# তোমাকে পর্ব 2.2
ডিপার্টমেন্টের আজ রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে I ডিপার্টমেন্ট এর সামনের চত্বরে দুটো তাবু লাগানো হয়েছে I ঢাকা মেডিকেল থেকে সন্ধানী রক্তদান গ্রুপ এসেছে স্যাম্পল কালেকশন এর জন্য I পুরো ডিপার্টমেন্ট খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে I দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারঝুলছে I সাধারণত এ ধরনের অনুষ্ঠানে মুনির ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করে I তবে আজ পরিস্থিতি অন্যরকম I আজ মুনির একজন ডোনার I আজ ভলান্টিয়ারদের মধ্যে অন্যতম একজন অনিমা I ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হবার পর থেকে যে যার মত লক্ষ্য স্থির করে তার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে I যেমন নীলার লক্ষ ক্লাসের প্রথম হওয়া তারপর টিচার হিসেবে ডিপার্টমেন্টের জয়েন করা I হাসিব কোনমতে একটা ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে বেরোতে চায় I মনির নিজেকে তৈরি করছে কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডের জন্য I ওর টার্গেট অতি দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হওয়া I যেকোনো মাল্টিন্যাশনাল এ জয়েন করার জন্য ও নিজেকে সবদিক থেকে প্রস্তুত করছে I হল এর ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের একজনের সঙ্গে নিয়মিত বসে ইংরেজি উচ্চারণ আর শব্দসম্ভার বাড়ানোর চেষ্টা করছে I যদিও পাশাপাশি ওকে টিউশনি করতে হচ্ছে খরচ চালাতে হবে বলেI পড়াশোনা ও যে একেবারে করছে না তা নয় I মনির বরাবরই ভাল ছাত্র I যেকোনো বিষয়ের গভীরে যেতে পছন্দ করে I তবে ক্লাসে প্রথম হওয়া ওর লক্ষ্য নয় I বিসিএস কিংবা টিচিং লাইনে ক্যারিয়ার তৈরি হতে অনেকটা সময় লেগে যায় I তাই ও সেই পথে হাটতে চায় না I অনিমা পড়াশোনা নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা নেই I পরীক্ষায় এলে ও পাশ করার জন্য পড়ে I সিক্সটি পার্সেন্ট এর উপরে থাকলেও খুশি I এর নিচে হলে ওর বাবা কষ্ট পাবে অনিমা সেটা চায় না I তবে গানটা খুব যত্ন করে শিখছে I ছায়ানটের কোর্সটা
সামনেই শেষ হয়ে যাবে I তারপরও নিজের মত করে প্র্যাক্টিস করতে পারবে I যদিও অনিমা ক্লাসিক্যাল শেখে তবেও রবীন্দ্র সংগীত নজরুল গীতি আধুনিক সবি গায় I ওর প্রিয় শিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল I অনেকেই বলে তোমার কন্ঠ অবিকল শ্রেয়া ঘোষালের মত I অনিমা পাত্তা দেয় না I ও কাউকে অনুকরণ করতে চায়না I নিজের মত করে গাইতে পছন্দ করে I
প্রথম বর্ষের ক্লাস প্রায় শেষের দিকে I সামনের শীতকালীন ছুটি তারপর পরীক্ষা I এর আগেই এই রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন I অনুষ্ঠান শুরু করলেন চেয়ারম্যান স্যার নিজে রক্ত দিয়ে I তার আগে অবশ্য একটা মোটিভেশনাল স্পিচ ছিল I ঢাকা মেডিকেল থেকে বেশ কিছু ইন্টার্ন এবং স্টুডেন্ট এসেছে স্যাম্পল কালেক্ট করতে I অনিমা দেখল যে ছেলেটা মনিরের স্যাম্পল নিচ্ছে সে ভেইন খুঁজে পাচ্ছে না কয়েক জায়গায় নিডল দেওয়াতে ওর হাত থেকে রক্ত বেরুচ্ছে I অনিমা খুব বিরক্ত হয়ে বলল
কি করছেন? একটু ঠিকমতো করুন না
