Love_heart💞💞,২৯,৩০

#Love_heart💞💞,২৯,৩০
লেখা- পূজা
পর্ব- ২৯
🍁
অর্পি ফ্লোরে বসে হাটুতে মুখ গুজে কাদছে। এখানে থাকতে ওর ভালো লাগছে না। ওর সেই ছোট্ট খুড়েঁ ঘড়ই অনেক ভালো ছিলো। রাতে রূপ ডিনার করতে নিচে নামে। এর মধ্যে একবারো অর্পির সাথে দেখা করে নি। রূপের মা বাবা আর রূপের দাদি ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন। রূপ গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।
দাদিঃদাদুভাই মাইয়াটা কে?
রূপ খাবার বারতে বারতে বললো,”কার কথা বলছো?”
দাদিঃসকালে যে মাইয়াটাকে নিয়ে আসছিলি।
রূপ খাবার নেওয়া থামিয়ে ওর দাদির দিকে তাকালো। এতক্ষণ অর্পির কথা মাথায়ই ছিলো না।
রূপঃড্যাড মেয়েটা দুপুরে কিছু খেয়েছিলো? এখন কোথায়? ডিনার করবে না?
রূপের মাঃএকবার তোর বাবা গিয়ে ডেকে এসেছিলো খাওয়ার জন্য। উনি আসেন নি।
রূপঃআসে নি মানে? না খেয়ে থাকবে নাকি?
রূপের মাঃসেটা আমরা কীভাবে জানবো? তুই কি বুঝাতে চাইছিস ওর হাত পা ধরে খাওয়ার জন্য নিয়ে আসবো এখন।
রূপঃআমি সেটা কখন মিন করলাম। এনিওয়ে,আমি নিয়ে আসছি।
রূপ টেবিল ছেড়ে উঠে দারালো। রূপের মা রাগে গজগজ করছেন। উনি রেগে রূপের বাবার দিকে তাকালেন। উনি দেখেও না দেখার ভান করে চুপচাপ খাবার খাচ্ছেন।
রূপ রুমে গিয়ে দেখে অর্পি হাত পা গুঠিয়ে ফ্লোরে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।
রূপঃপাগল নাকি মেয়েটা। বিছানা রেখে ফ্লোরে কেনো শুলো।
রূপ অর্পির সামনে গিয়ে দারালো। গালে চোখের পানি শুকিয়ে স্পট পরে আছে। রূপ খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে কেদেকেদেই ঘুমিয়ে গেছে।
রূপঃএত ভালো জায়গা রেখে মেয়েটি সেই বস্তিতে থাকতে চাচ্ছে কেনো? এই মেয়ের জায়গায় অন্য কেউ হলে আর এরকম চান্স পেলে এক পায়ে রাজি হয়ে যেতো।
রূপ পানি এনে একটু পানি অর্পির চোখে মুখে চিটিয়ে দিলো। অর্পি ধরপরিয়ে উঠলো। রূপকে দেখে হাত পা ঘুটিয়ে একটু পিছিয়ে গেলো।
রূপঃচলো।
অর্পিঃকই?
রূপঃখাওয়ার জন্য চলো।
অর্পিঃআমি খামু না। আমি বাড়ি যামু। দয়া কইরা আমারে বাড়ি দিয়া আইয়েন।
রূপ ধমক দিয়ে বললো,”এই মেয়ে তোমার মাথায় কি প্রবলেম আছে? আমি তোমার ভালোর জন্য এখানে থাকতে বলছি আর তুমি সেই ‘বাড়ি যাবো বাড়ি যাবো’ লাগিয়ে রেখেছো।”
অর্পি কাদতে কাদতে বললো,”আমি এইখানে থাকুম না। আপনি আমারে এইভাবে ধমকান কেন?”
রূপ শান্ত হয়ে বললো,”ওকে ওকে আমি ধমক দেবো না। কান্না বন্ধ করো। আর চলো আমার সাথে। খাবে।”
অর্পিঃআমি খামু না।
রূপঃতুমি কি চাচ্ছো আমি তোমাকে জোর করে নিচে নিয়ে যাই। পিচ্ছি একটা মেয়ে কি জেদ দেখো। চুপচাপ চলো আমার সাথে।
রূপের চোখ রাঙ্গানো দেখে অর্পি ভয় পেয়ে গেলো। তারাতারি উঠে দারালো। রূপও আর কিছু না বলে হাটা শুরু করলো। অর্পি রূপের পিছু পিছু যাচ্ছে। রূপ ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখে শুধু ওর বাবা বসে আছেন।
রূপঃমম দাদি ওরা কোথায়?
রূপের বাবাঃখেয়ে চলে গেছে। তরা খেতে বস।
অর্পি গিয়ে টেবিলের পাশে ফ্লোরে আসন করে বসলো। রূপ রূপের বাবা ভ্রু কুচকে অর্পির দিকে তাকালেন।
রূপঃনিচে বসেছো কেনো?
অর্পিঃআমি নিচে বইয়াই খাই।
রূপের বাবাঃমা নিচে বসে খেতে পারবে না। চেয়ারে এসে বসো।
অর্পিঃআমি চেয়ারে বইয়া খাইতে পারি না।
রূপঃওকে তুমি যেভাবে কমপর্টেবল সেভাবেই খাও।
রূপ একটা প্লেটে খাবার বেরে অর্পিকে দিলো।
রূপ খেতে খেতে বললো,”ড্যাড আমি ইউএস বেক করতে চাই।”
রূপের বাবাঃএত জলদি?
