#রাজকন্যা_হূরিয়া 🌸🥀
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
২.
“বিবাহ!”
রাজকন্যার দৃঢ় কন্ঠ মিইয়ে পড়লো। চাচাজান পূর্বের ভাবমূর্তি বজায় রেখেই কাতর স্বরে বললেন,
“হ্যাঁ বিবাহ। তোমার আব্বাজানের শেষ ইচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম যতদিন তুমি না চাইবে ততদিন আমি তোমায় এ প্রসঙ্গে একটা বাক্যও আওড়াবো না। কিন্তু পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক নেই। আমিও আর আগের মতো নেই। আমার শরীর আর মন দুই থেকে দুই আলাদা হয়ে যাচ্ছে। তুমি তোমার কথা রাখিবে তো?”
“র্ রাখিবো চাচাজান। রাজকন্যা তার প্রতিশ্রুতি ভাঙে না। তবে আমার ক’টা দিন সময় চাই চাচাজান। আমি নিজেকে এই বিবাহের জন্যে সময় দিতে চাই। আমার মনকে বোঝাতে চাই।”
“কতদিন সময় চাও?”
এবার চাচাজানের গলা বেশ পরিষ্কার শোনালো। যার অর্থ তিনি চান না এই বিবাহের জন্য তাকে সময় দিতে। তড়িঘড়ি এই কার্য সম্পন্ন করাই তার মুল উদ্দেশ্য।
“আমাকে দুটো দিন সময় দিন চাচাজান।”
“এতো বিলম্ব করা উচিৎ হবে না বলেই বোধ করি আমি।”
“কিন্তু চাচাজান..”
“কালকের দিন টা তুমি ভাবো। পরশু দিনই তোমার বিবাহের আয়োজন করা হবে।”
জিন্নাত ক্ষোভে ফেটে পড়লো। ছিটকে পড়লো রাজকন্যার পাশ থেকে। তার প্রস্থান রাজকন্যা উপলব্ধি করলো। কিন্তু কিছু বলার শক্তি পেলো না। চাচাজানের আদেশ শিরধার্য করে সেও কম্পিত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেলো। নিজের ঘরে প্রবেশ করবার পূর্বে আম্মাজানের ঘরে প্রবেশ করলো। রানী মা শুয়ে আছেন। তার মাথার কাছে আর পায়ের কাছে দু’জন দাসী বসে আছে। সেবায় নিয়োজিত। একজন মাথায় মালিশ করছে তো একজন পায়ে মালিশ করছে। রাজকন্যার হঠাৎ আগমনে তারা একটু ভড়কে গেলো। ঔষধের সরঞ্জাম নিয়ে রাজকন্যার সামনে মাথা নীচু করে তাকে সম্মান প্রদর্শন করে বেরিয়ে গেলো তারা। রাজকন্যা রানী-মার মাথার কাছটাতে বসলো। চোখ বুঁজে আছেন তিনি। আশেপাশের কোনো চিন্তা, চেতনা এই মস্তিষ্কে বিরাজ করছে কি না দেখে বোঝার উপায় নেই।
“আম্মাজান? আপনি কেমন আছেন?”
রাজকন্যা কান্নাজড়িত গলায় আওড়ালো। রানী-মার কোনো উত্তর নেই। তিনি নিজের মতো আছেন।
“আম্মাজান? শুনছেন আপনি?”
এবারও কোনো জবাব এলো না। রাজকন্যার চোখের তারা খসে কয়েকফোটা জল গড়ালো। সেই জলে রানী-মার কপাল ভিজে উঠলো। তিনি ভ্রু কুঁচকালেন। বিরক্ত দৃষ্টি মেলে তাকালেন। তার দৃষ্টি দেখে কেঁপে উঠলো রাজকন্যা। একি! রানী মা যে চিনতে পারছেন না ওকে। তার চাহনি এমন কেন? কবিরাজ মশাই রানী মা-কে কি ঔষধ দিচ্ছেন। রানী-মার এমন হাল হলো কি করে? রুসে উঠলো রাজকন্যা। গলায় তেজ ঢেলে হুকুম করলো,
“কে আছো?কবিরাজকে এক্ষনি বন্দি করে আনো।”
ছুটলো প্রজারা। বন্দি হলো কবিরাজ। এক প্রহর কাটতে তাকে নিয়ে আসা হলো রাজকন্যার সামনে। সে বিস্ফোরিত চাহনিতে দেখলো কবিরাজকে।
“রানী-মার এমন হাল হলো কি করে? আপনি আমাকে নিশ্চিত করেছেন এই ঔষধিতে রানীমা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন। এই তার নমুনা? উনি এমন করে কেন দেখছেন যেন এখানে সবাই উনার অপরিচিত। কাউকে উনি চেনেন না। এমনকি আমাকেও নয়!”
