#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ০৭

0
702

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ০৭
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️

_________________

প্রচন্ড রাগ নিয়ে ভার্সিটির মাঠ পেরিয়ে এগোচ্ছে রিনি,আর ওর রাগ ভাঙানোর জন্য ওর পিছনে দৌড়াচ্ছে আহি। আহি দ্রুত গতিতে দৌড়ে এসে রিনির পিছনে হাঁটতে হাঁটতে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ আরে রাগ করিস না বোইন, দাঁড়া আমার জন্য?’

আহির কথা শুনে প্রচন্ড রাগ নিয়ে বললো রিনি,

‘ আজ আর তোর কোনো কথাই শুনবো না। আজ আর এক্ষুনি গিয়ে আমি নীরব ভাইয়াকে সব বলবো।’

‘ প্লিজ বোন এমন করিস না।’

‘ তোর কোনো কথাই শুনছি না আমি।’

বলেই রিনি এগিয়ে গেল নীরবের ক্লাস রুমের দিকে। কিন্তু সেখানে নীরবকে না দেখে কিছুটা নিরাশ হয়ে বেরিয়ে পড়লো সে। আর আহিও নিরুপায় হয়ে রিনির সামনে এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ দেখ রাগ করিস না আর নীরব ভাইয়াকেও কিছু বলিস না যা বলার আমি বলবো।’

‘ কবে বলবি তুই?’

উওরে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো আহি,

‘ হুম বলবো বলবো একটু সময় দে তারপর।’

‘ প্রায় ১২ বছর হয়ে গেছে আহি এখনো তোর সময় হয় নি?’

উওরে হাল্কা হেঁসে বললো আহি,

‘ এইবার আর মিস হবে না দেখিস?’

উওরে রিনি কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে এগিয়ে চললো। হঠাৎই ভার্সিটির গেটের সামনে চোখ গেল রিনির। একজন চেনা মানুষের মুখ দেখতেই খুশি হয়ে বললো সে,

‘ অথৈ।’

বলেই এগিয়ে গেল সে অথৈর কাছে। ‘অথৈ’ নামটা এর আগেও শুনেছে আহি রিনির মুখে কিন্তু হুট করে এখানে এই নামটা কেন ভেবেই রিনি যাওয়ার পানে তাকালো সে। সামনের একটা মেয়েকে রিনি জড়িয়ে ধরেছে এটা দেখে আহির আর বুঝতে বাকি রইলো না এই অথৈই সেই অথৈ যার কথা রিনি তাকে প্রায় বলে। অথৈ হলো রিনির ফ্রেন্ড, তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে বসে পরিচয় অথৈর সাথে রিনির। আহি চুপচাপ ওদের দিকে এগিয়ে গেল। আহিকে দেখেই রিনি খুশি হয়ে বললো আহিকে,

‘ মিট মাই ফ্রেন্ড না শুধু ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে তোর মতোই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অথৈ!’

রিনির কথা শুনে অথৈও মুচকি হেঁসে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো আহিকে,

‘ হাই আহি,তোমার কথা রিনির মুখে অনেক শুনেছি।’

অথৈর কথা শুনে আহি হুট করেই অথৈর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ শুনেছো যখন তাহলে আবার তুমি কিসের উই আর বেস্ট ফ্রেন্ড ওকে। যা কথা হবে সব তুই করে?’

আহির কাজ দেখে অবাকের চেয়েও খুশি বেশি হয়েছে অথৈ সে ভাবতেই পারে নি এত কুইকলি আহি তাকে বেস্ট ফ্রেন্ডের জায়গা দিয়ে দিবে। অথৈই খুশি হয়ে বললো,

‘ থ্যাংক ইউ!’

‘ বন্ধুত্বে নো থ্যাংকস নো সরি।’

‘ হুম।’

‘ তা তুই কোনো গ্রুপের কোন ইয়ারে?’

