২য় পর্বঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=403604618434297&id=100063542867943
একদা যাকে স্বামী রূপে চেয়েছি,তাকে দুলাভাই ডাকবো ভাবতেই গা গুলাচ্ছে। অবশ্য তখন তাঁর যোগ্য ছিলাম, এখন নয়৷ সে জীবনে এসেছিল অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়ের মতো। এই মনগড়া প্রেমকাব্যটা তেমন বড়ো নয়, তবে অনুভূতির বিচারে ক্ষুদ্রও নয়। তা-ই আজ লিখছি।
—
🥀🌺পৃষ্ঠা- ১
বিয়ে বাড়িতে গাউনের চেইনটা নষ্ট হয়ে খুলে গিয়ে একরকম বিচ্ছিরী পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছি! দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলা হাসতে হাসতে নানা মন্তব্য করছে। সরেও যেতে পারছি না, দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে লজ্জায় চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে।
ঠিক তখনই কারো বজ্রকণ্ঠে কেঁপে উঠি আমি। চোখ তুলতেই দেখি এক অচেনা আগুন্তক সেই ছেলেগুলোকে ধমকাচ্ছেন,
“তোদের সাহস তো কম না! এখানে এসে বেয়াদবী! পিঠের ছাল তুলে দিব একদম! আজকেই লাস্ট এর পর যদি দেখেছি কোনো দিন সারা এলাকা ল্যাংটা করে চড়াবো।”
লোকটার ধমকে এই দিকটা মুহূর্তেই জনমানব শূন্য হয়ে গিয়েছে। তিনি আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখে এগিয়ে আসছেন। আমি কাচুমাচু হয়ে দাঁড়াই।
“দেখে-শুনে জামা পরে আসবে না, মেয়ে? এখন এমন মূর্তির মতো না দাঁড়িয়ে ওড়না দিয়ে গা ঢেকে নেও। আর তুমি কে?”
“আমি আপনাদের পাশের বাড়ির…”
ইতস্তত ভঙ্গিমায় উত্তর দিতে দিতে ওড়নায় হাত রাখতেই তিনি মুখ বাঁকান। কিঞ্চিৎ খোঁচা দিয়ে বললেন,
“আজকালকার জামাগুলোর ওড়না আসলে ওড়না তো নয় যেন মশারির নেট। আমি চোখ বন্ধ করছি আমার সামনে এসে দাঁড়াও। কী হলো দাঁড়াও মেয়ে! দেখো আমার সারাদিন পড়ে নেই! আর না তুমি নায়িকা, না আমি নায়কদের মতো কোর্ট প্যান্ট পরে আছি যে তোমাকে দিব। একমাত্র পাঞ্জাবি তোমায় দিলে মানুষ যা তা ভাববে।”
তাঁর ধমকে আমি তাড়াতাড়ি কোনোরকম অরগাঞ্জার ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে তাঁর সামনে দাঁড়াই। তিনি আমার সাথে তালে তাল মিলিয়ে যতোটা সম্ভব আমাকে আড়াল করে হাঁটছেন। অসম্ভব রকমের অস্বস্তি বোধ হচ্ছে কোনো অচেনা ছেলের এতো কাছে আসায়, যদিও ছোঁয়া লাগেনি, তবে দূরত্বও এতোটাই কম যে তাঁর উষ্ণ শ্বাসও আমি বোধ করতে পারছি না।
কমিউনিটি সেন্টারের মানুষের সমারোহ কম থাকা দিক দিয়ে আমাকে একটি বিশালাকার কামরায় নিয়ে আসে, বোঝা যাচ্ছে এটা ড্রেসিং রুম কাম রেস্ট রুম বউয়ের জন্য।
ঢুকে উলটো দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলেন,
“দেখো মেয়ে, ঐ কর্নারের চেঞ্জিং রুমে আমার বোনের একটা শাল রাখা আছে। প্যাঁচিয়ে নেও। এর চেয়ে বেশি সাহায্য আমার দ্বারা হবে না।”
তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলেও আমি চিন্তায় বিভোর হয়ে মাথা ঝাঁকাই। অতঃপর আমি চেঞ্জিং রুমে ঢুকি। সেই অচেনা যুবক চলে যাওয়ার জন্য দরজা খুলতে অগ্রসর হয়।