ছেলেটা আরো নার্ভাস হয়ে আবারো ভুল করল I অনিমা চোখ মুখ কুঁচকে মনিরের দিকে তাকিয়ে বলল
খুব লাগছে মনির
না, আমি ঠিক আছি
মনির মনে মনে হাসলো I এসব সামান্য ব্যথায় ওর কিছু হয়না I মনে আছে একবার ছাদ সারাই করতে গিয়ে মরচে পড়া টিন লেগে ওর পা অনেকখানি কেটে গিয়েছিল I সদর হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়নি I প্রচন্ড জ্বর নিয়ে দুদিন ওকে ওই অবস্থায় থাকতে হয়েছে I সেই তুলনায় এসব সামান্য কাটাছেঁড়ায় ওর কিছুই হয়না I তবে আজ এই মেয়েটার যত্ন দেখে ওর খুব ভালো লাগছে I
কাজ শেষ হলে অনিমা একটা গ্লাসে কোক ঢেলে মনিরের হাতে দিয়ে বলল
চলো বাইরে চলো I YOU NEED SOME FRESH AIR
তাবু থেকে বের হয়ে একটু দূরে ডিপার্টমেন্টের করিডরে ওরা বসলো
কোক টা খাও I YOU NEED SOME FLUID
কোক খেতে ইচ্ছা করছে না I আমি বরং ভিতরে গিয়ে পানি খেয়ে আসি
দাঁড়াও , ভিতরে যেতে হবে না I আমি পানি দিচ্ছি
অনিমা ওর ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে এগিয়ে দিল I মনির ঢকঢক করে সবটা পানি গলায় ঢেলে দিল I ওর এতোটা তৃষ্ণা পেয়েছিল বুঝতে পারেনি I পানি শেষ করে মনির অপরাধীর মতো বলল
সরি, সব শেষ করে ফেললাম
ইটস ওকে পানি তো I তবে অদ্ভুত তুমি কোক না খেয়ে পানি খেতে চাইলে I
পানির তৃষ্ণা কি আর অন্য কিছুতে মেটে I এই যেমন ধরো তুমি যত ভালো রেস্টুরেন্টে খাও না কেন মায়ের রান্নার মত কি আর কোনটা ভালো হয়?
তোমার মা বুঝি খুব ভালো রান্না করেন? অনিমা বিষণ্ণ গলায় জানতে চাইল
আমার মা রান্না করতে আর লোকজন খাওয়াতে খুব ভালোবাসে I নিজের মা বলে বলছি না মায়ের কিছু কিছু আইটেম আসলে ইউনিক
আচ্ছা? শুনে তো খেতে ইচ্ছা করছে
হুম , মা যদি ঢাকায় থাকতো তাহলে একদিন তোমাকে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতাম
কি ধরনের রান্না করেন উনি
সব ধরনের করেন , তবে মায়ের দেশি রান্না গুলো খুব ভালো হয়
ওয়াও
তোমার দেশি খাবার পছন্দ?
খুবই , এই যেমন ধরো বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, মাছ, শাক এগুলো আমার খুব প্রিয়
মা তোমাকে পেলে কি যে খুশি হতেন I আমাকে খাইয়ে একদম আনন্দ পায় না
কেন?
এসব ভর্তা টর্চ খেতে গেলে প্রচুর ভাত খাওয়া লাগে I আমি এত ভাত খেতে পারিনা I আমার খুব অস্থির লাগে I
তুমি খুব লাকি I এত চমৎকার রান্না করার মত একজন মা আছে
সবার কাছেই তার মায়ের রান্না বেস্ট মনে হয় IM SURE তোমার কাছে ও তাই
আমি কখনো আমার মায়ের হাতের রান্না খাইনি
কেন?
আমার মা নেই I আমার যখন 3 বছর বয়স তখন আমার মা মারা যান
মনিরের হঠাৎ করেই মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল I নিজের অজান্তেই ও মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে মনির কিছু বলতে যাবে অনিমা তখনই হাত তুলে বললো
ইটস ওকেI এত আপসেট হওয়ার কিছু নেইI মায়ের কোনো স্মৃতি আমার নেই
আচ্ছা, একটা কথা বলতো তুমি রক্ত দেখে ভয় পাও তাই না?
হ্যাঁ, তুমি কি করে জানলে?
কি হয়? অজ্ঞান হয়ে যাও?
ঐরকমই
তাহলে কোন সুখে তুমি আজকে ভলান্টিয়ার হতে গেলেI তারপর হাসতে হাসতে বলল তুমি অজ্ঞান হলে ওরা তোমাকে সামলাতো না ডোনার কে
অনিমা হিহি করে হেসে দিল I ছেলেটা মজার I প্রসঙ্গ পাল্টে ওর মনটা কেমন ঘুরিয়ে দিল I
তোমার মায়ের কথা বল I উনি তোমাকে খুব ভালোবাসেন তাই না?