আহির কথা শুনে অথৈ কিছু বলার আগেই রিনি বলে উঠল,

‘ ইয়ার তো আমাদের সাথেই কিন্তু গ্রুপ ভিন্ন সাইন্সের স্টুডেন্ট,বিলিয়ান্ট ছাত্রী কিনা?’

রিনির কথা শুনে আহি অবাক হয়ে বললো,

‘ ওহ!’

‘ হুম সবসময় টপ হয়ে এসেছে বুঝলি একদম নীরব ভাইয়ার মতো?’

রিনির এবারের কথা শুনে আহি আরো অবাক হয়ে বললো,

‘ তাই নাকি।’

আহির কথা শুনে অথৈই তার চোখের চশমাটা ঠিক করে বললো,

‘ আরে না ও একটু বেশি বেশি বলছে।’

‘ একটু বেশি বলছি না!’

এমন সময়ই সেখানে হেঁটে এগিয়ে আসছিল নীরব। আহি নীরবকে দেখে দৌড়ে এগিয়ে গেল কথা বলতে। আহিকে যেতে দেখে অথৈ কিছুটা অবাক হয়ে বললো,

‘ ও কোথায় গেল?’

‘ ওই যে নীরব ভাইয়ার কাছে।’

‘ নীরব কে?’

‘ ওই যে পিছনে তাকিয়ে দেখ।’

উওরে অথৈও আর কিছু না বলে পিছন ঘুরে তাকালো। বাসের সেই ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,

‘ উনি।’

‘ হুম উনিই আহির জীবনের সবচেয়ে স্পেশাল পারসোন ওই যে তোকে বলেছিলাম না।’

‘ ওহ এই তাহলে সেই নীরব যাকে আহি সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভালোবাসে।’

‘ হুম,কিন্তু বুঝলি বেচারি আজও বলতে পারি নি?’

এবার যেন অথৈ অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে, চোখ বড় বড় করে বললো সে,

‘ এখনও বলতে পারে নি?’

উওরে রিনি নিরাশ হয়ে বললো,

‘ না।’

উওরে অথৈ আর কিছু বললো না সে আর রিনি দুজনেই অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আহি আর নীরবের দিকে। হঠাৎই অথৈর ফোনটা বেজে উঠতে অথৈ উল্টো দিক ফিরে ফোনটা তুললো।’

আর এদিক আহির সাথে দু’মিনিট কথা বলে নীরবও আর না দাঁড়িয়ে চলে গেল নিজের ক্লাসের দিকে। যাওয়ার সময় রিনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে ছিল সে তবে অথৈকে ওতোটা খেয়াল করে নি নীরব।’

অথৈর কথা বলা শেষ হতে না হতেই হাজির আহি। কিছুটা খুশি হয়ে বললো সে,

‘ এখন তবে ক্লাসে যাওয়া যাক বেস্টুরা?’

আহির খুশি দেখে অথৈ আর রিনি দুজনেই বুকে হাত বেঁধে ডানে বামে মাথা নাড়ালো। যার অর্থ তোর ধারা কিচ্ছু হবে না। এদের রিয়াকশনটা বুঝতে পেরে হাল্কা হাঁসলো আহি। তবে কিছু বললো না।’

_____

অফিসে নিজের রুমে থাইগ্রাস সমৃদ্ধ দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। মনটা কিছুটা খারাপ, কাল সারারাত ঘুম হয় নি তাঁর। সে বুঝতে পারছে না তার এই রাতের অসুখ কবে ঠিক হবে। কবে সে নিশ্চিতে ঘুমাতে পারবে। কেন যে সেদিন সে তার মা বাবার কথা শুনলো না ভাবতেই দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসছে তাঁর। এমন সময় আদ্রিয়ানের রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো নিলয় আদ্রিয়ানকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল সে আদ্রিয়ানের কাছে তারপর ওর টেবিলের উপর মোবাইল আর একটা নিউজপেপার রেখে বললো,

‘ অনলাইন আর নিউজপেপার দুটোতেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়ে গেছে আদ্রিয়ান কালকেই কিন্তু ইন্টারভিউ নিতে হবে?’