রূপঃআমি এখানে থাকলে তিথিকে ভুলতে পারবো না। আমার কাজ আর ২দিনে শেষ হয়ে যাবে। তারপরই আমি চলে যাবো।
রূপের বাবাঃকে তোমার সাথে এমনটা করলো জানতে পারলি?
রূপঃ(জানতে তো পেরেছি।)না।
রূপের বাবাঃওহ! ওকে বাদ দাও এসব। যা হবার হয়ে গেছে। তিথি তোমার জন্য ছিলো না তাই চলে গেছে। এবার তুমি অন্য কাউকে….
রূপঃতিথি আমার লাইফের ফাস্ট লাভ। ওকে ভুলে অন্য কাউকে এক্সেপ্ট করা পসিবল না।
রূপের বাবাঃমানে তুমি কি?
রূপঃসেটা পরে ভেবে দেখা যাবে। এখন এসব নিয়ে ভাবতে চাইছি না। তুমি জানো আমি তিথিকে কতটা ভালোবেসেছিলাম। তিথি পুরো আমার অপজিট ছিলো। ওর দুষ্টুমি গুলো ভালো লাগতো। কাজের জন্য ওকে টাইম দিতে পারতাম না। সবসময় ইগনোর করতাম। তাই ও ভাবতো আমি ওকে ভালোবাসি না। বাট আমি বুঝতে পারিনি ওর মনে আমার জন্য এতটা রাগ অভিমান জন্মাবে। এনিওয়ে,আমি চাইলে এখন জোর করে আবিরের কাছ থেকে তিথিকে আনতে পারি। এমন কেউ নেই যে আমাকে আটকাতে পারবে। বাট আমি এসব করবো না। ছিনিয়ে নেওয়াকে ভালোবাসা বলে না। তিথিকে আমি হ্যাপি দেখতে চাই। আমি এখানে থাকলে আমার তিথিকে কাছে পেতে মন চাইবে। তাই আমি এখান থেকে চলে যেথে চাই।
রূপের বাবাঃআমি ভেবেছিলাম মাকে নিয়ে চলে যাবো ইউএসএ। বাট মা চান উনার শেষ নি:শ্বাস এখানে ত্যাগ করতে। মাকে এই শেষ সময়ে ছেড়ে যেথে পারবো না। উনি এমনিতেই খুব অসুস্থ।
রূপঃতুমি মম থেকে যাও। আমি চলে যাবো।
রূপের বাবাঃকিন্তু…
রূপঃআমাকে নিয়ে ভেবো না। আমি সব সামলে নেবো।
রূপের বাবাঃএই মেয়েটাকে কি করবে।
রূপ ওর বাবার কথা শুনে অর্পির দিকে তাকালো। অর্পি খেয়ে খালি প্লেটে হাত রেখে মাথা নিচু করে বসে আছে।
রূপঃএই মেয়ে এভাবে বসে আছো কেনো? খাওয়া শেষ তো হাত ধুয়ে রুমে যাও।
অর্পিঃকই ধমু।
রূপঃএদিকে আসো।
অর্পি এসে রূপের পাশে দারালো। রূপ একটা বোল সামনে এনে পানির গ্লাস দিয়ে বললো,”এখানে ধুয়ে ফেলো।”
অর্পি হাত ধুলো।
রূপঃএবার রুমে গিয়ে শুয়ে পরো।
অর্পি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে চলে যাবে তখনি রূপ আবার বললো,”শুনো বেডে শুবে। ফ্লোরে না।”
অর্পিঃআমি বিছনায় শুইতে পারি না।
রূপঃএবার থেকে বেডেই শুতে হবে। আমি গিয়ে যেনো নিচে শুতে না দেখি।
অর্পি আর কিছু না বলে চলে গেলো। অর্পি চলে যেথেই রূপ ওর বাবাকে বললো,”তোমার পরিচিতো কোনো কলেজে ওকে ভর্তি করিয়ে দিও। আর একটা হোস্টেল ঠিক করে দেবে। এখানে মম ওকে থাকতে দেবে না। আর আমি চাই এই মেয়েটা নিজের পায়ে দারাক।”
রূপের বাবাঃতুমি ওর ইচ্ছেটা জানতে চাইবে না?