কবিরাজ ঢোক গিলল। রাজমহলে হঠাৎ হট্টগোলে বাঁধলে উঠে আসেন চাচাজানও। ঘটনার সূচনা কি খুঁজতে গিয়ে পুরো ব্যাপারটাই এখন তার কাছে পরিষ্কার। রাজকন্যার চেয়ে বড় হুংকার চাড়লেন তিনি। ক্রোধে ফেটে পড়ে হুকুম করলেন,
“জল্লাদ ডাকো এক্ষনি। গর্দান নাও এই অর্বাচীনের। ওর এতো বড় স্পর্ধা! এই রাজমহলে থেকে,খেয়ে এখানেই দু’শমনি করছে। কে আছো! একে বন্দি বানাও এক্ষনি।”
“চাচাজান। এসবের দরকার…”
“দরকার আছে রাজকন্যা। তুমি বুঝতে পারছোনা। এই অর্বাচীন আমাদের ঠিক কতখানি ক্ষতি করে ফেলেছে।”
“শান্ত হোন চাচাজান।”
“শান্ত হবো.. নিশ্চয়ই শান্ত হবো। আগে এই অর্বাচীনকে ওর যথোপযুক্ত সাজা দিয়ে তবেই শান্ত হবো।”
আবারও হুকুম করলেন চাচাজান। রাজকন্যা আর কিছুই বলার সুযোগ পেলো না। চাচাজানের হুকুমেই কারাগারে বন্দি করা হলো কবিরাজকে। সময় মতো তার সাজা সে ভোগ করবে।
রাজকন্যা এবার নিজেই তদারকি করে কবিরাজ ঠিক করলো তার আম্মাজানের জন্য। চাচাজানও প্রজাদের দিয়ে খবর নিলেন। এবার আর ভয়ের কোনো কারন নেই।
__________
রাতের মধ্য প্রহর। চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না। কেবল এপাশ ওপাশ করছে রাজকন্যা। আজ ঘরে জিন্নাত নেই। সেই যে প্রস্থান করেছে আর এমুখো হয়নি। হয়তো কয়েকদিনে আসবেনা ও। বড় ক্রোধে আছে। না জানি সামনে এলে কোন কর্ম করে বসে। যাক,ক’টা দিন ঘুরে আসুক নিজের জায়গা থেকে। ক্রোধ টা নেমে গেলে এমনিই আসবে।
বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো রাজকন্যা। মনের মাঝে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কবিরাজ মশাই হঠাৎ এই অন্যায় কি করে করলেন? কেউ কি তাকে উসকেছিলো? নাকি বাধ্য করেছিলো এই অন্যায় করতে? তবে কি লোভে পড়ে উনি এমন অন্যায় করেছেন? কে উনাকে লোভ দেখালেন। রাজপ্রাসাদের কেউ?
