রাজকন্যা হূরিয়া পর্ব-২৩

0
306

#রাজকন্যা_হূরিয়া🌺
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
২৩•

“সুফি!”

রাজকন্যার গলার আওয়াজ পেতেই চিঁহি চিঁহি করে ছুটে এলো সুফি। রাজকন্যাও এগিয়ে গেলো তার পানে। সুফির সাদা শরীরে লাল র/ক্তে/র ছোপ ছোপ দাগগুলো শুকিয়ে আছে। রাজকন্যা হাত বুলালো সেখানে।

রাজকন্যা ফেরত না আসায় সুফি প্রবেশ করেছিলো সেই জঙ্গলে। আর রাজকন্যাকে খুঁজতে গিয়েই তার শরীরের এই দশা।

“সুফি এখানে কি করে এলো?”

প্রশ্ন করলো রাজকন্যা। আয়াস মুখ উঁচিয়ে তাকালো। একপলক সুফিকে দেখতেই তার মনে পড়লো সেদিন রাতের সেই মুহুর্তের কথা। যেদিন প্রথমবার রাজকন্যা আর তার দেখা হয়েছিলো খোলা প্রান্তরে। রাজকন্যা তাকে অধম বলে ডেকেছিলো। নানাবিধ কথার একপর্যায়ে রাজকন্যা যখন চলে যাচ্ছিলো তখন একবারের জন্য তার মনে হয়েছিলো এই কন্যা আর কেউ নয়, রাজকন্যা হূরিয়াই হবে।

ভাবনার ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো আয়াস। ছোট্ট করে একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“আমি নিয়ে এসেছি।”

“কিন্তু ওকে আপনি পেলেন কোথায়?”

“আপনাকে খুঁজে না পেয়ে আমি প্রথমে ঐ জঙ্গলটাতেই আসি যেখানে আব্বাজানের বন্ধু নাজিমউদ্দীন ছিলেন। আমি জানতাম আপনি কোথাও গেলে এখানেই আসবেন। আর যখন আপনাকে খুঁজতে কুটিরে যাই তখন দেখতে পাই আপনার ঘোড়াকে। পাগলের মতো ছোটাছুটি করছিলো জঙ্গলের ভেতর। ওকে এই অবস্থায় দেখে ঠাওর করে নিয়েছিলাম হয়তো আপনি..”

রাজকন্যা পেছন মুড়ে তাকালো আয়াসের দিকে। রাজকন্যা ফিরে তাকাতে আয়াসের গলার আওয়াজ ওখানেই বন্ধ হলো। আয়াস শুঁকনো গলায় ঢোক গিললো। রাজকন্যা হঠাৎ তাচ্ছিল্য করে হাসলো। আহত স্বরে আওড়ালো,

“আমায় বন্দী করে এখানে নিয়ে আসার কথা আপনার ছিলো। তাই না?”

আয়াস বিষাদে তলিয়ে গেলো। মানুষের জীবনের বাস্তবতা এতো কঠিন কেন হয়? রাজকন্যার সহজ সরল প্রশ্নটায় তো এক রত্তিও ভুল নেই। এটাই তো তার উদ্দেশ্য ছিলো! সেই শুরু থেকে শেষ অব্দি। তবে কেন হঠাৎ এতো কষ্ট হচ্ছে সামান্য এক বিষয় নিয়ে। কষ্ট হওয়ার কারন কি?

“নিয়তি কত নিষ্ঠুর! চিন্তা করবেন না,আজ থেকে আপনার আর আমার পথ আলাদাই হবে। আপনি আপনার আব্বাজানের হুকুম পালনে পূনরায় নিয়োজিত হতে পারবেন। কেউ আর আপনার বাঁধা হবেনা। কেউ হবেনা। এমনকি রাজকন্যাও নয়।”

রাজকন্যা আবারও বলল। তার কন্ঠনালি কেমন কেঁপে কেঁপে আসছিলো। আয়াস আঁটকে রাখা দমটা ছেড়ে দিলো সন্তর্পণে। অপরাধী গলায় বলার চেষ্টা করলো,