রূপঃআমি যা চাইবো তাই হবে। আর আমি যা বলেছি তাই করবে। সবসময় তুমি ওর খোজ নেবে। যা যা প্রয়োজন সব দেবে।
রূপের বাবাঃওকে। বাট আরো কিছুদিন এখানে থেকে গেলে হয় না।
রূপঃআমি আসবো কিছুদিন পর। বাট এখন যেথেই হবে।
রূপ ডিনার করে রুমে গিয়ে মৃনালকে ফোন দিয়ে কাল মিট করতে বললো।

আবিরের বিয়ের কথা শুনে আবিরের বড় বোন আবিরা উনার বর মিহির সন্ধ্যার পর বাসায় চলে আসেন। হঠাৎ বিয়ে হয়ে গেলো তেমন কাউকেই জানানো হয়নি। সব কাজ শেষে আবিরা তিথিকে সুন্দর করে সাজিয়ে আবিরের রুমে দিয়ে যায়। আর এদিকে তুলি আবিরের বিয়ের খবর শুনে পাগলের মতো আবিরের ফোনে কল মেসেজ দিচ্ছে। আবির ফোন সুইচঅফ করে নিজের রুমে চলে যায়। আজকে মুডটা খুব ভালো। তুলির সাথে কথা বলে সেটা আর খারাপ করতে চায় না।
দ্বীপ অনুর বাসা থেকে বেরিয়ে আবিরের বাসায় এসেছিলো। রাতে আবার চলে যায়। দ্বীপ বাসায় এসে ওর মা বাবার রুম দিয়ে যাওয়ার সময় উনাদের কথা শুনে দারিয়ে যায়।
দ্বীপের বাবাঃআর ইউ ম্যাড সুমি? দ্বীপ বললো আর তুমিও রাজি হয়ে গেলে।
দ্বীপের মাঃরাজি না হওয়ার কি আছে। দ্বীপ যথেষ্ট বড় হয়েছে। ভালো মন্দ বুঝার বয়স হয়েছে। ও কোনো ভুল ডিসিশন নেবে না সে বিশ্বাস আমার আছে।
দ্বীপের বাবাঃআমি এরকম মেয়েকে কখনো এক্সেপ্ট করবো না। যার আগে থেকে একটা ছেলে আছে। আর নোমান সিলেট থেকে ঢাকা আসছে ওর মেয়েকে নিয়ে। আমি ওকে না বলতে পারবো না।
দ্বীপের মাঃএসব কি বলছো? দ্বীপ কখনো মানবে না।
দ্বীপের বাবাঃতোমার কথা ও শুনবে। তুমি বুঝাবে। নোমানের মেয়ে দেখতে স্মার্ট সুন্দর দ্বীপের জন্য একদম পার্ফেক্ট।
দ্বীপের মাঃতুমি জানো দ্বীপ সুন্দর্য্য দেখে কাউকে বিচার করে না। আর দ্বীপ অনুকে ভালোবাসে। অনু কেমন ওর অতিত সম্পর্কে ওর কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
দ্বীপের বাবাঃবাট আমার আছে। আমার একটাই ছেলে। যে কারো সাথে ওর বিয়ে দিতে পারি না।
দ্বীপ আর এখানে দারালো না। এসব শুনতে ওর ভালো লাগছে না। দ্বীপ রুমে চলে গেলো। এদিকে অনু রাজি না অন্যদিকে দ্বীপের বাবা। কীভাবে ২জনকে একসাথে রাজি করাবে দ্বীপ মাথায় কিছুই আসছে না।
দ্বীপ ফ্রেশ হয়ে দিয়ার রুমে যায়। দিয়া বসে বসে বই পরছিলো। দ্বীপকে দেখে বই রেখে দিয়ে বললো,”তুই!”
দ্বীপঃতোর সাথে কথা বলতে এলাম।
দিয়াঃটেন্সট?
দ্বীপঃহুম।
দিয়াঃতর আসা দেখেই বুঝেছি। ওকে বস।
দ্বীপ দিয়ার পাশে গিয়ে বসলো।
দিয়াঃবল এবার কি নিয়ে টেনশন করছিস?
দ্বীপঃআমি অনুকে বিয়ে করতে চাই।
দিয়া চোখ বড় বড় করে দ্বীপের দিকে তাকালো।
দিয়াঃকিইই?
দ্বীপঃআদির বাবা হতে চাই।
দিয়াঃভাইয়া তোর মাথা ঠিক আছে?
দ্বীপঃআমি যা বলছি মন থেকে বলছি। আর আমি অনুকে ভালোবাসি।
দিয়াঃতুই অনুর সম্পর্কে কতটুকু জানিস?
দ্বীপঃকিছুই জানি না। আর জানতেও চাই না। আই উয়ান্ট অনু। এট এনি কস্ট।
দিয়াঃএটা তোর পাগলামি নয়ত?
দ্বীপঃতুই এর আগে আমার কাছ থেকে এসব কখনো শুনেছিস? আর তুই জানিস পাগলামি করার মত ছেলে আমি না। আমি যা বলি এন্ড করি সব সিরিয়াসলি।
দিয়াঃঅনু জানে?
দ্বীপঃহুম। বাট না বলে দিয়েছে।
দিয়াঃমা?
দ্বীপঃমা বাবা ২জনই জানে। বাট বাবা রাজি না।
দিয়াঃএখন কি করবি?
দ্বীপঃবাবাকে প্রথমে রাজি করাতে হবে দেন অনু। অনু যদি জানে আমার বাবা রাজি না তাহলে ও মরে গেলেও আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না।
দিয়াঃতাহলে বাবার সাথে কথা বল।
দ্বীপঃহুম বলবো। বাবা নাকি আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন।
দিয়াঃকিই? কবে? আমি তো জানিই না।
দ্বীপঃআমিই কিছুক্ষণ আগে জানলাম। বিয়ে নিয়ে টেনশন নেই। বাট বাবা আর অনুকে নিয়ে টেনশনে আছি। ওরা রাজি হবে তো। আদি অনু ২জনকেই আমার লাইফে চাই। খুব বেশি করেই চাই।
দিয়াঃআমি আছি ভাইয়া তোর পাশে। তোর সব ইচ্ছে পূরণ হবে।
দ্বীপঃআই হোপ সো। ঘুমিয়ে পর। গুড নাইট।
দিয়াঃগুড নাইট।
সকাল ৯টা,
অনু ওয়াশরুম থেকে সাউয়ার নিয়ে বেরিয়ে দেখে আদি দ্বীপের সাথে বিছানায় বসে খেলছে।
অনু রেগে বললো,”এত সকাল তুমি এখানে কি করছো?”
