শাপলা ও সেতুর গল্প [পর্ব-১৯]

0
270

#শাপলা_ও_সেতুর_গল্প
#প্রভা_আফরিন
[পর্ব-১৯]

আলো ফুটেছে একটি বিষন্ন সকাল নিয়ে। রাসিফের গত রাতের ঘুমটা ঠিকমতো হয়নি। লিখিকে সে হাজার কায়দা-কানুন করেও ঘরে আনতে পারেনি। আর না নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করতে পেরেছে।অবশেষে হাল ছেড়ে ঘরে ফিরেছিলো রাত তিনটায়। ভেবেছিলো রাতটা কে’টে গেলে লিখির রাগ পড়ে যাবে। কিন্তু রাগ তো পড়েইনি উল্টে সে সকাল সকাল ঘোষণা দিয়ে গেছে অফিস থেকে সোজা বাপের বাড়ি যাবে। কথাটা শোনার পর রাসিফের নিজের হাত কা’মড়াতে ইচ্ছে করছে। কোন আক্কেলে সে লিখিকে অবিশ্বাস করতে গেলো! তার বউয়ের যা ইগো তাতে এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। রাসিফ বিষন্ন মুখেই দোকানে গেলো। ওর চিমসানো মুখ, নির্ঘুম নেতানো দৃষ্টি এবং একটু পর পর হাই তুলতে দেখে মুমিনুল খোঁচা মেরে বলল,

“ভাইয়ের বোধহয় রাতে ঘুম হয় না। সকালে দেরি করে আসলেও তো পারেন। পাইকারি হাট ছাড়া অন্যদিন এই সময় কাস্টমার কমই থাকে। তাহলে আমিও সকালে একটু বেশি ঘুমাইতে পারতাম।”

রাসিফ কটমট করে তাকিয়ে বলল,
“নতুন বিয়ের পর দুই কারণে ঘুম হয় না। এক সুখে, আরেক দুঃখে। তুমি প্রথম সারির সুখী মানুষ বলে সবাই যে তাই হবে এমন ভাবার কারণ নেই। বিয়ের পর ফাঁকিবাজ হয়ে গেছো। কাজে ফাঁকি দেওয়ার চিন্তা ছেড়ে কাস্টমার ডাকো।”

সন্ধ্যায় রাসিফ সোজা শ্বশুর বাড়ি গিয়ে হাজির হলো। সঙ্গে দুইহাত ভর্তি মৌসুমি ফল। ওকে দেখে রেবেকা জামাইয়ের খাতিরদারি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। শরবত বানিয়ে এনে জিজ্ঞেস করলেন,
“তুমি ঠিক আছো, বাবা? মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন?”

“তেমন কিছু নয় আম্মা। দোকানে একটু প্রেশার যাচ্ছে।”

“কুরবানির ঈদ এসে গেছে। তোমার শ্বশুরের শো-রুমেও চাপ বাড়ছে। কিন্তু সবের মাঝেও শরীরের যত্ন নিতে হবে তো৷ দরকার পড়লে আরেকজন কর্মচারী বাড়িয়ে নাও।”

রাসিফ সে কথার উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“লিখি কোথায় আম্মা? অফিস থেকে ফেরেনি?”

“ফিরেছে তো। গোসলে ঢুকেছিলো, হয়ে এসেছে বোধহয়। তুমি রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও। আমি নাশতার ব্যবস্থা করছি।”

রেবেকা রান্নাঘরে চলে গেলেন। রাসিফ লম্বা শ্বাস নিয়ে লিখির ঘরের পথ ধরতেই রিথীর দেখা পেলো। রিথী হাত দিয়ে গন্ধ তাড়ানোর চেষ্টা করে নাক কুচকে তাকালো। বলল,

“তাই তো বলি বাড়িতে এত দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে কেনো?”

