#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ৪৬

0
501

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ৪৬
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️

_________________

অতঃপর হসপিটালের মায়া ত্যাগ করে গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে আহি, নিলয় আর আদ্রিয়ান। আর ওদের হাত নাড়িয়ে বাই জানাচ্ছে রিনি আর শুভ। প্রথমে আহি অথৈদের বাড়ি যাবে কথাটা একটু অদ্ভুত লাগলেও পরক্ষণেই হাসি মনে মেনে নিয়েছে রিনি। রিনি সেদিন শুভর কথা শোনার পর ফোন করতে চাইছিল অথৈকে ফোন করেও ছিল কিন্তু আবার কেটে দেয় চটজলদি। ভিতরে ভিতরে আনিজি ফিল হওয়ার কারনে আর কথা বলা হয় নি তার অথৈর সাথে। কিন্তু এখন যখন আহি যেতে চাইছে অথৈদের বাড়ি তাহলে সেও সেখানে গিয়েই ক্ষমা চাইবে অথৈর কাছে। রিনি মুচকি হেঁসে তাকিয়ে রইলো আহির যাওয়ার পানে। আর আহিও বেশি না ভেবে কিছুক্ষন রিনি ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ বসে রইলো গাড়িতে। আর তার পাশেই চুপচাপ বসে আছে আদ্রিয়ান। আর সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে আছে নিলয়। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। হয়তো পুরো রাস্তা নীরবতাতেই কাটবে তাদের।’

আর এদিকে নিলয় ওঁরা যেতেই রিনি বলে উঠল শুভকে,

‘ আমিও তবে যাই এখন?’

রিনির কথা শুনে শুভও বলে উঠল,

‘ এখনই চলে যাবে?’

‘ হুম।’

‘ ঠিক আছে সাবধানে যেও।’

‘ আচ্ছা বাই।’

বলে রিনিও বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলো। আর শুভ সেও কিছুক্ষন রিনির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে চললো হসপিটালের ভিতরে। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে হবে যে তাঁকে। এখন থেকে আদ্রিয়ানের সাথে থাকবে সে,কথাটা ভাবতেই যেন শুভর চোখে মুখে খুশির ছাপ ফুটে উঠছে বারবার।’

____

অবশেষে সেই নীরবতার মধ্যে দিয়েই আদ্রিয়ানদের গাড়ি এসে থামলো আদ্রিয়ানের বাড়ির সামনে। তারপর আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো আহি আর আদ্রিয়ান। শুধু নামলো না নিলয় কারন তাঁকে এখনই অফিসে যেতে হবে। আদ্রিয়ান বলে দিয়েছে সেও কাল থেকে অফিসে যাওয়া শুরু করবে। নিলয়ও মেনে নিয়েছে কারন এই মুহূর্তে সত্যি আদ্রিয়ানের প্রয়োজন আছে অফিসে।’

আদ্রিয়ান আহি নামতেই নিলয় ওদেরকে বাই জানিয়ে চলে গেল নিজের গন্তব্যের দিকে। আর আহি আদ্রিয়ান চললো বাড়ির ভিতরে। শুরুতেই আদ্রিয়ান বাড়ির দরজা খুলে আস্তে আস্তে গিয়ে বসলো সোফায়। আর আহি আশেপাশে চোখ বুলায় চারদিকে, চারপাশে পর্দা থাকায় পুরো বাড়িটায় যেন অন্ধকারে টুইটুম্বর হয়ে আছে আহি শুরুতেই তাঁর হাতের ব্যাগটাগুলো নিচে রেখে এগিয়ে যায় সামনে তারপর আস্তে আস্তে সরিয়ে দেয় থাইগ্রাস জড়িয়ে থাকা সাদা পর্দাগুলো। পর্দা সরাতেই পুরো রুম যেন আলোতে আলোকিত হয়ে গেছে। পর্দা সরাতেই সর্বপ্রথম আহির যেদিকে চোখ যায় সেটা হলো সুইমিংপুল। এই সুইমিংপুলটাকে আগে দেখে নি আহি এর আগের বার যখন প্রথম আদ্রিয়ানের বাড়ি দেখছিল তখন এদিকটা খেয়াল করে নি সে। এক ধমকা হাওয়া বয়ে আসলো রুম জুড়ে। আহি রুমের পর্দা সরিয়ে দিয়ে বললো আদ্রিয়ানকে,

‘ এখন বলুন আপনি কি খাবেন?’

