#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ৪৭

0
525

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ৪৭
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আহি, আদ্রিয়ান শুভ আর রিনির মুখের দিকে। হঠাৎই তাদের হুস আসতেই এঁকে অপরকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো দুজন। তারপর কিছুটা অপ্রস্তুত কন্ঠ নিয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ তোরা চলে এসেছিস?’

‘ হুম ভাইয়া কিন্তু ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই যে এমন সিনেমাটিক ঘটনা দেখবো এটা তো ভাবি নি আমরা।’

শুভর কথা শুনে আদ্রিয়ান ওদের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

‘ আরে তোরা যা ভাবছিস তেমন কিছুই নয় ও পড়ে যেতে নিয়েছিল আমি জাস্ট হেল্প করেছি এই আর কি?’

‘ হুম বুঝতে পারছি ভাইয়া (রিনি)

‘ আরে সত্যি বলছি।’

‘ তা আমি কখন বললাম আপনি মিথ্যে বলছেন ভাইয়া।’

বলেই হাসতে হাসতে এগিয়ে গেল রিনি আহির কাছে। আর আদ্রিয়ান কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো শুভকে,

‘ তোরা বিশ্বাস করছিস না কেন?’

আদ্রিয়ানের অবস্থা বুঝতে পেরে শুভ আদ্রিয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

‘ আমরা বিশ্বাস করেছি ভাইয়া এখন তুমি বলো আমার জিনিসপত্রগুলো গাড়িতে আছে কোথায় এনে রাখবো?’

‘ উপরে রাখ আমার রুমে পাশেই আর একটা রুম আছে তুই ওখানেই থাকবি।’

‘ ঠিক আছে ভাইয়া।’

বলেই উপরে যেতে নেয় শুভ। শুভকে যেতে দেখে বলে উঠল আহি,

‘ এখন ওসব রাখো আগে খাবে এসো,আমি নিজ হাতে রান্না করেছি।’

আহির কথা শুনে রিনি অবাক হয়ে বললো,

‘ তুই নিজ হাতে রান্না করেছিস?’

‘ হুম। খাবি চল?’

বলেই রিনিকে নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো আহি ডাইনিং টেবিলের কাছে কিছুদূর এগিয়েই বলে উঠল সে আদ্রিয়ানকে,

‘ আপনিও আসুন আপনার জন্যই তো রান্না করা আর শুভ ভাইয়া তুমিও আসো সবাই মিলে একসাথে লাঞ্চ করবো।’

আহির কথা শুনে শুভ প্রচন্ড খুশি হয়ে বললো,

‘ আমায় পাঁচ মিনিট সময় দেও আমি এক্ষুনি হাত মুখ ধুয়ে আসছি?’

‘ ঠিক আছে ভাইয়া তাড়াতাড়ি এসো।'(আহি)

উওরে শুভও বেশি দেরি না করে চটজলদি চলে যায় সে উপরে।’

___

ডাইনিং টেবিলের সামনে বসে আছে আদ্রিয়ান আর রিনি। আর ওদের খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে আহি। এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত হলো শুভ, গিয়ে বসলো সে আদ্রিয়ানের পাশ দিয়ে। শুভ বসতেই আহি চলে যায় শুভর কাছে তাঁকে খাবার বেড়ে দিতে লাগলো সে। অন্যদিকে রিনি শুধু তাকিয়ে আছে আহির মুখের দিকে, তাঁর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না আহি এত কিছু রান্না করেছে আদ্রিয়ানের জন্য। মনে মনে ভীষণ খুশিও হয়েছে রিনি যেন নতুন ভালো কিছু হওয়ার আভাস পেয়েছে সে। হঠাৎই রিনির মাথায় একটা চাটি মেরে বললো আহি,

‘ তোর আবার কি হলো মিটমিটিয়ে হাসছিস কেন?’

‘ না তেমন কিছু নয়।’

‘ হুম বুঝতে পারছি সদ্য সদ্য প্রেমে পড়লে যা হয় আর কি।’

‘ মোটেও তেমন কিছু নয়।’

‘ হুম বুঝি বুঝি এহন কি আর খাই সুজি, তাই একটু হলেও আমরাও বুঝি।’

‘ কচু বুঝোস তুই।’

আহি আর রিনি কান্ড দেখে হেঁসে ফেললো আদ্রিয়ান আর শুভ। হঠাৎ আদ্রিয়ানও বলে উঠল আহিকে,

‘ তুমিও খেতে বসো আহি?’

