অরোনী তোমার জন্য পর্ব-৪

0
452

অরোনী, তোমার জন্য~৪
লিখা-Sidratul Muntaz

রাফাত নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে এসেছে। কিন্তু এখনও অরোনীর ঘুম ভাঙেনি। শীলা চাচী আর উর্মি অরোনীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছিলেন। রাফাত বলেছে উপরে গিয়ে অরোনীকে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু রুমে এসে দেখল অরোনী এখনও ঘুমে। ডাকতে আর ইচ্ছে হলো না। রাফাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল অরোনীর মুখের দিকে। এই কোমল চেহারা দেখলে যে কারো মনে হবে মেয়েটা খুব মিষ্টি। কিন্তু সত্যি হলো অরোনী লাল মরিচের থেকেও বেশি ঝাল। রাফাত আলতো করে অরোনীর কপালে, গালে, নাকে, চুমু দিল। ঠোঁটেও দিতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু পাছে আবার অরোনীর ঘুম ভেঙে যায়, তাহলে রাফাতের খবর আছে। তাই ঠোঁট স্পর্শ করার সাহস হলো না৷ রাফাত উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। সে যাওয়ার সাথে সাথেই অরোনী চোখ খুলে হেসে উঠল। রাফাত প্রতিদিন এই কাজ করে। সে ভাবে অরোনী টের পায় না। কিন্তু অরোনী রোজ টের পায়।
ঘড়িতে দশটা বাজছে। অরোনী আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল। রেডি হতে হবে। আশা করা যাচ্ছে অন্তত আজকের দিনটা সুন্দর কাটবে। আজকে সে ব্রেকফাস্ট করতে নিচেও যাবে না। এই সুন্দর দিনে শাশুড়ী আর ননদদের মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে না। অরোনী তার ননদদের প্রথম প্রথম খুব পছন্দ করতো। ভেবেছিল শাশুড়ী খারাপ তো কি হয়েছে? ননদরা নিশ্চয়ই সাপোর্ট দিবে। কিন্তু সেখানেও বাঁশ খেতে হলো। কোনো বিষয়ে এক্সপেক্টেশন রাখাই উচিৎ না। ননদিরা সুযোগ পেলেই অরোনীকে খোচা মেরে কথা বলে। পদে পদে অপমান করে। সবচেয়ে বড় অপমান হলো, শাশুড়ী যখন অরোনীকে ধমক দেয় তখন সকলে মুখ টিপে হাসে। তাদের চেহারায় তৃপ্তি আর আনন্দের ঝিলিক থাকে। শাকচুন্নি একেকটা!
দরজায় খটখট শব্দ হলো। কে এসেছে? উর্মি নাকি? অরোনী একবার ভাবল যদি আজ উর্মির স্কুল না থাকে তাহলে উর্মিকেও ঘুরতে নিয়ে যাবে। মেয়েটা বড় ভালো। তাছাড়া উর্মির স্কুলও বারোটায় শুরু হয়। অরোনী দরজা খোলার পর খুব চমকে যাওয়ার মতো একটা দৃশ্য দেখল। রাবেয়া এসেছেন, হাতে ব্রেকফাস্ট। অরোনীর এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো তার ঘুমটা এখনও ভাঙেনি। সে বুঝি স্বপ্নই দেখছে। ঘুম থেকে উঠতে আধঘণ্টা লেইট হলেও রাবেয়া তাকে নাস্তা খাওয়ার সময় কথা শোনান। আর আজকে নিজেই সিঁড়ি ভেঙে অরোনীর জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছেন! হঠাৎ এতো আদর! রাবেয়া বেশ মিষ্টি করে হাসলেন। দজ্জাল মহিলার হাসি সুন্দর। কিন্তু এমন সুন্দর করে তিনি খুব কমই হাসেন।
” শরীর খারাপ নাকি অরোনী? আজ নিচে এলে না যে?”
এতো মধুর ভঙ্গিতে এই প্রথম রাবেয়া কথা বলছেন। তাই অরোনী স্বভাবতই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।
” তেমন কিছু না৷ ঘুমটা ভাঙতে দেরি হয়ে গেছে।”
” আচ্ছা সমস্যা নেই। এই নাও তোমার খাবার। আর কিছু প্রয়োজন হলো বোলো।”
অরোনী খাবারের ডিশ নিতে নিতে বলল,” থ্যাংকিউ মা।”
রাবেয়া চলে যাচ্ছিলেন। অরোনী দরজা লাগাতে নিবে তখন রাবেয়া আবার ফিরে এসে বললেন,” অরোনী এক মিনিট, তোমাকে একটা জরুরী কথা বলার ছিল।”
” জ্বী মা বলেন?”