‘ আমি কি খাবো তাঁর চেয়ে তুমি বলো তুমি কি খাবে আমি অর্ডার করে দিচ্ছি।’

‘ কি সারাদিন শুধু বাহিরের খাবার খান, কোনো কিছু অর্ডার করতে হবে না আজ বাড়িতে রান্না হবে।’

আহির কথা শুনে বেশ অবাক হয়েই বললো আদ্রিয়ান,

‘ কিন্তু তা কি করে সম্ভব, এখানে রান্না করার মতো কেউ নেই আহি।’

‘ কে বলেছে কেউ নেই আমি আছি না।’

আহির কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ মানে?’

‘ মানে আজ আমি আপনাকে রান্না করে খাওয়াবো।’

‘ কিন্তু আহি?’

‘ কোনো কিন্তু নয়। আচ্ছা আপনার বাড়ির রান্না ঘরটা কোনদিকে বলুন তো, এর আগে যখন এসেছিলাম তখন রান্নাঘরটা দেখা হয় নি?’

আদ্রিয়ান কিছু বলবে তাঁর আগেই আহি বলে উঠল,

‘ যাগ গে আপনি বাদ দিন আমি নিজেই খুঁজে নিচ্ছি।’

বলেই এগিয়ে যায় আহি সামনের দিকে। আর আদ্রিয়ান জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে থাকে আহির যাওয়ার পানে সে ভাবে নি এমন কিছু হবে।’

রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহি কিন্তু রান্নাঘরের অবস্থা দেখে নিরাশ সে। কারন সে বুঝতে পেরেছে এই জায়গাটার ব্যবহার তেমন কেউ করে নি। আহি এগিয়ে যায় ফ্রিজের দিকে কিন্তু ফ্রিজ খুলে আরো নিরাশ যেন সে। কারন ফ্রিজ পুরো ফাঁকা, আশেপাশের সবকিছুর দিকেই চোখ বুলিয়ে দেখলো আহি কিন্তু রান্না করার মতো তেমন কিছুই মিললো না। অবশেষে আহি বুঝতে পারলো এখন কিছু রান্না করতে হলে সর্বপ্রথম তাকে বাজার করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ আহি কিছুটা নিরাশ হয়ে চলে যায় আদ্রিয়ানের কাছে। আদ্রিয়ান জানতো আহি নিরাশ হয়েই বেরিয়ে আসবে রান্নাঘর থেকে কারন লাস্ট কবে আদ্রিয়ান বাজার করেছিল তাঁর মনে নেই। বাহিরের খাবার খাওয়াতেই অভ্যস্ত আদ্রিয়ান তাই সেইভাবে কখনোই বাজার করা হয় নি তাঁর, কারন নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ার প্রয়োজন কখনোই পড়ে নি তাঁর। আহিকে দেখেই বলে উঠল আদ্রিয়ান,

‘ কি হলো রান্না করবে না?’

‘ কি রান্না করবো আমি রান্নাঘর তো পুরোই ফাঁকা।’

‘ সেটা আমিও জানি লাস্ট কবে রান্না করার জন্য কিছু কিনেছিলাম মনে নেই। যাগ গে এখন বলো কি খাবে আমি অর্ডার করে দেই।’

আদ্রিয়ানের কথার তেমন উওর না দিয়ে বলে উঠল আহি,

‘ চলুন আমার সাথে?’

আহির কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ কোথায় যাবো?’

‘ বাজার করতে।’

আহির এবারের কথা শুনে আদ্রিয়ান চোখ বড় বড় করে বললো,

‘ হোয়াট?’

