অভ্র নীল পর্ব-১৪

0
599

#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_১৪
______
নীল একদম খাটের কিনারে শুয়ে আছে……
অভ্র নীলের পাশে এসে দাঁড়ালো বুঝতে পারছে না কি করবে। ওকে ডাকলে তো ওর ঘুম ভেঙে যাবে আর ওকে যে একটু দরে সরিয়ে দেবে সেটার ও উপায় নেই কারণ নিজের কথার খেলাফ করে না একবার বলেছে নীল না চাইলে ওকে স্পর্শ করবে না মানে করবে না!
বিছানার উপর থাকা বই গুলো নিয়ে জায়গা মতো বুক স্টোরে রেখে দিলো। বাহিরে বেশ শীত পরেছে রুমের মধ্যেও শীত পরছে নীল শীতে কাচুমাচু হয়ে শুয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে বিছানার উপর থেকে কম্বল নিয়ে নীলের উপর দিয়ে দিলো নীলও ঘুমের মধ্যে কম্বল পেয়ে জাপ্টে ধরলো যেনো ও কম্বলের জন্যই অপেক্ষা করছিলো অভ্র নীল এর এই কান্ড দেখে মুচকি হাসলো তারপর বিছানার পাশে মেঝেতে হেলান দিয়ে বসে পরলো। নীল পেছনে পরতে গেলো অভ্রর সাথে লেগে পরবে না এটা ভেবে সারা রাত সেখানে বসেই পার করে দিলো। শরীর ক্লান্ত ছিলো বলে বসে বসেই বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরে।
সকালে….!
নীল ঘুম থেকে উঠে বসে দেখলো ওর উপর কম্বল দেওয়া বিছানার উপর বইগুলো ও নেই কিন্তু রাতে শুয়ার সময় বই গুলো এখানেই ছিলো আর ও তো কম্বল ও নেয়নি তাহলে কিভাবে কি ভাবতে ভাবতেই দেখতে পেলো খাটের পাশেই মেঝেতে বসে ঘুমাচ্ছে অভ্র আর নীল খাটের একদম সাইডে নীলের এইটা বুঝতে আর বাকি রইলো না যে বই অভ্র সরিয়েছে আর কম্বলও অভ্র-ই দিয়েছে।
কিন্তু অভ্র এখানে কেনো ঘুমিয়েছে এটা ৫মিনিট ভাবার পর অভ্র আমি পরে যাবো ভেবে এখানে বসে ঘুমিয়ে যায়নি তো আবার আমি তো অনেক ফিল্মে এমন টা দেখেছি। ইশশ বেচারা সারারাত এখানে বসে বসে ঘুমিয়েছে কত কষ্টই না হয়েছে ডাক দিবো কি কিন্তু কিছু যদি বলে এত কেনো ভালোবাসেন আমাকে আপনি? এই বলে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে আসলাম একটা পিংক কালারের শাড়ি নিয়ে আসছি তোয়া বলেছিলো ও আজকে শাড়ি পরবে তাই আমিও পরবো হিহিহি শাড়ি কোনো ভাবে পেচিয়ে রুমে আসলাম কিন্তু মনে হচ্ছে না এটা শাড়ি পরা হয়েছে শাড়ির কুঁচি ধরে এদিক সেদিক করতে করতে রুমে ঢুকছিলাম হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেলাম আর ঠাসস পরে পরে গেলাম অসভ্য লোক আমি পরে গেছি ধরবে তা না করে হি হি হা হা হু হু করে হাসছে কেমনডা লাগে এখন আপনারাই বলেন।
আমি পরে গেছি আর আপনি হাসছেন উঠতে উঠতে বললাম চোখে দেখেন না না-কি কোন দিকে তাকিয়ে চলেন যে আমার মতো লম্বা মানুষ টাকে দেখলেন না!
আচ্ছা তুমি কোন দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলে যে আমাকে দেখতে পেলে ন?
নীল– আপনাকে দেখতে আমার ভয়েই গেছে! হুহহ (মুখ ভেংচি দিয়ে)
কি কিছু বললে? (অভ্র)
এটা কি পরেছে শাড়ি পরতে জানো না শুধু পেঁচিয়ে রাখছো?