এমন সময় একজন মধ্যবয়স্ক নারী ‘আরিশা’ বলে চেঁচাতে চেঁচাতে এ ঘরে ঢোকেন। লোকটার এই আওয়াজ শুনে কী হলো কে জানে ছুটে এসে আমার পিছনে চেঞ্জিং রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলেন।
আমি তখনও তাঁর বোনের ওড়না পরিনি। বরং, নিজের ওড়না বা হিজাবটুকুও গায়ে নেই। আবারও ঢেকে-ঢুকে পরতেই নিচ্ছিলাম তিনি ঢুকেন। আঁতকে উঠে যেই না চিৎকার করে কিছু বলতে যাবে তিনি কাছে এসে মুখ চেপে ধরেন।
“দেখো মেয়ে, আমার মামী এসেছেন। তিনি যদি ভুলেও আমার সাথে এই ছেঁড়া পোশাকের কোনো মেয়েকে দেখে সারা দুনিয়ার সাথে আমার সাদা চরিত্রকে ফুটবল বানিয়ে খেলবেন। দয়া করে চুপ থাকো।”
তিনি হুমকি দিলেন না অনুরোধ করলেন বুঝলাম না। কথাগুলো অনুরোধবাচক হলেও, কণ্ঠের তেজ আর কঠোরতাটা হুমকির মতোই। আমি চুপ করে থাকলাম। তবে আমার বড্ড বেশিই দমবন্ধ লাগছে, অস্বস্তিও হচ্ছে। চেঞ্জিংরুমটা অনেক ছোটো একজন মানুষ দাঁড়ানো জন্যই ঠিক আছে, তাও অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবানদের জন্য নয়। সেখানে ছেলেটা আমার সাথে, ছুঁই ছুঁই দূরত্ব আমাদের।
এ কোন বিপদে পড়লাম আমি! মাথাটা ভনভন করছে আমার। বাহিরে থেকে শোনা যাচ্ছে তাঁর মামীর বিড়বিড় করার শব্দ, পদচারণার আওয়াজ। হুট করেই তিনি চেঞ্জিং রুমের দরজায় ধাক্কা দেন।
“এই চেঞ্জিং রুমের আবার কী হলো? খুলছে না ক্যানো?” আরও জোরে জোরে ধাক্কা দিতে শুরু করেন। ভেঙে হলেও যেন এ দ্বার আজ খোলা অত্যাবশ্যকীয় কর্ম এই নারীর জন্য।
আমার ভয়ে কেঁদে দেওয়ার দশা! বুদ্ধিদীপ্ত ছেলেটি কড়া চোখে তাকায় আমার দিকে, ইশারায় চুপ থাকতে বলে।
হাসি হাসি মুখ করে শুধায়,
“আরে মামী, আমি এইখানে৷ আমার পায়জামা কীসের সাথে খোঁচা খেয়ে যেন ছিঁড়ে গিয়েছে। চেঞ্জ করছি। আপনার আনা ঐ সুন্দর ধুতি আর পাঞ্জাবি পরছি মামী। কী সুন্দর মামী, পুরাই আপনার মতোন। তবে ডিস্টার্ব কইরেন না। তাহলে কিন্তু সুন্দর হবে না পরা, তা না হলে মানুষ আপনার চয়েসের প্রশংসার জায়গা দুর্নাম করবে।”
লোকটার কথায় মহিলাটি মুহূর্তেই যেন উত্তেজিত এবং আনন্দিত হয়ে উঠেন। খুশিতে গদগদ কণ্ঠে বলে উঠেন,
“ওহ, আবেগ বাবা তুই আমার দেওয়া কাপড় পরছিস! তোকে তো আগেই বলেছিলাম পরতে! যাই হোক আমি তাহলে বাহিরেই বসছি। দেখতে ভালো মতো পরছিস না কি! পরে তো মানুষ আমার পছন্দের দোষ ধরবে!”
তাঁর কথা শুনতেই আমার চোখ গোল গোল হয়ে যায়। আর সাথের মানুষটি তাৎক্ষণাৎ নিজের কপালে জোরালো চাপড় মারেন। চিন্তায় মাথা টনটন করছে আমার, আমার মা বা অন্যকেউ যদি ঘুণাক্ষরেও খবর পায় এ বিষয়ে। তাহলে আমার তো পটল তুলতে হবে।
কোনোকালেই টেনশন মাথায় নিতে পারি না আমি, আজও তাই হলো। ধীরে ধীরে চোখের সামনে অন্ধকার ছেয়ে যাচ্ছে। তবে কি নিজের মান-সম্মান আজ ধুলোয় মিশতে চলেছেই?! অন্ধকারে তলিয়ে যেতে যেতে শুধু একটাই দোয়া করলাম, এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই, নিজের মান-সম্মানের রেহাই।
চলবে…
#জানালার_ওপারে
– ঈপ্সিতা শিকদার
(রেসপন্স পেলে দ্বিতীয় পর্ব আজকেই পোস্ট করবো। যেহেতু প্রায় লিখা আছে 🙃)