অরোনী, তোমার জন্য~৩
লিখা- Sidratul Muntaz
মাছ ভাজতে গিয়ে অরোনীর হাত পুড়ে গেল। পুড়ে গেল বলতে কি, তেলের ছটা এসে হাতে ফোসকা পড়ল। অরোনী ব্যথায় এতো জোরে চিৎকার দিল। কিন্তু কেউ এলো না। মাছ ভাজা চুলোয় যাক। সে দৌড়ে নিজের রুমে চলে এলো। হাতটা কি যে জ্বালাপোড়া করছে! ড্রয়ার থেকে খুঁজে এন্টিসেপটিক নিয়ে লাগাল। তারপর ছাদে চলে এলো। ছাদে এখন খুব বাতাস। একটু বসে থাকতে ভালোই লাগছে৷ রান্নাঘরে এতোক্ষণ গরমে অস্থির লাগছিল। ওইদিকে মাছ ভাজা যে চুলায় সেই কথা বেমালুম ভুলেই গেল অরোনী।
একটা বিষয় ভালো করে ভেবে দেখছিল সে। সব রান্না খারাপ হলে পাত্রপক্ষ ভুল বুঝতে পারেন। ভাবতে পারেন তাদের ইচ্ছে করে বাজে খাবার খেতে দেওয়া হয়েছে। এতে তারা বিয়েতে না করে দিতে পারে। আরও অনেক কিছুই হতে পারে। যেহেতু রুমার পাত্রকে পছন্দ হয়েছে তাই অরোনী চায় না বিয়েটা কোনোভাবে ভাঙুক। তবে শাশুড়ীমাকেও শায়েস্তা করতে হবে। তাই অরোনী মাংসের রেজালা ইউটিউব দেখে আর মাকে ভিডিও কল দিয়ে সাহায্য নিয়ে সুন্দর করেই রান্না করেছে। কিন্তু মাছটা রাঁধতে চেয়েছিল বিছরী করে। কারণ মাছ অনেকেই খায় না। আর একটা আইটেমের টেস্ট খারাপ হলে পাত্রপক্ষ তেমন কিছু মাইন্ড করবে না। কিন্তু রাবেয়া খুব আফসোস করবেন। অন্তত এইটা বুঝতে পারবেন যে অরোনীকে রান্নার দায়িত্ব দেওয়া ভুল হয়েছে। একটা শিক্ষা অন্তত হবে।
মেইন গেইট দিয়ে বিশাল একটা মাইক্রো এসে ঢুকল। অরোনী বুঝতে পারল পাত্রপক্ষ চলে এসেছে। সে দক্ষিণ দিকে গিয়ে আমগাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে পড়ল। যাতে ভালো করে সবাইকে দেখতে পারে। পাত্রের অনেক প্রশংসা শোনা গেছে। দেখা যাক রুমার হবু বর কেমন! একে একে অনেক মানুষ মাইক্রো থেকে নামছে। চার-পাঁচজন মহিলা, দুইটি যুবতী মেয়ে, একটি কিশোরী মেয়ে আর কয়েকজন পুরুষ। পুরুষদের মধ্যে পাত্র কে বোঝাই গেল না। সুদর্শন কাউকেই মনে হয়নি। অরোনী বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। মেঝো চাচা, অরোনীর শ্বশুর, ছোট চাচা, তাহসিন, সবাই পাত্রদের গেইট থেকে রিসিভ করে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। অরোনী এসব দেখতে দেখতে হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে যায়। তার নিজের বাড়ির উৎসবের কথা মনে পড়তে লাগল। আপুকে যেদিন দেখতে এসেছিল…।
পেছন থেকে কারো গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। খুব পরিচিত কণ্ঠ। রাফাত নাকি? অরোনী ছাদের পেছনে গিয়ে দেখল সত্যিই রাফাত। একটি মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মেয়েটাকে কিছুক্ষণ আগেই দেখেছে অরোনী। পাত্রপক্ষের গাড়ি থেকে নেমেছিল। তারা একসাথে বাগানের পেছন সাইডে কি করছে? চারপাশ নিরিবিলি থাকায় অরোনী তাদের কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল। মেয়েটা বলছে,” আমার কিন্তু হাঁটতে খুব ভয় লাগছে৷ আচ্ছা এখানে স্নেইক নেই তো?”