তার সঙ্গে যদি একবার আলাদা করে কথা বলা যেতো। তবে ভালো হতো। কিন্তু এতোরাতে পাতালঘরের কারাগারে প্রবেশ করা ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। না-‘ ভোর হতে হতেই একবার যাবে সে। তাকে যে জানতেই হবে, কে কবিরাজমশাইকে এতো বড় অন্যায় করার প্রলোভন দেখালো? নয়তো সে এমন মানুষ নয়! আব্বাজানের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো বন্ধুসুলভ। তাহলে কি আব্বাজান না থাকার সুযোগ নিচ্ছেও সেও? মানুষ কি এতোই জঘন্য! হে রব! আমার আব্বাজানকে অতিদ্রুত আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন। আমরা আর কিছুই চাইনা আপনার কাছে।
রাজকন্যা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে গেলো বড় আমলারিটার কাছে। সেখান থেকে সাধারন একটা পোশাক বের করে পরিধান করলো। পোষাকটা অনেকটা যুদ্ধের পোষাকের মতো। কখনও যুদ্ধে গেলে রাজকন্যা এই পোষাকটিই পড়বে নির্ঘাত।
মাথায় ছোট একটা ওড়নার কাপড় থেকে মুকুট তৈরি করলো। আত্নরক্ষার জন্য অস্ত্র নিলো। গায়ে পেঁচালো চাঁদর। অতঃপর প্রস্থান করলো প্রাসাদের বাইরে। ঘোড়াশাল থেকে তার সবচেয়ে পছন্দের ঘোড়াটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আব্বাজানকে খুঁজতে। বনজঙ্গল ভেদ করে বেরিয়ে পড়লো সুফি। তার ঘোড়ার নাম ‘সুফি-‘। নাম ধরে একবার ডাকলেই ছুটতে ছুটতে আসে সে। বড় পোষা। রাজকন্যার অন্ধভক্ত বলা যায়।
“সুফি? জিন্নাত কি অনেক বেশি রাগ করেছ?”
সুফি দাঁত খিঁচিয়ে চিঁহি চিঁহি করে ডেকে উঠলো। রাজকন্যা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বুঝে নিলো সুফির বার্তা। অর্থাৎ জিন্নাত সত্যি বড় রেগে আছে।
রাজপ্রাসাদ পেছনে ফেলে অনেকদূরে এলো তারা। এদিকটাতে এই প্রথম আসা রাজকন্যার। চেনেনা কিছুই। তবুও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগোচ্ছে। আব্বাজানকে খুঁজে না পেলেও ঠিক একটা উৎস খুঁজে পাবে।
সুফি পা খিঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আবারও ডেকে উঠলো চিঁহি চিঁহি করে। রাজকন্যা প্রথম দফায় সামলাতে পারলো না। সুফির হঠাৎ থেমে পড়ায় সে আত্মরক্ষা টুকু করতে পারলো না। হুমড়ি খেয়ে পড়লো নীচে। ব্যাথা পেলো হাতের কনুইয়ে আর থুঁতনিতে। রাজকন্যা চেঁচাল ব্যাথায়। কাতর কন্ঠে বলল,
“তোমার হঠাৎ হলো কি সুফি?”
সুফি ডাকলো দাঁত খিঁচিয়ে। অর্থাৎ সামনে বিপদ। রাজকন্যা সতর্ক বার্তা পেয়ে ব্যাথা ভুলে চটজলদি উঠে দাড়ালো। হেঁটে সুফির কাছে আসতেই সুফি বারবার ডাকতে লাগলো। রাজকন্যা হাত রাখলো সুফির মাথায়। ঠিক তখনই তার চোখের তারায় দৃশ্যমান হলো অদূরে একফালা অগ্নিকুণ্ড। কাঠ দিয়ে কেউ আগুন জ্বালিয়েছে সেখানে। অর্থাৎ কেউ আছে। গুপ্তচর নয়তো? বুক কাঁপলো তার! আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র নিলো হাতে। সুফিকে সাবধানী গলায় বলল,
“গুপ্তচর?”
সুফি ডাকলো না। অর্থাৎ রাজকন্যার ধারনা ভুলও হতে পারে। রাজকন্যা সুফিকে নিয়ে এগোলো। জঙ্গল ভেঙে মাঠেই সেই অগ্নিকুণ্ড। রাজকন্যা আর সুফি এসে পৌঁছোলো মাঠে। অগ্নিকুণ্ডের পাশে ছোট একখানা তাঁবু। রাজকন্যা থমকালো। সুফিকে বলল,
“কোনো পথচারী মনে হয়। পথ হারিয়েছে।”
সুফি ডাকলো। অর্থাৎ হ্যাঁ। রাজকন্যা তার মাথার মুকুটের ঝুলে থাকা কাপড়টুকু দিয়ে নিজের মুখ ঢাকলো। অতঃপর এগিয়ে গেলো সেখানে। আশেপাশে কেউ নেই। হয়তো ভেতরে ঘুমচ্ছে। রাজকন্যা গলা পরিষ্কার করলো। অতঃপর ডাকলো,
“কেউ আছেন ভেতরে?”