মনির হাসতে হাসতে বলল
হ্যাঁ একটা কথা বললেই বুঝবে মা আমাকে কতটা ভালবাসেন I মায়ের কাছে আমি হচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ছেলে I অবশ্য পৃথিবীর সব বাবা মায়ের কাছেই তাদের সন্তানেরা সবচেয়ে সুন্দর
অনিমার মনে হল মনিরের মা ভুল কিছু বলে না I ছেলেটা আসলেই সুন্দরI ও যখন হাসে ওর ডানদিকের গালে একটা টোল পড়ে I ভারী সুন্দর দেখায় I তারপর বিষন্ন কন্ঠে বলল
সব বাবা মায়ের কাছে মনে হয় না
মানে ?
মানে এই ধরো আমার বাবা আমাকে প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয় যে আমি কতটা অসুন্দর
IM SURE উনি মজা করে বলেন
মজা? আমার বাবা মজা করতেই জানে না
মনের হতভম্ব হয়ে গেল I কালো কুৎসিত মেয়েদের বাবাদের কাছে তাদের মেয়েদের রাজকন্যা মনে হয় আর সেখানে অনিমার মত এত সুন্দর একটা মেয়েকে কেউ কি করে অসুন্দর বলতে পারে
আমার ধারনা তুমি বুঝতে পারো না উনি মজা করেই বলেন
মজা করার কি আছে? এটা তো ভুল কিছু না
তার মানে তুমি বলতে চাও তুমি অসুন্দর?
কেন তোমার মনে হয় না আমি অসুন্দর?
মোটেই নাI আমাকে কেউ মার্কিং করতে দিলে আমি তোমাকে 8.5 OUT OF 1O দিতাম
অনিমা বেশ মজা পেলI মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল
WHY 8.5, WHY NO T 10
মনির চিন্তিত কন্ঠে বলল
আমি বোধহয় একটু খারাপ টিচার I কিছু মার্কস হাতে রেখে দিই অকারণেইI
অনিমা খিলখিল করে হেসে উঠলো I হাসতে হাসতে বলল হাসিব তো বলছিল তুমি খুব ভালো টিচার I
অনিমা হাসতে হাসতে ভেঙে পড়ছে I মনির মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল I মেয়েটা একেবারে বাচ্চাদের মত করে হাসে I তারপর আস্তে আস্তে বলল
আমি নিশ্চিত তুমি কখনো তোমার বাবার সামনে এইভাবে হাসুনি, যদি হাসতে তাহলে উনি তোমাকে দশের মধ্যে 100 দিতেন
তোমার সামনে তো হাসলাম, তুমি কত দেবে 100 না STILL 8.5
মনির জবাব দিল না I মনে মনে বলল এই হাসির মার্কস দেবার যোগ্যতা আমার নেই তবে এতটুকু জানি এটা ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতন হাসিI
আরে দোস্ত রক্ত দিয়ে হালুয়া টাইট অবস্থা
হাসির আয় বোস I দিয়েছিস ব্লাড?
হ
হাসিব ওদের মুখোমুখি বসলো তারপর অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
আরে অনিমা, আমাদেরও একটু পানি পুনি খাওয়াও নাকি সব আমার বন্ধুরে খাওয়াইবা
তোমাকে আর কি খাওয়াবো , তুমি তো অলরেডি দুই বোতল কোক খেয়ে ফেলেছ আমি এখান থেকেই দেখলাম
আয় হায় দেইখা ফালাইছো I খাইছেরে I ডোনার গো আবার শট না পইরা যায়
ওরা তিনজন হেসে উঠলো
চলবে…
দ্বিতীয় পর্বের রেসপন্স দেখে খুব মন খারাপ হয়েছিলI প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত যতগুলো পর্ব লিখেছি তারমধ্যে দ্বিতীয় পর্ব টা আমার সবচেয়ে প্রিয় I যে জায়গার বর্ণনা দিয়েছি মূলত সেখানে গিয়েই এই গল্পের প্লট মাথায় আসে I একটু সময় নিচ্ছিলাম যেন জায়গাটা সৌন্দর্যের প্রতীক অবিচার করা না হয় I দুটো করে অংশ একসঙ্গে পোস্ট না করে প্রতিদিন একটা করে দেব ইনশাল্লাহI সবাই সঙ্গে থাকবেন I
প্রথম পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1299859230529101/
দ্বিতীয় পর্বের প্রথম অংশের লিংক
https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1303344493513908/