“আমাদের এবার যাওয়া উচিৎ রাজকন্যা। এই ডেরায় বেশিক্ষন থাকাটা আমাদের জন্য ঠিক হবেনা। বিপদ চারিদিকে বিষাক্ত সাপের ন্যায় ফ্যানা ধরে আছে। সুযোগ পেলেই ছোবল মেরে দিতে দু’বার ভাববে না।”

রাজকন্যা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আর কথ বাড়ালো না। কয়েকমুহুর্ত আয়াসের মুখ পানে তাকিয়ে থেকে উঠে পড়লো সুফির পিঠে। আয়াসও আর দাঁড়িয়ে রইলো না। রাজকন্যার পেছনে উঠে বসলো সেও। রাজকন্যা সুফির পিঠ চাপড়ে দিতে ধীরে ধীরে পা বাড়ালো সুফি। ডাকাতদের ডেরা পেরিয়ে বাইরে আসতেই হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো সুফি। রাজকন্যা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো সুফির দিকে। সুফি দাঁত খিঁচিয়ে ডেকে উঠলো। এবার অবাক হয় আয়াসও।

“সুফি, কি হলো তোমার? আমাদের দেরী হচ্ছে..”

সুফি আবারও ডাকে। রাজকন্যা বিরক্ত হয়। গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে আয়াসের উদ্দেশ্যে বলে,

“সুফি ক্ষুধার্ত। তাই চলতে পারছেনা।”

আয়াস কিছু বলল না। আস্তে করে নেমে পড়লো। রাজকন্যাও নেমে পড়তে চাইলো। কিন্তু বাঁধ সাধলো আয়াস,

“আপনাকে নামতে হবেনা। আপনি বসুন। সামনে কয়েকটা মাঠ আছে। সুফিকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”

“ওর কষ্ট হচ্ছে আমার ভারে। আমার নেমে পড়াই শ্রেয়।”

“আমি বলছি তো। বসুন আপনি। একবার নিজের অবস্থাটাও দেখুন দয়াকরে।”

আয়াসের কন্ঠে অধিকার বোধ পেলেই বুকটা কাঁপে রাজকন্যার। মনটা কেমন ভেঙে আসে। হঠাৎই বলে বসে,

“মানুষ কেবল শরীরের ক্ষতই দেখে, মনের ক্ষত দেখার সাধ্য এই ধরণীর কারোর নেই।”

আয়াস থমকায়। তার বুকের ভেতর টা ছ্যাঁত করে পোড়ে। কিন্তু কোনো জবাব দিতে পারেনা। আজ তার জবাবের ভান্ডারে শূন্য। একদম শূন্য।

রাজকন্যা আর নামেনা। মনে শত রাগ,অভিমান চেপে রেখেই মেনে নেয় আয়াসের কথা। চুপটি করে বসে থাকে সুফির পিঠে। আয়াস সুফিকে নিয়ে এগিয়ে চলে মাঠের দিকে। মাঠের এক প্রান্তে এসে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় রাজকন্যার দিকে। রাজকন্যা তা দেখেও না দেখার ভান করে আস্তে ধীরে নেমে পড়ে সুফির পিঠ থেকে। সুফি এগিয়ে যায় ক্ষুধা মেটাতে। রাজকন্যা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে থাকে আয়াসও। তবে বারবার আঁড়চোখে দেখে তার প্রনয়নীকে। মুখবিবরের ছিলে গিয়ে র/ক্তমুখো হয়ে আছে। পোশাকের বাইরে খোলা হাত দুটো ভারী শিকলের চাপে কালশিটে দাগ হয়ে গেছে। কয়েকটা আঙ্গুল কেটে র/ক্ত ঝড়ে সেটাও এখন শুঁকিয়ে আছে। আয়াসের হঠাৎ দৃষ্টি কাঁপলো কিছু একটা দেখে। সে নিজেকে আর আঁটকে রাখতে না পেরেই এগিয়ে গেলো রাজকন্যার কাছে। কোমরের কাছ থেকে পাতলা ওড়নাটা সরিয়ে হাত রাখলো র/ক্তমুখো হয়ে থাকা জায়গাটায়। রাজকন্যা চমকে ওঠে আয়াসের শীতল ছোঁয়ায়। নেত্রজোড়া কেমন ফাল পেড়ে তাকায় আয়াসের চিন্তান্বিত মুখ বিবরে। কেমন করে গলা জড়িয়ে আসলো তার। হাসফাস করে উঠে পিছিয়ে পড়তে নিলেই আয়াস তার কোমর জড়িয়ে আরও কাছে টেনে আনে। রাজকন্যা ভড়কে যায়। ধমকের সুরে বলে ওঠে,

“করছেন টা কি? দূরে সরে দাঁড়ান!”

