#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ০৫

0
770

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ০৫
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️

_________________

অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিলয়, আহি আর আদ্রিয়ানের দিকে। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না এরা দুজন এইসময় একসাথে ছিল। তারওপর আবার ধুলোবালি মেখে নিজেদের কি অবস্থা করেছে? নিলয় বুঝতে পেরেছে বড়সড় না হলেও ছোট খাটো একটা ঝড় গেছে এদের মাঝ থেকে। নিলয় অবাক হয়ে আদ্রিয়ান আর আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ এগুলো কি করেছিস তোরা? আর তুমি এখানে কি করছো,আহি?’

উওরে এখন আহি কি বলবে বুঝতে পারছে না। আর আদ্রিয়ান তো রেগে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনকে এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল নিলয়,

‘ কি হলো কথা বলছো না কেন?’

নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠ নিয়েই বলে উঠল,

‘ ও আর কি বলবে ইস্টুপিট মেয়ে কোথাকার?’

‘ এখানে ঠিক কি হয়েছিল এটা আমায় বলবি আগে?’

‘ পরে বলবো আগে চল এখান থেকে এই বদমাইশ মেয়েটাকে একদম সহ্য হচ্ছে না আমার।’

বলেই নিজের মাথা ঝাড়তে ঝাড়তে হন হন করে চলে গেল আদ্রিয়ান। রাগে গা মাথা সব জ্বলে যাচ্ছে তাঁর। আদ্রিয়ান রেগে গিয়ে বসে পড়লো গাড়িতে। অন্যদিকে নিলয় বিস্ময় নিয়ে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি এখানে কি করছো আর তোমাদের দুজনের এমন অবস্থা কি করে হলো?’

উওরে আহি মাথা নিচু করে পর পর তাদের সাথে হয়ে যাওয়া সব ঘটনার কথা খুলে বললো নিলয়কে। নিলয় তো সব শুনে চরম অবাক, অবাক হয়েই বললো সে,

‘ তাঁর মানে কাল তুমি আদ্রিয়ানকে লাভ লেটার দিতে চাও নি?’

উওরে ‘না’ বোধক মাথা নাড়ালো আহি। আহির মাথা নাড়ানো দেখে হেঁসে উঠলো নিলয়। নিলয়কে হাসতে দেখে বলে উঠল আহি,

‘ আপনি হাসছেন ভাইয়া আর আমার রাগ হচ্ছে,কিছুতেই কিছু বলতে দিচ্ছিল না তাই তো ওইভাবে চুপ করিয়ে সব বলা লাগলো।’

আহির এবারের কথা শুনে তো নিলয় আরো উচ্চ স্বরে হাসতে হাসতে বলে উঠল,

‘ তাই বলে ওইভাবে ধুলো দিয়ে..

নিলয়ের কথা শুনে দাঁত কেলানি হাসি বললো আহি,

‘ ওই একটু আর কি।’

‘ এখানে একটু।’

উওরে আহিও হেঁসে উঠলো।’

অন্যদিকে গাড়ির ভিতর বসে আহি আর নিলয়কে হাসাহাসি করতে দেখে রাগে আরো মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান কড়া নজরে ওদের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠল,

‘ নিলয় আমরা কি এখানে থাকতে এসেছি?’ তবে হ্যাঁ তোর যদি থাকার ইচ্ছে থাকে থাকলে তুই থাক আমি গেলাম?’

এতক্ষণ পর নিলয়ের মনে পড়লো আদ্রিয়ানের কথা। নিজের হাসি থামিয়ে বললো সে,

‘ ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম চলো আহি?’

নিলয়ের কথা শুনে আহি কিছুটা বিব্রত ফিল করে বললো,

‘ আপনাদের সাথে যাবো?’

‘ হুম এখানে কোনো গাড়ি পাবে না যে তোমায় নিয়ে যাবে।’

‘ কিন্তু উনি?’

‘ আদ্রিয়ান কিছু বলবে না চলো আর এই নির্জন জায়গায় তোমায় একা ফেলে যাচ্ছি নাকি আমরা?’