“দেখলে, নিজের গন্ধে নিজেই ম’রে যাচ্ছো। এজন্যই প্রতিদিন গোসল করা উচিত। সাতদিনে একবার নয়।”

“জি না। আমি প্রতিদিনই গোসল করি। গন্ধ তো আপনার থেকে ছড়াচ্ছে।”

“তাই না? চলো তোমার ঘরে যাই। একটু শুয়ে-বসে সবকিছু গন্ধযুক্ত করে দিয়ে আসি। দুর্গন্ধে থাকতে থাকতে দুলাভাইয়ের পাংখা হয়ে যাবে।”

“ছি!”

রিথী ছুটে তার ঘরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো। রাসিফ হাসতে হাসতে লিখির ঘরে ঢুকতে থমকে গেল। লিখি গোসল থেকে বেরিয়েছে। পরনে সাদা ও বাদামি রঙ মিশেল সালোয়ার-কামিজ। কামিজের সাদা রঙটা ভেজা দেহের সঙ্গে লেপ্টে কিছু কিছু অংশ দৃশ্যমান। ভেজা চুল পাতলা তোয়ালে দিয়ে প্যাচিয়ে মাথার ওপরে তুলে রেখেছে। রাসিফকে দেখে ওর মুখে অবাক হওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। যেন সে জানতোই রাসিফ আসবে। রাসিফ লিখির মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। মুখের দিকে একটু ঝুকে আসতে নিলে লিখি কটমট করে তাকালো।
“কেন এসেছেন?”

রাসিফ সে কথার উত্তর না দিয়ে ফোকলা হেসে বলল,
“তোমার শাওয়ার জেলের স্মেলটা সুন্দর। আমি কি ব্যবহার করতে পারি? গোসল করবো।”

লিখি উত্তর দিল না। রাসিফ উত্তরের অপেক্ষা করলও না। ওর মাথা থেকে ভেজা তোয়ালেটা খুলে নিয়ে আবার বলল,
“আমারটা আনিনি। তোমার তোয়ালে দিয়েই কাজ চালিয়ে দেই। রাগ করোনা কিন্তু।”

গোসল সেরে এসে লিখিকে কোথাও পেলো না রাসিফ। লিখি সামনে এলো রাতে খাওয়া-দাওয়ার সময়। সকলের সামনে রাসিফ এটা-ওটা এগিয়ে দিতে বলা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারলো না। লিখি সুযোগ দিলোও না। ঘুমাতে যাবার সময় রাসিফ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেও লিখি এলো না। ওকে পাওয়া গেলো ছাদে। আবছা আধারে দূর থেকে একটা ছায়ামূর্তিকে দেখে রাসিফের বুঝতে অসুবিধা হলো না এই তার কাঙ্ক্ষিত মানবী। শব্দহীন পায়ে সে লিখির পেছনে এসে দাঁড়াতেই বুকের লালিত ঘন বর্ষায় টইটুম্বুর নদীটা ছলাৎ করে উঠলো। যে কোনো সময় সেই নদীর বানে ভেসে যাবে শুষ্ক অনুভূতিগুলো। লিখি আবারো টিশার্ট আর পালাজো প্যান্ট পরেছে। মেয়েটা ওকে এলোমেলো করতেই কাজটা করে বোধহয়। রাসিফ লিখির পাশে গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। আকাশে তারার বিক্ষিপ্ত মেলা। হাওয়ার তালে লিখির এলোমেলো চুল আরো অগছালো হয়ে যাচ্ছে। লিখি মুখ না ফিরিয়েই বলল,

“কেনো এসেছেন?”

“পার্সেল নিতে।”

“পার্সেল বাইকওয়ালার।”

“একটা বাইক কিনবো বুঝছো। আজকে বাইকের শো-রুমে ঘুরে এসেছি। হাতে কিছু টাকা আছে বাকিটা ঈদে ব্যবসাটা পরিকল্পনা মাফিক এগোলেই মোটামুটি দামের একটা বাইক কেনার টাকা হয়ে যাবে। তবুও পার্সেল রাওয়াদ ভিলাতেই আসবে।”

লিখি উত্তর দিলো না। মুখ ফিরিয়ে আছে বলে অভিব্যক্তিও স্পষ্ট বুঝলো না রাসিফ। একটু অপেক্ষা করে বলল,
“এত রাগ?”