” তোমার খালা শাশুড়ী মানে আমার বড়বোন হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা দুইদিনের জন্য টাঙ্গাইল যাচ্ছি।”
অরোনীর মনে মনে কি যে খুশি লাগলো। দুইদিন খুব শান্তিতে থাকা যাবে। অরোনী বলল,” ও আচ্ছা। কখন রওনা হবেন?”
” এইতো কিছুক্ষণের মধ্যেই। রাফাত আমাদের গাড়ি করে দিয়ে আসবে। তুমি জলদি নাস্তা খেয়ে তৈরী হয়ে যাও।”
অরোনীর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। দূর্বোধ্য হেসে বলল,” আমি তৈরী হবো মানে?”
” কারণ তুমিও আমার সাথে যাবে। ”
” মানে?”
” কেন? কোনো সমস্যা? তুমি আমার একমাত্র পুত্রবধূ৷ তোমাকে রেখে আমি যেতে পারি? তাছাড়া তোমার খালা শাশুড়ীও তো তোমাকে দেখেনি। এবার তোমাকে নিয়ে গেলে খুব খুশি হবেন।”
অরোনী কঠিন মুখে কিছু বলতে নিচ্ছিল অমনি রাবেয়া তার হাত চেপে ধরে অনুনয়ের স্বরে বলল,” প্লিজ মা, নিষেধ করো না। আমার বোনটা ভীষণ অসুস্থ। হঠাৎ যদি ভালো-মন্দ কিছু ঘটে যায়? আমি শেষ দেখাটুকুও দেখতে পারবো না। প্লিজ অরোনী তুমি নিষেধ করো না৷ তোমার পায়ে পড়ছি আমি।”
” ছি মা, এসব কি বলছেন? আমার পায়ে কেন পড়বেন?”
” তাহলে তুমি রাজি?”
অরোনী জবাব দিল না। রাবেয়া হেসে বললেন,” আমি তাহলে ঝটপট গিয়ে তৈরী হয়ে যাই। তুমিও দ্রুত করো।”
রাবেয়া ছাদের দিকে গেলেন। সেখানে তার কিছু শাড়ি দড়িতে ঝোলানো আছে। অরোনী রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা আটকালো। খাবারের ডিশ টেবিলে রেখে ফুঁসতে লাগল। রাফাত গোসল সেরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই অরোনীকে দেখে বলল,” গুড মর্নিং।”
অরোনী রাগী কণ্ঠে বলল,” তুমি তোমার মাকে আমাদের ঘুরতে যাওয়ার সংবাদ জানিয়ে দিয়েছো তাই না?”
রাফাত অবাক হয়ে বলল,” তুমি কিভাবে জানলে?”
অরোনী হাসল। দুঃখের হাসি।
” জানার দরকার নেই। ঘটে বুদ্ধি থাকলে এমনিই বোঝা যায়।”
” মানে?”
” তোমার মা এসেছিলেন। আমাকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেছেন।”
” বাহ, ভালোই তো। তাহলে খেয়ে রেডি হয়ে যাও।”
” রেডি হবো। কিন্তু ঘুরতে যাওয়ার জন্য না। অসুস্থ রোগীর সেবা করার জন্য।”
” অসুস্থ রোগী আবার কে?”
” ওহ, তুমি জানোই না? তুমিই তো আমাদের গাড়ি করে পৌঁছে দিবে। তোমার কোন খালা নাকি অসুস্থ। মা এখন তাকে দেখতে টাঙ্গাইল যাবেন। আমাকেও সাথে নিবেন। রোগীর সেবা করার জন্য আয়া-বুয়া লাগবে না?”
” আশ্চর্য! মা তো এই ব্যাপারে আমাকে কিছুই বলেননি।”
” তোমাকে বলার কোনো প্রয়োজন আছে? তুমি মায়ের ছেলে, মা যা বলবে তাই তো করবে। মা যদি বলে আরেকটা বিয়ে করতে তাহলে সেটাও কোরো।”
অরোনী একটু থেমে বলল,” আমরা যে আজ ঘুরতে যাবো এটা জেনেই তিনি এসেছেন৷ এর মানে সব প্ল্যান করা। এখনও কি বুঝতে পারছো না?”