____

শহরের অলিগলি পথ পেরিয়ে অবশেষে আদ্রিয়ান আর আহি এসে দাঁড়ালো একটা বড়সড় বাজারের ভিতর। অনেক লোকের আগমন সেখানে, এত মানুষের ভিড় দেখে কেমন যেন লাগছে আদ্রিয়ানের। এইসব জায়গায় ভুল করেও কখনো আসা হয় নি আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান আশেপাশের পরিবেশ দেখে বলে উঠল আহিকে,

‘ আর ইউ শিওর আহি আমরা এটার ভিতরে ঢুকবো?’

‘ হুম আপনি জানেন না এখানে কম মূল্যে ভালো পন্য পাওয়া যায়।’

‘ এর চেয়ে আমরা কোনো সুপারশপে গেলে ভালো হতো না আহি?’

‘ কি যে বলেন ওখানে সবকিছু একদরে বিক্রি করে আর এখানের চেয়ে ডাবলদামে।’

‘ তাতে কি হইছে?’

‘ কি হইছে মানে শুধু শুধু বেশি টাকা খরচ করবো কেন চলুন তো আমার সাথে,

বলেই আদ্রিয়ানের হাত ধরে চললো আহি বাজারের ভিতরে। আর আদ্রিয়ানও কোনো উপায় না পেয়ে মুখে মাস্ক পড়ে চললো আহির সাথে।’

শুধুতেই সবজির দোকানের সামনে গেল আদ্রিয়ান আর আহি। আহি আশেপাশের সবকিছু দেখে চোখ গেল করলার দিকে, তাজা তাজা করলা দেখে বললো সে,

‘ করলার কত করে?’

‘ জ্বী ৭০ টাকা।’

লোকটার কথা শুনে আদ্রিয়ান বলে উঠল,

‘ তাহলে আমাদের ২ কিলো দিয়ে দিন।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে দোকানদারও মাপতে শুরু করলো করলা আর আহি একবার আদ্রিয়ানের দিকে বললো,

‘ আপনার কি মাথা ঠিক আছে সত্তর টাকা দিয়ে করলা কিনবো ৪০ টাকার উপরে একটাকাও দিবো না।’

আহির কথা শুনে দোকানদার হতাশ হয়ে বললো,

‘ এডা কি কইলেন আফা?’

‘ যা বলেছি তাই দিলে দিন না দিলে অন্যদোকান থেকে কিনবো।’

বলেই আদ্রিয়ানের হাত ধরে অন্যদিকে যেতে নিলো আহি। আহিকে যেতে দেখে দোকানদারও বলে উঠল,

‘ দাঁড়ান দিতাছি।’

দোকানদারের কথা শুনে আহিও খুশি হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সেখানে আর আদ্রিয়ান তো চরম প্রকার অবাক। দোকানদারের করলা মাপা দেখতে দেখতে আবারো বলে উঠল আহি,

‘ এই শাক কত করে?’

‘ ৪০ টাকা।’

‘ হুম ২৫ টাকার নিচে একটুও হবে না।’

এমনই করতে করতে বিভিন্ন পদের জিনিসপত্র কিনলো আহি আর আদ্রিয়ান শুধু হা হয়ে তাকিয়ে রইলো আহির কাজের দিকে কারন দোকানদার যেটারই দাম বলছে আহি সবকিছুই অর্ধেক অর্ধেক দাম বলছে? এভাবে পুরো বাজার ঘুরে এটা ওটা কিনে চললো আহি আর আদ্রিয়ান বাড়ির উদ্দেশ্যে। আজ প্রথমই আদ্রিয়ান এমনভাবে বাজার করার দৃশ্য দেখলো।’
____

রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের কাজ করছে আহি আর ওর পাশেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। এমনটা নয় আহি রান্নাবান্না জানে না,টুকিটাকি যা জানে তাই সেভাবেই কাজ করছে সে। মাছ,ভাত, করলা ভাজি, আর ডাল এগুলোই রান্না করবে আহি। ভাত আর ডাল রান্না করা শেষ এখন শুধু মাছ আর করলা ভাজি বাকি। ঘেমে পুরো একাকার হয়ে গেছে সে তারওপর চুলগুলো খোলা। এই মুহূর্তে আহির বিরক্ত লাগছে নিজের ওপর, কেন সে কাজ শুরু করার আগে তাঁর চুল বেঁধে নেয় নি,সামনের চুলগুলোও তাকে বার বার বিরক্ত করছে আর বার বার হাত দিয়ে সেগুলোকে সরাতে সরাতে অতিষ্ঠ আহি।’