” আছে না, বড় বড় স্নেইক আছে।”
” ওমা, কি বলেন? আমার খুব ভয় লাগছে। আমি কি আপনার হাতটা ধরতে পারি? অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে পড়ে যাবো।”
” নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। আমি নিজে থেকেই ভাবছিলাম আপনার হাত ধরা উচিৎ। কিন্তু সাহস হচ্ছিল না। যদি আবার কিছু মনে করেন!”
মেয়েটা লজ্জিত গলায় বলল,” আরে না, না, কিছু মনে করবো কেন?”
” কি ভাগ্য আমার! মনে হচ্ছে মাধুরী দিক্ষিতকে পাশে নিয়ে হাঁটছি।”
” মাধুরী দিক্ষিত?”
” আপনাকে দেখতে যে অনেকটা মাধুরী দিক্ষিতের মতো সেটা কি আপনি জানেন?”
মেয়েটা শব্দ করে হেসে উঠল।
” আপনি আমার ব্যাগটা একটু ধরুন তো। শাড়ির কুচিটা ঠিক করবো।”
” ফ্লাশলাইট জ্বালাই?”
” লাগবে না। আমি দেখতে পাচ্ছি।”
” কিন্তু আমি মাধুরী দিক্ষিতকে আরও ভালো করে দেখতে চাই।”
মেয়েটা লজ্জায় আরক্ত হয়ে বলল,” আপনার ইচ্ছা হলে জ্বালাতে পারেন।”
মেয়েটি নিচু হয়ে শাড়ির ভাজ ঠিক করছিল। রাফাত হাঁটু গেঁড়ে বসে তার কুচি ধরল। মেয়েটা বলল,” থ্যাংকস।”
অরোনী পুরো ঘটনা দেখে রাগে চিড়বিড় করতে করতে রুমে চলে এলো। আগে রাফাতের প্রতি ন্যূনতম একটা শ্রদ্ধাবোধ ছিল। কারণ রাফাত কখনোই অরোনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে স্পর্শ করেনি। কিন্তু আজ বোঝা গেল সে কেন করেনি। কারণ তার আকর্ষণ তো বাহিরে! ছি, ঘৃণা লাগছে। এজন্যই তো রাফাত কখনও তার কাছে আসতেও চায়নি। না,না, চেয়েছিল। অনেকবারই চেয়েছিল। যেমন আজ সকালের ঘটনা,
গতরাতে রাফাত বাগানে ঘুমিয়েছিল৷ একবারও রুমে আসেনি। কিন্তু সকালে ঘুম ভেঙে অরোনী দেখল রাফাত তার পাশেই শুয়ে আছে। ভয়ে অরোনী জোরে একটা চিৎকার দিল। স্বভাবতই রাফাতের ঘুম ভাঙল অরোনীর চিৎকার শুনে। তব্দা লেগে যাওয়া কান চুলকে বলল,” কি সমস্যা? ডাকাত দেখেছো?”
