#Fearপর্ব ৪
Writer: Tanjima Islam
জ্ঞান ফিরে নিজেকে কোনো একটা হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে উঠে বসতেই হাতে ব্যাথা অনুভব হল, স্যালাইন চলছে!!
ফ্লোরাকে উঠে বসতে দেখে মিসেস ফিয়না সস্তির নিঃশাস ফেলে এগিয়ে এলেন, ফ্লোরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” কি ব্যাপার!! আমি এখানে কেন!?
ফিয়না কিছু বলার আগেই ডক্টর সার্জিও এসে ঢুকল কেবিনে সাথে ফ্লোরার বাবা প্রিয়েতো।
ফ্লোরা আবার জিজ্ঞেস করল, ” কি হয়েছে আমার!! আমি এখানে কিভাবে এলাম!?
ফিয়না কিছুটা ইতস্ততভাবে বলল,” গতকাল তোর আসার অপেক্ষায় ছিলাম, সন্ধ্যা সাতটার দিকে তোকে ফোন দিয়ে দরজা খুলে দাড়ালাম। রিং বাজল, কিন্ত মনে হল তোর ফোনের রিংটোন গার্ডেনের ভেতর থেকে আসছে। প্রথমে ভাবলাম হয়তো মনের ভুল, কল কেটে আবার দিলাম আবারও গার্ডেনের ভেতর থেকে ফোনের রিংটোন কানে এল। আমারতো ভয়ে হাত পা কাপছিল, তার মধ্যে বাইরের লাইটটাও অফ। এলিসকে ডেকে নিয়ে গার্ডেনে ঢুকলাম, কিছুদূর যেতেই দেখলাম তুই মাটিতে পড়ে আছিস। সাথে সাথে তোকে আমি আর এলিস মিলে দুজনে তুলে বাসার ভেতরে নিয়ে গেলাম।
এটুকু বলেই থামল ফিয়না, ধীরে ধীরে গতকাল সন্ধ্যার সেই ভয়ানক ঘটনা মনে পড়ল ফ্লোরার। প্রিয়েতো আর ফিয়নাকে কেবিনের সোফায় বসতে বলে সার্জিও একটা চেয়ার টেনে বসল ফ্লোরার পাশে। সার্জিও ফ্লোরার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,” এখন ঠিক আছো ফ্লোরা!?
ফ্লোরা বলল,” হুম ঠিক আছি।
সার্জিও জিজ্ঞেস করল, “গতকাল গার্ডেনে কিভাবে গেলে!! মনে পড়ছে কিছু!?
ফ্লোরা বাসায় ঢুকে সেই নারীমূর্তি দেখে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া পর্যন্ত সব খুলে বলল।
মি. প্রিয়েতো আর ফিয়না সেলজার উঠে বাইরে গেলেন, সার্জিও উঠে যেতেই ফ্লোরা হাত ধরে থামালো তাকে। সার্জিও আরেক হাত ফ্লোরার হাতে রেখে বলল, ” আজ আপনার বাবার সাথে কথা বলব।
ফ্লোরা শান্ত গলায় বলল, ” নারীমূর্তিটা আমাকে কি বলেছিল জানেন!?
সার্জিও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি!?
ফ্লোরা বলল, ” আমি ফিরে এসেছি লিটল প্রিন্সেস! তোমাকে নিতে এসেছি!!
সার্জিওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল, ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল সে।
কেবিন থেকে বেরিয়ে ফিয়না কিছুটা চেচিয়ে বলল, ” আমি আগেই বলেছিলাম, ঐ ডাইনি ফিরে এসেছে!! আমি দেখেছি, আমরা কেউ বাচবনা!! মেরে ফেলবে, আমাদের ফেলবে!!
প্রিয়েতো বিরক্ত হয়ে বলল,” আহ!! ফিয়না!! তুমি একটু চুপ করবে!!?
ফিয়না অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে, প্রিয়েতো চলে গেল ফ্লোরাকে রিলিজ করার ব্যাপারে কথা বলতে। ফিয়না কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা।
যার ভয়ে লন্ডন ছাড়ল, আজ এত বছর পর ফিরে এসেছে সে। ফিয়না বিড়বিড় করে আবোলতাবোল বকছে।
এদিকে এডমন্ড ফোন দিয়েই যাচ্ছে ফ্লোরাকে। কিন্ত কেউ রিসিভ করছেনা, গতরাতে ফোন দিয়েছিল, ওর আম্মু ফোন রিসিভ করে বলেছিল,” ও ঘুমোচ্ছে।
মিসেস এলিটা ট্রেতে করে এক বাটি থাই স্যুপ এনেছে ছেলে এডমন্ডের জন্য। এসেই দেখল সে কাউকে ফোন দিচ্ছে, এলিটা ট্রে নামিয়ে বাটি হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” কাকে ফোন দিচ্ছিস!?
এডমন্ড মুখ কুচকে বলল,” ফ্লোরাকে, রিসিভিই করছেনা।
এলিটা মুচকি হেসে বাটিতে চামচ ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,” মেয়েটা কে!?
এডমন্ড না তাকিয়েই বলল, ” ফ্রেন্ড হয়, আবার কি হবে!!
এলিটা অবাক হয়ে বলল,”ফ্রেন্ড!! আগে তো কখনও দেখিনি, নতুন ফ্রেন্ড নাকি!?