অন্যদিকে আহির এমন কাজ দেখে আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে বেরিয়ে যায় রান্না ঘর থেকে। তারপর সোফার উপর আহির ব্যাগ থেকে একটা রাবার ব্যান্ট বের আবার চলে যায় আহির কাছে। তারপর আহির পিছনে দাঁড়িয়ে ওর সামনের চুলগুলোও পিছনে নিয়ে এসে সুন্দর করে সব চুলগুলো বেঁধে দিতে লাগলো আদ্রিয়ান।’

হুট করেই কিছুর স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো আহি পরক্ষণেই পিছনে আদ্রিয়ানকে দেখে তেমন কিছু ভাবলো না আহি। অন্যদিকে আদ্রিয়ান নিজের কাজ শেষ করে এসে দাঁড়ালো আবার কিছুটা দুরত্ব নিয়ে আর আহি আদ্রিয়ানের কাজে মুগ্ধ হয়ে আনমনেই মুচকি হেঁসে নিজের কাজে মন দিলো। আদ্রিয়ান শুধু তাকিয়ে রইলো আহির কাজের দিকে আজ প্রথম বোধহয় ঘরের রান্না খাবে আদ্রিয়ান তাও আবার আহির হাতের।’

অনেকক্ষন পর,

আহি তাঁর কাজ শেষ করে পুরো জায়গাটা পরিষ্কার করে জোরে এক নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ এখন তবে আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর আপনাকে খেতে দিচ্ছি আমি।’

উওরে আদ্রিয়ানও খুশি মনে বললো,

‘ ঠিক আছে তুমিও যাও?’

‘ হুম, আপনি যান এই খাবারগুলো টেবিলে রেখে আমিও যাচ্ছি।’

উওরে আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে চলে গেল নিজের রুমের দিকে।’

____

উপরের রুম থেকে সিঁড়ি বেয়ে ব্লাক ট্রাউজার সাথে এস কালার ফুল হাতার টিশার্ট পড়ে নিচে নেমে আসতে লাগলো আদ্রিয়ান, চুলগুলো এলেমেলো তাঁর। আর এদিকের নিচের সোজাসুজি রুম থেকে কিছুটা দ্রুত গতিতে, ভেজালো চুল, সাথে ওয়াইট থ্রি-পিচ পড়ে এগিয়ে আসছিল আহি কারন সে ভেবেছে তাঁর আগেই হয়তো আদ্রিয়ান ডাইনিং টেবিলে পৌঁছে গেছে। আর এই দ্রুত গতিতে আসাটাই তাঁর ভুল ছিল কারন হঠাৎই পা পিছলে পড়ে যেতে নিলো আহি।’

অন্যদিকে তাঁর থেকে অল্প কিছুটা দুরত্ব নিয়েই এগিয়ে আসছিল আদ্রিয়ান হঠাৎই আহিকে পড়ে যেতে দেখে চটজলদি ধরলো সে আহিকে। আর সেই মুহূর্তেই বাড়ির ভিতর ঢুকলো শুভ আর রিনি। বাড়ির ভিতর ঢুকতে না ঢুকতেই এমন এক রোমান্টিক সিন দেখবে না তাঁরা ভাবতেই পারে নি। আর আদ্রিয়ান আহি তারাও ভাবেনি এইসময়ই শুভ আর রিনি এসে পড়বে এখানে, চারজনই প্রায় অপ্রস্তুত হয়ে তাকিয়ে রইলো এঁকে অপরের দিকে….
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। আচ্ছা আমি কি গল্প প্যাচাচ্ছি গাইস, সবাই একটু ধৈর্য নিয়ে পড়ো প্লিজ বার বার ভাবি আজ গল্পে অথৈ আর নীরবকে আনবো কিন্তু কিছুতেই হয়ে উঠছে না। তবে ইনশাআল্লাহ আগামী পর্বে ওদের আনবোই আনবো]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here