অরোনী বিড়বিড় করে বলল,
” ডাকাত দেখলেও আমি এতো ভয় পেতাম না।”
রাফাত হাই তুলে মোবাইলে সময় দেখল। তারপর মুচকি হেসে বলল,” আজ একদম পারফেক্ট টাইমে ঘুম ভেঙেছে তোমার। যাও এখন মাকে নাস্তা বানাতে হেল্প করো। মা খুশি হবে।”
শাশুড়ী মা যদি ভালো হতেন তাহলে অরোনী নিশ্চয়ই যেতো। কিন্তু তিনি ভালোমানুষ না। এমন কিছু মানুষ থাকে, যাদের কলিজা ছিঁড়ে রেঁধে খাওয়ালেও বলবে লবণ কম। রাবেয়া হলেন সেই ধাঁচের মানুষ। অরোনী কঠিন মুখে বলল,” পারবো না। তোমার মাকে খুশি করার দায়িত্ব নিয়ে এই বাড়িতে আসিনি আমি।”
” তাহলে কেন এসেছো? আমাকে খুশি করতে? সেটাও তো করো না।”
অরোনী মিষ্টি হেসে বলল,” আগেও বলছি, এখনও বলছি। মায়ের চামচামি ছেড়ে দাও। খুশি থাকবে।”
” এটা ঠিক না অরোনী। মায়ের প্রতি ছেলের ভালোবাসাকে তুমি চামচামি বলতে পারো না।”
” আশ্চর্য, কেবল তোমাকেই দেখলাম এমন করে মাকে ভালোবাসতে। আর কাউকে দেখিনি বিশ্বাস করো!”
” আমি আমার মাকে অনেক ভালোবাসি। মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন।”
” সবার মা-ই সবার জন্য কষ্ট করেন। তার মানে এই না যে তার সমস্ত অন্যায় মেনে নিয়ে তাকেই সাপোর্ট করতে হবে।”
রাফাত অধৈর্য্যের মতো বলল,” অরো! বাদ দাও না প্লিজ। মায়ের বয়স হচ্ছে। বাঁচবেনই আর কয়দিন। কি হয় একটু মানিয়ে চললে?”
” তুমি জানো তুমি আমাকে কি বলছো? জেনে-শুনে কুয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়তে।”
রাফাত কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল,
” থাক, কুয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে না। আমার বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ো। নাহলে কিন্তু আমিই ঝাঁপিয়ে পড়বো। ”
রাফাত সত্যি সত্যি অরোনীর কাছে এলো। চুমু দিতে নিলেই অরোনী বালিশের নিচ থেকে ছুরি বের করে বলল,
” খবরদার। একদম জ*বাই করে ফেলবো।”
রাফাত ছুরি দেখে দূরে সরে গেল। হতাশ কণ্ঠে বলল,” আগে যদি জানতাম এমন অবস্থা হবে তাহলে বিয়ে না করে চিরকুমার থাকতাম।”
অরোনী জবাবে বলল,
” সেইম টু ইউ।”
এরপর রাফাত ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে গেল।
তখন অরোনী ভেবেছিল, আহারে! দজ্জাল মায়ের জন্য শুধু শুধু মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু কিসের কষ্ট? সবই ছিল রাফাতের অভিনয়! সে তো বাহিরের মেয়ে নিয়েই সন্তুষ্ট। অরোনীর দরকার কি? তবে অরোনীও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। রাফাতকে শায়েস্তা করার জন্য সে কঠিন একটা ফাঁদ পেতেছে।
মাছের কথা মনে পড়তেই অরোনী ঝড়ের বেগে রান্নাঘরে ছুটে গিয়েছিল। দেখল শীলা চাচী বিশাল ডিশে করে মেহমানদের জন্য নাস্তা সাজাচ্ছেন। অরোনী কাছে এসে বলল,” চাচীমা, রুপচাঁদা মাছগুলো কই?”
শীলা অরোনীকে দেখেই চোখ বড় করে বললেন,” তুমি মাছ ভাজতে দিয়ে কোথায় চলে গিয়েছিলে? আমি না এলে আজকে সব মাছ পুড়ে যেতো।”
” আমার হাতে ফোসকা পড়ে গেছিল চাচী। তাই এন্টিসেপটিক লাগাতে গেছিলাম।”
” আহারে, হাত এখন ঠিক হয়েছে?”
” হুম। জ্বালাপোড়া আর নেই।”
” ঠিকাছে, তাহলে এগুলো ড্রয়িংরুমে নিয়ে যাও। মাছ আমি রান্না করে ফেলেছি।”
” থ্যাঙ্কিউ শীলা চাচী। তুমি খুব ভালো। তুমি না থাকলে আজ আমার কি হতো!”