দ্বীপঃআমার ছেলের সাথে দেখা করতে এসেছি।
অনুঃদ্বীপ একদম আজে বাজে কথা বলবে না।
দ্বীপঃবাজে কথা কোথায় বললাম?
অনুঃতুমি বাসা থেকে বের হও। আর কখনো আদির সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে না।
দ্বীপঃইমপসিবল। আচ্ছা আদি বাবু আমি যদি তোমার বাবা হতে চাই। তুমি রাজি হবে?
আদিঃবাবা!
দ্বীপঃহুম বাবা। বলো তো হবে?
আদিঃহুম। আমার তো বাবা নেই। তুমি হবে?
অনুঃআদি!
দ্বীপঃহবো তো। আমি তো হতেই চাই। আজ থেকে আর আংকেল ডাকবে না বাবা ডাকবে। ওকে?
আদিঃওক্কে।
অনুঃদ্বীপ একদম বাড়াবাড়ি করবে না। আদিকে এগুলো কি শেখাচ্ছো?
দ্বীপঃআরে ভুল কি বললাম। আমাদের বিয়ের পর তো আদি আমার ছেলেই হবে। তখন তো বাবা বলেই ডাকবে। এখন থেকে ডাকলে প্রবলেম কি?
অনু রেগে চিৎকার করে বললো,”আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। একদম বাজে কথা বলবে না আদির সামনে। বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। আর কখনো আমার সামনে আসবে না।”
দ্বীপঃউহু! এত জলদি আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবে না অনুরানি। বিয়ে তো আমি তোমাকেই করবো।
অনুঃ😡আমি মরে গেলেও বিয়ে করবো না।
দ্বীপঃতুমি মরে গেলে আমার কি হবে? একদম এসব বলবে না। আর বিয়ে তুমি নিজে থেকেই করবে আমি জোর করে তোমাকে দিয়ে কিছু করাবো না😘। নাউ বাই। অফিস যেথে হবে। বিকেলে আবার দেখা হবে।
আদিঃবাই বাবা।
বাবা ডাক শুনে অনু আর দ্বীপ ২জনই অবাক হয়ে আদির দিকে তাকালো। বাবা ডাকটা শুনে দ্বীপের চোখ থেকে একফুটা পানি গরিয়ে পরলো। দ্বীপ অবাক হয়ে ওর চোখে হাত দিলো। ছোট বেলায়ও দ্বীপকে কেউ বকলে বা মারলে কাদতো না। অবশ্য কেউ কখনো মারে নি দ্বীপকে ব্যাথা পেলেও কাদতো না। আজ ওর চোখে পানি দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেছে। ভেজা হাত দেখে আদির দিকে তাকালো তারপর আদির পাশে বসে আদিকে জরিয়ে ধরে বললো,”আবার বলবে প্লিজ।”
আদিঃবাবা।
দ্বীপ চোখ বন্ধ করে বললো,”তোমার মুখে বাবা ডাকটা এত মিষ্টি কেনো?”
অনুর চোখ দিয়েও পানি পরছে। অনু আদির মুখে কখনো বাবা ডাকটা শুনে নি। আদি কখনো ওর বাবার কথা বলেনি। এসব বুঝার বয়স এখনো আদির হয়নি তাই হয়ত বলেনি। কিন্তু এখন আদির মুখে বাবা ডাকটা শুনে মনে হচ্ছে অনুর পৃথিবী উল্টে গেছে। এটা একদম সহ্য করতে পারছে না। অনু চোখের পানি মুচে টাস করে দ্বীপের কাছ থেকে আদিকে সরিয়ে নিয়ে বললো,”প্লিজ দ্বীপ এখান থেকে চলে যাও। আর কখনো আসবে না এখানে প্লিজ।”
দ্বীপ একবার আদির দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে চলে গেলো। দরজার বাইরে দিদাকে দেখতে পেলো। দ্বীপ হাসিমুখে বললো,”দিদা আদি!”
দিদাঃশুনেছি আমি।
দ্বীপঃএবার যে করেই হোক আমার আদি এন্ড অনু ২জনকেই চাই দিদা। আদির মুখে সারাজীবন বাবা ডাকটা শুনতে চাই। আমার থেকে ওদেরকে অনু নিজেও আলাদা করতে পারবে না। আজ না হোক কাল ওদের আমার কাছে আসতেই হবে।
এটা বলেই দ্বীপ এখান থেকে চলে গেলো। আর দিদা ডুকলেন অনুর রুমে অনু আদিকে জরিয়ে ধরে কাদছে।
দিদাঃদিদিভাই।
অনুঃদিম্মা প্লিজ দ্বীপকে আদির থেকে দূরে থাকতে বলো প্লিজ। আমি আদিকে হারাতে পারবো না। মরে যাবো আমি।
দিদা অনুর চোখের পানি মুচে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন।
#Love_heart💞💞
লেখা- পূজা
পর্ব- ৩০
🍁
রূপ অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে আসলো ব্রেকফাস্ট করার জন্য। এসে দেখে অর্পি মাথা নিচু করে এক কোনে দারিয়ে আছে। রূপ চেয়ার টেনে বসে বললো,”এভাবে দারিয়ে আছো কেনো? ব্রেকফাস্ট করেছো?”