‘ হুম বসছি, আগে বলুন খাবার কেমন হয়েছে?’

আহির কথা শুনে শুভ বলে উঠল,

‘ খুব সুন্দর।’

সাথে সাথে খুশি হয়ে গেল আহি। তারপর সেও খুশি মনে বসে পড়লো চেয়ারে। যাক এতক্ষণ কষ্ট করাটা বৃথা যায় নি তাঁর। তারপর চারজনই হাসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে দিলো দুপুরটা। আজকের দুপুরটা সত্যি খুব স্পেশাল আদ্রিয়ান আর শুভর কাছে। কারন বহুবছর পরই তাঁরা এইভাবে একসাথে ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। সত্যি আজকের সময়টা যেন খুবই সুন্দর।’

অবশেষে দুপুর পেরিয়ে কখন যে বিকেল হয়ে গেল বুঝতেই পারে নি কেউ।’ বিকেলের কার্নিশ বেয়ে মৃদু বাতাস বইছে চারপাশে, সোনালি রোদ্দুরেরাও পাড়ি জমিয়েছে দূরে। এসবের মাঝেই নিচের রুমে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে আহি আর রিনি। কারন এখন তাঁরা দুজনই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। সোফায় চুপচাপ বসে আছে আদ্রিয়ান, আহি চলে যাবে বিষয়টাতে তার ভিষনই খারাপ লাগছে সে চাই না আহি এক্ষুনি চলে যাক। কিন্তু কি করার ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো সে। আহি শুভর সাথে কিছুক্ষন কথা বলে এগিয়ে আসলো আদ্রিয়ানের কাছে। তারপর বললো,

‘ আমি চলে যাচ্ছি ভালো থাকবেন, শুনুন বাহিরের খাবার খুব বেশি খাবেন না। আর হ্যাঁ আমি মাঝে মধ্যে ফোন করবো নিশ্চয়ই৷ এছাড়া কোনো অসুবিধা হলে নিশ্চয়ই বলবেন আমায়।’

উওরে আদ্রিয়ানও মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হুম আর থ্যাংক ইউ আহি।’

‘ থ্যাংক ইউর কোনো প্রয়োজন নেই যা হয়েছে তাঁর জন্য আমি দায়ী ছিলাম এর জন্য আই এক্সট্রিমলি সরি।’

‘ সরির কোনো প্রয়োজন নেই আহি, ভালো থেকো।’

‘ আপনিও ভালো থাকবেন। আর আপনার যদি সময় হয় বলবেন আমায় মা বলেছিল আপনায় বাড়ি নিয়ে যেতে।’

‘ আমার হয়তো সময় হবে না বলো তোমার মাকে।’

‘ ঠিক আছে।’

এরই মধ্যে রিনি এসে বললো আহিকে,

‘ এখন তাহলে যাওয়া যাক আহি?’

‘ হুম চল,

বলেই আর একবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ চলে যাচ্ছি আবারো বলছি ভালো থাকবেন, আর সময় হলে বলবেন প্লিজ।’

‘ ঠিক আছে আহি।’

উওরে আহি আর কিছু বলে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। ওদের পিছন পিছন শুভও গিয়েছিল যাই নি শুধু আদ্রিয়ান।’

_____

রাত_১০টা,

নিজের রুমে বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে আহি। কারন সে ঘুমাতে পারছে না,চোখ বন্ধ করলেই শুধু আদ্রিয়ানের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা বার বার চোখের সামনে ভেসে আসছে তাঁর। চরম প্রকার বিরক্ত নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো আহি। সে উড়ে বসতেই নিচে থাকা তাঁর খরগোশ ছানাটাও লাফ মেরে উঠলো খাটে। আহি খরগোশ ছানাকে কোলে নিয়ে বলতে শুধু করলো,