নীল– না জানি না তো আপনার কি? এখন সরুন সামনে থেকে আমি তোয়ার কাছে যাবো শাড়ি ঠিক করার জন্য। (মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে)
আজ পর্যন্ত নীল অভ্রকে ঠিক মতো দেখেইনি।
অভ্র– আমারই তো সব সোনা আসে আমিই পরিয়ে দেই।
নীল– এই না আপনি ছুবেন না আমাকে।
অভ্র– না ছুঁয়েও পড়ানো যায়।
নীল– কিভাবে? (ভ্রু কুচকে নিচের দিকে তাকিয়ে)
অভ্র- তোমার একটা শাড়ি দাও আমাকে।
নীল- কেন কেন?
অভ্র- যা বলি তাই করো শাড়ি নিয়ে আসো।
নীল আর কিছু না বলে একটা শাড়ি নিয়ে আসলো অভ্র শাড়িটা নেওয়ার জন্য অবশ্য হাত বাড়িয়ে ছিল কিন্তু নীল শাড়িটা সোফার উপর রেখে দেয়,
অভ্র- উফফ এই মেয়েটাকে যে কি করবো।
সোফার উপর থেকে শাড়িটা নিলো তারপর অভ্র আমি যেভাবে যেভাবে করবো সেভাবে সেভাবে করবেই ঠিক আছে।
নীল- হ্যাঁ।
তারপর অভ্র নিজে একটু একটু করে শাড়ি পড়ছে আর সেইভাবে দেখে দেখে নীল নিজে শাড়ি পরছে।
শাড়ি পরা শেষ একদম পারফেক্ট (অভ্র)
নীল একটু আড়চোখে অভ্রর পায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো শাড়ির কুঁচি দেখে হাসি আটকে রাখতে পারলো না হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।
অভ্র- ও হাসলো কেনো এটা বলে পেছনে ঘুরতেই রুমের বড় আয়নায় নিজেকে আবিস্কার করলো। ওও সিট আমি আর শাড়ি আল্লাহ কেউ দেখলে মান সম্মান ইজ্জত একটারও কোনো টাই থাকবো না থুক্কু তিন টাই তো এক। এই বলে শাড়ি খুলে সোফার উপর ছুড়ে মারলো আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
হল রুমে সবাই নীলকে দেখে অবাক কারণ দেখে মনে হচ্ছে শাড়ি অভ্র নিজে হাতে পরিয়েছে। তোয়া আর বাকি বোনেরা যখন ছোটো ছিলো তখন অভ্রই ওদের শাড়ি পরিয়ে দিতো তাই সবাই নীলকে দেখে ভাবছে শাড়ি অভ্রই পরিয়ে দিয়েছে।
মিসেস ও মিস্টার রাজ চৌধুরী নিজেদের দিকে তাকাচ্ছেন আর মুচকি হাসি দিচ্ছেন।
নীল– মা বাবা তোমরা হাসছো কেনো?
মিস্টার চৌধুরী– না রে মা এমনি বলে আবার ও চায়ের কাপে চুমুক দিলেন।
মিসেস চৌধুরী– তোকে তো শাড়ি বেশ সুন্দর লাগে মাশা আল্লাহ কারো নজর জেনো না লাগে।
এখন চলো ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট রেডি।
মিস্টার রাজ- হু চলো। দু’জনেই চলে গেলো।
তোয়া- ভাবি শাড়ি কি তোমাকে ভাইয়া পরিয়ে দিয়েছে নাকি?
নীল- না তো আমি পরেছি।
তোয়া- ভবস এই ভাবে শাড়ি শুধু ভাইয়া পরায় সত্যি বলো।
নীল- তোমার ভাইয়া পরাই নাই সে দেখিয়ে দিছে আমি পরেছি।
তোয়া– ও কিন্তু ভাইয়া পরিয়ে দিলে বেশ ভালো হত কত রোমান্টিক সিন…(একটা ডেভিল হাসি দিয়ে)
নীল- বেশি পেকে গেছো তুমি খেতে চলো এখন।
তোয়া– হু চলো।
কিছুক্ষণের মধ্যে অভ্র ও রেডি হয়ে নিচে চলে আসে। ঘাড়ে হাত দিয়ে রাখছে আর উফ উফ করছে।
ডাইনিং টেবিল..
