#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ৪৯
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
—
‘ তুমি কি এখনো অথৈকে ভালোবাসো ভাইয়া?’
অনেকক্ষণের হতাশা আর নীরবতা কাটিয়ে কথাটা বলে উঠল আহি নীরবকে। আর আহির কথা শুনে কিছুটা হকচকিয়ে উঠলো নীরব। সে ভাবে নি আহি এই মুহূর্তে এমন কিছু বলবে। নীরবকে হতাশা ভরা চোখে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল আহি,
‘ কি হলো ভাইয়া, তুমি কিছু বলছো না কেন?’
পুনরায় আহির কথা শুনে নীরব তার বইটা বন্ধ করে শীতল দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুই কি এই রাতের বেলা এটা শুনতে আমার রুমে এসেছিস?’
নীরবের কথা শুনে কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করে বললো আহি,
‘ তুমি না বড্ড কথা প্যাচাও ভাইয়া আমার প্রশ্নের হ্যাঁ বা না উওরটা দিলেই তো হয়।’
উওরে নীরব আহত দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুই আমায় ভালোবাসিস এখনো?’
এবারের কথা শুনে আহি সত্যি সত্যি বিস্মিত। তাঁর কথার প্রতি উওরে এমন কিছু বলবে নীরব এটা সত্যি কল্পনার বাহিরে ছিল তার। আহিকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল নীরব,
‘ আমি তোকে হার্ড অথবা কষ্ট দেওয়ার জন্য কথাটা বলি নি তোর প্রশ্নের পাল্টা উওর দিয়েছি জাস্ট।’
‘ আচ্ছা আমি যদি তোমায় বলি অথৈকে ভুলে আমায় ভালোবাসতে তুমি কি ভালোবাসবে ভাইয়া?’
নীরব স্থির দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ভালোবাসাটা সবার জন্য আসে না বুঝলি, আর যার জন্য আসে সে বুঝতে পারে না যেমন তুই আমায় ভালোবাসিস কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না। ভালোবাসার জন্য সর্বপ্রথম যেটার প্রয়োজন সেটা হলো হৃদয়ের অনুভূতি। তোর হয়তো আমার প্রতি এমন অনুভূতি ছিল কিন্তু আমার তো নেই আমি চাইলেও তোকে ভালোবাসতে পারবো না। কারন আমার কোনো কালেই তোর প্রতি সেইরকম কোনো অনুভূতি ছিল না। আমি ছোট বেলাই থেকেই তোকে আমার ছোট বোনের নজরে দেখেছি এখনও দেখি। কিন্তু ভালোবাসাটা হবে না, লাস্টের কথাটা খুব অনুশোচনা নিয়েই বললো নীরব’।
নীরবের কথা শুনে কিছুক্ষন স্বচ্ছল দৃষ্টিতে নীরবের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠ নিয়েই বললো আহি,
‘ হুম জানি। আমি এই কথাগুলো শোনার জন্য আসে নি ভাইয়া আমি শুধু এতটুকুই জানতে চাই তুমি কি অথৈকে এখনো ভালোবাসো কি না। কিন্তু তুমি তো?’
‘ আমায় খারাপভাবে নিস না আহি, আসলে কিছুদিন যাবৎ মাথাটা ঠিক নেই। সহজ জিনিসগুলো আমার কাছে খুব জটিল মনে হয়। ‘অথৈ’ নামটা আমি ভুলতে চাই, কারন অথৈ আমার জীবনের এক তরফার এক গল্প৷ কিন্তু কিছুতেই ভুলতে পারছি না তাই এত জটিলতা।’
‘ আচ্ছা ধরো, যদি অথৈ তোমার লাইফে আবার চলে আসে তাহলে কি তোমার জটিলতা কমে যাবে ভাইয়া?’
আহির এবারের কথা শুনে নীরব বিস্ময়কর চাহনী দিয়ে বললো,
‘ তোর কথার অর্থ বুঝলাম না আহি?’
নীরবের কথা শুনে বিষন্ন আহি। বিষন্নতা নিয়েই বললো সে,
‘ আমি এমন জটিল কিছু বলি নি যে তুমি বুঝতে পারছো না। তুমি বড্ড বদলে গেছো ভাইয়া?’