উওরে তেমন কিছু বললো না আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে নিলয় আদ্রিয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

‘ কি হয়েছে?’

উওরে আদ্রিয়ান বাহিরের দিকে তাকিয়েই বললো,

‘ না তেমন কিছু নয়।’

‘ কাল রাতেও ঘুম হয় নি তাই না?’

উওরে ‘না’ বোধক মাথায় নাড়ায় আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের মাথা নাড়ানো দেখে বললো নিলয়,

‘ টেনশন নিস না দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।’

উওরে আর কিছু বললো না আদ্রিয়ান। এভাবে কিছুক্ষন দুজন চুপ করে থাকার পর হঠাৎই আদ্রিয়ান বললো,

‘ তারপর বিজ্ঞাপন দিয়েছিলি?’

‘ হুম এই দেখ ( মোবাইল আর নিউজপেপারটা দেখিয়ে)

আদ্রিয়ানও বেশি কিছু না ভেবে হেঁটে গিয়ে বসলো চেয়ারের। তারপর টেবিলের উপর থেকে নিউজপেপার আর মোবাইল দুটোতেই একবার চোখ বুলালো সে।’

_____

ক্যান্টিনে বসে খিলছে আহি। আর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে রিনি আর অথৈ। অথৈ আহির চোখের দিকে তাকিয়ে বিষন্নতা ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ লাইক সিরিয়াসলি আহি, ১২ বছরের ভালোবাসার কথা এখনো বলতে পারিস নি তুই?’

উওরে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো আহি,

‘ না, কি করবো বলতো যখনই বলতে যাই তখনই একটা না একটা প্রবলেম চলে আসে।

‘ এত চিঠি লেখার কি আছে ফট করে যাবি চট করে বলে আসবি ব্যস তাইলেই তো হয়ে যায়।’

‘ বলাটা অনেক সোজা বুঝলি বাট করাটা অনেক কঠিন।’

বলেই ক্যান্টিনের দরজার সামনে তাকাতেই পিন্সিপালকে দেখেই মুখে খাবার নিয়েই ভয়ে টেবিলের তলে লুকালো আহি। আহির কাজ দেখে রিনি অবাক না হলেও অথৈ অবাক হয়ে বললো,

‘ আরে আরে এটা কি করছিস?’

রিনির কথা শুনে আহি টেবিলের নিচ থেকে বললো,

‘ হুস কথা বলিস না আর পিন্সিপাল যদি আমার কথা জিজ্ঞেস করে তবে বলবি আমি আজ ভার্সিটি আসি নি!’

‘ কি?’

এরই মধ্যে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো পিন্সিপাল। পিন্সিপালকে দেখেই রিনি আর অথৈই দুজনেই সোজা হয়ে দাঁড়ালো তারপর বললো,

‘ আসসালামু আলাইকুম স্যার।’

‘ ওলাইকুম আসসালাম, রিনি আহি নেই এখানে?’

পিন্সিপালের কথা শুনে রিনি বলে উঠল,

‘ না স্যার আজকে ও আসে নি।’

‘ ওহ আহি আসলে ওকে আমার সাথে দেখা করতে বলো?’

‘ ওকে স্যার।’

‘ হুম।’

বলে এদিক ওদিকে একবার চোখ বুলিয়ে চলে গেল পিন্সিপাল। পিন্সিপাল যেতেই বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস ফেলে টেবিলের নিচ থেকে বের হলো আহি। আহি উঠতেই অথৈ অবাক হয়ে বললো,

‘ তুই পিন্সিপালকে দেখে লুকালি কেন?’

অথৈর কথার উওর দেওয়ার আগেই রিনি বলে উঠল,

‘ তুই এখনো পিন্সিপালের বেতন দিস নি, আহি?’

