রাজকন্যা হূরিয়া পর্ব-২২

0
304

#রাজকন্যা_হূরিয়া 🌺💞
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
২২.

মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কঙ্করগুলো মেরাজের শরীরে প্রায় গেঁথে গেছে। মেঝেতে ভর দিয়ে উঠতে উঠতে বেশ বেগ পেতে হলো তাকে। আয়াসটা একটা দানব! তার আরও একবার প্রমান পেলো সে। কিন্তু সেই বা কম কিসে? আজ তার প্রমান দেবে সে। আর আজ তো ওর বাপেও নেই। এই সুন্দরী রমণীর সামনে নিজের পুরুষত্বের এক দৃষ্টান্ত উদাহরণও হতে পারবে। তারপর একে ছুঁয়ে দিক বা ছিঁ‘ড়ে খাক দেখার জন্য কেউ আসবেনা।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে পৈশাচিক আনন্দে বুক জুড়িয়ে এলো মেরাজের। ওদিকে র’ক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে আয়াস। যেন এক্ষনি কে/য়া/মত ঘটিয়ে দিবে এখানে! ধ্বং/স করে ফেলবে এই নোং/রা দুর্বিনীতকে।

রাজকন্যা স্তব্ধ হয়ে গেলো। মেঝেতে শরীর আঁটকে থাকার মতো আঁটকে গেলো তার কন্ঠনালি। শরীরে কেমন শীতল ভাব ছড়িয়ে পড়লো ক্ষনকালেই। অক্ষিগোলক ভরে উঠলো অবিশ্বাস্যের কালো ছায়ায়। মনটাও বিষিয়ে উঠলো ঐ একই অনুভূতিতে। সে, কি শুনলো কানে? আয়াস! মেরাজ রাজকুমারকে আয়াস বলে ডাকলো? কিন্তু কেন? সে তো আয়াস নয়,সাদ্দাত। রাজকুমার সাদ্দাত! নাহ্! অবিশ্বাস করলে চলবেনা। সে কোনো অজ্ঞাত ব্যক্তির সামান্য ডাকে তার ভালোবাসার মানুষকে সন্দেহ করতে পারেনা। অসম্ভব।

রাজকন্যা নিজের মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে একপ্রকার জোর করেই মেনে নিয়েছে এই অজ্ঞাত ব্যাক্তি মেরাজ এই নামে ভুল করে ডেকেছে রাজকুমারকে। হ্যাঁ, ভুল করেই ডেকেছে।

আয়াস হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়েই এগিয়ে গেলো মেরাজের পানে। মেরাজও এগিয়ে এলো। মুখোমুখি যু/দ্ধ হবে আজ। আয়াস ক্রোধে ফেটে পড়ে কিছু বলতেই যাবে তার পূর্বেই হাত ঝাড়তে ঝাড়তে গা জ্বলিয়ে বলে ওঠে মেরাজ,

“এই অব্দিও এসে গেলি তবে? আচ্ছা তোর কি কুকুরের মতো গন্ধ শুঁকে শুঁকে আমার পিছু নেওয়ার স্বভাব কখনও যাবেনা?(মুখ উঁচিয়ে তাকিয়ে) কি রে? স্বভাব সেই একই রয়ে গেলো তোর তাইনা? এবার তো নিজেকে একটু সামলা ভাই! আর কতো?”

“রাজকন্যাকে কেন তুলেছিস?”

ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করলো আয়াস। মেরাজ খানিকটা অবাক হলো। আয়াস সেভাবে ওর পানে হেঁটে এলো তাতে আয়াসের এমন প্রশ্ন যেন আশা করেনি সে। ভেবেছিলো আয়াস এক্ষনি হামলে পড়বে তার উপর।

“কেন আবার? তোর আব্বাজানের আদেশে!”

রাজকন্যা হোঁচট খেলো। কান খাঁড়া করে তাদের কথোপকথন শুনতে গিয়ে একি কানে এলো তার? রাজকুমারের আব্বাজানের আদেশে সে তাকে তুলে এনেছে? কিন্তু রাজামশাই তো অনেক কাল পূর্বেই
মৃ/ত্যু/বরণ করেছেন! তবে কে আদেশ করলো মেরাজকে?