অর্পিঃনা।
রূপঃতো বসো।
অর্পিঃখিদা নাই।
রূপঃওকে। যখন খিদে লাগবে খেয়ে নিও। আর তোমাকে যদি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেই তুমি পড়াশুন করবে?
অর্পি ছলছল চোখে রূপের দিকে তাকালো।
রূপঃকি হলো?
অর্পিঃআমি পরমু। কিন্তু আমার তো টাকা নাই। টাকার লাগি আমারে ইস্কুলের সার ভর্তি করায় নাই।
রূপঃএসব চিন্তা তোমাকে করতে হবে। সব ব্যাবস্থা ড্যাড করে দেবে। তুমি মন দিয়ে পড়াশুনা করবে। আমি জানি অর্পি তোমাকে জোর করে এখানে নিয়ে আসাটা আমার ঠিক হয়নি।বাট আমার আর কিছু করার ছিলো না। তুমি একা একটা মেয়ে জেনেশুনে কীভাবে ওই জানোয়ারদের কাছে তোমায় ছেড়ে দিতে পারি। আর আমি পরশু এই দেশ থেকে চলে যাচ্ছি। আর কবে আসবো জানি না। ড্যাড তোমার সব দিক খেয়াল রাখবে। যখন যা প্রয়োজন হবে সব বলবে। একদম ভয় পাবে না। মন দিয়ে স্টাডি করবে। তোমাকে নিজের পায়ে দারাতে হবে। অনেক বড় হতে হবে। বুঝেছো?
অর্পির চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে। চোখের জল মুচে বললো,”হো বুঝছি।”
রূপঃগুড। আর তোমাকে এসব ভাষা চারতে হবে। তোমাকে সুন্দর ভাবে কথা বলতে হবে। এরকম কথা বললে তোমাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করবে।
অর্পিঃচেষ্টা করুম।
রূপঃআমি টিচার রেখে দেবো। উনি তোমাকে সব শিখিয়ে দেবেন। উনার সব কথা তোমায় শুনতে হবে।
অর্পিঃআইচ্ছা।
রূপ আর কিছু বললো না চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করে নিলো। আর অর্পি রূপের দিকে তাকিয়ে থাকলো মুগ্ধ হয়ে। রূপ ব্রেকফাস্ট করে চলে গেলো।
রূপ অফিসে গিয়ে দেখলো আবিরের বাবা এসেছেন বাট আবির আসেনি। রূপ এসেছে শুনে আবিরের বাবা রূপকে কেবিনে ডেকে পাঠালেন। রূপ রুমে গিয়ে চেয়ারে বসলো।
আবিরের বাবাঃরূপ আই এম সরি।
রূপঃকেনো আংকেল?
আবিরের বাবাঃতিথি!
রূপঃইটস ওকে আংকেল। আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি। আপনাকে গিল্টি ফিল করতে হবে না।
আবিরের বাবাঃতোমার সাথে এরকমটা কে করেছে জানতে পেরেছো?
রূপঃএটা বাদ দিন আংকেল। তিথি এখন আপনার ছেলের বউ। আপনি…
আবিরের বাবাঃআমি চাই নি এই বিয়েটা দিতে। দ্বীপ জোর করলো তাই রাজি হতে হয়েছে। আর তোমাকেও পাওয়া যাচ্ছিলো না। আমি আগে জানতাম না আবির তিথিকে ভালোবাসে।
রূপঃজানি আংকেল। আপনাকে এক্সপ্লেইন করতে হবে না। আপনি আমাকে আবিরের থেকে আলাদা চোখে দেখেন না সেটাও জানি। তাই আপনার আমাকে কিছু বলতে হবে না।(আর আপনার জন্যই আমি সাইলেন্ট। আপনার অসম্মান হবে এমন কাজ কখনো করতে পারবো না। তাই আবিরের সাথেও কিছু করতে পারবো না।)
আবিরের বাবাঃতাহলে এত জলদি এখান থেকে চলে যাচ্ছো কেনো?
রূপঃএখানে যে দুটি কাজে এসেছিলাম সেগুলো তো প্রায় কমপ্লিট। তাহলে আর থেকে কি করবো। আমি ১বছর পর আবার আসবো।
আবিরের বাবাঃআসবে?
রূপ হেসে বললো,”হুম।”
আবিরের বাবাঃওকে। আবির আজ আসবে না। তুমি পারবে তো একা এটা কমপ্লিট করতে।
রূপঃপারবো।
আবিরের বাবাঃওকে যাও।

বিকেলে অনু আদিকে নিয়ে বাগানে বসে আছে। আদি বল দিয়ে খেলছে আর অনু দোলনায় বসে দেখছে। হঠাৎ কোথা থেকে দ্বীপ চলে আসে এখানে। দ্বীপকে দেখেই আদি চিৎকার করে বললো,”বাবা!”
আদির কথা শুনে অনু চমকে উঠে সামনে তাকালো। এতক্ষণ অনু ভাবনায় ডুবে ছিলো। তাই কোনো কিছু খেয়াল করেনি।
দ্বীপ হাত বারিয়ে দিলো। আদি দ্বীপের কোলে উঠে গেলো।
দ্বীপঃতোমাকে খুব মিস করছিলাম। তাই চলে এলাম।
আদিঃআমিও।
অনুঃদ্বীপ আবার কেনো এসেছো এখানে?