মিসেস চৌধুরী- কি হয়েছে বাবা তুই ঘাড়ে হাত দিয়ে রাখছিস কেন?
অভ্র- ওই কিছু না মা শুধু ব্যাথা করছে নাড়াতে পারছি না।
মিস্টার চৌধুরী- রাতে ঘুমিয়েছে কিভাবে যে ঘাড় ব্যাথা করছে আর আজ তো চায়নিজ দের সাথে মিটিং আছে তোমার সমস্যা মিটিং করবে কিভাবে?
অভ্র– আমি ঠিক সামলে নেবো।
নীল- আমি কিছু করতে পারি।
তোয়া- তুমি কি করবে ভাবি?
নীল- সেটা করলে ১মিনিটেই ঘাড় ব্যাথা ঠিক হয়ে যাবে।
অভ্র নীলের দিকে তাকিয়ে আছে নীল তোয়ার দিকে।
মিসেস চৌধুরী- কি সেটা।
মিস্টার চৌধুরী- যা করার কর মা কিন্তু ওকে সুস্থ করে দে।
নীল- তোয়া আমাকে বেলুন এনে দিতে পারবে!
(এই বেলুন সেই ফুটকা ফুলানোর বেলুন না, এটা রুটি বেলার বেলুন)
মিসেস চৌধুরী- আমি সার্ভেন্ট কে বলছি এখনি দিয়ে যাবে ওয়েট।
তারপর একটা সার্ভেন্ট এসে বেলুন দিয়ে যায়।
নীল সেটা নিয়ে ঠিক অভ্রর পেছনে দাঁড়ায় তারপর অভ্রর যে পাশে ঘাড় ব্যাথা সেখানে বেলুন দিয়ে পলিশ করছে মানে রুটি বেলার মতো করছে আরকি।
বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে মালিশ করায় অভ্রর ঘাড় ব্যাথা নিমিষেই দূর হয়ে যায়।
এতে সবাই নীল এর প্রশংসা করে শুধু অভ্র বাধে।
অভ্র- আজ বিকালে তিয়া তিথি স্বপ্না আসবে আর কিছুদিন এখানেই থাকবে।
তোয়া– উফ বেশ মজা হবে।
অভ্র- আমার শেষ আমি উঠলাম, আর হ্যা শুধু মজা করলে হবে না পড়তেও হবে।
নীল– আমারও শেষ।
মিস্টার চৌধুরী– আমিও উঠি গেলাম।
নীল আর তোয়া হল রুমে এসে টিভির সামনে বসে পরে। অভ্র সেখানে এসে দাড়িয়ে পরে তারপর একটা সার্ভেন্ট কে বলে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসতে।
তারপর নীলের পাশে বসে হাতের পুরাবো ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে নতুন ব্যান্ডেজ করে দেয় আর মেডিসিন নীল এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে পরে।
যাওয়ার আগে মিসেস চৌধুরী কে বলে যায় ফুডস দেওয়ার জন্য বার বার বলে যায়।
তোয়া- চলো ভাবি আমার রুমের বেলকনিতে যাই সে খানে মাঠে খেলা হচ্ছে আমার বেলকনি থেকে দেখা যায়।
নীল– হু চলো।
তোয়া– আম্মু আমরা আমার রুমে যাচ্ছি।
মিসেস চৌধুরী– আচ্ছা যা আমি সেখানে ফল পাঠিয়ে দিচ্ছি।
নীল – আবার ফল।
তোয়া- জীবনটা তেনা তেনা!
বেলকনিতে কিছুক্ষণ আগেই সার্ভেন্ট এসে ফল দিয়ে গেছে এক গাদা দু’জনেই বিরক্তি নিয়ে খাচ্ছে কত আর খাওয়া যায়।
নীল – একটা কাজ করলে কেমন হয়?
