#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ৩২

0
534

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ৩২
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️

_________________

হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে অথৈ নীরবের দিকে, কারন সাইকেলে করে আসা ছেলেটা আর কেউ নয় আমাদের নীরব। অথৈ কল্পনাও করতে পারে নি এই মুহূর্তে এইখানে নীরব থাকবে। জাস্ট হা দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। তাঁর বিশ্বাসই হচ্ছে না এখানে সত্যি সত্যি নীরব এসেছে।’

এদিকে,

অথৈর মতো নীরবও বেশ অবাক হয়েছে অথৈকে দেখে। সে ভাবতেও পারে নি এখানে অথৈ থাকতে পারে। নীরবও অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে রইলো অথৈর দিকে। আর এই তাকিয়ে থাকাটাই তাঁর জন্য একটা বাজে ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো কারন নীরব অথৈকে দেখতে এতটাই মগ্ন ছিল যে, সে যে সাইকেল চালাচ্ছে এটাই ভুলে গেছে। আর এই ভুলে যাওয়ার কারনে ধারাম করে সাইকেল নিয়ে নিচে পড়ে গেল নীরব।’

নীরবকে পড়ে যেতে দেখে অথৈ হাসবে না কাঁদবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। সে জাস্ট অবিশ্বাস্য চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে নীরবের দিকে। যেন রিপিট টেলিক্যাস্ট হচ্ছে এমন কিছু। হঠাৎই অথৈর হুস আসতেই আস্তে আস্তে চলে যেতে লাগলো সে।’

অন্যদিকে অথৈ চলে যাচ্ছে বিষয়টা দেখতেই নীরবও চটজলদি উঠে যেতে চাইলো কিন্তু পড়ে গিয়ে তাঁর পা টা খুব বাজে ভাবে আঁটকে পড়েছে সাইকেলের সাথে। এই মুহূর্তে এই রাস্তাটাকে গালি ছাড়া আর কিছুই দিতে ইচ্ছে করছে না নীরবের। এই রাস্তাটা তাঁর জন্য খুব বাজে নীরবের মনে আছে এর আগেও বহুবছর অাগে একবার এই রাস্তাটায় সাইকেল নিয়ে পড়েছিল সে। আর তখনও অথৈর মতো একটা মেয়ে দেখেছিল তাঁকে। শুধু অথৈ তো তাকে দেখে নিরালায় হেঁটে গেল। কিন্তু সেই মেয়েটা হাসতে হাসতে হেঁটে গিয়েছিল। সেদিন ভীষণই রাগ হয়েছিল নীরবের। এমন সময় নীরবের দিকে দৌড়ে আসলো তাঁর ছোট বেলার পুরনো বন্ধু রবিন। নীরবের অবস্থা দেখে বললো সে,

‘ আরে পড়ে গেলি কি করে?’

‘ চোখে ধুলো ঢুকে গিয়েছিল তাই ব্যালেন্স সামলাতে না পেরে পড়ে গেছি এখন আমায় উঠা তাড়াতাড়ি।’

‘ হুম,

বলেই চটজলদি রবিন সাইকেলটাকে উঠালো নীরবের উপর থেকে। পায়ে কিছুটা ব্যাথা পেয়েছে নীরব। রবিন নীরবকে ধরে নিয়ে বসালো সামনে থাকা একটা বেঞ্চে তারপর বললো,

‘ ভাগ্যিস অথৈ বলেছিল আমায় তাই তো দৌড়ে আসলাম এখানে?’

‘ তুই চিনিস ওই মেয়েটাকে?’

‘ হুম চিনবো না কেন ও তো লিলির চাচাতো বোন। আরে তোর মনে নেই ও আর তুই তো ছোট বেলায় একসাথে মাছ ধরতি তারপর ওই যে মনে আছে আমের ঘটনাটা মালিক চলে আসায় তুই ওর হাত ধরে দৌড়ে ছিলি।’

এবার যেন নীরব চরম বেগে অবাক তার মানে সেদিনের সেই তাঁকে দেখে হাসা মেয়েটা অথৈ ছিল। নীরব অবাক হয়ে বললো রবিনকে,

‘ ওহ!’ আমি তো ওর কথা একদমই ভুলে গিয়েছিলাম জাস্ট মনে পড়েছিল।’

‘ ভুলে যাওয়ারই কথা কত বছর আগের কথা বলতো।’

‘ হুম তা অবশ্য ঠিক আমার যতদূর মনে পড়ে ছোট বেলায় ও চশমা পড়তো না।’

‘ হুম আগে পড়তো না এই কয়েক বছর আগে থেকেই পড়া শুরু করেছে এখন চল বাড়ি যাই কাল আবার লিলির গায়ে হলুদের অনেক কাজ আছে,৷ আর তখনই না হয় তোর সাথে অথৈর পরিচয় করিয়ে দিবো।’

নীরবের কথা শুনে মনে মনে খুব খুশি হলো নীরব আস্তে আস্তে বসা থেকে উঠে হাঁটতে হাঁটতে বললো সে,

‘ তুই বললি ও নাকি আমার কথা তোকে বলেছে কিন্তু ও বুঝলো কিভাবে আমি তোর ফ্রেন্ড?’