আয়াসের কানে গেলোনা রাজকন্যার গলার স্বর। সে নিজের চেতনায়, চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে।

“এতখানি ছিলে গেছে.. আপনি একবারও মুখ ফুটে কিছু বলছেন না? কেমন মানুষ আপনি?”

অভিযোগ করে বলে উঠলো আয়াস। রাজকন্যা অবাক হয়ে গেলো। স্থির দৃষ্টিতে একবার তাকালো আয়াসের অস্থিরতায় মুষড়ে থাকা মুখমন্ডলে। কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে সে। কেন? কারন,তার সামান্য একটু খানি ছিলে গেছে বলে?ব্যস? আর কিছুই নয়। এসব দেখেও কি তাকে ভাবতে হবে এই মানুষটা তার ক্ষতি করতে এসেছিলো? তাকে এতবড় ধোঁকা দিয়েছে! তাকে মিথ্যে বলেছে! তার ভালোবাসা নিয়ে তাচ্ছিল্য করেছে!

ভাবতে ভাবতেই রাজকন্যার মনটা বিষিয়ে উঠলো। আয়াসের বুকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো আকস্মিক। আয়াস ধাক্কা খেয়ে আকস্মিক নিজেকে সামলাতে পারলোনা। পিছিয়ে গেলো কয়েক পা। মুখ তুলে করুন দৃষ্টিতে রাজকন্যার দিকে তাকাতেই হুংকার ছাড়লো রাজকন্যা,

“খবরদার! একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না আপনি।”

আয়াস মাথা নীচু করে নিলো। ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করলো। অতঃপর মুখ উঁচিয়ে তাকালো রাজকন্যার দিকে। সহায়হীন কন্ঠে বলল,

“আপনার শরীরের এমন অবস্থায় এতপথ যাওয়া ঠিক হবেনা রাজকন্যা। আগে এই জখম গুলো সারাতে..”

“নিজের ভালোটা রাজকন্যা জানে। আপনাকে কষ্ট করে এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে বোধহয়।”

“আমি আপনার স্বামী!”

শক্ত গলায় বলল আয়াস। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দিলো রাজকন্যা,

“একজন ঠকবাজ আর মিথ্যাবাদী। অধিকারবোধের পূর্বে এই শব্দ গুলোও জুড়ে দিন নিজের নামের সঙ্গে। মানায় ভালো।”

আয়াস দমে গেলো। এই জেদী কন্যার সঙ্গে সে পেরে উঠবেনা। তাই আর কিছু বললোনা। আশেপাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিছু খুঁজতে লাগলো। রাজকন্যা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো তাকে। কিছু বলবে তার পূর্বেই আয়াস দ্রুত পায়ে ছুটলো কোথাও। রাজকন্যা অবাক হলো কিঞ্চিৎ। তড়িঘড়ি তার পিছু নিয়ে দু’পা এগোতেই আবার থমকে দাঁড়ালো। ___নাহ্! সে যাবেনা তার পিছে। যেদিকে ইচ্ছে যাক সে।