“দেখ ভাই, আমি জানি ওস্তাদজী তোকে খুব ভালোবাসে।”

রাজকন্যা চমকে উঠলো! ওস্তাদজী? মানে ডাকাতদের ওস্তাদজী? হে রব! এ আমি কি শুনছি?

“কিন্তু ততটাও ভরসা আজ অব্দি করতে পারেনি যতটা ভরসা আমার উপর করে এসেছে। সেই ছোট্ট বেলা থেকে, সেই ছোট্ট বেলা থেকে ওস্তাদজী সব কাজে আমাকে আগে হুকুম করেছে। যদি আমি কোনো ভাবে ব্যর্থ হয়ে যেতাম তারপর সে তোকে ঐ কাজের দায়িত্ব দিতো। মনে নেই?”

আয়াস দুর্বোধ্য হাসলো। এ হাসির মানে খুঁজে পেলোনা মেরাজ। সে আবারও বলতে লাগলো,

“মাত্র কয়েক বর্ষ হলো আমি এই কুঠুরি ছেড়ে অন্য দেশে পারি জমিয়েছি কি? এর মাঝে তো দেখি তুই এই ডেরার লায়েক হয়ে গেছিস! সবার মাথায় চড়ে নাচতে আরম্ভ করেছিস। ওস্তাদজী তোকে বলেনি মেরাজ আসছে? বলেও বা কি করবে বল? বলেনি বলেই তো আমি এই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছি। দেখ! দেখ তাকিয়ে? তোর আকাশের চাঁদকে আমি কি করে এই ডেরায় তুলে এনে বন্দী করেছি।”

রাজকন্যার বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হলো। নিজের কানকে বিশ্বাস করে উঠতে পারছেনা সে। মেরাজের একেকটা কথা কাঁটার মতো ফুটছে শরীরে। আর্তনাদ করছে ভেতরে ভেতরে। ছটফট করছে ক্রমশ।

“আকাশের চাঁদ!”

আয়াস শীতল কন্ঠে আওড়ালো। তার ভেতরেও ঝড় বইছে তুমুল বেগে। হয়তো সে ছটফট করছে তার রাজকন্যার চেয়েও বেশি। কিন্তু দেখাতে পারছেনা। বোঝাতে পারছে। কেবল গিলে খেতে পারছে। পেছন মুড়ে একবার তাকালো তার বন্দিনীর দিকে। বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠলো। কি ভেবে ছুট্টে গেলো রাজকন্যার কাছে। হাঁটু ভেঙে বসে পড়লো ঠিক তার সামনে। কেমন অচৈতন্য মনে দৃষ্টি বোলালে রাজকন্যার বন্দী শরীরে। ভারী শিকল দিয়ে বাঁধার কারণে কালশিটে দাগ পড়ে গেছে অনেক জায়গায়। র/ক্ত জমাট বেঁধেছে শরীরের কিছু কিছু জায়গায়।
মুহুর্তেই আক্রোশ চেপে বসলো তার আহত মনে। ইগলের ন্যায় ভয়ানক দৃষ্টি মেলে তাকালো মেরাজের দিকে। গর্জে উঠে বলল,

“মুক্ত কর রাজকন্যাকে। নয়তো আজ এই ডেরায়
র/ক্তে/র বন্যা বয়ে যাবে। যার শুরুটা আয়াস তোর থেকেই প্রারম্ভ করবে মেরাজ।”

দাঁত বের করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো মেরাজ। হাসতে হাসতে দু‘পা এগিয়ে এলো তাদের পানে। হাঁটুতে ভর দিয়ে ঝুঁকে এলো আয়াসের দিকে। রাজকন্যাকে একবার দেখলো লোভাতুর দৃষ্টিতে। অতঃপর বলল,

“মুক্ত করবো। অবশ্যই করবো। তার আগে তোর সহধর্মিণীকে বল মেরাজের হাতে স্বইচ্ছায় নিজেকে সঁপে দিতে। কতকাল কোনো নারী সঙ্গ পায়নি বলতো..আজ একদম… আআআ”(বিকট শব্দ করে)

