের লিংক,
কল্পনা-কলমে ~ ‘আভা ইসলাম রাত্রি’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here