শুঁকনো হাসলো নীরব তারপর বললো,
‘ সত্যি খুব বদলে গেছি তাই না।’
‘ তা নয় তো কি নিজের কি অবস্থা করেছো বলো তো, চুলগুলো এলেমেলো, শার্টের বোতামগুলো এলেমেলো। চোখে মুখের কি অবস্থা। যাই হোক আমার যা বোঝার আমি বুঝে গেছি। কাল তোমায় একটা জায়গায় নিয়ে যাবো তৈরি থেকো বিকেল ৫ঃ০০টায়।’
বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আহি। আহিকে উঠতে দেখে বললো নীরব,
‘ কোথায় যাবো?’
‘ তা না হয় গেলেই দেখবে পাবে শুনো নিজেকে পরিপাটি করে নিও।’
বলে মাথাটা নিচু করে বললো আহি,
‘ সরি ভাইয়া।’
উওরে নীরব শীতল ভেজা কন্ঠে বললো,
‘ হঠাৎ সরি কেন?’
বিনিময়ে আহি তাঁর হাতে করে আনা লাল ডাইরিটা বের করে নীরবের টেবিলের উপর রাখলো যেটা এতক্ষন সে লুকিয়ে রেখেছিল। টেবিলের ওপর ডাইরি দেখে বেশ হতভাগ হয়ে বললো নীরব,
‘ এটা কিসের?’
‘ এটা তোমার জন্য। পড়ে দেখো তোমার মন ভালো হয়ে যাবে।’
‘ আমি কোনো কালেই ডাইরি পড়ি না এটা তুই জানিস না।’
‘ জানি তারপরও দিলাম। একবার পড়ে দেখো একজন মানুষের তার ভালোবাসার মানুষটার প্রতি অনুভূতি লেখা আছে। পড়লে তোমার ভালো লাগবে। আজ তবে আসি কাল টাইম মতো তৈরি থেকো তোমার জন্য ছোট্ট একটা সারপ্রাইজ আছে।’
বলেই পিছন ঘুরে হাঁটা শুরু করলো আহি। নীরব আহির কাজে ভীষণই অবাক। না চাইতেও কৌতুহলী সে লাল ডাইরিটা হাতে নিলো কয়েক পৃষ্ঠা উল্টাতেই ভিতরে কথাগুলো দেখতেই চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো তাঁর। সে খুশি হয়ে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আহি?’
সাথে সাথে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে পড়লো আহি, সে জানতো নীরব তাকে ডাকবে। তাই খুশি মনে পিছন ঘুরে বললো আহি,
‘ শোনো ডাইরিটা পড়ার জন্য তোমায় শুধু আজকের রাতটুকুই দিতাম। কাল সকালে ডাইরিটা আবার আমায় ফেরত দিয়ে দিবে অবশ্য না দিলেও চলবে এটা তোমারই আর হ্যাঁ সময় মতো তৈরি থেকো কিন্তু ঠিক বিকেল পাঁচটা।’
‘ আমরা যাবোটা কোথায় আহি?’
‘ বললাম তো গেলেই দেখতে পাবে। আর শোনো নিজের অনুভূতিগুলো গুছিয়ে রেখো কাল কাজে আসবে।’
বলেই আর দু’মিনিট না দাঁড়িয়ে চলে গেল আহি। আর নীরবের চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি। আজ বহুদিন পর যেন নিজেকে আবার ফিরে পেতে চলেছে নীরব। সে তো ভাবতেই পারে নি সে যাকে কয়েকদিন আগেই ভালোবেসেছে সে কিনা তাকে না দেখেই আরো আগে থেকেই ভালোবাসে।’
নীরব খুশি মনে ডাইরির প্রতিটা পৃষ্ঠা উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলো।’ তাঁর পাশে থাকা জানালার কার্নিশ বেয়ে আসছে রাতের মৃদু আলো। সাথে খোলা আকাশের তাঁরার জ্বল জ্বল হাসি। সে ভাবে নি অথৈই যাকে ভালোবাসে সেই মানুষটা সে নিজেই।’
এই ডাইরিটা লুকিয়ে লুকিয়ে অথৈদের বাড়ির থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছিল আহি। মুলত নীরবকে দেখানোর জন্যই কারন সেও চেয়েছিল অথৈ যে ঠিক নীরবকে কতটা ভালোবাসে সেটা নীরবও জানুক। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সিঁড়ি নিচে নামলো আহি।’
_____
মাঝ রাতে ঝুমঝুম শব্দে বৃষ্টি পড়ছে বাহিরে। জানালার সাদা পর্দা ভেদ করে অল্পস্বল্প বৃষ্টির পানি আসছে ভিতরে। কিন্তু সেদিকে আপাতত আদ্রিয়ানের খেয়াল নেই। সে চুপচাপ বসে আছে তাঁর নিজ রুমেই থাকা টেবিল জুড়ে। তাঁর সামনে আজও বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে শুভ। আজ হসপিটাল থেকে ফিরতে একটু লেট হয় শুভর। যার কারনে ক্লান্ত হয়ে আগেই ঘুমিয়ে পড়ে সে।’