মেরাজের কথা শেষ হলোনা। তার পূর্বেই আয়াসের তলো/য়ারের এক কোঁ/পে ফ্যাচ করে কে/টে গেলো তার বাহুর দিকটা। আর্তনাদী গলায় চেঁচিয়ে উঠেই ছিটকে পড়লো অদূরে। আয়াস চোখের পলকে দাঁড়িয়ে গেলো। আক্রোশ ভরা দৃষ্টি নিয়েই এগিয়ে গেলো মেরাজের দিকে। মেরাজ মেঝেতে পড়ে গেলো। বাহু ধরে চেঁচাতে নিলেই মেরাজের বুকের উপর আয়াস পা তুলে দেয়। পিষে ধরে তাকে কঙ্কর বিশিষ্ট মেঝেতে। মেরাজের পিঠে কয়েকটা কঙ্কর ঢুকে যায়। মেরাজ চেঁচায়! কেমন ভাঙা গলায় চেঁচায়। কিন্তু শোনেনা আয়াস। রাজকন্যা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের পানে। তার দৃষ্টি অসহ্য হয়ে ওঠে। গা গোলায়। মাথায় ভারযুক্ত কিছু অনুভব করে। সহ্য করতে পারেনা এই চেঁচামেচি।

আয়াস তলো/য়ার ঠে/সে ধরে মেরাজের গলার কাছটাতে। রাগে,ক্ষোভে অন্ধ হয়ে গেছে সে। তার রাজকন্যাকে নিয়ে এতো বড় কথা কি করে বলে ফেললো এই জা/নো/য়া/র। ওর কত বড় কলিজা হয়েছে দেখতে চায় সে।

“আমার সহধর্মিণীকে তোর হাতে সঁপে দেবো? যে আয়াস তার এক বাক্য কাউকে ফেরায় সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে তোর মতো একটা
জানো/য়ারের কাছে সঁপে দেবে? যে আয়াস তার মাথার একটা কেশ কাউকে স্পর্শ করতে দেয়না সে তার প্রণয়নীকে তোর মতো একটা জানো/য়ারের কাছে সঁপে দেবে? যে আয়াস আজ অব্দি একটা তার একটা ছেঁড়া পোশাক তোকে ছুঁতে দেয়নি সেই আয়াস তার সবচেয়ে দামী,মূল্যবান জিনিসটা তোর মতো একটা কুলাঙ্গারকে সঁপে দেবে? এতোই সহজ রে? এতোই সহজ আমার চাঁদের দিকে চোখ মেলে তাকানো? এতোই সহজ হু?”

শেষোক্ত কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বলেই আয়াস হাতের তলো/য়ারটা ঠে/সে পুরে দিলো মেরাজের বাঁ চোখটায়। মেরাজ ব্যাথায় ভুবন কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠল। এমন একটা নৃ/শংস কান্ড করতে আয়াসের একদণ্ডও হাত কাঁপলো না। এক খাবলা তাজা র’ক্ত আয়াসের চোখমুখ ঢেকে দিলে সে অন্যহাতে তা মুছতে মুছতে দুর্বোধ্য হাসলো। রাজকন্যা গুঙিয়ে উঠলো এমন নৃ/শংস কান্ড দেখে। তার চোখ লেগে আসার পর্যায় হলো। চাপা আর্তনাদ করলো সে। কিন্তু সেই আর্তনাদ কানে এলোনা আয়াসের। সে একটানে মেরাজের চোখ থেকে তলো/য়ারটা বের করে আনলো। তারপর আচমকাই হুংকার করে বলে উঠলো,

“ঐ চাঁদ কেবল আমার! আর ঐ চাঁদকে যে চোখ মেলে দেখবে তারও ঠিক একই, এই একই দশা হবে।”