তোয়া কি কাজ ভাবি?
আমাদের কে এখন কেউ দেখছে না তো ফল গুলো ওই মাঠে খেলছে ছেলেদের ডেকে দিয়ে দেই।
তোয়া- অস্থির আইডিয়া কিন্তু ভাবি পোলাপান গুলা ফল নিবে কিভাবে।
নীল– কেন বলের মতো কেচ ধরবে।
এই বলে দুই জনেই ছেলেগুলো কে ডাকা ডাকি শুরু করলো বাচ্চা গুলো দৌঁড়ে আসলো তারপর এক এক করে সবাইকে সব ফল দিয়ে দিলো বাচ্চা গুলো ফল পেয়ে বেশ খুশি।
আর ওরাও খুশি খাওয়া থেকে তো বাঁচলো।
দুপুরে মিসেস চৌধুরী তোয়া নীল লাঞ্চ করে যার যার রুমে চলে আসে।
মিস্টার চৌধুরী কল দিয়ে আগেই বলে দেয় তারা লাঞ্চে বাড়ি আসতে পারবে না।
নীল রুমে এসে ঘুমিয়ে পরে।
বিকাল ৪টা কারো চিল্লা চিল্লিতে নীলের ঘুম ভাঙ্গে।
রুম থেকে হল রুমে এসে দেখে তোয়া তিয়া স্বপ্না তিথি বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর হাসছে।
নীলকে দেখে তিয়া- ভাবি এসো।
তিথি- আমার পাশে বসো।
স্বপ্না- কেমন আছো ভাবি?
নীল– আলহামদুলিল্লাহ ভালো! তোমরা?
তিথি- আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো।
স্বপ্না- বিয়ের দিন তো ঠিকঠাক ভাবে পরিচয় হয় নাই আজকে আমরা প্রচুর আড্ডা দিবো ওকে।
তিয়া– একদম ঠিক বলছিস।
মিসেস চৌধুরী- মেয়েরা অনেক তো আড্ডা দিয়েছো এই না-ও এখন ফল খাও সবাই!
নীল– তোয়া!
তোয়া- ভাবি যাক এই বার আমরা ছাড়াও অন্যরা এই ফল খাচ্ছে আল্লাহ বাঁচাইছে।
নীল– ঠিক বলছো তোয়া।
নীল– হ্যাঁ হ্যাঁ খাও খাও সব শেষ করতে হবে কিন্তু তোমাদের। ওরাও খেয়ে নেয় ভালা মানুষের মতো।

রাত ১১ টা এখনো অফিস থেকে বাড়ি ফিরেনি।
সবাই ডিনার করে যার রুমে চলে গিয়েছিলো।
তিয়া তিথি স্বপ্না নীল আর তোয়াকে রুম থেকে সাথে করে সাদে নিয়ে আসে এবং দীর্ঘ ১ঘন্টা ধরে দুনিয়ার সব পেঁচাল পারতাছে।
নীল- মেয়েরাও লুচি হয় ওদের না দেখলে জানতামই না।( মনে মনে)
তিথি– ভাবি তোমার কখনো কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো না?
নীল– না!
তিয়া– বলো কি আমাদের তো ৪/৫টা করে আছে একটা গেলে আরেকটা।
স্বপ্না– আমাদের অভ্রর ও কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিলো না ও কখনো কোনো মেয়ের প্রতি আগ্রহ দেখায় নাই।
তিথি– অভ্র তো জাতির ক্রাশ!
তিয়া– শুনেছিলাম অভ্রর নাকি ছোটো বেলায় একটা বান্ধবী ছিলো নাম জানি না। তাকে নিয়ে অভ্র রোজ ডায়েরী লিখতো এখন লিখে কি না জানি না। ছোটোবেলার বন্ধুত্ব হঠাৎ বিচ্ছেদ হয়ে যায় তারপর অভ্র বাংলাদেশে এসে ওই মেয়েটাকে অনেক খুঁজে ছিলো কিন্তু পায়নি। আর এই বার এসে তোমাকে পেয়ে গেছে।
নীল- ওওও..!