অরোনী বড় ডিশ নিয়ে ড্রয়িংরুমে এলো। এতো মানুষের সামনে এইভাবে আসতে তার লজ্জা লাগছিল। সারাদিন চুলার কাছে ছিল। তাই চেহারা মলিন হয়ে আছে। জামা-কাপড়ও অপরিষ্কার। রাবেয়া অরোনীকে দেখে মুখটা কালো করে ফেললেন। এটাই তার স্বভাব। উপস্থিত সকলের দৃষ্টি অরোনির উপর স্থির হলো। অরোনি তাকাল পাত্রের দিকে। রুমার পাশে বসে আছে ছেলেটা। যেভাবে তাকে সুদর্শন বলা হচ্ছিল, এই ছেলে কিন্তু তত সুদর্শন নয়। বয়সটাও বেশি লাগছে। ত্রিশের উপরে তো হবেই। দিলারা চাচী বললেন,” অরোনী, ডিশটা এইখানে রেখে দাও।”
পাত্রের মা হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন,” ওর পরিচয়?”
ছোট চাচী দিলারাই জবাব দিলেন,” এই বাড়ির ছোটবউ। রাফাতের বউ।”
” ও।”
পাত্রের মায়ের হাসি মুখ একটু গম্ভীর হয়ে গেল। মনে হয় তিনি অন্যকিছু আশা করেছিলেন। অরোনী এদের মধ্যে রাফাতের সাথে বাগানে হাঁটতে যাওয়া মেয়েটিকেও খুঁজে পেল। রাফাতের নাম শুনে মেয়েটা চমক লাগা দৃষ্টিতে অরোনীকে দেখতে লাগল। যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। পাত্রের বাবা বললেন,” তোমার নাম কি মা?”
অরোনী হেসে জবাব দেয়,” অরোনী।”
পাত্রের মা আগ্রহী হয়ে বলেন,” তোমার কোনো ছোটবোন আছে?”
” হ্যাঁ আছে। ক্লাইস নাইনে পড়ে। ওর নাম..”
অরোনী খেয়াল করল ননদ, শাশুড়ী, চাচী শাশুড়ী, সবাই ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অরোনী বুঝল তার এখানে দাঁড়িয়ে থাকা কেউ পছন্দ করছে না৷ তাই অরোনী কথা না বাড়িয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলো ড্রয়িং রুম থেকে।
রাতে রাফাত রুমে ঢুকে দেখল অরোনী হাত-পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। রাফাত সোফায় বসতে বসতে বলল,” সমস্যা কি? আজ তুমি এখানে ঘুমাচ্ছো নাকি?”
অরোনী চোখ বন্ধ রেখে জবাব দিল,” হুম। আমার এখানে আরাম লাগছে।”
” তাহলে আমি?”
” সোফায় শোও।”
” ইম্পসিবল।”
” অফকোর্স পসিবল। এখন থেকে আমি যা বলবো তাই পসিবল হবে। কারণ আমার কথা মানতে তুমি বাধ্য।”
” এক্সকিউজ মি? এতো খারাপ সময় এখনও আসেনি আমার , হুহ!”