মেরাজ আর্তনাদী গলায় চেঁচিয়েই চলেছে। এক্ষনি ওর চিকিৎসা না হলে ও ম/রেও যেতে পারে। এ কথা জানে আয়াস। আর সে মনেপ্রাণে চায় যেন মেরাজ ম/রেই যায়। কিন্তু সে চাইলেও এ কাজ সম্ভব নয়। মেরাজ আর কেউ নয়, তার আব্বাজানের প্রানপ্রিয় বন্ধু নাজিমউদ্দীনের একমাত্র পুত্র। এখানেই তার বাঁধা। নাজিমউদ্দীনের পুত্রকে সে এভাবে হ/ত্যা করতে পারেনা। তবে যেটুকু পেরেছে তাতেই মনের ক্ষোভ অনেকটা কমেছে।

মেরাজের পোশাকের পকেট কেটে রাজকন্যার শিকলের চাবি বের করে উঠে দাঁড়ালো আয়াস। চাবির দিকে কয়েক মুহুর্তে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে মেরাজের পানে তাকালো। বাঁকা হেসে পূণরায় পা রাখলো মেরাজের বুকে। দুর্বোধ্য হেসে শান্ত স্বরে বলল,

“তোর মতো নর্দমার কীটের জায়গাটা ঠিক কোথায় তার আরও একটা প্রমাণ দিয়ে দিলাম। চেয়ে দেখ! ওহ্! চেয়ে দেখবি কেমন করে? তোর তো চোখই উ/পড়ে দিলাম। দুঃখিত ভাই, কিছু মনে করিসনা। আব্বাজানকে জানিয়ে দিস,আয়াস তার উদ্দেশ্য বদলে ফেলেছে।”

বলতে বলতে পায়ের জোর বাড়িয়ে দিতেই দম আঁটকে এলো মেরাজেরে। তার চোখমুখ রক্তশূন্য হয়ে উঠলো। নিঃশ্বাস নিতে না পারার যন্ত্রণায় কাশতে কাশতে আয়াসের পা চেপে ধরলো। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলে ছেড়ে দেয় আয়াস। অতঃপর পাশ ফিরে একবার রাজকন্যার ফ্যাকাসে মুখখানার দিকে তাকায়। সেই পুরনো অনুভূতি ফের পিষে নেয় তাকে। বুকের ভেতর পূনরায় শুরু করে তোলপাড়। রাজকন্যা স্নিগ্ধ অক্ষিপটে আজ তার জন্য কেবলই এক অবিশ্বাস্যের কালো ছায়া। যা তাকে ক্রমশই বিধ্বস্ত করছে,পোড়াচ্ছে।

অসহনীয় যন্ত্রণা দিচ্ছে। বুক চিঁড়ে তপ্ত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার। আর দাঁড়িয়ে রইলো না। দ্রুত পা চালিয়ে এগিয়ে গেলো রাজকন্যার পানে। কয়েক মুহুর্ত স্থবির দাঁড়িয়ে থেকে হাঁটু ভেঙে বসলো। দৃষ্টি মাটিতে বিদ্ধ। কোন মুখে রাজকন্যার চোখে চোখ রাখবে জানেনা সে। বক্ষজুড়ে এক বিষ ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশই। আর তার হলো রাজকন্যার ঘৃণা দৃষ্টি। রাজকন্যা ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়াসের মুখপানে। কেমন করে পারলো সে? এতোবড় ধোঁকা দিতে!

আয়াস রাজকন্যার হাতেপায়ের শিকল খুলে দিলো। তার দৃষ্টি এখনও নীচে। রাজকন্যার পায়ের কাছে। রাজকন্যা শিকল থেকে মুক্ত হতেই দূরত্ব করে নিলো আয়াসের কাছ থেকে। যা বুঝতেই আয়াস আহত দৃষ্টিতে তাকালো রাজকন্যার পানে। কম্পিত কণ্ঠে ঢোক গিললো একবার। আজ তার কিছু বলার শক্তি নেই। আর সে কিছু বলতেও চায়না। সে জনতো একদিন না একদিন ঠিক এমন একটা মুহুর্তের স্বীকার তাকে হতে হবে! তাই বলে এতো দ্রুত তা ঘটবে ভাবতে পারেনি।

“বিশ্বাসঘাতক! আমার স্বামী একজন বিশ্বাসঘাতক। দিনের পর দিন নির্লজ্জের মতো সে আমায় ঠকিয়ে গেছে! এই ভালোবাসা, এই বিয়ে,এই মিলন.. স্ সবটাই তবে ধোঁকা ছিলো? প্রতি ক্ষনে ক্ষনে স্বীকার করা,সে আমায় ভালোবাসে!’ সবটাই ধোঁকা ছিলো? রাজকুমার! রাজকুমারকে ভালোবেসে ভুল করেছিলাম আমি? অবশ্যই ভুল করেছিলাম! তাই না রাজকুমার?”