দ্বীপ আদির কপালে একটা কিস করে বললো,”এখন তুমি খেলা করো। বাবা মায়ের সাথে কথা বলবে।”
আদিঃআচ্ছা।
আদি চলে গেলো। দ্বীপ এসে অনুর পাশে বসলো। অনু উঠে যাবে দ্বীপ অনুর হাত ধরে ফেললো। অনু চোখ গরম করে দ্বীপের দিকে তাকালো।
দ্বীপঃআরে জাস্ট পাশে বসেছি। আর কিছু তো করিনি।
অনুঃকেনো আমার সাথে এসব করছো? আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি? তোমাকে খুব ভালো ফ্রেন্ড মনে করেছিলাম। আর তুমি?
দ্বীপঃইউ আর রং অনু। কেনো বুঝতে পারছো না আমি সত্যিই তোমাদের ২জনকেই খুব ভালোবেসে ফেলেছি। আমি আদির বাবা হতে চাই।
অনুঃবাট আমি আদির ভাগ কাউকে দিতে চাই না। আমি আদিকে নিয়ে খুব হ্যাপি আছি দ্বীপ। প্লিজ আমাদের এভাবেই থাকতে দাও।
দ্বীপঃতোমাদের ছাড়া আমি ভালো থাকবো না। প্রতি রাতে ঘুমোনোর সময় তোমাদের দুজনের মাথাটা আমার বুকে রাখতে চাই। তোমাদের মুখ দেখে প্রতি সকাল শুরু করতে চাই। আই উয়ান্ট ইউ। আমার প্রত্যেক মুহূর্তে তোমাকে চাই।
অনুঃসেটা কখনোই সম্ভব না। কোনো ভালো মেয়ে দেখে জলদি বিয়ে করে নাও। এসব ভূত মাথা থেকে বেরিয়ে যাবে।
দ্বীপঃতোমার ভূত আমার মাথা থেকে তো কখনো বের করতে চাই না।
অনুঃদ্বীপ তোমার মাথায় প্রবলেম আছে। ডাক্তার দেখাও।
দ্বীপঃতুমিই আমার সেই লেডি ডক্টর।
অনু রেগে দ্বীপের দিকে তাকালো। দ্বীপ একটা চোখটিপ মেরে আদির কাছে চলে গেলো।
অনুঃআমি থাকবোই না আর এখানে।
রূপ অফিস থেকে বেরিয়ে পুলিশ স্টেশনে গেলো। মৃনাল কাজের জন্য বাইরে মিট করতে পারবে না তাই রূপ নিজেই এসেছে। একজন কনস্টেবল রূপকে মৃনালের কেবিনে নিয়ে গেলো।
মৃনালঃসরি! তোমাকে কষ্ট করে এখানে আসতে হলো।
রূপঃপ্রয়োজন আমার। তো আমাকে আসতেই হতো।
মৃনাল কিছু বললো না। রূপ চেয়ারে বসে বললো,”পুলিশ যদি ক্রাইম করতে শুরু করে।তাহলে তো ক্রিমিনালদের ক্রাইম করা অধিকার হয়ে যায়।”
মৃনাল রূপের দিকে তাকালো।
রূপঃআমি সেন্স ফিরে আসার পরই বুঝতে পেরেছিলাম এটা তোমার কাজ। বাট সিউর ছিলাম না। যখন জানতে পারলাম আবিরের ফ্রেন্ড তুমি তখন সিউর হলাম।
মৃনালঃ??
রূপঃডোন্ট ওরি মৃনাল। তোমাকে আমার ফ্রেন্ড বানিয়েছি এত ইজিলি ছেড়ে দেবো না। তোমার প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। আমার আগে আবির তোমার ফ্রেন্ড। ওর কথাটা তো তুমি ভাববেই।
মৃনালঃএকজনের জন্য অন্যজনের সাথে অন্যায় করে ফেললাম।
রূপ হেসে বললো,”ইটস ওকে। আমি অন্য ছেলেদের মত একদম উইক নই। নিজেকে সামলে রাখতে পারি।”
মৃনালঃআবির কিছুই জানতো না রূপ। আমি আর দ্বীপ মিলে এগুলো করেছি। আবিরের সাথে আমি এখনো মিটই করিনি।
রূপঃআমি জানি এসব দ্বীপের কথায় করেছো।আমি আরো অনেক কিছুই জানি।
মৃনালঃমানে?
রূপঃসেটা দ্বীপকেই বলবো।
মৃনালঃসরি ফর এভরিথিংক রূপ। তোমার বাসায় ডুকার জন্যই সেদিন রাস্তায়…
রূপঃআমি জানি। পুলিশগুলোর সাথে আমার লোক পরে কথা বলেছিলো।
মৃনাল মাথা নিচু করে ফেললো।
রূপঃইজি মৃনাল। মন খারাপ করার কিছু নেই। তুমি তোমার জায়গায় একদম ঠিক আছো। মানডে চলে যাবো। তাই আজ দেখা করতে এলাম।
মৃনালঃকিই? এখনি কেনো?
রূপঃযে কাজের জন্য এসেছি তা শেষ। আমার অফিসে অনেক কাজ আছে। সেগুলো আমাকেই কমপ্লিট করতে হবে।
মৃনালঃকন্টাক!