অরোনী ফোন টিপতে টিপতে বলল,
” তোমার খারাপ সময় আসতে আর বাকি নেই।” এই কথা বলেই রাফাতের দিকে নিজের মোবাইলটা এগিয়ে দিল অরোনী। রাফাত ভ্রু কুচকে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই ভয়ে আৎকে উঠল। সিমির সাথে যে সে বাগানে হাঁটছিল সেই দৃশ্যটাই অরোনী ভিডিও করে রেখেছে। রাফাত কিছুক্ষণ হা করে ভিডিওটা দেখল। তারপর ছো মেরে মোবাইলটা ছিনিয়ে নিতে চাইল। অরোনী তার আগেই হাত গুটিয়ে ফেলল। তারপর হাসিমুখে বলল,” আমি এখন এই ভিডিও ফেসবুকে আপ্লোড করবো।”
রাফাত পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। এইভাবে সে ধরা খাবে বুঝতেও পারেনি। মেয়েটা পাত্রের ছোটবোন, সিমি। সে রাফাতকে বলেছিল বাগান ঘুরিয়ে দেখাতে। আর ছাদে অরোনীকে দেখতে পেয়েই রাফাতের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসে। অরোনীকে জ্বালানোর জন্য সে সিমির সাথে টুশকি মারতে শুরু করে। ইচ্ছে করেই জোরে জোরে কথা বলছিল যাতে অরোনী দুইতলার ছাদ থেকেও সব শুনতে পায়। উদ্দেশ্য ছিল অরোনীকে হালকা জ্বলতে দেখবে। ঈর্ষায় পুড়তে দেখবে। কিন্তু এই ফাজিল মেয়ে যে জ্বালাপোড়া বাদ দিয়ে ভিডিও করে রাখবে সেটা কে জানতো? আবার বলছে ফেসবুকেও নাকি আপ্লোড করবে। এ তো মহাসর্বনাশ! এই ভিডিও পরিচিত কেউ দেখলে সবাই রাফাতকে ভুল বুঝবে। রাফাত অনুনয় করে বলল,
” প্লিজ এটা করো না অরো। মান-সম্মানের বিষয়।”
” এখন মান-সম্মানের বিষয়? টাংকি মারার সময় মনে ছিল না?”
” স্যরি।”
তারপর রাফাত একটু জ্বালানোর জন্য বলল,” তুমি কি জেলাস নাকি?”
অরোনী ফুঁসে ওঠা কণ্ঠে উত্তর দিল,” ইম্পসিবল। আমি জেলাস হবো কোন দুঃখে? তোমার ইচ্ছা করলে একটা না, দশটা মেয়ের সাথে ঘোরো। আই ডোন্ট কেয়ার। শুধু আমার কাছে না এলেই আমি খুশি।”
” রিয়েলি? তাহলে তুমি ভিডিও কেন করেছো?”
” তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য! যাতে আমি যা বলবো তুমি তাই শুনতে বাধ্য থাকো।”
রাফাত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” বুঝেছি। বলো কি চাও?”
” আমাকে নিয়ে কাল শপিং-এ যেতে হবে। আমরা সারাদিন ঘুরবো। যেটা মন চাইবে সেটা কিনবো। রাতে ডিনার করে ফিরবো।”
” আমার সাথে ঘুরে বেড়ানোর এতো শখ তোমার? এটা প্রথমে বললেই হতো। ব্ল্যাকমেইলের দরকার ছিল না।”
” দরকার আছে। কারণ বের হওয়ার সময় তোমার বোনরা যখন আবদার করবে আমাদের সাথে যেতে তখন তুমি তাদের নিতে পারবে না। কারণ আমাকে বাড়িতে রেখে বহুবার তুমি ওদের নিয়ে ঘুরতে গেছো। তখন আমি যাওয়ার জন্য লাফাইনি।”
” এটা ঠিক হবে না অরো। সবাইকে রেখে তোমাকে একা ঘুরতে নিয়ে গেলে মা রাগ করবেন।”
” এটাই তোমার মায়ের প্রবলেম। আমাকে একা রেখে সবাইকে ঘুরতে নিয়ে গেলে তো তিনি রাগ করেন না। তখন খুব খুশি থাকেন। আর যখন সবাইকে রেখে একা আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে তখন উনি রেগে যাবেন? তিনি যে আমার ব্যাপারে ভীষণ, ভীষণ টক্সিক এটা কি এখনও বুঝতে পারো না তুমি? আমি যেটাই করবো সেটাই উনার অপছন্দ হবে। কোনোকিছু করার স্বাধীনতা নেই এই বাড়িতে আমার। এমনকি নিজের হাসব্যান্ড নিয়ে একটু ঘুরতে যাবো সেটা পর্যন্ত সম্ভব না। দল বেঁধে ননদ নিয়ে যেতে হবে। কি আশ্চর্য! ”
” আচ্ছা কাম ডাউন। আমরা একাই যাবো।”
” আর তোমার মা যদি কিছু বলে?”