বলেই এডমন্ডের মুখে এক চামচ স্যুপ দিয়ে দিল। এডমন্ড থতমত খেয়ে বলল,” না মানে, ও আসলে সিয়েরার ফ্রেন্ড।
এলিটা মুচকি হেসে বলল, ” হুম, মেয়েটা কিন্ত বেশ সুন্দর। বোধহয় কথা কম বলে!!
বলেই আড় চোখে তাকালো ছেলের দিকে, এডমন্ড সলজ্জ হেসে বলল, ” হুম, ও একটু শান্ত প্রকৃতির আর কি।
এলিটা বুঝে গেছে তার ছেলে ফ্লোরাকে পছন্দ করে।
ফ্লোরা ফোন নিয়ে দেখল প্রায় সাইত্রিশটা মিসড কল উঠে আছে। পঁয়ত্রিশটাই এডমন্ড আর বাকি দুটো সিয়েরা দিয়েছে। ফ্লোরা সাথে সাথেই ব্যাক করল। ফ্লোরার কল পেয়ে এডমন্ড যেন প্রাণ ফিরে পেল, এলিটা মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
এডমন্ড উত্তেজিত হয়ে বলল, ” সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি, কই থাকো তুমি!?
ফ্লোরা মুচকি হেসে বলল, “স্যরি, আসলে একটু মাথা ব্যথা করছিল তাই ঘুমিয়েছিলাম।
এডমন্ড চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” এখন কি অবস্থা!! ঠিক আছো!?
ফ্লোরা মুচকি হেসে বলল, ” হুম, তোমার কি অবস্থা!? পেইন কমেছে!? মেডিসিন নিচ্ছো ঠিকমতো!?
এডমন্ড বাকা হেসে বলল, “পেইন কমবে কিভাবে, মেডিসিন না খেলে!!
ফ্লোরা অবাক হয়ে বলল,” কেন!! মেডিসিন তো আন্টিকে সব বুঝিয়ে দিয়ে এলাম।
এডমন্ড হতাশ হয়ে বলল,” হুম, ভালই করেছো।
ফ্লোরা অবাক হয়ে বলল, ” মানে!?
এডমন্ড হেসে বলল,” মানে কিছুই না, রেস্ট নাও। পরে কথা হবে।
বলেই ফোন কেটে দিল, মেয়েটা এত বোকা কেন!! ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে এডমন্ড।
দুপুরের আগেই ফ্লোরাকে রিলিজ দিয়ে দিল হসপিটাল থেকে। সাথে সার্জিও গেল ফ্লোরাদের বাসায়। কিছুই মাথায় ঢুকছেনা তার, ফ্লোরাকে কেন জানি মানসিক রোগী মনে হচ্ছে এখন। ছোট থেকেই ফ্রেন্ড কম তার, তেমন মিশুক না ফ্লোরা। একা বেড়ে ওঠায় হয়তো কাল্পনিক অস্তিত্ব বাসা বেধেছে ওর মনে। হতে পারে হরর মুভি দেখে তার মনে উদ্ভট কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্ত মিসেস ফিয়নার সেদিনের উত্তেজিত হয়ে যাওয়াটাও ভাবাচ্ছে আমাকে। সে বারবার বলছিল ফ্লোরা তার মেয়ে! ফ্লোরা বলল সেই নারীমূর্তি তাকে লিটল প্রিন্সেস ডেকেছে!! সব কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে!! আজ মি. প্রিয়েতোর সাথে কথা বলতেই হবে।
ফিয়না দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে মেয়ের রুমে গেল। ডাইনিং এ বসে সার্জিও আর প্রিয়েতো খাচ্ছে, এলিস কিচেনে।
সার্জিও খেয়াল করল, প্রিয়েতোর চোখেমুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। সার্জিও হালকা কেশে বলল, “আপনি ঠিক আছেন!?
প্রিয়েতো মৃদু হেসে বলল, ” হুম, ঠিক আছি।
সার্জিও বলল,” ফ্লোরার অবস্থা দিনদিন খারাপ হচ্ছে। ওকে একমাত্র আপনিই সুস্থ করতে পারবেন।
প্রিয়েতো চমকে উঠে বলল,”মানে!!
সার্জিও খাওয়া শেষে এক গ্লাস পানি খেয়ে বলল,” হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন। দেখুন এতদিনে ফ্লোরার কাছে এটা তো ক্লিয়ার হয়ে গেছে যে, সে আপনাদের সন্তান নয়। ফ্লোরার আসল পরিচয় জানতে পারলেই ওকে সুস্থ করতে সুবিধা হবে।
প্রিয়েতোর রিয়াকশন দেখার জন্যই ইচ্ছে করে কথাটা বলল সার্জিও।
প্রিয়েতোর গাল বেয়ে ঘাম ঝরছে, টিস্যু দিয়ে মুছে বলল,”এখানে কথা বলা ঠিক নয়, রুমে চলুন।
বলেই উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো প্রিয়েতো।
সার্জিও বাকা হেসে প্রিয়েতোর পিছু পিছু তার রুমে গেল।
(চলবে)
বিঃদ্রঃ লিখতে লিখতে চার্জ শেষ হয়ে গেছে,😔 এজন্য পর্বটা একটু ছোট হয়েছে, ঝড়ের কারণে ইলেক্ট্রিসিটি নেই।