রূপঃরাখবো। যেকোনো প্রয়োজনে কিন্তু তোমাকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবো।
মৃনালঃআমি ডিস্টার্ব হতে চাই।
রূপ হেসে বললো,”মম ড্যাড এখানেই থাকবে দাদির জন্য। ওদের সাথে মাঝে মাঝে দেখা করে এসো।”
মৃনালঃযাবো।
রূপঃওকে বাই। টেক কেয়ার।
মৃনাল উঠে রূপকে জরিয়ে ধরলো। অনেক খারাপ লাগছে এখন রূপের সাথে কথা বলে। রূপ মৃনালকে ছেড়ে চলে গেলো।
অর্পি রান্নাঘড়ে এককোনে দারিয়ে আছে একজন সার্ভেন্ট রান্না করছেন। অর্পি একটু সামনে গিয়ে মহিলাটাকে বললো,”আমি রানধি?”
সার্ভেন্টঃআরে না তুমি রুমে যাও। স্যার জানতে পারলে আমায় অনেক বকবে।
অর্পিঃকিছু কইবো না। আমি খুব ভালা রানতে পারি।
সার্ভেন্টঃযাই হোক। আমি রান্না করতে দিতে পারবো না।
অর্পি অনেকবার বললো কিন্তু উনি রাজিই হলেন না। রূপের বাবা এদিক দিয়েই যাচ্ছিলেন। ওদের কথা শুনে কিচেনে ডুকে বলেন,”কি হয়েছে?”
সার্ভেন্টঃস্যার এই মেয়েটা রান্না করতে চাইছে। আমি না বলছি তবুও শুনছে না।
রূপের বাবাঃমা তুমি রান্না করতে পারো।
অর্পিঃপারি তো। আমি শিখছি।
রূপের বাবাঃতোমাকে আর কোনো কাজ করতে হবে না। কিছুদিন পর কলেজে এডমিট করে দিবো। শুধু মন দিয়ে পড়াশুনা করবে। এখন চলে আসো।
অর্পিঃআজকে রানধি না। আমি খুব ভালা রানতে পারি। খাইলে খারাপ কইবেন না।
রূপের বাবাঃওকে। রিপন তুমি ওকে হেল্প করবে। আর সাবধানে রান্না করবে। হাত যেনো পুরে না যায়।
অর্পিঃআইচ্ছা।
অর্পি নিজের মতো করে সব রান্না করলো। গ্যাস চালানো আর বন্ধ করা এগুলো শুধু সার্ভেন্ট করে দিলো। খুব নর্মাল রান্নাই করেছে। ভাত মাছ আর মাংস। এগুলো সবাই খেলেও রূপের মা খাবেন কিনা এটা নিয়ে টেনশনে আছেন মহিলাটি।
রূপ ৯টায় বাসায় ফিরলো। ওর যাওয়ার সব ব্যাবস্থা করে এলো আজ। রূপ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলো। তারপর ফোন বের করে তিথিকে একটা কল দিলো।
রূপঃহ্যালো।
তিথিঃবলো।
রূপঃমানডে চলে যাচ্ছি ইউএস। যাওয়ার আগে তোমার সাথে একবার দেখা করে যেথে চাই।
তিথিঃআই এম সরি রূপ। আমি এখন বাসা থেকে বেরতে পারবো না। বুঝতেই পারছো নতুন শ্বশুর…
রূপঃপ্লিজ তিথি চলেই তো যাচ্ছি। জাস্ট ১ঘন্টা তোমার কাছ থেকে চাইছি। আর তো কখনো কিছু চাইবো না।
তিথিঃকিন্তু…
রূপঃপ্লিজ! তুমি জানো আমি কখনো কাউকে রিকুয়েস্ট করিনি। তুমিই…
তিথিঃকখন দেখা করতে হবে।
রূপঃবিকেল ৪টায়।
তিথিঃওকে।
রূপঃআমি পিক করে নেবো।
তিথিঃওকে।
রূপ ফোন কেটে সামনের তিথির বড় একটা ছবির দিকে তাকালো। এই ছবিটা রূপের লোক লুকিয়ে তুলেছিলো। আরো অনেক ছবিই আছে বাট এই ছবিতে রূপের তিথির স্মাইলটা ভালো লেগেছিলো তাই ছবিটা বড় করে এনে রুমে লাগিয়ে রাখে। সবসময় দেখার জন্য। কিন্তু এখন তো এই ছবি দেখারও অধিকার রূপের নেই। ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রূপ।
রূপ আরো কিছুক্ষণ পর নিচে গেলো। রূপকে দেখে অর্পির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সারাদিন চোখ দুটু শুধু রূপকেই খুজঁছিলো। আর এখনও রূপের কথা ভেবেই রান্না করেছে অর্পি। অর্পি আস্তে আস্তে হেটে রূপের সামনে গিয়ে দারালো।
অর্পিঃখাইবেন?
রূপঃহুম।
অর্পিঃআসেন।
রূপঃমম ড্যাড দাদি ওরা কোথায়।
অর্পিঃআমি ডাইক্কা আনতাছি।
অর্পি রূপের বাবার রুমে সামনে গেলো। গিয়ে বললো,”বড়সাহেব খাইবেন না।”
রূপের মা বিরক্ত হয়ে রূপের বাবার দিকে তাকালেন। রূপের বাবা রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,”কি হয়েছে?”