” আমি মাকে ম্যানেজ করবো।”
অরোনী হেসে বলল,” এইতো। এটাই শুনতে চেয়েছিলাম। এখন আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চাও।”
” হোয়াট? কেন?”
” অন্যায় করেছো তাই।”
” ওকে। মাফ করে দাও।”
রাফাত অরোনীর পায়ে হাত দিতে এলেই অরোনী বলল,” থাক, থাক, মাফ করে দিলাম। এখন যাও, সোফায় গিয়ে ঘুমাও।”
” এবার কিন্তু বেশি হচ্ছে অরোনী। ওই ছোট্ট একটা সোফায় আমি আঁটবো না। আমার শরীর আঁটবে না।”
” তাহলে মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে পড়ো! আমি আজ বিছানা ছাড়ছি না।”
” আচ্ছা আমি তো তোমার শর্ত মেনে নিয়েছি। তাহলে আজকে অন্তত আমরা একসাথে…”
অরোনী চিৎকার করে উঠল,” অসম্ভব। তোমার আমাকে কেন দরকার? ফ্লার্ট করার জন্য মাধুরী দিক্ষিত আছে না? তার কাছে যাও।”
রাফাত খুব জোরে হাসতে লাগল।
” বিশ্বাস করো এটা প্রাংক ছিল। আমার রুচি এতোটাও খারাপ না।”
” তাই? তাহলে তোমার রুচি কেমন শুনি?”
” আয়নায় তাকাও তাহলেই বুঝবে আমার রুচি কত উচ্চমানের।”
” এসব বললে আমি কনভিন্স হবো না।”
” তাহলে কি করলে কনভিন্স হবে?”
” মায়ের চামচামি বন্ধ করলেই আমি কনভিন্স হবো।”
রাফাত রাগে চোখ বন্ধ করে বলল,” আমি কখন মায়ের চামচামি করলাম?”
” এটাও জিজ্ঞেস করছো? সারাক্ষণ মায়ের থেকে বিচার শুনে আমাকে এসে ধমকাও। অপমান করো। এটা কি চামচামি না?”
” তাহলে তুমি কি চাও? আমি তোমার কথা শুনে মাকে গিয়ে ধমকাই? মাকে অপমান করি?”
“আমি কখনও তোমার মায়ের নামে তোমার কাছে বিচার দিয়েছি? তিনি আমার সাথে এতো মিসবিহেভ করেন তাও আমি কখনও বলি না। কিন্তু তিনি বলেন। পদে পদে আমার দোষ ধরেন। আর তুমিও তার কথা শুনে আমার উপর চিল্লাতে আসো। এইটুকু বুঝতে পারো না যে তিনি আমাকে অপছন্দ করেন বলেই এসব করেন? আমি সুখে থাকলেই তিনি সেটা সহ্য করতে পারেন না।”
রাফাত ক্লান্ত গলায় বলল,” তোমাদের এই ঝগড়াঝাঁটি কবে শেষ হবে অরোনী? আমি ফেড আপ হয়ে যাচ্ছি।”
” এই সংসারে যতদিন আমরা একসাথে থাকবো ঝামেলা ততদিন থামবে না। তোমার যেকোনো একজনকে বেছে নিতেই হবে। হয় আমি নাহয় তোমার মা। চুজ ইউর অপশন।”
” আমার দু’জনকেই লাগবে।”
অরোনী হেসে বলল,
” তাহলে সারাজীবন এই ঝামেলাও সহ্য করতে হবে।”
” ঠিকাছে, করলাম।”
মেনে নিয়ে রাফাত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সকালে ঘুরতে যাওয়া নিয়ে বাড়িতে আবার একটা ঘটনা ঘটবে। এই ভেবে রাফাতের দুশ্চিন্তায় ঘুম হয় না।
চলবে