নিলয়ের কথা শুনে খুশি হলো আহি মুচকি হেঁসে বললো সে,

‘ থ্যাংক ইউ।’

‘ মোস্ট ওয়েলকাম।’

উওরে মুুচকি হেঁসে গাড়িতে বসলো আহি। আর নিলয় তার সাথে আনা একজন মেকানিককে বললো,

‘ রামু চাচা,ওই গাড়িটা ঠিক করে অফিসে নিয়ে যেও?’

নিলয়ের কথা শুনে মেকানিকও বললো,

‘ ঠিক আছে।’

উওরে নিলয় আর কিছু না বলে চলে গেল তাঁর আনা গাড়ি করে। সামনের সিট দুটোতে একটায় আহি আর একটায় নিলয় বসেছে আর পিছনের সিটে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের রাগ হচ্ছে আহির ওপর কিন্তু কিছু করার নেই আর যাই হোক এইভাবে তো আর একটা মেয়েকে একা ফেলে দিয়ে যাওয়া যায় না। এতটুকু ভেবে নিজের জামাকাপড়ের দিকে তাকালো আদ্রিয়ান। কি অবস্থা হয়েছে তাঁর ভাবতে রাগ হচ্ছে আদ্রিয়ানের।’

অন্যদিকে আহি আর নিলয় হাসাহাসি করতে করতে চললো নিজেদের গন্তব্যে। আদ্রিয়ানের বিরক্ত লাগছে আহি আর নিলয়ের কাজে কিন্তু তারপরও আপাতত কিছু বললো না সে।’

____

বেশ খানিকটা দূর এগোতেই হঠাৎই আহির চোখ পড়লো একটা বাসস্ট্যান্ডের দিকে। আহি সেটাকে দেখেই বলে উঠল,

‘ থামুন, থামুন, থামুন।

আহির তিন বার থামুন থামুন শুনে নিলয়ও চটজলদি ব্রেক কষলো গাড়িতে। তারপর আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কি হলো?’

‘ আমি এখানেই নামবো।’

‘ এখানে?’

‘ হুম।’

বলেই নিজের গায়ে থাকা সিট বেলটা খুলে বেরিয়ে পড়লো আহি। তারপর নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো,

‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া।’

উওরে নিলয়ও বেশি কিছু না ভেবে বলে উঠল,

‘ তুমি এখান থেকে একা একা যেতে পারবে তো?’

‘ জ্বী ভাইয়া টেনশন নিবেন না।’

উওরে নিলয় আর কিছু বললো না। আহি ভাবলো একবার আদ্রিয়ানকে কিছু বলবে কিন্তু আহি আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান রাগ নিয়ে অন্যদিক মুখ করে বললো,

‘ নিলয় ওকে বলে দে,এই সেকেন্ড টাইম বলছি নেক্সট টাইম যেন ও আমার আশেপাশেও না আসে।’

উওরে আহিও একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

‘ হুম ঠিক আছে ঠিক আছে কেই বা যেচে যাচ্ছে আপনার সামনে,আপনার কনফিউশান দূর হয়েছে এতেই আমার চলবে ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।’
‘ লাল চোখওয়ালা হনুমান কোথাকার?’ (নিচু স্বরে)

কিন্তু আহি আস্তে বললেই আদ্রিয়ান আহির কথা শুনতে পেয়ে বললো,

‘ কি বললে তুমি আমায়?’

‘ কিচ্ছু না?’

