#ভালবেসে_অবশেষেপর্ব: ৩

0
487

#ভালবেসে_অবশেষেপর্ব: ৩
#নুশরাত_জেরিন

মিলিদের রওনা হবার কথা ছিল সকাল সকাল, নাস্তা সারার পরেই। আটটা কী নয়টার ভেতর। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রওনা হতে হতে ১২ টা বেজে গেলো। মিলি যেন যেতেই চাইছিল না, তাকে এক প্রকার জোর করে গাড়িতে বসানো হলো। গাড়িতে বসার আগে আতাউর রহমান মিলিকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলেন। মেয়েটাকে এভাবে বিয়ে দিতে তার নিজেরও ভালো লাগেনি। মেয়ের মতামত না নিয়ে, হুটহাট এক বিবাহিত ছেলের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে মিলি যে তার উপর রেগে আছে সে কথাও তিনি বুঝতে পেরেছেন।
তবে মেয়েটাকে তিনি অপাত্রে দান করেননি। সিয়ামকে তিনি খুব ভালভাবে চেনেন, বড্ড পছন্দ করেন ছেলেটিকে।
মিলির হাতটা সিয়ামের হাতে তুলে দিতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেললেন। বললেন,
“আমার বুড়িমা কে দেখে রেখো বাবা, অযত্ন করো না কখনও।”

সিয়ামকে তখন উদভ্রান্তের মতো দেখালো। সে প্রতুত্তর না করে মাথা নাড়লো।
মিলির হাত তখনও তার হাতের মুঠোয় বন্দি।
মিলির কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল তখন…নিজেকে কেমন পরিপূর্ণ মনে হচ্ছিল। তবে বাবার কান্না দেখে সে নিজেও কেঁদে ফেললো। অথচ সে বারবার নিজে শক্ত থাকার প্রতিজ্ঞা করেছিলো। ভেবেছিলো যাওয়ার সময় একটু কাঁদবে না, একদম শক্ত থাকবে। নয়ত বাবা মাকে কে সামলাবে।
আপাও যে তার সাথেই যাচ্ছে। দুজনার একই শশুড়বাড়ি হলো। কিন্তু অবাধ্য চোখ কথাই শুনলো না, সমানে বর্ষন হয়েই চললো।

গাড়িতে বসেও মিলির কান্না থামলো না। একটু পর পর হিচকি তুলে কাদতে লাগলো। নীরা পাশে বসে বারবার সান্তনা দিতে লাগলো।
নীরার স্বামীর নাম সৌরভ, বেশ হাসিখুশি মানুষ। সিয়ামের মত মোটেও না, বরং পুরো উল্টো।
সে মিলিকে স্বাভাবিক করতে বলে উঠলো,
“তোমাকে আজ থেকে কী বলে ডাকবো বলোতো? মিলি বলে ডাকবো, নাকি ভাবি বলবো?”

মিলি ততক্ষণে কান্না কমে গেছে।
“ভাবি কেনো ডাকবেন সৌরভ ভাই, আমি কী আপনার চেয়ে বয়সে বড়?”

“কিন্তু ভাইয়া তো আমার চেয়ে বড়, তার বউ হিসেবে বয়সে না হলেও সম্পর্কে তুমি আমার বড় ই হও।”

সিয়াম ড্রাইভিং করতে করতে একবার আড়চোখে মিলির দিকে তাকালো।
মিলি বলল,
“সে আমি জানি না, আমাকে আপনি ভাবি ডাকবেন না মানে ডাকবেন না। কেমন অদ্ভুত লাগবে আমার কাছে। তাছাড়া আমি আপনার ছোট বোন হই বলেছিলেন না?”

সৌরভ হেসে ফেললো। “আচ্ছা ডাকবো না। তবে তুমি আমার বোন হলে ভাইয়াকে তো দুলাভাই ডাকতে হয়?”

সিয়াম কড়া চোখে তাকালো। সাথে সাথে সৌরভ নিভে গেলো। তার ভাইটাকে সে যমের মত ভয় পায়। হুটহাট রেগে যাওয়া তার স্বভাব। যদিও আগে এতটাও রাগী ছিল না। আরিয়া বেঈমানীটা করার পরেই….

সিয়াম থামলেও মিলি নিজেকে সামলাতে পারলো না। সে খিলখিল করে হেসে উঠলো। নীরা থামাতে চাইলেও সে থামলো না। হাসতে হাসতে বলল,
“এটা কিন্তু বেশ হবে সৌরভ ভাই।”

সৌরভ নিজেও মাথা চুলকে হাসলো।

বাড়িতে যখন পৌছুলো মিলি তখন ঘুমে কাঁদা, বোনকে আষ্টে পৃষ্ঠে জরিয়ে হুশ জ্ঞ্যান ফেলে শুয়ে আছে।
সিয়াম সেদিকে ভ্রক্ষেপ না করে ভেতরে চলে গেলো। সৌরভ বলল,
“তোমার বোন তো দেখছি একদম তোমার মত নীরা, একবার ঘুমালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধলেও উঠানো যাবে না?”