‘ তুই ও ঘুমাস নি আমার মতো, আজ ঘুম কিছুতেই আসছে না বুঝলি বার বার আদ্রিয়ানের কথা মনে পড়ছে, জানিস উনি না রাতে আমায় জড়িয়ে না ধরে ঘুমালে ঘুমাতেই পারতো না। কি জানি আজ রাতে আমায় ছাড়া ঘুমাতে পারবে কিনা।’

বলেই বিছানা ছেড়ে নেমে খরগোশ ছানাকে বিছানা উপর রেখেই এগিয়ে গেল সে বেলকনির দিকে। আকাশের দিকে তাকাতেই সূর্যের আলোতে উজ্জ্বল হওয়া চাঁদ মামার ফেসটা দেখলো আহি। ছোট দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো সে,

‘ আই মিস ইউ আদ্রিয়ান, আচ্ছা আপনি কি আমায় মিস করছেন না?’ আপনি তো আমায় ভালোবাসেন নাকি তাহলে মিস তো করা উচিত তাই না। আচ্ছা আমি আপনায় নিয়ে ভাবছি কেন বলুন তো?’

বলেই বেলকনির দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইলো আহি। ভালো লাগে না তাঁর কিন্তু আহি বুঝতে পারছে না তাঁর ভালো কেন লাগছে না। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো সে, হয়তো কিছুদিনের একসাথে থাকায় মায়া পড়ে গেছে তাঁর আদ্রিয়ানের ওপর। কিছুদিন পর হয়তো এমনি এমনি ঠিক হয়ে যাবে সব।’

অন্যদিকে,

নিজের রুমের থাইগ্রাসের পাশ দিয়ে চুপচাপ চেয়ারে বসে আছে আদ্রিয়ান। আর তাঁর বিছানার একপাশ দিয়ে বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে শুভ। অনেকক্ষণ আগেই সে এসেছে আদ্রিয়ানের রুমে ঘুমাতে। আদ্রিয়ানও বারন করে নি। মনটা ভালো নেই আদ্রিয়ানের, সাথে চোখে ঘুমও নেই তার আদ্রিয়ান এটাও জানে না আধও আজ রাতে ঘুম আসবে কি না তাঁর?’ এই একসপ্তাহ যেন আদ্রিয়ানের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রাত ছিল কারন এই এক সপ্তাহ সে নিশ্চিতে ঘুমাতে পেরেছিল। আদ্রিয়ান জানে না তাঁর আর আহির ভবিষ্যত কেমন হবে যেখানে আহি তাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে। আচ্ছা তাঁর কি উচিত আর একবার আহির কাছে তার ভালোবাসার দাবি নিয়ে যাওয়া। এমনও তো হতে পারে এবার আর আহি তাঁকে রিজেক্ট করবে না। এই রকম নানা কিছু ভাবতে লাগলো আদ্রিয়ান। রাতের জোৎসা ভরা আলোতে শীতল মেশানো বাতাস বইছে বাহিরে, বাতাসে আদ্রিয়ানের সামনে থাকা সাদা পর্দাটাও দুলছে খুব। চাঁদ মামাটাও জ্বল জ্বল করছে বাহিরে। আকাশে তেমন তাঁরা নেই আজ হাতে গুনে চার পাঁচ হবে হয়তো। চারপাশ পুরোই নিঝুম।’

আর প্রকৃতির এই নির্জন মায়ার ভিড়েই দুটি মানুষ আজ নির্ঘুম কাটাবে হয়তো সারারাত। কারন দুজনই যে তাদের নিজেদের স্মৃতি স্মরণ করতে ব্যস্ত।’

____

পরেরদিন খুব সকালে কথা মতো ট্রেনে করে বেরিয়ে পড়লো আহি আর রিনি অথৈদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।’

আর বলতে না বলতে কয়েক ঘন্টা পরই তাঁরা পৌঁছে গেল অথৈদের বাড়ির সামনে।’

বাড়ির কলিং বেল বাজতেই অথৈ এসে দরজা খুলে দিলো সামনেই রিনি আর আহিকে দেখে চরম প্রকার অবাক হয়ে বললো সে,

‘ তোরা?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। আজকের পার্টটা হয়তো একটু ছোট হয়েছে, বাসায় কারেন্ট নেই গরমের মধ্যে আর লিখতে ইচ্ছে করছে না,পরেরবার বড় করে দিবো ইনশাআল্লাহ]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here