রাজকন্যা হূরিয়া পর্ব-৩১

0
314

#রাজকন্যা_হূরিয়া 🌸💙
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
৩১.

“বন্দী করো রাজকুমার সাদ্দাত কে!”

বজ্রকন্ঠে হুকুম করলো রাজকন্যা। রাজকন্যার রাগান্বীত মুখ দেখে ঘাবড়ে গেলো উপস্থিত সকলে। দু’জন প্রহরী ছুটে এলো রাজকুমার সাদ্দাতকে বন্দী করতে। রাজকুমার সাদ্দাত ভড়কানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এখনও। সে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু আলিয়ার অদ্ভুত চাহনি যেন বাঁধা দিচ্ছে তাকে।

“নিয়ে যাও!”

রাজকন্যা আবারও হুকুম করে। প্রহরী আজ্ঞা পালনে নতশির করে রাজকুমার সাদ্দাতকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। কিন্তু তাকে নিয়ে যাওয়ার আগেই পুনরায় মুখ খুলে রেদোয়ান।

“রাজকন্যা, আলিয়া পুরোপুরি সত্যিটা বলেনি আপনাকে! রাজকুমার সাদ্দাত এমন কোনো কিছুই করেনি তার সঙ্গে! সে মিথ্যে বলছে আপনাকে!”

রাজকন্যার ললাট কুঞ্চিত হয়! সে রেদোয়ানের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আলিয়ার পানে নিক্ষেপ করে। অবাক স্বরে জানতে চায়,

“মানে!”

“আমি বলছি; রাজকুমার সাদ্দাত আপনাকে যেকোনো ভাবে পেতে চায় একথা সম্পূর্ণ সত্যি। তবে সেই কাজে আলিয়া বাঁধা হওয়াতে যে সে আলিয়াকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছে এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। রাজকুমার সাদ্দাত খারাপ মতলবেই এই রাতের মধ্য প্রহরে আপনার কক্ষে এসেছিলো। সে মনেপ্রাণে চেয়েছিলো একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি করে আপনার আর রাজকুমার আয়াসের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে। কিন্তু এখানে এসে দেখলো আপনারা কেউই কক্ষে নেই। তাই অন্ধকার কক্ষে আপনার অপেক্ষা করতে লাগলো। আর তার সুযোগ নিলো আলিয়া। তার মনেও একই ক্ষোভ ছিলো রাজকুমার আয়াসকে নিয়ে। তবে সেটা যে আর কোনো কালেই সম্ভব না তা বুঝেই সে নিজেকে আপনার রূপ দিতে চাইলো। যেন কোনো মতে রাজকুমার সাদ্দাতের সঙ্গে তার বিয়েটা হয়ে যায়। এই ভাবনা নিয়েই সে রাজকুমার সাদ্দাতের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে চায়। রাজকুমার সাদ্দাত প্রথমে তাকে আপনি ভেবেই ভুল করেন। আর যখন বুঝলেন সে আপনি নন আলিয়া, তখনই শুরু হয় নিজেকে এই মুহুর্ত থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যায়। তারা দু’জনেই অন্যায় করেছেন আর একই সঙ্গে দু’জনেই নিজেদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন।”

আয়াস এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো। রেদোয়ানের মুখে এহেম কথা গুলো শুনে আর দূরে সরে থাকা সম্ভব হলোনা। এদিকে আলিয়া এবং রাজকুমার সাদ্দাতের মুখ খানা চুপসে গেলো ভয়ে। আলিয়া ভয় পাচ্ছে নিজের ভুলের জন্য! রাজকুমার সাদ্দাতের মতো তাকেও কি রাজকন্যা কারাবন্দী করবে?

রাজকন্যা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে পাশ ফিরে তাকালো আয়াসের পানে। আয়াস ছোট্ট করে হাসলো। ভরসা দিলো তার প্রনয়ণীকে। চোখের পলক ফেলে শান্ত হতে বললো। যেন যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে ভেবে চিন্তে নেয়।

“রাজকুমার সাদ্দাত এবং আলিয়ার বিবাহের ব্যবস্থা করো। এবং বিবাহের পর-মুহুর্তেই তাদের নিজেদের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার কঠোর আদেশ রইলো। যদি এই আদেশ তারা দু’জনের কেউ অমান্য করে তবে একত্রেই দু’জনকে পাতালঘরের কারাগারে বন্দী করার হুকুম রইলো।”

রাজকন্যার আদেশ শিরোধার্য করলো প্রত্যেকে। অনেকে বেজায় খুশি হলেও অনেকই রইলো মুখ ভার করে। আয়াস স্মিত হেসে দু’পা এগিয়ে এসে রাজকন্যার কাঁধে হাত রাখলো। রাজকন্যা ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাম্ভিক হাসলো।

_____

“ওস্তাদজী; আমরা নিজেদের কুঠুরি ছেড়ে এই ঘন জঙ্গল দিয়ে কোথায় যাচ্ছি বলুন তো? সঙ্গে একটা লোককেও নিলেন না। এখন এই বুড়োকে নিয়ে কি করবো আমরা?”