“আপনি অবিশ্বাস করেছেন।”

“মাথা ঠিক ছিলো না। পূর্ণিমা এমনভাবে এসে বলেছে, তুমিও খুব ফুরফুরে ছিলে তাই..”

“কেউ বললেই তাকে বিশ্বাস করবেন?”

“আমার ভুল হয়েছে। আমি কিন্তু এমন না বিশ্বাস করো। হঠাৎ কি যে হয়েছিলো?”

“আমি জানি কি হয়েছিলো।”

“কি?”

“আপনি জেলাস হয়েছিলেন।”

লিখির মুখে সুপ্ত হাসির রেখা। রাসিফ প্রতিবাদ করে বলল,
“আমি কেনো জেলাস হবো?”

“সেটা যদি না-ই জানবেন তাহলে আমাকে ফিরিয়ে নিতে এসেছেন কেন? কচি খোকা আপনি? উত্তরটা জেনে পরে আসবেন।”

“আরে চটে যাচ্ছো কেন?”

রাসিফ হাত ধরে আটকালো। দুরত্ব কমালো। কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
“এই যে একজন পুরুষের সঙ্গে একঘরে থাকা সত্ত্বেও বড় নেকের টিশার্ট পরো, ঘুমের ঘোরে গায়ে পা তুলে দাও, গলা জড়িয়ে বুকে উঠে এসে ঘুমাও এসবের কারণ কি আমি বুঝি না? অবশ্যই বুঝি। যদি এটা বুঝতে পারি তাহলে জেলাসির কারণ বুঝবো না? আমি এটাও বুঝতে পারছি আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে তুমি বেশ মজা পাচ্ছো ”

চাঁদ ভরা পূর্ণিমার নিকটে। ধবল জ্যোৎস্নায় উদ্ভাসিত ছাদ। লিখির আড়ষ্ট মুখটা খুব সহজেই রাসিফের চোখে ধরা দিলো। সময় গড়ালো নিঃশব্দে, নিভৃতে। নিরবতা ভেঙে লিখি বলল,

“আপনি যতটা ভেজা বেড়াল সেজে থাকেন ততটাও নন।”

রাসিফ নিঃশব্দে হেসে বললো,
“তুমিও নিজেকে যতটা কুলভাবে রিপ্রেজেন্ট কর আসলে ততটাও নও বুঝেছো।”

লিখি রাগে ফুঁসতে গিয়ে হেসে ফেলে। রাসিফ উৎসাহ পেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়। দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“রাগ ঝেড়ে ফেলো। আমার ভুল স্বীকার করছি। কাল সকালে আমার সাথে ফিরে যাবে।”
“যাব না।”
“কেনো?”

“আমার জন্য নাকি রাতে আপনার ঘুম হয় না। আজ তো বেশ একটা ঘুম হতো। আমাকে নিতে এসেছেন কেনো?”

“তোমার জন্য ঘুম হয় না, তোমাকে ছাড়াও ঘুম হবে না। তবে তুমি কাছে থাকলে না ঘুমিয়েও শান্তি আছে। যেটা না থাকায় নেই। গতকাল হারে হারে টের পেয়েছি।”

“স্বীকার করছেন?”
“করছি।”
“তবুও যাব না।”
“আবার কেনোরে বাবা?”
“আপনার চেষ্টায় কমতি আছে।”
রাসিফ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হুট করে লিখিকে কোলে তুলে নিলো। বলল,
“না গেলে এভাবেই তুলে নিয়ে যাবো।”