বলেই একটা এটিটিউড মার্কা ভাব নিয়ে এগিয়ে গেল আহি। আহির এই ভাবটা জাস্ট নিতে পারলো না আদ্রিয়ান। গাড়ি থেকে নামতে নিয়েও আবার নামলো না,কারন সে বুঝতে পেরেছে এই মেয়েটা তার জন্য জাস্ট টাইম ওয়েস্ট’। আহির কথা শুনে হেঁসে ফেললো নিলয়,নিলয়কে হাসতে দেখে রাগ হলো আদ্রিয়ানের কড়া কন্ঠ নিয়ে বললো সে,

‘ তুই হাসছিস কেন? আর বসে আছিস কেন চল এখান থেকে?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠল নিলয় তারপর হাসতে হাসতে বললো সে,

‘ হুম।’

বলেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চললো নিলয় আদ্রিয়ান তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।’

____

বাস স্ট্যান্ডে বাস আসতেই বাসে উঠে পড়লো আহি। তারপর আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সবার পিছনের আগের সিটের জানালার পাশে বসলো সে। আশেপাশের লোকজন তার দিকে প্রায় হা হয়ে তাকিয়ে আছে অবশ্য তাকাবেই বা না কেন নিজের যে অবস্থা হয়েছে তাতে নিশ্চয়ই সবাই তাকে পাগল ভাবছে। আপাতত সেদিকে লক্ষ না দিয়ে চুপচাপ জানালার পাশে মুখ লুকিয়ে মাথাটা নুড়ে দিলো আহি। সারাদিনে কিছুই খাওয়া হয় নি তেমন সেই সকালে ক্যান্টিনে বসে হাল্কা পাতলা নাস্তা করেছিল সে। এখন প্রচন্ড খিদে পেয়েছে তাঁর বাসায় গিয়েই আগে খেতে হবে তাকে। না জানি মা কতটা চিন্তা করছে ফোনও করতে পারছে না কারন তার ফোনে চার্জ নেই বন্ধ হয়ে পড়ে আছে ব্যাগের মধ্যে। জোরে এক নিশ্বাস ফেললো আহি। হঠাৎই নীরবের কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল আহির। সে বুঝতে পারছে না বার বার তাঁর সাথেই এমন কেন হয়, সে হয়তো এ যুগে নীরবকে প্রপোজ করতে পারবে না। হঠাৎই আহির ভাবনার মাঝখানে একটা ছেলে এসে বললো,

‘ আমি কি এখানে বসতে পারি,আপু?’

হুট করে কোনো ছেলের কন্ঠ কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠল আহি সামনে তাকাতেই একটা ছেলেকে দেখে বেশি কিছু না ভেবে বললো সে,

‘ হুম অবশ্যই।’

উওরে ছেলেটিও মুচকি হেঁসে নিজের কাঁধ থেকে ব্যাগটা বের করে বললো আহিকে,

‘ থ্যাংক ইউ আপু।’

উওরে হাল্কা হাসলো আহি। কেমন যেন এত বড় ছেলের মুখে আপু নামটা শুনতেই আনিজি ফিল হচ্ছে তাঁর। আড় চোখে তাকালো আহি ছেলেটির দিকে। ধবধবে ফর্সা শরীরের,গোলগাল ফেস সমৃদ্ধ ইনোসেন্ট লুকিং এর একটা ছেলে,চোখ দুটো দেখতে একদমই বাচ্চাদের মতো। কেন যেন ছেলেটা বড় হলেও আহির কাছে বাচ্চা বাচ্চা মনে হচ্ছে। ভেবেই আনমনে হেঁসে উঠল আহি। আহিকে হাসতে দেখে ওর দিকে না তাকিয়েই বলে উঠল ছেলেটি,

‘ আপনি হাসছেন কেন আপু?’

হুট করে ছেলেটির এমন কথা শুনে চমকে উঠলো আহি। নিজের মুখের হাসি থামিয়ে বললো সে,

‘ না তেমন কিছু নয়।’

আহির এবারের কথা শুনে সামনের ছেলেটি আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আপনার কি আমায় দেখে হাসি পাচ্ছে, আপু?’

‘ না না তা হবে কেন আসলে একটা মজার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল তাই হেঁসে ফেলেছি সরি?’