অর্পিঃখাইবেন না বড়সাহেব। ছোটসাহেব আইয়া পরছেন।
রূপের বাবাঃবলেছি না আমাকে একদম এসব ডাকবে না। বাবা ডাকবে।
অর্পিঃভুল হইয়া গেছে।
রূপের বাবাঃআর যেনো ভুল না
হয়।
অর্পিঃআইচ্চা”
রূপের বাবাঃতুমি যাও। আমরা আসছি।
অর্পি নিচে চলে এলো। কিছুক্ষণ পর রূপের বাবা মা দাদিও এলেন। এসে বসলেন। অর্পি নিজে হাতে খাবার সার্ভ করছে।
রূপের মা এসব খাবার দেখে রেগে বললেন,”এসব কি রান্না হয়েছে আজ। আমি এসব খাই না জানো না তোমরা।”
সার্ভেন্ট ভয়ে ভয়ে বললো,”আজ আমি রান্না করি নি ম্যাম।”
রূপের মাঃতাহলে কে রান্না করেছে?
সার্ভেন্টঃএই মেয়েটা।
রূপ খাবার মুখে দিয়ে অবাক হয়ে অর্পির দিকে তাকালো।
রূপঃএগুলো তুমি রান্না করেছো?
অর্পি কাদতে কাদতে বললো,”খাবার ভালো হয় নাই? বিশ্বাস করেন আমি ইচ্ছা কইরা এরকম করি নাই। আমি…”
রূপঃআরে স্টপ। রান্না খুব ভালো হয়েছে। আর মম একদিন এসব খেলে কিছুই হবে না খেয়ে দেখো অনেক টেষ্টি।
রূপের বাবাঃরীধি প্লিজ কোনো সিনক্রিয়েট না করে খেয়ে নাও। মেয়েটা প্রথম রান্না…
রূপের মা রেগে বললেন,”তুমি জানো না আমি এসব খাবার খাই না রাতে। আর এই মেয়েটাকে কে বলেছে রান্না করার জন্য।”
রূপের বাবাঃআমি বলেছি।
দাদিঃবউমা খাবার তো ভালোই হয়েছে। তাহলে সমস্যা কোথায়।
রূপের মাঃভালো যখন তো আপনিই খান। আমি খাবো না।
রূপের মা রেগে উঠে চলে গেলেন। অর্পি উনার রাগ দেখে আর না খাওয়া দেখে কেদে দিলো। ও তো জানতো না উনি এসব খাবার খান না।
রূপের বাবাঃআরে তুমি খাদছো কেনো? রীধি এমনই। খিদে লাগলে এমনি খেয়ে নেবে। তুমি একদম মন খারাপ করবে না।
অর্পিঃআমার লাগি উনি…
রূপঃখাবার টাইমে বেশি কথা বলা আমি পছন্দ করি না। তুমি চুপচাপ খেয়ে নাও এখন বকবক না করে।
অর্পি রূপের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো। আর একটা প্লেটে খাবার বেরে নিচে বসে পরলো।
অর্পি খাওয়া শেষে রূপের মায়ের জন্য একটা প্লেটে খাবার সাজিয়ে রুমে গেলো।
অর্পিঃমা আইবো।
রূপের মা দরজায় অর্পিকে দারিয়ে থাকতে দেখে রেগে গিয়ে বললেন,”একদম এসব ডাকবে না আমায়। আমার একটাই ছেলে। বুঝেছো? কোনো থার্ড ক্লাস মেয়েকে আমি আমার মেয়ে বানাবো না। ম্যাম বলে ডাকবে আমায়।”
অর্পিঃআইচ্ছা ম্যাম আইবো?
রূপের মাঃএকদম রুমে আসবে না। এখান থেকে চলে যাও।
অর্পিঃরাগ তো আমার উপরে। খাবারের উপরে রাগ করতাছেন ক্যান? খাইয়া নেন না।
রূপের মাঃএই মেয়ে তোমাকে কে বলেছে আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতে। চলে যাও এখান থেকে।
অর্পিঃআপনে খাইয়া নেন। আমি চইল্লা যামু।
রূপের মা চোখ গরম করে অর্পির দিকে তাকিয়ে বললেন,”মাথা গরম করাবে না বলছি। চলে যাও এখান থেকে।”
অর্পিঃনা যামু না।
অর্পির কথা শেষ হতেই ভাতের প্লেটটা টাস করে ফেলে দেন। দিয়ে চিৎকার করে বলেন,”এক্ষণি এখান থেকে চলে যা। তকে সহ্য করতে পারছি না আমি। আর একটা কথা বললে তকে এই বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।”
অর্পি উনার চিৎকার শুনে ভয়ে কেপে উঠে। তারপর কাদতে কাদতে চলে যায় রুমে। উনার চিৎকার শুনে রূপ রূপের বাবা চলে আসেন।
রূপের বাবাঃকি হয়েছে?
রূপের মাঃঐ মেয়েটাকে বারণ করে দেবে আমার সামনে না আসার জন্য। নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।
রূপ নিচে একবার তাকিয়ে ওর রুমে চলে গেলো। রূপের বাবা সার্ভেন্ট দিয়ে রুমটা ক্লিন করিয়ে নিলেন। রূপের মায়ের রাগটা একটু বেশিই। উনার এই রাগকে রূপের বাবা নিজেও খুব ভয় পান।

চলবে…..