লিখি শব্দ করে হেসে ফেললো। জ্যোৎস্নাময় মায়াবী ক্ষণে সেই হাসি রাসিফের কাছে ঝর্ণার অবারিত ধারার মতো শোনায়। রাতের গভীর হয়, সেই সঙ্গে গভীর হতে থাকে রাসিফ ও লিখির সম্পর্কের সমীকরণ।
____________

রুনি নয়মাসে পড়েছে। ওজন আগের থেকে বেড়েছে। সেই সঙ্গে নানান অসুস্থতা। রাতে ঘুম হয় না। চোখের নিচে কালি পড়েছে। ত্বক মলিন হয়েছে। একটু হাটলেই কাহিল হয়ে যায়। রুনির ডেলিভারি ডেট পরের সপ্তাহে। এখন সে বাবার বাসায়ই আছে। নওশাদও বউয়ের সাথে এখানেই থাকছে। আজ সকালেই সে দুদিনের জন্য খুলনা গিয়েছে। রুনি একদম রাজি ছিলো না নওশাকে যেতে দিতে। ইদানীং ওর ধারণা হয়েছে সে অসুন্দর হয়ে যাচ্ছে বলে নওশাদ আর তাকে ভালোবাসবে না। তাই স্বামীকে দূরে যেতে দিতে একদমই নারাজ সে। রুনির অতিরিক্ত ভালোবাসা মাঝে মাঝে যেমন নওশাদের ভালোলাগে তেমনই মাঝেমাঝে বিরক্তও হয়। ওর খুলনা যাওয়া নিয়ে রুনি প্রথম থেকেই গাইগুই করছে। নওশাদ অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়েও যখন কায়দা করতে পারেনি তখন বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়েছে। রুনি এরপর আর কিছু বলেনি। নিরবে যেতে দিয়েছে।

নওশাদ যাওয়ার পর রুনি অভিমানে কেঁদে-কে’টে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুম ভাঙলো দুপুরের খানিক পর। রুনি উঠেই সবার আগে নওশাদকে ফোন করলো। অভিমানের কথা সে ভুলে গেছে। ঘুমের মাঝে নতুন এক ভয় ওর মাঝে চেপে বসেছে। রুনি ভেজা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“বাবুর আব্বু, আমি যদি ম’রে যাই তুমি কি আরেকটা বিয়ে করবে? বাবুর জন্য সৎ মা আনবে?”

নওশাদ তখনো খুলনা পৌঁছাতে পারেনি। এমনিতেই সকালে রুনিকে ধমক দিয়ে সে অনুশোচনায় ভুগছিলো। এখন হঠাৎ এমন কথা বুকে গিয়ে লাগলো। সে মেজাজ নিয়েই বলল,
“বাজে কথা বলার যায়গা পাও না? আশকারা দেই বলে যা তা বলবে?”

“আমি ম’রে গেলে ভূত হয়ে আসবো তুমি বিয়ে করতে চাইলেও দেবো না।”

“ম’রে গেলে ফ্রিজে তুলে রাখবো। তবুও তোমার সাথেই সংসার করবো। আমার তোমাকেই লাগবে, শুনেছো?”

নওশাদ রেগে ফোন কা’টলে রুনি হাউমাউ করে কাঁদতে বসলো। জাহানারা বেগম নামাজ পড়ে ছুটে আসলেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন অসুস্থ লাগছে কিনা। রুনি নওশাদকে বলা কথাটা ওনাকে জানাতে তিনি দুর্বল হাতে মেয়ের গালে চ’ড় বসালেন। বুকে চেপে বসে রইলেন সারা দুপুর। দোয়া-দরুদ পড়ে ফু দিলেন, সাহস যোগালেন।

বিকেল নাগাদ লিখি অফিস থেকে ফিরলো বার্গার ও পেস্ট্রি নিয়ে। রুনি গতকাল প্রবল আগ্রহ নিয়ে খাবারগুলো খেতে চাইলেও আজ তেমন খেতে পারলো না। লিখি জিজ্ঞেস করলো,

“তুমি ঠিক আছো আপা?”