আয়াস আবার ফিরে এলো। কিন্তু খালি হাতে গেলেও ফিরে এলো কিছু জংলী ঔষধী পাতা নিয়ে। রাজকন্যা টের পেলোনা আয়াসের আগমন। সে আনমনে বনের উপর বসে রইলো। আয়াস চুপটি করে বসলো তার পাশে। হাতের ঔষধি পাতা গুলো ভালো করে দলাই-মলাই করে খানিকটা রস বের করে নিঃশব্দে লাগিয়ে দিলো রাজকন্যার কোমরের উপর। রাজকন্যা ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। আয়াসের পূণরায় একই কাজে এবার বেশ রেগেও গেলো। কিন্তু সেই রাগ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলোনা। ব্যথা জায়গায় ঠান্ডা শীতল কিছু অনুভব হতেই চুপসে গেলো সে। তবে সেই ভালোও সইলোনা কপালে। কয়েক মুহুর্ত পেরোতেই আকস্মিক জ্বলে উঠলো জায়গায়টা। মনে হলো কাটা স্থানে মরিচের গুঁড়ো পড়েছে। আঁতকে উঠে হাত চেপে ধরলো আয়াসের। মুখ থেকে বেরিয়ে এলো গোঙানির শব্দ। আয়াস বিদিব্যস্ত হয়ে উঠলো হঠাৎ,

“ক্ কি হলো?জ্বালা করছে? বেশি? বেশি জ্বলছে?”

রাজকন্যা ছিটকে পড়লো দূরে। রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বলল,

“আপনি কি ডাকাত? মায়াদয়া নেই আপনার?”

আয়াস নিজের হাতের দিকে তাকালো একবার। ফের মুখ তুলে রাজকন্যার কোমরের কাছটাতে তাকালো। আয়াসকে এভাবে তাকাতে দেখে রাজকন্যা তড়িঘড়ি ওড়না দিয়ে ঢেকে দিলো জায়গাটা। আয়াস বাচ্চাসুলভ কন্ঠে আওড়ালো,

“আমি তো ডাকাতই!”

রাজকন্যা রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে তেতে ওঠা গলায় বলল,

“কে বলেছে আপনাকে আমার এতো যত্ন নিতে। কতটা জ্বলছে এখানটায়। আমার ভালো আপনার সহ্য হয়না তাইনা?”

“এমনটা নয় রাজকন্যা..”

বলতে বলতে আয়াস এগিয়ে আসতে নিলেই রাজকন্যা আবারও চেঁচায়,

“কাছে আসবেন না! একদম না।”

আয়াস থেমে যায়। গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

“এটা খারাপ কিছু নয় যেটাতে আপনার কষ্ট হতে পারে। এটা ঔষধি পাতা। আপনার জখম গুলো দ্রুত সারিয়ে তুলবে।”

“ধন্য হয়েছি আপনার ঔষধি পাতায়। আমার সত্যি প্রয়োজন নেই।”

আয়াস কপাল কুঁচকায়। রাজকন্যার বারণ না মেনেই এগিয়ে যায় রাজকন্যার দিকে। একপ্রকার জোর করে টেনে আনে তাকে,

“আপনার কি প্রয়োজন আর কি প্রয়োজন নয় সেকথা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা।”

রাজকন্যা এই মুহুর্তে বন্দী আয়াসের বাহুডোরে। আয়াস শক্ত করে চেপে ধরেছে তাকে নিজের সঙ্গে। যেন ছুটে যেতে না পারে। রাজকন্যা ছটফট করতে করতে বলল,

“ছাড়ুন আমায়। আমি এসব লাগাবো না।”

“চুপ করে বসুন তো।”

“কেন বসবো? আপনি কি শুনতে পাননা?”

“আপনি কি শুনতে পাননা? বলছি তো এগুলো দিলে জখম শুঁকিয়ে যাবে। ব্যাথাও থাকবেনা। ঘাঁ-ও থাকবেনা।”

রাজকন্যা নিশ্চুপ হয়ে যায় কয়েকমুহুর্তের জন্য।

“আর মনের জখম? মনের ঘাঁ? কেমন করে শুঁকাবেন সেগুলো?”

আয়াসের হাতের জোর আলগা হয়ে আসে। রাজকন্যা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তার নেত্রকোন ভিজে ওঠে মুহুর্তেই। কিছু বলতে চায় মানুষটাকে। কিন্তু কি বলবে? সে তো তাকে আদৌও ভালোবাসেনি কোনোদিন। ভালোবাসেনি!

“আমি আপনাকে ঠকায়নি রাজকন্যা!”