‘ ওহ তাহলে ঠিক আছে ইট’স ওকে আপু।’

বলেই মুচকি হাসলো ছেলেটি। তারপর চুপচাপ বসে রইলো সে তার সিটে।’

কেন যেন ছেলেটির কথা শুনে ভিতরে ভিতরে আনিজি ফিল হতে লাগলল আহির। হঠাৎই আহি নিজেই ছেলেটির দিকে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হাই, আমি আহি।’

আহির কাজে কিছুটা অবাক হয় শুভ। তবে বেশি কিছু না ভেবে সেও মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হ্যালো আপু আমি শুভ।’

‘ আচ্ছা আপনি আমায় আপু বলছেন কেন?’

‘ আসলে এটা আমার অভ্যাস কোনো মেয়েকে দেখলেই আমি আপু বলে ডাকি।’

‘ ওহ কিন্তু আমায় আপু বলেছো বলেছো অন্য কোনো মেয়েকে আবার বলো না,তাহলে কিন্তু..

আহির কথা শুনে হেঁসে ফেললো শুভ তারপর বললো,

‘ সত্যি বলতে কি এর আগে একবার একটা মেয়েকে আপু বলেছিলাম ওহ বাবা সেই মেয়ের কি রাগ বলে আমায় কোন এংগেল থেকে আপনার আপু মনে হয়,আমাকে কি আপুর মতো দেখতে আরো কত কি? আসলে ওই আপুটা আমার থেকে বড় ছিল তাই বলেছিলাম কিন্তু তোমায় দেখে মনে হচ্ছে না তুমি আমার থেকে বড় তারপরও কেন যেন তোমায় আপু বলতে ভালো লাগলো।’

উওরে হাল্কা হেঁসে কিছুটা ভাব নিয়ে বললো আহি,

‘ আমার মতো সবাই থোড়াই ভালো কিনা?’

আহি কথা শুনে উচ্চ স্বরে হেঁসে ফেললো শুভ। এরপর শুরু হলো এটা ওটা নিয়ে দুজনের মধ্যে আড্ডা। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় আটটা পেরিয়ে গেছে। রাতের অন্ধকার আলো পেরিয়েই এগিয়ে চলছিল আহি আর শুভ। পুরো বাসের সময়টা হাসাহাসি করতে করতেই কেটে গেল আহি আর শুভর।

______

মাথা নিচু দাঁড়িয়ে আছে আহি তার মায়ের সামনে। বুঝতে পারছে না এখন কি বলবে সে। আহির মা আহির দিকে এগিয়ে এসে বললো,

‘ এত দেরি হলো কেন আর কি অবস্থা করেছিস নিজের এসব কি করে হলো?’

‘ হয়েছে কি মা?’

‘ হুম কি হয়েছে বল,তোকে কতবার ফোন করেছিস দেখেছিস সেটা?’

‘ আসলে মা এক বন্ধুর কাছ থেকে কিছু নোট আনতে গিয়েছিলাম তাই একটু দেরি হয়ে গেছে আর ফোনটায় চার্জ নেই বন্ধ হয়ে গেছে এই জন্য তোমায় ফোন করে জানাতে পারি নি সরি।’

‘ আর এই যে নিজের চেহারার অবস্থা করেছিস এটা কি করে হলো?’

এবাবের কথা শুনে আহি তার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,

‘ আসার সময় ঠ্যাং উল্টে পড়ে গিয়ে ছিলাম রাস্তায়?

‘ তা তো পড়বিই হাঁটার সময় তো চোখ পিছনে নিয়ে হাঁটিস, একটা কানা মেয়ে হয়েছে আমার ঠিক ভাবে হাঁটতেও পারে না।’

‘ মা এখন তবে আমি আমার রুমে যাই প্রচন্ড খিসে পেয়েছে?’

‘ ঠিক আছে যা।

মায়ের কথা শুনে খুশি হয়ে বললো আহি,

‘ থ্যাংক ইউ লাভ ইউ মা।’

বলেই আহি আর কিছু না ভেবে দৌড়ে চললো নিজের রুমের দিকে। সাওয়ার নিতে হবে তাঁকে,ধুলোতে তাঁর শরীর গিজগিজ করছে পুরো।’…
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here