#জানালার_ওপারে
||২য় পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
“ভাবী, আপনার মাইয়ার তো বিয়ে হইবো না। যেই কাণ্ড কইরা বইয়া আছে, তার উপর নাই রূপ, গুণ। জামাই পাইবো কইত্তে?” ডায়ারিটা বন্ধ করে ড্রইংরুমে আসতেই শুনতে পাই প্রতিবেশি কাকীর এমন কটাক্ষ।
বেশ রাগ হলো, উত্তর দিতে চাইলাম কিন্তু দিতে পারলাম না। আমি অসহায়, আল্লাহ আমায় অসহায় করেছেন। মাঝে মাঝে খুব করে জানতে ইচ্ছে আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নিজের ক্ষতি? কেউ কি নিজে যেঁচে নিজের পায়ে কুড়াল মারে?
নির্বাক আমি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে চুপচাপ রাতের খাবার খেতে বসি। কাকী বেরিয়ে যেতে যেতে মুখ বাঁকিয়ে বলেন,
“এমন অবস্থায়ও খাবার গিলে কীভাবে মানুষ!”
আর খাবার খেতে ইচ্ছে করে না। ভাতে পানি ফেলে উঠে যাবো ঐ মুহূর্তে আম্মু এসে বলে,
“হাফসার সাথে আবেগের এঙ্গেজমেন্টের ডেট ফিক্সড হয়ে যাবে। হয়তো সামনের শুক্রবারেই এঙ্গেজমেন্ট। এই মাত্র ফোন করে জানালো।”
হৃদয়ে, মস্তিষ্কে পাহাড় সমান ভার অনুভব হচ্ছে। এলোমেলো পদচারণায় কোনোরকম বিছানায় বসলাম। কেন আপনি আমার হলেন না আবেগ ভাই? কেন আপনার জানালার ওপারেই রয়ে গেলাম আমি আর আমার মনগড়া প্রেমকাব্য? যদি না হওয়ারই হয় তাহলে একবার নাহয় ভুলবশত সাক্ষাৎ হয়েই গিয়েছিল দ্বিতীয়বার এলেন কেন?
ভাবতে ভাবতেই ডায়েরি নিয়ে বসলাম। লিখতে শুরু করলাম সেই আমাদের দ্বিতীয় সাক্ষাতটি।
—
🥀🌺 পৃষ্ঠা- ২
ভার্সিটিতে প্রথম দিন এসে এভাবে সিনিয়র ভাইকে চড় দিয়ে বসবো এ ব্যাপারটা পুরোই অকল্পনীয় ছিল। এক ঝাঁক বাচ্চা সহ মা মুরগীর দৌড়ানি খেয়েছেন কখনও? আমি খেয়েছিলাম ছোটো বেলায় একবার। আমার এখন তেমনই বোধ হচ্ছে। সিনিয়র ভাইদের ভয়ে আমি লুকিয়ে আছি একটা জনমানবশূন্য ক্লাসরুম।
আচ্ছা, ভাইয়াকে কী কল দিব? কিন্তু সে জানলে আবার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে? আমার কপালে মনে হয় আজ দু’দিন যাবত শনিই নাচছে। কথাটা ভাবতেই শুনতে পেলাম সেই পরিচিত বজ্রকণ্ঠ,
“এই মেয়ে বের হয়ে আসো ওখান থেকে। এখনই বের হয়ে আসো।”
অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে দরজা খুলে একফালি আলোর সাথে প্রবেশ করেছে একজন। আলো-ছায়ার খেলায় তাঁর চেহারা দৃশ্যমান নয়। ভিতরে প্রবেশ করলে দেখতে পাই তিনি তো গতকালের আগুন্তক।
সাথে সাথেউ বিয়ে বাড়ির ঘটনা মনে পড়ে গেল। জ্ঞান ফিরার পর নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম নিজের বেডরুমে। আমাকে অবাক করে আব্বু-আম্মু তেমন কিছুই আমায় বলল না।
শুধু বলল,
“হতচ্ছাড়া মেয়ে! না খেতে, না খেতে এমন দশা বানিয়েছিস এখন যেখানে সেখানে জ্ঞান হারাস। মানুষ তো মনে করবে আমরা কিপটে। আর যদি খাওয়া নিয়া টালবাহানা করেছিস!”
তারা চলে গেল। আমাদের বাসায় থাকা দুঃসম্পর্কের কাজিন হাফসাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, আমি না কি ওয়াশরুমের সামনে বেহুশ হয়ে পড়েছিলাম। বউয়ের ছোটোবোন না কি আমায় দেখে সবাইকে জানায়।
আমি তাড়াতাড়ি উঠে আমার জামা চেক করলাম। দেখি চেইন খুলা জায়গাটুকু প্রায় পঞ্চাশ-ষাটেক সেফটিপন দিয়ে আটকানো। তখনই নিজের হাতে চোখ গেল আমার। সেখানে যথাসম্ভব ছোটো অক্ষরে লিখা,
“মেয়ে এতোটুকুতে অজ্ঞান হয়ে পড়লে হবে৷ আরেকটু হলো মেয়ে জনিত কাণ্ডে ফেঁসে যেতাম আমি।”
“এই মেয়ে! কই গায়েব হলা?”
তুড়ি বাজিয়ে জিজ্ঞেস করলেন লোকটি। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আবারও মুখি খুললেন,
“মেয়ে তোমার সাহস তো কম না, তুমি ভার্সিটিতে আজ প্রথম এসেই সিনিয়রের গায়ে হাত তুলেছো। এতো দুঃসাহস কীভাবে হয়?”
আমি কোণঠাসা কণ্ঠে উত্তর দিলাম,
“দেখুন, আমার কোনো দোষ নেই। তারা আমাকে জোরাজুরি করছিল সিগরেটে মুখ দিতে। আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে ছুঁলে বা আমাকে দিয়ে কিছু করাতে চাইলে এমনই হবে।”
তিনি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। যেন খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। আমি আবার যেন গতকালের মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়লাম।
কয়েক মুহূর্ত পর তিনি ফোন বের করে কাউকে কল করে আমার দিকে চোখ রেখেই বললেন,
“হ্যালো কই তুই শফি? ছেলেপেলেগুলাকে নিয়ে আয়, আজ ঠ্যাং ভেঙে শায়েস্তা করেই ছাড়বো!”
তাঁর কথা শুনে আঁতকে উঠলাম আমি। ইচ্ছে করছে দৌড়ে চলে যাই। কিন্তু ভয়ে পা দুটো যেন জমে গিয়েছে। মনে আল্লাহর নাম নিচ্ছি, প্রার্থণা করছি এদের হাত থেকে মুক্তির।
||৩য় পর্ব||
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=403925791735513&id=100063542867943
চলবে…
একদিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ডিফারেন্সে দুটো পর্ব পোস্ট করে দিয়েছি। এই দুটো পর্বে ভালো রেসপন্স পেলে তৃতীয় পর্ব খুব শীঘ্রই দিব।