নীরা চোখ পাকালো।
“ফাইজলামি না করে সামনে থেকে সরো।”

সৌরভ হাসতে হাসতে চলে গেলো।
মিলি উঠলো আরো একটু পর। নীরার ঠেলাঠেলিতে না উঠে উপায় আছে। সে চোখ পিটপিট করে বাড়িটার দিকে তাকালো। আলিশান প্রাসাদের মতো দেখতে। তবে কিছুটা পুরনো আমলের। সামনে অনেকটা অংশ খালি পরে আছে। একটা গাছ অবদি নেই। সচরাচর এমন বাড়ির সামনে সুন্দর বাগান থাকে। কিন্তু এখানে নেই।
মিলি এর আগে দুবার এসেছিলো এ বাড়িতে। আপার সাথে দেখা করে চলে গেছে সবসময়। থাকেনি কখনো। তবে এবার থেকে এ বাড়িতেই থাকতে হবে তাকে।

সিয়ামের মা মিসেস রেনু, সৌরভের মতো হাসিখুশি মানুষ। এমনকি এ বাড়ির কাজের মহিলা, গেটের দারোয়ানটাও হাসিখুশি।
শুধু একটা মানুষই গোমড়ামুখো।
মিলিকে দেখে রেনু বেগম খুশিতে দৌড়ে এলেন। পায়ে একটু লাগলো বোধহয়। সেসবে গুরুত্ব না দিয়ে মিলিকে জড়িয়ে ধরলেন।
তার সংসারটা এবার যদি পরিপূর্ণ হয়….

সিয়ামের ঘরটা খুব বড়, বিশালাকার রুমটায় দুএকটা রংচংহীন শুভ্র আসবাবপত্র ঘিরে আছে। পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন রুম। ছেলেদের রুমও এত গোছানো হয়। মিলির নিজের রুমের অবস্থা মনে পড়লেও মাথা ঘুরে ওঠে।
সে নিজে খুবই অগোছালো মানুষ। বরাবরই এ নিয়ে মায়ের কাছে প্রচুর বকা খেতে হয়।
সে ধীরপায়ে রুমের মাঝে এসে দাড়ালো। বাড়ি থেকে লাগেজ নিয়ে এসেছে সে, এখন শুধু ওয়াশরুম খোজার পালা। নীরা বারবার বলেছিল এ রুমে তার সাথে আসতে, নীরা আসেনি। সিয়ামের রুমে সচরাচর কেউ প্রবেশ করে না। সিয়াম নিজেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে।
সেইজন্যই নীরা মিলিকে দরজা অবধি এগিয়ে দিয়ে গেছে, ভেতরে ঢোকার সাহস সন্ঞ্চয় করে উঠতে পারেনি।
বেলকনির দরজা খুলে সিয়াম রুমে ঢুকলো। মিলি তাকে লক্ষ্য করে বলল,
“পানি খাবেন?”

সে মুলত টিটকারি দিতেই কথাটা বলেছে। লোকটা কাল বাসর রাতে নতুন বউকে প্রথমেই কিনা পানি খাবার কথা বলে! লোকটার বোঝা উচিত, বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা নয়।
তাছাড়া মিলির কথায় সিয়াম কতটা রিয়াক্ট করে এটাও মিলি দেখতে চায়।

মিলির ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে সিয়াম বলল,
“নিয়ে এসো।”

মিলি হতভম্ব হয়ে টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এগিয়ে গেলো। লোকটা টিটকারিও বোঝে না!

সিয়াম পুরো গ্লাস শেষ করে বলল,
“থ্যাংক্স।”

মিলি উত্তর না দিয়ে লাগেজ খুলল। সুতির শাড়ি বের করে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে এদিকওদিক তাকালো। পরক্ষনেই ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে সিয়াম বলল,
“শোনো!”

মিলি পিছু ঘুরে সোজা হয়ে দাড়ালো।
“আমায় বলছেন? ”

সিয়াম ইতস্তত ভঙ্গিতে বলল,
“নতুন জায়গায় কোনো সমস্যা হলে আমায় জানাবে, নীরাকে বিরক্ত করার দরকার নেই। যেহেতু দায়িত্ব আমি নিয়েছি।”

মিলি মুখ খোলার আগে আবার বলল,
“তোমার বাবা ভরসা করে আমায় বলেছেন।”

“শুধু এইজন্যই?”

“হু!”

“আচ্ছা।”

মিলির হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো। লোকটা শুধুমাত্র বাবার কথা রাখতে এমন বলল? নিজে থেকে নয়?

,

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here