রাফাত অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। অরোনী বলল,” আমার কথা বিশ্বাস না হলে মা ছাদেই আছেন। গিয়ে জিজ্ঞেস করো যাও।”
রাফাত সত্যি সত্যি ছাদের দিকে গেল। অরোনী অবাক! রাফাত যে আসলেই যাবে এটা সে বুঝতে পারেনি। কি মনে করে যেন অরোনীও রাফাতের পেছন পেছন গেল। এমনভাবে গেল যাতে রাফাত বুঝতে না পারে।

রাবেয়া দড়ি থেকে শাড়ি খুলছেন। রাফাত পেছনে দাঁড়িয়ে বলল,” মা, টাঙ্গাইলের রুকু খালা কি অসুস্থ?”
রাবেয়া পেছনে ঘুরে সরল মুখে বললেন,” হ্যাঁ রে বাবা। খুব অসুস্থ!”
” আমাকে জানাওনি কেন?”
” আগে আমি নিজেও জানতাম না। একটু আগেই খবর পেয়েছি। তোর খালার সাথে কথা হলো।”
” কি এমন হয়েছে খালার যে আজকেই যেতে হবে? আর অরোনীকে নিয়ে কি করবে? তার কি ওখানে কোনো কাজ আছে?”
” তোর খালা অরোনীকে খুব দেখতে চেয়েছিলেন। বয়স্ক মানুষ, যদি ভালো-মন্দ কিছু ঘটে যায়?আর আমি তো একা যেতে পারবো না৷ অরোনী সাথে থাকলে ভালো হবে।”
” রুমা, নিলি অথবা তানজু ওদেরকে নিয়ে যাও। অরোনী তো কোনো কাজের না। তুমিই সারাক্ষণ বলো। তাহলে এখন কাজের সময় এই অকাজের মেয়েটিকে কেন নিতে চাইছো?”
অরোনী বিস্মিত হয়ে গেল। তার নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না। রাফাত এইভাবে কথা বলছে? তাও নিজের মায়ের সাথে? সূর্য আজ কোনদিকে উঠল!
রাবেয়া কঠিন মুখে বললেন,
” অরোনী কাজ না করলেও আমার কথা শোনে৷ তোর বোনেরা কি আমার কথা শুনবে? ওদের নিয়ে লাভ কি? তাছাড়া সেবা-যত্নের একটা ব্যাপার আছে না? অরোনী না গেলে এসব কে করবে? তোর বোনরা তো করবে না। ”
” অরোনীও করবে না। তুমি বরং নার্স ভাড়া করে নিয়ে যাও। তোমাকে সঙ্গও দিবে আর সেবা-যত্নও করবে। আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি।”
নার্সের কথা শুনে অরোনীর বেশ জোরে হাসি পেল। এতো উচিৎ জবাব সে নিজেও দিতে পারতো না। রাবেয়া বললেন,” তোর বউ আমার সাথে গেলে কি সমস্যা? তোদের ঘুরতে যাওয়াটা কি এতোই গুরুত্বপূর্ণ? ”
” ঘুরতে যাচ্ছি না মা। অরোনী অসুস্থ। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।”
” কই? অরোনী দেখি বলল সে সুস্থই আছে।”
” তোমাকে বলেনি আর কি। সব অসুস্থতার কথা কি বলা যায়?”
” ঠিকাছে। তাহলে যা৷ তোরা ফিরে এলেই যাবো। আমি অপেক্ষায় থাকবো। ”
” অপেক্ষায় থেকে লাভ নেই। আমাদের ফিরতে রাত হবে।”
” রাত কেন হবে? ডাক্তার দেখাতে তো এতো সময় লাগার কথা না।”
” সিরিয়াল অনেক থাকে। আর দুইবার টেস্ট করাতে হবে। বিকালে একটা, সন্ধ্যায় আরেকটা। রাত হবেই।”
অরোনী মুখে হাত দিয়ে বিস্ময় সামলাচ্ছে। রাফাত যে এতো চমৎকারভাবে মিথ্যে বলতে পারে তা সে ভাবতেও পারেনি। মনে হচ্ছে নিজের স্বামীকে অরোনী আজ নতুনভাবে আবিষ্কার করল। বাব্বাহ! অরোনী বাকি কথা আর শুনল না। মনে হচ্ছে শাশুড়ী যথেষ্ট জব্দ হয়েছে। সে খুশিমনে রুমে চলে এলো। আলমারি খুলে জামা সিলেক্ট করতে লাগল। আজ কোনটা পরবে?