‘ আরে ওই তোকে খুঁজতে খুঁজতে এদিকে আসছিলাম তখন আমি ওঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কোনো চশমা পড়া ছেলেকে দেখেছে কি না আর তখনই ও বললো তুই নাকি ঠ্যাং উল্টে সাইকেল নিয়ে পড়ে গেছিস।’

‘ কি ঠ্যাং উল্টে কোথায় পড়লাম পরলাম তো..

বলতে গিয়েও থেমে গেল নীরব। নীরবকে চুপ হতে দেখে বললো রবিন,

‘ কি হলো থেমে গেলি যে?’

‘ না কিছু না।’

উওরে হাল্কা হাসলো রবিন। রবিনকে হাসতে দেখে বললো নীরব,

‘ তুই হাসছিস কেন?’

‘ না কিছু না।’

‘ 😒😒😒

নীরবের চাহনী দেখে রবিন কিছু না বলে হাসতে হাসতে চলে গেল। আর নীরব শুধু রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো রবিনের মুখের দিকে।’

____

রাত_৮ঃ০০টা…

হসপিটালের কাজ সেরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে আস্তে আস্তে হসপিটাল থেকে বের হলো আহি। এরই মধ্যে তাঁর চোখ যায় আদ্রিয়ানের গাড়ির দিকে। আহি বেশ খানিকটা অবাক হয়েই এগিয়ে গেল আদ্রিয়ানের গাড়ির দিকে সে ভাবে নি আদ্রিয়ান সত্যি সত্যি এখানে আসবে।’

গাড়ির সিটে বুকে দু’হাত বেঁধে ঘুমিয়ে আছে আদ্রিয়ান। বেশ অনেকক্ষন আগেই এখানে এসেছে সে। শরীরটা হাল্কা ক্লান্ত থাকায় সাথে আহির জন্য অপেক্ষা করতে করতে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ে আদ্রিয়ান।’

গাড়ি জানালা থেকে উঁকি মারতেই আদ্রিয়ানকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে এখন ঠিক কি করবে আহি বুঝতে পারছে না ডাকবে নাকি না ডেকেই চলে যাবে। কি করবে না করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আহি। একবার কি ডাকা উচিত তাঁর চরম বিরক্ত লাগছে আহির। আনমনেই আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ আচ্ছা আমি যদি না ডেকেই চলে যাই তাহলে কি উনি রাগ করবে, কিন্তু ডেকেই বা কি বলবো
উফ্ মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমার।’

বলেই মাথা ঝাঁকানি দিল আহি। এরই মধ্যে হাল্কা নড়ে চড়ে উঠলো আদ্রিয়ান। পরক্ষণেই আস্তে আস্তে চোখ খুললো সে। চোখ খুলেই গাড়ির বাহিরে আহিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো সে,

‘ তুমি এসেছো?’

হুট করেই আদ্রিয়ানের কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা চমকে উঠলো আহি তক্ষৎনাত আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ হুম হ্যাঁ।’

‘ ভালো করেছো সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, গাড়ির ভিতর আসো?’

উওরে আহিও আর বেশি কিছু না ভেবে চলে যায় গাড়ির অন্যদিকে। তারপর গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে বসে সিটব্লেট লাগিয়ে বললো সে,

‘ আমার জন্য অপেক্ষা কেন করছিলেন?’

উওরে আদ্রিয়ান কিছুক্ষন চুুপ থেকে বললো,

‘ লং ড্রাইভে যাবে?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহি বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ মানে?’

_____

রাতের জোৎসা ভরা আলোতে নিজের রুমে বসে আছে শুভ। সামনেই টিভিতে একটা মুভি চলছে কিন্তু আপাতত শুভর সেই মুভির দিকে কোনো নজর নেই সে মগ্ন তাঁর রিনিকে নিয়ে, সাথে তাঁর অনুভূতিগুলো নিয়ে। শুভ বুঝতে পারছে না রিনির মাঝে এমন কি দেখলো সে যার জন্য রিনির কথা ভাবা ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগছে না তাঁর। শুভর এখনো মনে আছে প্রথম যখন তাঁর সাথে রিনির দেখা হয়েছিল তাও ঝগড়ার মাধ্যমে ভার্সিটি বসে। সামান্য ‘আপু’ ডাকায় কিভাবে রেগে গিয়েছিল সে। সেদিন সত্যি রিনিকে দেখে ভিষণ ভয় পেয়েছিল শুভ। আনমনেই আসলো শুভ। এমন সময় হসপিটাল থেকে ফোন আসলো শুভর। ফোনের শব্দেই ধ্যান ভাঙলো তাঁর। শুভ চটজলদি ফোনটা তুলে অপর পাশে কিছু শুনতেই বলে উঠল,

‘ আমি এক্ষুনি আসছি?’