টেবিলের উপর থাকা ল্যাম লাইটের মৃদু আলোতে বসে চুপচাপ কিছু একটা ভাবছে আদ্রিয়ান। আজ আহি নেই তাঁর সেকেন্ড রাত চলছে, মনে ভিতর অজানা ভয়,অনুভূতি,ক্ষোভ,মান-অভিমান সবকিছুই উঁকি মারছে আদ্রিয়ানের। আকাশে মেঘের গর্জন চলছে খুব আদ্রিয়ান আনমনেই তাকালো আকাশ পথে। এই বৃষ্টি বার বার আদ্রিয়ানকে মনে করিয়ে দেয় আহিকে। শ্রীমঙ্গলের সেই রাত, ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে সেই ল্যামপোস্টের দুরত্বে বেঞ্চে বসে তাঁকে নীরব ভেবে জড়িয়ে ধরার মুহূর্ত, ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে দুটো আঘাত পাওয়া। এক আঘাত তাঁর মানসিক যন্ত্রনার কারন, আর দুই শারীরিক আঘাত। তবে শারীরিক সেই আঘাত আদ্রিয়ানকে কষ্ট দেওয়ার চেয়েও আনন্দ দিয়েছিল বেশি যেই আঘাত বারংবার আহিকে জড়িয়ে ধরার মুহূর্ত সৃষ্টি করে দিয়েছে তাঁকে, বার বার জাগিয়ে তুলেছে তাঁর অনুভূতি, তাঁর বুকের স্পন্দন,ধীরে ধীরে কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে তাঁর ভয়, বাবা মাকে হারানোর ক্ষত আরো কত কি?’ আহির সাথে কাটানোর প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা স্মৃতি সবকিছুই এঁকে এঁকে মনে করিয়ে দিচ্ছে আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান নিমিষেই তার চোখ দুটো বুঝিয়ে নিল, কিন্তু তাতেও যেন শান্তি মিললো না আবারো চোখ খুলে ফেললো চটজলদি সে। বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে আদ্রিয়ানে, যেই যন্ত্রনা আদ্রিয়ানকে ভিতর থেকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।’
কাল সে চলে যাবে? আবার কবে দেখা হবে আহির সাথে জানা নেই। আদ্রিয়ান চাইছে যাওয়ার আগে নিজের সেই অনুভূতিগুলো আর একবার প্রকাশ করতে যদিও সেদিন তেমন কিছুই বলা হয় নি। হোক না আহি আর একবার তাঁকে ব্যর্থতার সুখ দিলো। এটাই লাস্ট এরপর আর সে জ্বালাবে না আহিকে। এই কয়দিনে এত কাছাকাছি থেকেও কি আহির তাঁর প্রতি বিন্দুমাত্র অনুভূতি সৃষ্টি হয় নি, একবার তাঁর সাথে সারাজীবন থাকার প্রতিশ্রুতি জন্মায় নি। যদি জন্মে থাকে তাহলে নেক্সট যখন দেখা হবে তার সাথে আহির, তখন হয়তো আর পাঁচটা রঙিন উপন্যাসের মতো তাদের উপন্যাসের শেষপাতাটাও রঙিন হবে নয়তো ব্যর্থতাই হবে তাদের উপন্যাসের মূল মন্ত্র। আর ভাবলো না আদ্রিয়ান, কিন্তু কিভাবে সে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করবে? মুখে করা যাবে না, কারন সে গুলিয়ে যাবে আর নয়তো সময়ে কুলাবে না। হঠাৎই আদ্রিয়ানের মনে পড়লো আহির সাথে তাঁর প্রথম সাক্ষাতের কথা। ভরা বিয়ের আসরে চিঠি লেখার ঘটনা, আদ্রিয়ান ভেবে নিলো সেও তাঁর অনুভূতি শুঁকনো চিঠির খামের আড়ালেই জানাবে। যেই ভাবা সেই কাজ আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। চলে যায় সিঁড়ি বেয়ে নিচে, আনমনেই হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল বুকশেলফের কাছে। একটা মোটা খাতা বের করে আনমনেই বসলো গিয়ে বুকশেলফের পিছনে থাকা টেবিল চেয়ারের কাছে। সেখানে থাকা ছোট্ট ল্যাম লাইটটা জ্বালিয়ে গুছিয়ে নিজের অনুভূতিগুলো লিখতে লাগলো আদ্রিয়ান। বাহিরে মুসল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে, আকাশটাও হয়ে আছে মেঘাচ্ছন্ন, হিমশীতল বাতাস বইছে চারপাশে আর এসবের ভিড়েই নিজের অনুভূতিগুলো সাজাতে ব্যস্ত আদ্রিয়ান।’
কে জানে এই অনুভূতিগুলো আধও আহি বুঝতে পারবে কি না?’
নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ” নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ” এবং ফলো করে সাথেই থাকুন।
____
ভোরের গা ছমছম করা বাতাস বইছে চারপাশে। বেলকনিতে জমে আছে এখনো বৃষ্টির পানি, বেলকনিতে থাকা গাছের প্রতিটা পাতায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে জমে আছে বৃষ্টির পানি। ফুলের পাপড়ি জুড়েও ভাসছে বৃষ্টির পানি। বেলকনির দরজা খোলা থাকায় বাতাসে শরীর শিউরে উঠছে আহির। গায়ে জড়িয়ে থাকা কাঁথাটাকে ঘুমের ঘোরেই আর একটু কষা করে জড়িয়ে নিলো সে।
কাল বৃষ্টি পড়ায় বৃষ্টি দেখতে বেলকনির দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিল আহি। যখন থেকে জানতে পেরেছে সে, অথৈও নীরবকে ভালোবাসে তখন থেকেই নিজের বুকের ওপর যেন একটা ভাঁড়ি পাথর জমে ছিল। নীরবকে ডাইরিটা দেওয়ার পর থেকে সে ভাড়ি ভাবটা যেন একটু কমেছিল তাঁর। আজ হয়তো পুরো দমে কমে যাবে। কিন্তু তারপরও কোথাও না কোথাও একটা শুন্যতা টের পাচ্ছিল আহি। শুধু শুন্যতা ঠিক কার জন্য এটাই বুঝতে পারছিল না সে। কারন কাল আদ্রিয়ানকে ভীষণভাবেই মনে পড়ছিল আহির। নীরবকে সে কোনোকালেই পাবে না এটা যেমন সত্য তেমনি তাঁর জন্য এমন একজন আছে যে সত্যিকার অর্থে তাঁকে ভালোবাসে। যে নীরবের থেকে ব্যর্থতা পাওয়ার পর থেকে তাঁকে সামলিয়েছে। তাঁর মনখারাপের সময়ে তাঁর পাশে থেকেছে, তাঁকে বাঁচাতে নিজে আঘাত পেয়েছে।’
এইরকম হাজারো কথা ভাবছিল আহি। আহি তো পুরোই অবাক কারন যে রাতগুলোতে নীরব ছাড়া কেউ আসতো না সেই রাতগুলোতেই সে নীরবের জায়গায় আদ্রিয়ানকে নিয়ে ভাবছিল। এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিলো মনেই নেই আহির। ঘুমের চাপটা একটু বেশি থাকায় বেলকনির দরজা আঁটকাতেও ভুলে গিয়েছিল সে।’
বর্তমানে,
গভীর ঘুমে মগ্ন আহি। হঠাৎই তাঁর সেই রাতের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে যে রাতে বৃষ্টির মধ্যে আদ্রিয়ান আহিকে তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করতে এসেছিল। সে হাত জড়ো করে বলেছিল তাঁকে,
‘ তোমায় আমাকে ভালোবাসতে হবে না আহি, আমি তোমায় ভালোবাসবো তুমি শুধু আমার সাথে থাকবে, আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই, আই নিড ইউ।’
পর পর কথাগুলো মনে পড়তেই হঠাৎই মনে পড়লো সেই দৃশ্যের কথা যখন তাঁকে সাহায্যের জন্য নিজের মাথায় আঘাত পেয়েছিল আদ্রিয়ান। সেই দৃশ্যের কথা ভাবতেই থরথর করে কেঁপে উঠলো আহি। ফট করেই চোখ খুলে তাকালো আহি, আশপাশ থেকে বোঝার চেষ্টা করলো আসলে কোথায় আছে সে, এক মূহুর্তের জন্য হলেও আঁতকে উঠেছিল আহি। আদ্রিয়ানের নিথর দেহের কথা ভাবতেই শরীর যেন বারবার কেঁপে উঠছিল। মোবাইলটা অন করতেই দেখলো আহি ছয়টাও বাজে নি তখন। ফট করে এমন এক স্বপ্ন কেন দেখলো ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না আহি। তাঁর মনে হলো একবার আদ্রিয়ানকে ফোন করা উচিত কিন্তু এত সকালে ফোন করে কি বলবে সে তাই আর করা হয় নি। কল করতে নিয়েও সংকোচে আবার করলো না। ফোনটাকে বিছানার ওপর রেখেই অগ্রসর হলো সে ওয়াশরুমের দিকে। আজ আর ঘুমাবে না কেন যেন অজানা এক ভয় এসে গ্রাস করলো তাঁকে। তবে আজ একবার আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করার কথা ভাবলো আহি?’ সময় হলে ঠিক যাবে। এমনিতেও ফিরে এসে সেইভাবে কথা হয়নি তাদের। জোরে এক নিশ্বাস ফেললো আহি। মনটা কেমন যেন করে উঠলো আচমকা?’
.
.
আজ বহুদিন পর ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো আহি। আর কিছুদিন পরই তাঁদের ফাস্ট ইয়ারের এক্সাম। কিন্তু পিপারেশন বেজায় খারাপ। এসব ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটি পৌঁছে গেল আহি। ভার্সিটি ঢুকতেই দেখা মিললো রিনি আর অথৈর। অনেকদিন পর অথৈকেও ভার্সিটি দেখে তাঁর ভালো লাগছে। খুশি মনে এগিয়ে গেল আহি ওদের দিকে। তারপর রিনি আহি নিজেদের ক্লাসে আর অথৈ নিজের ক্লাসের দিকে অগ্রসর হলো।’
আজকের মতো ভার্সিটি শেষ করে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো আহি। তবে যাওয়ার আগে অথৈকে বলেছে সে, আজ বিকেলে যেন একবার বের হয় তাঁর সাথে। অথৈও রাজি হয়ে যায়, রিনিকে বলেছিল কিন্তু রিনির কাজ আছে বলে যেতে পারবে না সে। আজ ভার্সিটিতে অথৈর সাথে নীরবের দেখা হয় নি, হয়তো নীরব আজ আসে নি। অবশ্য অথৈ এতে একটু সাচ্ছন্দ্য ফিল করেছে না জানি নীরবের মুখোমুখি হলে কেমন অবস্থা হবে তাঁর। অথৈ মোটেও চায় না নীরবের সাথে তাঁর দেখা হোক। কারন দেখা হলেই তো সেই বুক চিঁড়ে কান্না আসবে যেটা মোটেও করতে চায় না অথৈ।’
তারপর বলতে না বলতেই ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়লো বিকেল পাঁচটার কাঁটায়।’
সুন্দর এক নদীর কিনারায় পাশে বেঞ্চে বসে আছে অথৈ। সামনেই যতদূর চোখ যায় শুধু পানি, তবে বেশ কয়েক কিলোমিটার দুরত্ব রয়েছে অগণিত গাছপালা। যেগুলো একদম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেখাচ্ছে অথৈর দিক থেকে। দূর থেকে মনে হচ্ছে যেন গাছ দিয়ে তৈরি বিশাল পাহাড়ের ছড়াছড়ি। অথৈর দৃষ্টি সেদিকেই, আকাশটাও আজ একদম সচ্ছল পরিষ্কার, কাল রাতে যে বৃষ্টি হয়েছিল তাঁর ছিটেফোঁটা নেই এখন, নদীর ঢেউয়ের তীব্রতায় একটা দুটো নৌকা যাচ্ছিল বেশ দুরত্ব নিয়ে।’
তাদের এপারেও টুকিটাকি রয়েছে গাছপালা। অথৈ যেখানে বসে আছে তাঁর থেকে কিছুরা দূরেই বিশাল একটা গাছ। গাছের কিছু পাতা ঝুঁকে আছে নদীর দিকে। অথৈ পুরো জায়গাটাই চোখের ফ্রেমে বন্দী করে নিচ্ছে। হয়তো বাসায় গিয়ে আঁকবে সে।’