অন্ধকার জঙ্গলে হাতে একটা অগ্নি কুপ নিয়ে হেঁটে চলেছে ওস্তাদজী, মেরাজ এবং রাজা সিরাজ উদ্দীন। রাজা সিরাজ উদ্দীন নিজের চেতনে নেই। তাকে নানাবিধ ওলটপালট ওষধি সেবন করানো হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে সে হাঁটছে, সবকিছু দেখছে ঠিকই তবে নিজের মস্তিষ্ক খাঁটিয়ে কিছু করতে পারছেনা। এমনকি সামনের কয়েক প্রহরেও করতে পারবেনা।

মেরাজের অধৈর্য্য দেখে কিঞ্চিৎ রেগে গেলেন ওস্তাদজী। কিন্তু আপাতত কিচ্ছুটি বললেন না। মুখে কুলুপ এঁটে রাখলেন।

আরও অনেকখানী পথ পারি দেওয়ার পরে তারা পৌঁছালো একটা বাড়ির সামনে। ইটপাথরে গড়া ছোট্ট একটা বাড়ি। বাড়ির চারপাশে শ’খানেক লোক পাহারায় রয়েছে। তাদের দেখতেই মেরাজের কৌতুহল আরও বেড়ে গেলো। সে আবারও প্রশ্ন করল,

“ওস্তাদজী? ওরা কি আমাদের লোক? আমাদের হয়ে কাজ করে? আর এই বাড়িটা.. এই বাড়িটা কার?”

ওস্তাদজী বিরক্তি সূচক নিঃশ্বাস ফেলে। গম্ভীর স্বরে বলে,

“হ্যাঁ ওরা আমার লোক। আমার পোষা। এত কথা বলিস কেন রে তুই? যা হবে দেখতে পাবি। এখন যা, এই বুড়োকে কক্ষে দিয়ে আয়। শোন, বাইরেটা ভালো করে বন্ধ করবি। যা। আয়াস আসলো বলে!”

মেরাজ ওস্তাদজীর আদেশ পালনে লেগে পড়লো। এর মাঝে আয়াসের নাম শুনে মনে মনে হিংস্র পশুর মতো কয়েক মুহুর্ত গোঙালো ঠিকই। তবে প্রকাশ করলো না।

“আজ্ঞে ওস্তাদজী।”

ওস্তাদজীর ভাবনা মোতাবেক কয়েক মুহুর্ত বাদে সত্যি সত্যি ফিরলো আয়াস। সঙ্গে ফিরলো রেদোয়ানও। আয়াসকে দেখতেই তার মুখ জুড়ে বিচরণ করলো আত্মতৃপ্তির মৃদু হাসি। চালাকি করে নাজিমউদ্দীনকে পাঠিয়ে ভুল কিছু করেননি তিনি। সিরাজ উদ্দীনের নাম করে তাকে না পাঠালে যুদ্ধের শেষ মুহুর্তে এসে নিজের এতো কালের সাধনার প্রাসাদ যে তার হাতেই তুলে দিতে হতো। এখন আর সেই ভয় নেই।

“আব্বাজান? আমার আব্বাজান.. তুমি ফিরেছো?”

আবেগি ভাব করে পুত্রকে বুকে টেনে নিলেন ওস্তাদজী। রেদোয়ান তার কান্ড দেখে পেছন দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসতে লাগলো। কিন্তু প্রকাশ করার মতো বোকামি করলো না। আয়াস প্রথম থেকেই দুর্বোধ্য হেসে চলেছে। ওস্তাদজী আর ঠিক কত নাটক করতে পারে সেসবই দেখে চলেছে।

“তুমি ঠিকাছো তো আব্বাজান? ঐ ধূর্ত কন্যা তোমার কোনো ক্ষতি করেনি তো?”

আয়াস ঠোঁটের কোনে দুর্বোধ্য হাসির রেখাটা বজায় রেখেই বলে উঠলো,

“ক্ষতি করেনি কি বলছেন আব্বাজান? আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা সেই করেছে আব্বাজান!”