রাজকন্যা আয়াসের বক্ষস্থল ছেড়ে উঠে আসতে নিলেই কথাটা বলে আয়াস। কেমন করুন শোনায় তার গলাটা। রাজকন্যা হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছতে মুছতে হাসে। তাচ্ছিল্য মিশ্রিত হাসি। বলে,

“এতকিছুর পরও বলবেন আপনি আমায় ঠকাননি?”

“এসব নিয়ে আমরা পরেও কথা বলতে পারি রাজকন্যা। আপনি একটু চুপটি করে বসুন না। আমি এগুলা লাগিয়ে দেই।”

“ছোঁবেন না আমায়। আপনার ছোঁয়ায় ঘৃনা হয় আমার।”

আয়াস রাজকন্যাকে ছুঁতে নিলেই রাজকন্যার এমন বানিতে হৃৎস্পন্দন থেমে যায় আয়াসের। আহত হয় সে। আহত দৃষ্টিতে রাজকন্যার দিকে তাকাতেই পাশে সরে পড়ে রাজকন্যা। সে ঢোক গেলে জড়ানো গলায়। হাহাকার করে বুকের বাঁ পাশটায়। কিন্তু কিছু বলতে পারেনা। রাজকন্যা ঠিক মতো বসার পূর্বে আবারও হেঁচকা টানে তাকে নিয়ে আসে নিজের কাছে। এবার একটু বেশিই কাছে টেনে আনে। রাজকন্যা ভড়কানো দৃষ্টিতে তাকালে সে কম্পিত কণ্ঠে বলে ওঠে,

“আমার অধিকার আছে আপনাকে ছোঁয়ার। কাছে টানার। গভীর ভাবে ভালোবাসার। আপনার উপর জোর খাটাবার। আপনার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার। আপনার অস্তিত্ব নিজেকে হারিয়ে ফেলার। আমার অধিকার আছে.. আছে আমার অধিকার!”

রাজকন্যার নেত্রকোন গলিয়ে জল পড়লো কয়েক ফোঁটা। সেও ঠিক একই কন্ঠে আওড়ালো,

“আমি মানিনা। মানিনা..”

রাজকন্যা থেমে গেলো। না,থামলো না। থামিয়ে দিলো আয়াস। গাঢ় ছোঁয়ায় আঁকড়ে ধরলো রাজকন্যার কম্পিত ওষ্ঠদ্বয়। রাজকন্যা কেঁপে উঠে খিঁচে বন্ধ করে নিলো তার নেত্রদ্বয়। পূণরায় ভরাট নেত্র থেকে ফোট কেটে জল গড়ালো। শিরশির করে উঠলো সমস্ত অঙ্গ। বন্ধ হয়ে গেলো নিঃশ্বাস। আয়াস হাত বাড়িয়ে দিলো রাজকন্যার কোমরে। জেদ নিয়েই ঠেসে ধরলো ব্যাথা জায়গাটা। রাজকন্যা অসহ্য ব্যাথায় কেঁপে উঠে মিশে গেলো আয়াসের সঙ্গে। একদম লেপ্টে পড়লো। আয়াস মনেমনে হাসলো। দু’হাতে বাড়িয়ে শক্ত করে মিশিয়ে নিলো রাজকন্যাকে। অতঃপর অধর রেখে মুখ ডুবালো রাজকন্যার গলায়। উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে হঠাৎই কামড় বসালো ধারালো দাঁত দিয়ে। রাজকন্যা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো। আয়াসকে নিজের থেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টায় লেগে পড়তেই বলে উঠলো আয়াস,

“আপনি মানেন আর না মানেন,আপনি আমার আমানত। আপনি আমার অধিকার। আপনি আমার। কেবলই আমার। আপনাকে আমার থেকে আলাদা করার সাধ্য কারোর নেই। আপনারও না।

রাজকন্যা রেগেমেগে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে এলো আয়াসের থেকে। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

“জোর করে আমাকে আপনি হাসিল করতে পারবেন না।”

আয়াস দুর্বোধ্য হাসলো। রাজকন্যার চোখে চোখ রেখে দৃঢ় কন্ঠে বলল,

“আপনাকে পেতে যদি আমায় মরতেও হয়,আমি তাতেও পিছপা হবোনা মনোহরীনি।”

#চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here