উওরে মাথা নাড়ায় আহি। আহির মাথা নাড়ানো দেখে অথৈ বলে উঠল,

‘ কেন?’

উওরে মাথা নিচু করে হাল্কা মন খারাপ নিয়ে বললো,

‘ ফেমেলি প্রবলেম দোস্ত।’

আহির কথা শুনে রিনি তার ব্যাগ থেকে কিছু টাকা দিয়ে বললো,

‘ নে এই টাকাটা গিয়ে পিন্সিপালকে দিয়ে আয়।’

রিনির হাতের টাকা দেখে বললো আহি,

‘ না বার বার তোর কাছ থেকে টাকা নিতে ভালো লাগে না আমার।’

‘ তুই আমায় পড়ে দিয়েছিস।’

‘ না তুই পড়ে নিতে চাস না। তাই কিছুদিন যাবৎই ভাবছি একটা পার্ট টাইম জব করবো কেমন হবে বল তো?’

‘ হুম খারাপ হবে না। (রিনি)

ফেসবুকে নিউজফিড ঘুরছিল অথৈ হঠাৎই একটা কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ নেওয়া হবে এমন পোস্ট দেখে বলে উঠল সে,

‘ এখানে এপ্লাই করতে পারিস আহি,দেখে তো ভালো কোম্পানি বলেই মনে হচ্ছে।’

‘ এটা তো অনেক বড় কোম্পানি, আমার তো পার্ট টাইম অফারের জব লাগবে।’

‘ এখানে অনেক পদের লোক নিয়োগ নিবে ফুল টাইম পার্ট টাইম ট্রাই করে দেখতে পারিস।’

‘ বলছিস।’

‘ হুম।’

_______

পরেরদিন পার্ট টাইম জবের ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য সুন্দর মতো সেজেগুজে তৈরি হচ্ছে আহি। জবটা পেয়ে গেলে তার অনেক লাভ হবে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আহি। কাজটা পেয়ে গেলে নিজের খরচের পাশাপাশি পরিবারেরও হেল্প করতে পারবে সে। এরকম নানান চিন্তা ভাবনা করতে করতে বের হলো আহি তারপর রিকশা করে চললো সে, ইন্টারভিউটা দিয়েই ওখান থেকে ভার্সিটি যাবে আহি।’

বেশ কিছুক্ষন পর একটা বড় কোম্পানির সামনে এসে দাঁড়ালো আহি। বুকের ভিতর দক দক করছে তার, শুরুতেই এত বড় কোম্পানি দেখে হাল্কা ভয় হলো আহির। কিছুক্ষন থেমে আহি জোরে শ্বাস ফেলে ভিতরে চলে গেল।

কোম্পানির ভিতরে চুপচাপ একটা চেয়ারে বসে আছে আহি। হঠাৎই তার নাম ধরে ডাকলো একটি মেয়ে। আহিও উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ আমিই আহি।’

‘ নেক্সট আপনি যাবেন?’

‘ ওকে।’

কিছুক্ষনের মধ্যে মেয়েটি আহিকে চোখের ইশারায় ভিতরে যেতে বললো আহিও আর বেশি না ভেবে কাগজপত্র নিয়ে ভিতরে চলে গেল। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে বললো আহি,

‘ মে আই কাম ইন।’

‘ কাম।’

‘কাম’ কথাটা শুনতেই বুকে শ্বাস ফেলে ভিতরে ঢুকে বললো আহি,

‘ আসসালামু আলাইকুম স্যা…

আর কিছু বলার আগেই সামনের ব্যক্তির মুখটা দেখতেই ভয়ে ঢোক গিললো আহি। মুখ থেকে অটোমেটিক বেরিয়ে আসলো তার,

‘ আপনি?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে,আজকের পার্টটা হয়তো একটু অগোছালো হয়েছে এর জন্য সরি গাইস]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here