আয়াস আহত হলো। দুমড়েমুচড়ে গেলো তার বক্ষদেশ! অক্ষিপটে ভরাট হলো হাহাকার। সে তার পাপী দৃষ্টি তুলে তাকাতে পারলোনা। নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতেও কিছু বলতে পারলোনা। পারলো কেবল অপরাধ বোধে জ্বলতে।

রাজকন্যা কোনোমতে উঠে দাঁড়ালো। তার দৃষ্টি এলোমেলো। অক্ষিপটের আঙ্গিনা গলিয়ে জল পড়ছে। ক্ষত হাতের উল্টো পিঠে সে চোখের জল মুছলো। এই ছোট্ট জীবনটা তাকে আরও একবার অসহায় করে দিলো প্রিয়জনের শূন্যতায়! আজ অব্দি তার একটা প্রিয় মানুষ হলো না।

“রাজকন্যা…”

আয়াস এলোমেলো পায়ে এসে দাঁড়ালো রাজকন্যার সামনে। নিজের অধিকারবোধ থেকেই হাত জোড়া বাড়িয়ে দিলো আহত রাজকন্যার দিকে। কিন্তু ছুঁতে পারলো না। রাজকন্যা হাতের কৌশল আয়াসের তলোয়ার নিজের হাতে তুলে নিয়েই ঠেকিয়ে ধরলো আয়াসের বক্ষস্থলে। বজ্রকন্ঠে চেঁচিয়ে উঠে বলল,

“খবরদার! ঐ পাপিষ্ঠ মুখে আমি আমার এই নাম শুনতে চাইনা। খবরদার!”

একটু থামলো রাজকন্যা। অতঃপর আবারও আওড়ালো,

“রাজকুমার কোথায়? কোথায় বন্দী করেছেন তাকে?”

“সে ভালো আছে রাজকন্যা। চিন্তা করার কোনো কারন নেই।”

“আমি তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।”

“জোহুকুম।”

আয়াস মাথা নত করে নিলো। অমনি নেত্রকোন গলিয়ে দু’ফোটা জল এসে ভিজিয়ে দিয়ে গেলো তার গাল। ঢোক গিললো সে। কিছু বলতে চায় রাজকন্যাকে। কিন্তু বলতে পারছেনা!

“দাঁড়ান!”

রাজকন্যা পিছু ডাকে। আয়াস আনন্দিত মনে দাঁড়িয়ে পড়ে হঠাৎ। পেছন মুড়ে তাকায় উৎফুল্ল দৃষ্টিতে। তার ঠোঁটের কোনে বিরাজমান হয় স্নিগ্ধ কোমল হাসি। কিন্তু তা কেবল অবাঞ্ছিত কয়েক ক্ষণের ভ্রম। রাজকন্যার পরবর্তী প্রশ্নে হারিয়ে যায় তা,

“আপনার উদ্দেশ্য কি কেবল আমাকে নিঃশেষ করাই ছিলো? সত্যিকারের ভালোবাসননি কখনও?”

আয়াসের দম আঁটকে পড়ে। ইচ্ছে করে চিৎকার করে জানান দিতে, “কসম আল্লাহ-র,আমি আপনাকে ভালোবাসি রাজকন্যা!” কিন্তু বলতে পারেনা। কথা গুলো দলা পাকিয়ে যায় কন্ঠনালিতে। এতো অপরাধ করার পরও সে কোনমুখে তাকে বলবে, সে তাকে ভালোবাসে। নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে।

#চলবে____

[ গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here