অন্যদিকে তার থেকে কিছুটা দুরত্ব নিয়ে শুকনো মাটির রাস্তায় পায়চারি করছে আহি। চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ তাঁর। চারপাশের বাতাসে অথৈ আর আহির দুজনেরই চুল উড়ছে ভীষণ। আহি পায়চারি করছে সাথে কিছুক্ষন পর পর নিজের হাতের ঘড়িটাও দেখছে। অথৈ বুঝতে পারছে না আহি কিসের জন্য এমন করছে। কিছু জিজ্ঞেস করবে তাতেও এই মুহূর্তে মন সায় দিচ্ছে না ছোট্ট দীর্ঘ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো অথৈ। ইদানীং সবকিছুতেই যেন দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে তাঁর।’
এমন সময় হতভম্ব হয়ে দূর সীমানা থেকে কেউ একজন দৌড়ে এদিকেই আসছিল। যদিও ছেলেটির মুখটা বোঝা যাচ্ছিল না তখন। আহি বর্তমানে সেদিকেই তাকিয়ে আছে। আর বলতে না বলতেই সেই মানুষটা আরো কাছাকাছি ছুটে আসছিল তাদের দিকে, সাথে মুখচ্ছবিটিও ভেসে আসছিল নিকটে। দুরত্ব যখন কয়েক কদমের তখন আহি এগিয়ে যায় সামনে সত্যি সত্যি নীরবকে দেখে কিছুটা হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বলে,
‘ এত সময় কেন লাগালে ভাইয়া, আমরা সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্য?’
‘ সরি রে একটু লেট হয়ে গেছে।’
‘ এখানে একটু লেট।’
‘ সরি রে।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে আর কিছু বলতে হবে না আমার সাথে আসো?’
বলেই অথৈর দিকে অগ্রসর হলো দুজন।’
অন্যদিকে অথৈ যেন বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলো সে ভাবে নি আহি এতক্ষণ নীরবের জন্য অপেক্ষা করছিল। সাথে সাথে বুকটা দক করে উঠলো অথৈর এখন কি করবে সে?’
আহি নীরবকে একটুখানি সময়ের জন্য দাঁড় করিয়ে রেখে এগিয়ে যায় অথৈর দিকে। অথৈও আহিকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সে বুঝতে পারছে না আহির উদ্দেশ্য। আহি অথৈর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
‘ অনেক তো হলো দুরত্ব আর কত?’
হুট করে আহির এমন কথা শুনে যেন হতাশ অথৈ। সে বুঝলো না আহির কথার অর্থ? আহিকে হতাশার চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে আবারো উঠল আহি,
‘ বুঝলি না তো আমি জানি তুইও নীরব ভাইয়াকে ভালোবাসিস।’
এবার যেন আহির কথা শুনে চারশো চল্লিশ বোল্ডটা ঝটকা খেলো অথৈ। মাথায় বারংবার একটা কথাই মাথায় আসছে তাঁর আহি কি করে জানলো এসব, কই সে তো ভুল করেও কারো সাথে এসব নিয়ে কথা বলে নি তাহলে কি করে আহি জানলো এসব?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। অনেকেই হয়তো অনেক অপেক্ষায় ছিলে দু’দিন? আসলে একটু গ্রামের বাড়ি বেড়াতে এসেছি, আর গ্রাম মানেই মানুষের আনাগোনা সাথে কাজিনদের চিল্লাচিল্লি তারওপর নেটওয়ার্কের অবস্থা বেজায় খারাপ আর এসবের মধ্যে গল্প দেওয়া খুবই দুষ্কর ব্যাপার। আশা করি বুঝবে তোমরা? এমনিতেও আর হয়তো এক পর্ব আছে গল্পের তোমরা একটু ধৈর্য নিয়ে থেকো প্লিজ]
#TanjiL_Mim♥️