ভেতরে খচখচ করে উঠলো কিছু। রাজকন্যার বুক কেঁপে উঠলো। ভেতরে কোনো হিংস্র প্রানী নেই তো যে মানুষটাকে গিলে খেয়েছে?
“কেউ আছেন?”
সংকীর্ণ মনে রাজকন্যা আবারও ডাকলো। কিন্তু এবারও তেমন কোনো সাড়া এলো না। কেবল সেই খচখচ শব্দ। রাজকন্যা সোজা হয়ে দাঁড়াল। সুফি কে বলল,
“কোনো হিংস্র প্রানীর কবলে পড়লেন না তো মানুষটা? ভেতরে গিয়ে দেখবো?”
সুফি ডাকলো। রাজকন্যা হাতের অস্ত্রটা শক্ত করে ধরে সতর্ক পায়ে হাঁটতে লাগলো। উদ্দেশ্য কোনো হিংস্র প্রানী দেখতেই এক কোপে দি-খন্ড করতে তার শির।
রাজকন্যা তার অস্ত্র দিয়ে পর্দা সরালো। ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছুই স্পষ্ট নয়। রাজকন্যার বুক কাঁপছে। কিছু না দেখে সে কি করে আঘাত করবে এই জন্তুর উপর। এখনও সেই খচখচ করা শব্দ ভেসে আসছে। তার মানে প্রানীটা তার পানে এগোচ্ছে। রাজকন্যাও এগোচ্ছে। পিছিয়ে পড়ার কন্যা সে নয়। আজ পূনরায় সেটা প্রমান হবে। রাজকন্যা টের পেলো জন্তুটি তার খুবই কাছে। ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলছে। আর বিপদ বাড়ানো যাবেনা। যা হবে দেখা যাবে। রাজকন্যা চোখ বুঁজে রবের নাম উচ্চারণ করেই বেকায়দায় অস্ত্র চালিয়ে দিলো। কিন্তু সামনে বাতাস ছাড়া আর কিছু উপলব্ধি হলো না। রাজকন্যা কাঁপছে। তবে কি জিন্নাত জাতি? কথাটা ভাবতে না ভাবতেই কেউ হামলে পড়লো তার উপর। তার হাতের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই হাত ধরে একটানে তাকে বের করে আনলো রাজকন্যা। তার হাতেও অস্ত্র! সেও চালালো। কিন্তু রাজকন্যার ন্যায় সেও ব্যর্থের তালিকায় নাম লেখালো। রাজকন্যা ছিটকে পড়লো পাশে। তার পেছন গিয়ে পুনরায় অস্ত্র চালাতে নিলে সে এবার হেঁচকা টানে রাজকন্যাকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। অতঃপর রাজকন্যাকে উল্টো ঘুরিয়ে তার বলিষ্ঠ হাতে চেপে ধরলো। অস্ত্র ধরলো গলায়। কিঞ্চিৎ ঠেস দিয়ে ধরলে খানিকটা কেটে যায় ওখানটায়। রাজকন্যা ছটফট করতে থাকে লোকটার হাত থেকে ছোটার জন্য। সে এখনও নিশ্চিত নয় তার পেছনে মানুষ নাকি জিন্নাত জাতির কেউ।
“আমার তাবুতে চুরি করতে আসা? নারী হয়ে চুরি করো! লজ্জা নেই?”
রাজকন্যা জ্বলে উঠলো। সাপের ন্যায় ফোঁস করে উঠে বলল,
“অধম! আমি চুরি করবো কেন?”
“অধম কাকে বলছো? আমি নিজ হাতে ধরেছি তোমাকে!”
“ও! অর্থাৎ তুমি মনুষ্য?”
যুবকটি অবাক হলো।
“এর মানে?”
“আমি প্রথমে তোমাকে হিংস্র কোনো জন্তু ভেবেছি। অতঃপর জিন্নাত জাতি।”
“হাহা! নিজে অধমের মতো চিন্তা করে আমাকে অধম বলছো?”
“বলছি। কেননা তুমি সত্যি অধম।”
“খামোশ। একটা সামান্য নারী হয়ে রাজকুমারকে অধম বলো!”