রাফাত চলে যাওয়ার সময় আবার পেছন ফিরে বলল,” আরেকটা কথা মা, বাড়িতে কাজের মানুষের অভাব নেই। পুষ্পর মা আছে, রিতু আছে, প্রয়োজনে আরেকজন রাখো। তবুও অরোনীকে মশলা বাটতে দিও না।”
” মশলা বাটার কথাও তোর বউ বলে দিয়েছে?”
” অরোনী কিছু বলেনি। তোমার নামে ও আমাকে কখনোই কিছু বলে না।”
” তাহলে তুই জেনেছিস কিভাবে?”
” কিভাবে জেনেছি সেটা বড় কথা না। কিন্তু অরোনী যেই কাজ পারে না সেই কাজ ওকে তুমি করতে দাও কেন?”
” কাল বাড়িতে অনেক কাজ ছিল। সবাই-ই কাজ করেছে।”
” কিন্তু মশলা বাটা অরোনীর কাজ না। যেই কাজ তুমি নিজে কখনও করোনি সেই কাজ বাচ্চা মেয়েটাকে কিভাবে করতে দিলে?”
” অরোনী বাচ্চা মেয়ে?”
” নিলি যদি বাচ্চা হয় তাহলে অরোনীও বাচ্চা।”
রাবেয়া শাড়ি হাতে গুজে নিতে নিতে বললেন,” ঠিকাছে। আমার অনেক বড় অপরাধ হয়েছে। এখন কি মাফ চাইতে তোর বউয়ের পা ধরে?”
” তোমার যদি নিজের মেয়ের পায়ে ধরে মাফ চাইতে লজ্জা না লাগে তাহলে চাইতে পারো। আমার কিছু বলার নেই।”
রাবেয়া জবাব দেওয়ার ভাষা পেলেন না। ঘটঘট করে ছাদ থেকে বের হয়ে গেলেন। রাফাত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মায়ের সাথে রাফাত প্রথম এইভাবে কথা বলছে না। সবসময়ই বলে। কিন্তু অরোনীর আড়ালে। অরোনীকে এসব কখনও জানতে দেয় না। আবার মাঝে মাঝে মায়ের কথা শুনে সে অরোনীকেও বকে। সেটাও মায়ের আড়ালে। রাফাত জানে দু’জনেরই দোষ আছে। কার দোষ কোথায় সেটাও রাফাত বোঝে। কিন্তু সামনাসামনি কাউকেই কিছু বলে না। যদি অরোনীর সামনে মাকে একদিন কড়া কথা বলে তাহলে অরোনী তার অন্যায়ের প্রশ্রয় পেয়ে যাবে। আবার মায়ের সামনে অরোনীকে কড়া কথা বললে মা প্রশ্রয় পাবেন। তাই দু’জনকেই আলাদা বোঝাতে হয়।
রাফাত রুমে ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,” মা ম্যানেজ হয়ে গেছে।”
অরোনী হেসে জবাব দিল,” তুমি যে মাকে ম্যানেজ করতেই গেছো এটা আমি জানি!”
” কিভাবে জানলে?”
” ব্লেকমেইল! ভিডিও যদি ফেসবুকে আপ্লোড করে দেই এই ভয় তো তোমার এখনও আছে। সেজন্যই মাকে ম্যানেজ করেছো। ঠিক বললাম না?”
রাফাত হেসে ফেলল। অরোনী মোটেও ঠিক বলেনি। ভিডিওর কথা রাফাতের মনেই ছিল না। অরোনী উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” বাই দ্যা ওয়ে থ্যাংকস। টাঙ্গাইল যাওয়ার কথা শুনে আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম।”
” তোমাকে টাঙ্গাইলও যেতে হবে না।”
” ডাবল থ্যাংকস! ”
রাফাত অরোনীর হাত ধরে বলল,” শুধু থ্যাংকস?”
অরোনী জানে রাফাত কি চায়। সে আজ খুব খুশি। ইচ্ছে করছে চুমু-টুমু দিয়ে রাফাতকে চমকে দিতে। কিন্তু গতকালকের বাগানের ঘটনা মনে পড়তেই মেজাজ আবার বিগড়ে গেল৷ ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বলল,” তোমার তো মাধুরী দিক্ষিত আছে। যাও তার কাছেই যাও।”
রাফাত হতাশ! এই মাধুরী দিক্ষিত নিয়ে যে আরও কয়দিন খোঁটা শুনতে হবে! এখন রাফাতের মনে মনে শুধু আফসোস হচ্ছে,” কেনো যে ঢংটা করতে গিয়েছিলাম!”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here