আয়াসের নাটকীয় সুরে বলা কথাটায় কিঞ্চিৎ চমকে উঠলেন ওস্তাদজী। মনের মাঝে ভয়ের দানা বাঁধলো! আয়াস কি সবটা জেনে গেছে? জেনে গেলে কি একা ফিরতো? না; তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষনা করে নিশ্চয়ই শ’খানেক প্রজা নিয়ে তবেই আসতো।

“আ-আমার ক্ষতি!”

ওস্তাদজীর গলাটা খানিক কাঁপলো। তা দেখে মনে মনে হাসলো আয়াস। মুখে বলল,

“তা নয়তো কি আব্বাজান? ভেবে দেখুন? ওই মায়াবিনী কন্যা তার আগুনের মতো সুন্দর রূপ দিয়ে আপনার পুত্রকে আপনার থেকে কেঁড়ে নেয়নি?”

ওস্তাদজী হো হো করে হেঁসে উঠলেন। আয়াসের দুই কাঁধে হাত রেখে বললেন,

“কখনও কখনও কিছু ভুল থেকেই আসল লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় আব্বাজান। এই যে দেখো তুমি ঐ ধূর্ত কন্যাকে বিবাহ করেছো বলেই আজ আমরা আমাদের লক্ষ্যের এতো নিকটে। তাই নয় কি?”

আয়াস হাসলো। হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলল,

“খারাপ থেকেই আমার জীবনের ভালোটা আমি খুঁজে পেয়েছি আব্বাজান। আব.. আমাদের; আমাদের জীবনের ভালোটা।”

“একদম।”

“আব্বাজান,আপনি আমাকে মুক্ত করতে নাজিমউদ্দীনকে কেন পাঠালেন! আমি তো চাইলে একাই ফিরে আসতে পারতাম আব্বাজান। খামোখা উনাকে…”

“তোমার বন্দী হওয়ার কথা শুনে আমি হতবুদ্ধি হয়ে গেছিলাম আব্বাজান। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করে ফিরিয়ে আনবো তোমায়। আর এমন মুহুর্তে রাজকন্যার পত্র পেয়ে যা মাথায় আসলো সেটাই যে করলাম আব্বাজান।”

“আব্বাজান.. আপনার মিত্রকে তো ফিরিয়ে আনতে হবে! তাই না? আমাদের ছাড়া উনি তো ঐ মহলে সুরক্ষিত না! রাজকন্যা তার আব্বাজানকে ফিরে পেতে উনার যেকোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারে!”

কথাটা বলতে বলতে আয়াস ওস্তাদজীর হাতটা ধরলো। তার কন্ঠের আকুতি হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে ওস্তাদজী। তাই পূর্বের ভয়টা পুনরায় জাঁতা দিয়ে বসলো মনে।

“হ্- হ্যাঁ আব্বাজান। মিত্রকে তো অবশ্যই ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবো। মেরাজকে আমি সবটা জানিয়েছি। ও প্রস্তুত প্রাসাদে যাওয়ার জন্য!”

জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে পুত্রের মন রাখার জন্য কথাটা বললেন ওস্তাদজী। আয়াস ওস্তাদজীর দৃষ্টির অগোচরে বাঁকা হাসলো। এর মাঝে দেখা মিলল মেরাজের। হাতে সিরাজ উদ্দীনের কক্ষের চাবি গুচ্ছ। আয়াসকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে যেন হঠাৎ তার চক্ষুদ্বয়ের পীড়া জেগে উঠলো। টানটান করে উঠলো চোখের ভেতর। মনে হলো পূনরায় আঘাত করেছে আয়াস। সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের রাগটা মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠলো। তবে পূর্বের ন্যায়ই সবটা ভেতরে চেপে রাখলো। প্রকাশ করলো না বাইরে।

“ওস্তাদজী,আপনার জন্য পত্র পাঠিয়েছেন রাজকন্যা!”

পেছন থেকে রেদোয়ানের গলা পাওয়া গেলো। তার কথায় আয়াস,ওস্তাদজী এবং মেরাজ তিনজনেই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো। ওস্তাদজী শুঁকনো ঢোক গিললেন। আবার কি চাই ঐ ধূর্ত কন্যার!

#চলবে___

[ কাল এক্সাম আর আজ গল্প লিখছি! সত্যিই ভীষণ টাফ। তবুও লিখেছি। ছোট হয়েছে। কেউ মন খারাপ করিয়েন না। নেক্সট পার্ট বড় এবং গোছালো হবে ইনশাআল্লাহ। নেক্সট পার্ট বড় চাইলে সবাই গঠন মূলক মন্তব্য করুন। ভালোবাসা ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here