তিথি- ভাইয়ার মধ্যে তোমার কি বেশি ভালো লাগে?
নীল– নিশ্চুপ!
তিয়া- অভ্রর গালে তিলটা বেশ কিউট তিলটার জন্য বেশি কিউট লাগে অভ্রকে তাই না বলো ভাবি।
নীল– কিছু না বলেই হ্যাঁ বলে দেয়!
তোয়া– কিন্তু!
স্বপ্না তুই চুপ থাক।
তিথি– ভাবি অভ্র ভাইয়াকে কি তুমি এখনো ঠিক মতো দেখনি নাকি?
নীল– কেনো?
তিয়া– কারণ অভ্রর গালে কোনো তিল নেই।
নীল– উফফ (বলে মাথা নিচু করে আছে)
তিথি– ভাইয়াকে কি তোমার পছন্দ নয়?
স্বপ্না- ভাইয়া পুরাই কিউটের ডিব্বা আর তুমি তোমার স্বামীর গালে তিল আছে কি না জানো না।
নীল– আসলে……..!
আর কিছু বলতে যাবে পেছন থেকে অভ্র আরে তোরা সবাই এখানে আড্ডা দিচ্ছিস আর আমাকে ছাড়া নোট ফেয়ার।
রাত ১২টা!
তিয়া– ও তোর আসার সময় হয়েছে।
তিথি– হুম তুই তো আকাশের চাঁদ তোকে তো খুঁজেই পাওয়া যায় না!
অভ্র- হয়েছে আর বলিস না অফিসে এত কাজ ছিলো না সব শেষ করতে করতে লেট হয়ে গেলো।
তারপর বল সব কেমন চলছে।
আরও ১ঘন্টা সব গুলা সাদে বসে আড্ডা দিলো।
রাত ১টা অভ্র ধমকে সবগুলোকে রুমে পাঠিয়ে দিলো আর নীলকে সাথে নিয়ে রুমে চলে আসে। নীল বিছানায় বসে আছে অভ্র ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে নীল এর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে পরে। নীল কিছুটা অবাক হলেও পরে কিছু বলে না কারণ অভ্রর হাতে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসছে মানে ব্যান্ডেজ করতে আসছে।
আর সেটাই করছে।
নীল অভ্রর ফেস দেখার চেষ্টা করছিলো কিন্তু দেখতে পারছে না কারণ অভ্র মেঝেতে বসেছে সাথে ওর লম্বা ঘন চুল গুলো কপালের উপর পরে আছে তাই শুধু চুলই দেখা যাচ্ছে।
এত চেষ্টা করেও দেখতে পায় নাই।
অভ্র উঠে গিয়ে সোফাতে শুয়ে পরে। নীল বিছানায় শুয়ে আছে আজ কিছুতেই নীলের ঘুম আসছে না শুধু বারবার মনে পরছে ছোটোবেলার কথা।
অভ্র সারাদিনের ক্লান্তির জন্য ঘুমিয়ে পরে।
নীল ছোটোবেলায় যখন ৮বছর রোজ পার্কে যেতো আর সেখানেই একটা ছেলের সাথে দেখা হয়েছিলো ছেলেটার সাথে কথা বলে ও দু’জনেরই ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয় দুই জন দুই জনের নাম দেয় পরী আর মেঘ.