“হাহা। অধম তো অধম। রাজকুমার আর সামান্য নারী কি?”
যুবকটি রাজকন্যাকে ধাক্কা দিলো। রাজকন্যা পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিলো। মুখে হাত দিয়ে পরখ করে নিলো কাপড়টা ঠিক আছে কি না। ‘হ্যাঁ ঠিকাছে-‘
রাজকন্যা পেছন মুড়ে তাকালো। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে পরিপূর্ণ এক যুবক। চাঁদনীর আলোয় তার শ্যামবর্ণ মুখখানা চকচক করছে। মাথায় একঝাঁক চুল নেমে এসেছে কাঁধের কাছে। পরনে রাজকীয় পোশাক। অর্থাৎ কোনো রাজ্যের রাজপুত্র। হয়তো ভ্রমনে বেরিয়ে পথ হারিয়েছে। কিন্তু উনার ঘোড়া কোথায়?
“কে তুমি?”
রাজকন্যা চমকালো কিঞ্চিৎ। কিন্তু প্রকাশ করলো না। দৃঢ় কন্ঠে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
“তা জেনে তোমার কি কাজ, অধম?”
ক্ষেপে গেলো যুবক। রাজকন্যা হেসে ফেললো। যুবকটি তেড়ে আসতে নিয়েও থমকে দাঁড়ালো। রাগান্বিত গলায় বলল,
“হাসছো যে?”
“পথ হারিয়েছো?”
রাজকন্যা যুবকের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নিজের মতো প্রশ্ন করলো। যুবকটি নিভল। বলল,
“হ্যাঁ। রাজা সিরাজ উদ্দীনের মহলে যেতে চাই!”
“কেন?”
“তোমায় বলবো কেন? কে তুমি?”
“পথ হারালে যে তা যখন বলেছো, তবে এটাও বলে ফেলো?”
“কোন ভরসায় বলবো? তুমি তো কোনো গুপ্তচরও হতে পারো।”
“তুমিও তো হতে পারো। রাজকুমার সাজছো। আমি হলেই দোষ?”
“না। আমি কোনো গুপ্তচর নই। আমি রাজকুমার সাদ্দাত। পাশের রাজ্যেই আমার বাস।”
রাজকন্যা চমকে উঠলো। রাজকুমার সাদ্দাত! তার আব্বাজানের কাছের বন্ধুর পুত্র।
“ভাবছো কি? বললে না তো কে তুমি?”
“আমি পথচারী।”
কিছু না ভেবেই জবাব দিলো রাজকন্যা।
“সামনের তিন তিনটা জঙ্গল পেরোতেই তুমি তোমার গন্তব্য স্থল পেয়ে যাবে। চলে যাও।”
“তুমি এতো নিঁখুত জানো কেমন করে?”
“পথচারীদের এসব চেনায় তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। চলে যাও। এখানে বেশিক্ষণ থেকো না। তোমার জন্য বিপদের শেষ নেই।”
“আমি একজন যুবক। এসবের মোকাবেলা করা আমার একহাতের খেল। কিন্তু তুমি তো নারী! এতো রাতে বাইরে ঘুরছো কেন?”
“নারী-পুরুষের ভেদাভেদ করা ছাড়ো। নারীও যা পুরুষও তা।”
এই বলেই সুফির পিঠে চড়ে বসল রাজকন্যা। রাজকুমার অবাক হলো। পিছু ডেকে বলল,
“তোমার নামটা জানা হলো না?”
“আবার যদি কখনও দেখা হয়। জেনে নিও।”
“আর যদি দেখা না হয়?”
“হবে।”
বলেই সুফির পিঠ চাপড়ে তাকে ছোটার আদেশ দিলো রাজকন্যা। সুফি আবারও ছুটলো ঝোপঝাড় ভেঙে। কিছুক্ষনের মাঝেই রাজকুমারর চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো। রাজকুমার অদ্ভুত হাসলো। ডান হাতটা জ্বলছে। কেটে গেছে মেয়েটার অস্ত্রের আঘাতে৷ বড় তেজী মেয়ে।
#চলবে
[ বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। মন্তব্য করতে ভুলবেন না।🌸]