বলেই চটজলদি টিভি অফ করে টিশার্টের ওপর একটা শার্ট পড়ে গাড়ি করে বেরিয়ে গেল সে বাড়ি থেকে।’

____

খোলা আকাশের নিচে শহর থেকে কিছুটা দূরে একটা উঁচু রাস্তার পুলের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে আহি। আর তাঁর পাশেই গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। কিছুক্ষন আগেই এখানে এসেছে তাঁরা। সাধারণত এখানে আসার মূল কারণ হলো সকালে আহির মন খারাপের জন্য। মুক্ত বাতাস বইছে চারপাশে, এখান থেকে পুরো শহরটাকে খুবই ছোট আর সুন্দর দেখাচ্ছে। পুরো শহরটাই যেন আলোকিত দেখাচ্ছে এখান থেকে। যেন খোলা আকাশের মাঝে তাঁরারা চিক চিক করছে নিচে, উপরে সত্যি কারে আকাশে তাঁরারা জ্বল জ্বল করছে আর নিচে শহরটা বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক আলোতে আলোকিত হওয়া বাতিতে চক চক করছে।’

আহি চোখ বন্ধ করে জোরে এক নিশ্বাস ফেললো। এরই মাঝে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালো আদ্রিয়ান আনমনেই বলে উঠল সে,

‘ জায়গাটা সুন্দর না?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহি চোখ বন্ধ করেই বললো,

‘ হুম খুব।’

‘ আমার যখন খুব মন খারাপ হয় তখন আমি এখানে এসে দাঁড়াই, এখানে আসলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। সকালে তোমার মন খারাপ ছিল তাই ভাবলাম তোমাকেও এখানে একবার নিয়ে আসি হয়তো তোমারও মন খারাপ চলে যাবে।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে হাল্কা হেঁসে বললো আহি,

‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ সত্যি জায়গাটা খুব সুন্দর। আমার খুব পছন্দ হয়েছে।’

উওরে মুচকি হাসলো আদ্রিয়ান। তারপর বললো সে,

‘ একটা জিনিস ট্রাই করবে দেখবে তোমার ভালো লাগবে?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে ভ্রূ কুঁচকে বললো আহি,

‘ সেটা কি?’

আহির কথা শুনে আহির কিছুটা কাছে এগিয়ে কিছু বললো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো আহি,

‘ না না এটা সম্ভব নয়।’

‘ আরে ট্রাস্ট মি, এখানে তুমি আমি ছাড়া আর কেউ নেই ট্রাই তো করে দেখো।’

‘ কিন্তু?’

‘ কোনো কিন্তু নয় একবার চেষ্টা তো করো, দেখবে মনটা হাল্কা লাগবে?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহিও আস্তে আস্তে রেলিংয়ের দিকে ঘুরে আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে এক চিৎকার দিয়ে বললো,

‘ নীরব ভাইয়া আমি তোমায় ভুলে যাবো দেখে নিও, তোমার প্রতি আমার থাকা যত অনুভূতি ছিল সবকিছুকে ভুলে গিয়ে আবারো নতুন করে সবকিছু শুরু করবো। তোমায় নিয়ে ঘেরা আমার সেই ‘বাবুইপাখির অনুভূতি’ গুলোকে ভুলে নতুন করে জীবনটাকে সাজাবো আমি। আর তুমিও ভালো থেকো।’

এইরকম নীরব কানেক্টেড আরো অনেককিছু চেঁচিয়ে বললো আহি। আর আদ্রিয়ান শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো আহির দিকে। এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে তার ভিতর। আদ্রিয়ান নীরবেই রেলিংয়ের দিকে ঘুরে তাকালো আকাশ পথে। আকাশের তাঁরারা জ্বল জ্বল করছে তাদের দিকে কিছু ভাবলো আদ্রিয়ান।’

‘ মন খারাপ, ভালো লাগা, আনন্দে থাকা, দুঃখ কষ্ট সবকিছু নিয়েই তো জীবন। আর এই জিনিসগুলোকে সময়ের সাথে সাথে উপভোগ করতে পারলেই জীবনকে খুব সুন্দর মনে হবে।’

ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আদ্রিয়ান।’

বেশ কিছুক্ষন পর,

আদ্রিয়ান আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ এবার তবে যাওয়া যাক?’

উওরে আহিও উৎসাহের সাথে হাসিমাখা মুখ নিয়ে বললো,

‘ হুম।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here