হঠাৎ একদিন ছেলেটা পার্কে আসে না পরী খুব টেনশন করে কিন্তু সে আসে না। সেদিন পরী বাড়ি ফিরে যায়। তারপরেও ২দিন মেঘ আসে না পরী নিজের মধ্যে ভেঙ্গে পরে অনেক কান্নাকাটি করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মেঘের সম্পর্কে পরী কিচ্ছু জানতো না এমন কি ওর নাম টাও জানতো না! তারপরের দিন আগের ন্যায় পরী তার মেঘের জন্য অপেক্ষা করছিলো বেশ কিছুক্ষন পর একটা গাড়ি আসলো আর পার্কে ঠিক পরীর সামনে এসে থামলো। গাড়ি থেকে নামলো মেঘ পরীর সামনে এসে বলে সে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে বিদেশ পড়াশোনার জন্য কিন্তু ও কখনোই পরীকে ভুলবে না পরী সব সময় মেঘের মনে থাকবে। পরী যেনো তার মেঘকে কখনোই ভুলে না যায় মেঘ ফিরে আসবে আর পরী জেনো মেঘের জন্যে অপেক্ষা করে। পরীও তার মেঘকে প্রমিস করে ছিলো যত যাই হয়ে যাক পরী মেঘের থাকবে আর তার জন্যই অপেক্ষা করবে তারপর মেঘ চলে যায়। পরী সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো পাথরের মতো আর অঝরে অপলকভাবে তাকিয়ে ছিলো মেঘের যাওয়ার দিকে। আর নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে নোনাজল বেয়ে পরছে।
সেদিনের পর আর মেঘ ফিরে আসেনি। মেঘের অপেক্ষাতেই ছিলো পরী কিন্তু মাঝ খান থেকে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ডুকে পরলো অভ্র চৌধুরী! এইসব ভাবতে ভাবতেই নীলের চোখ গেলো অভ্রর উপের সে ঘুমিয়ে আছে শীতে কাঁপা-কাঁপি অবস্থা নীল বিছানা থেকে নেমে অভ্রর কাছে গিয়ে অভ্রর গায়ে কম্বল মুড়ে দেয় আর নীলের চোখ গিয়ে পরে উপর আর চোখ আটকে যায়। এক অদ্ভুত নেশালো চোখে তাকিয়ে আছে অভ্রর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ নীলের ধ্যান ভেঙ্গে যায়। নীল সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে দৌঁড়ে বিছানায় ধপ করে বসে পরে এই প্রথম আজ নীল অভ্রকে দেখেছে পাশেই পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয় কি করতে যাচ্ছিল নীল তুই অন্য কারো মায়ায় পরতে পারিস না তুই শুধু মেঘের পরী আর কারো না এই বলে অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে পরে। সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে।
নীল– আজ কি আমি কলেজ যেতে পারবো।
অভ্র – হুম পারবে কিন্তু আমি ড্রপ করে দিয়ে আসবো।
নীল– সেটাই তো করছেন দীর্ঘ দেড় মাস ধরে। (মিনমিন করে বলে)
তিথি– কিছু বললে ভাবি?
নীল– না কিছু না।
তিয়া– অভ্র আজ কিন্তু বিকালে অফিস থেকে চলে আসবি আমরা সবাই বাহিরে ঘুরতে যাবো।
অভ্র- আমি চেষ্টা করবো।
স্বপ্না- চেষ্টা নয় আসতেই হবে।
অভ্র- আচ্ছা ওকে বাবা ওকে।
মিসেস চৌধুরী– তোদের ৩জনের কত্তো বড় অভ্র, আর তোরা তুই তুই করে বলিস এখনো, ছেলেটার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তো ভাইয়া বল।
তিয়া, তিথি, স্বপ্না- বলবা না ফুপি! চাঁচি আম্মু!
তারপর নীলকে সঙ্গে নিয়ে অভ্র চলে গেলো।
কলেজে ড্রপ করে দিয়ে অফিস চলে যায় অভ্র এদিকে কলেজে এতদিন পর কেমন কেমন জেনো লাগছে। ক্লাসে প্রবেশ করে শুধু কাজল ওর সিটে বসে আছে আর বাকি স্টুডেন্ট রা ওদের সিটে শুধু খালি পরে আছে তানজু আর তানিয়ার সিট।
নীলকে দেখে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে কাজল আরে কত্তো দিন পর দেখা বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে।
কত কথা বলার বাকি কত কিছু।
নীল– তানজু, আর তানিয়া কোই
.
.
.

#চলবে …..?

রি-চেইক করা হয়নি ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!
ভালো থাকবেন সবাই!
“হ্যাপি রিডিং”

“কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ” ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here