“লিখিরে, আমার কেমন জানি অস্বস্তি হচ্ছে। ঠিক বুঝতে পারছি না। মনে হয় তোর দুলাভাইয়ের জন্য মন খারাপ লাগছে।”

শেষের কথাটার জন্য রুনির কথায় কেউ অতিরিক্ত আগ্রহ দেখালো না। তবে লিখি জানালো যদি বেশি অসুস্থ লাগে ও হাসপাতালে নিয়ে যাবে। সন্ধ্যা গড়িয়ে যেতে লিখি রাসিফকে ফোন দিলো।
“আপনি আসবেন কখন?”

“মিস করছো খুব?”

“মোটেও না। আপার নাকি খারাপ লাগছে। আপনার কথা জিজ্ঞেস করলো তাই ফোন দিলাম।”

“হুম, বুঝি বুঝি। নতুন মাল তুলেছি। সব গুছিয়েই চলে আসবো। একটু সময় লাগবে।”

রুনির অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছে। শরীর ঘামছে। পেটের এদিক ওদিক হালকা চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে। এশার নামাজ শেষে জাহানারা মেয়েকে পরখ করে চেপে ধরতেই যা বুঝলেন তা হলো, রুনির বিকেল থেকেই অল্প অল্প পানি ভাঙছে। নওশাদের ওপর অভিমান, অজানা আশঙ্কায় ডুবে থাকা এবং প্রথমবার মা হওয়ার অনভিজ্ঞতার ফলে সে বুঝতে পারেনি। ডাক্তার এক সপ্তাহ পর ডেলিভারি ডেট দিয়েছে বলে সে সেটাই ধরে বসে আছে। হুলুস্থুল লেগে গেলো। লিখি রাসিফকে ফোন দেয়। রিসিভ হয় না, বেজে বেজে কে’টে যায়। পর পর কয়েকবার একই কান্ড ঘটলে লিখি মুমিনুলকে ফোন দিল। সেও ফোন ধরছে না। লিখি অতিরিক্ত চিন্তা ছেড়ে মনকে শান্ত করার চেষ্টা করে।

রুনিকে নিয়ে হাসপাতালের পথে রওনা হওয়ার আগে রিথী ফোন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে খবর দেয় মার্কেটের একটা ভবনে আগুন লেগেছে। সেই ভবনেই রাসিফ ও লিখির বাবার দোকান। কথাটা শোনা মাত্রই জাহানারা বেগম জ্ঞান হারালেন। রুনির ব্যাথা বাড়ছে। ক্রমেই তা অসহনীয় হয়ে উঠছে। একবার মা আরেকবার ভাইকে ডেকে কাঁদছে সে। হাসপাতালে নিতে হবে জলদি। বাড়িতে একজন পুরুষও নেই। পূর্ণিমা নানিকে নিয়ে কিছুদিন আগেই চলে গেছে। লিখি চোখে অন্ধকার দেখে৷ একদিকে বাবা ও স্বামীর চিন্তা অন্যদিকে শ্বাশুড়ি ও ননদকে হাসপাতালে নেওয়া। কাকে রেখে কাকে ধরবে? লিখির বাবার বাড়িতেও নিশ্চয়ই একই অবস্থা।

লিখির মাথা ঘুরে ওঠে, শরীরে কাঁপুনি দেয়। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। রাসিফের সাথে গত দুটি মাস স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর কেটেছিলো তার। ভালোবাসার ঝুলি যেন উপচে পড়েছিলো দুজনের ওপর। মানুষটা কথা দিয়েছিলো সব সময় ছায়ার মতো পাশে থাকবে। তাহলে আজ কেন আসছে না? আজ যে তাকে খুব প্রয়োজন।

চলবে…

সমাপ্তির নিকটে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here