সুখের নেশায় পর্ব-৩৭

0
811

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৩৭

দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিল মিম দিহানের বক্ষস্থলের ঠিক বা পাশে। ব্যাথায় নাক মুখ কুঁচকে ফেলল দিহান। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এল ব্যাথাতুর আর্তনাদ। মিম প্রথমত নিজের কান্ডে হতবাক হলেও পরমুহূর্তে দাঁড়িয়ে রইল নির্বিকার, ভাবলেশহীন হয়ে। তার মুখ টা একদম দিহানের বুক ছুঁই ছুঁই। চিকন চাকন হাত দুটো গলিয়ে দিল দিহানের দুই বাহুর নিচ দিয়ে। পিঠ জড়িয়ে ধরল দু হস্তে। আরেকটু মিলেমিশে, চেপে গেল সে দিহানের বুকের মধ্যিখানে। দিহান কোমর শক্ত করে চেপে ধরে চাপা গর্জন করে। রক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
‘ এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না আমাকে মেরে আবার আমার বুকেই ঢুকে পড়ছো?’
মিমের সহজ সরল সগতোক্তি- ‘ মিথ্যে বললে এমন হাজার টা কিল ঘু’ষি পড়বে আপনার বুকে।’
দিহান ভ্রুঁ কুঁচকালো। মিমের নরম দেহখানি শক্ত করে চেপে ধরে বললো-‘ আমি কখন মিথ্যে বললাম?আমি তো ঠিকি বলেছি। তোমাকে ভালোবাসি বলেছি আমি একটা বারও?’
মিম রোষপূর্ণ স্বরে বলে উঠল-‘ বলেন নি কেন?ভালো তো ঠিকি বাসেন। বলেন নি তাই আমি আপনাকে আরেকটা শাস্তি দিব?’
অধর যুগল প্রসারিত করল দিহান। ঠোঁট উল্টে বললো,
– ‘ বুকে আর কিল দিও না মিম-ডিম। ম’রে যাবো একদম। ‘
মিম চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। ধীরস্থির ভঙ্গিতে ভাবে। দিহানের কষ্টের কথা চিন্তা করে অন্য একটা বুদ্ধি আঁটে মাথায়। বিলম্বিত না করে অকস্মাৎ নিজের ধারালো দাঁত বসিয়ে দিল দিহানের ঘাড়ে। আউচ শব্দ সৃষ্ট করে ঘাড়ে এক হাত চেপে ধরে দিহান। অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বলে,
‘ কামড় টা ঠোঁটে দিতে পারতে। শাস্তি স্বরূপ হলেও তোমার ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া তো পেতাম। ‘

এই যাত্রায় লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠে মিমের গাল,মুখ। জোশের ঠ্যালায় হুঁশ হারিয়ে এতো সময় কি কি করল সে?লজ্জায় ধুপধাপ কাঁপছে অন্তস্থল। সদ্য জন্ম নেওয়া অনুভূতিরা পাল তুলছে। শিরায় উপশিরায় কেমন নিত্য নতুন ছন্দ বয়ে চলেছে। ভালোবাসার ছন্দ। দিহানের বাঁধন হতে সরে আসতে নিলেই দিহান বাঁধ সাধে। কাছে টেনে নিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চেয়ে থাকে কয়েক পল মিমের লজ্জা মাখা আঁখিদ্বয়,চিকন তিরতির করা ঠোঁট দুটোতে। মৃদু হাসল সে। ঘোর লাগা স্বরে আওড়ালো,

‘ ভালোবাসি তো মিম-ডিম। ভয়ংকর রকমের ভালোবাসি তোমায়। আমার জীবনের নতুন সুখ তুমি। যেই সুখ হারাতে রাজি নয় আমার মন। আমার শেষ নিঃশ্বাস অব্দি তুমি নামক সুখ, অসুখ আমার প্রয়োজন। ভীষণ প্রয়োজন। ‘

মিমের হৃদস্পন্দন থমকে গেল কি?মেয়েটা নড়তে ভুলে গেল। শ্বাস ফেলতে ভুলে গেল। অস্বাভাবিক ভাবে কিছু একটা ছুটতে শুরু করল হৃদপিণ্ডে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে। পরক্ষণেই ভারী এবং বড় বড় নিঃশ্বাস বের হয়ে আসতে থাকে। ও তো জানত, দিহানের চোখের ভাষা পড়তে পারত। বুঝতে পারত দিহানের অব্যক্ত, অপ্রকাশিত ভালোবাসা, প্রেম,অনুরাগ। তাহলে এই মুহুর্তে মনটা এমন করছে কেন?নিজেকে পাগল পাগল লাগছে কেন?ভালোবাসা প্রকাশ হলেই কি এমন হয়?এমন দমবন্ধ করা অনুভূতির সৃষ্টি হয় হৃদয়ের গহীনে? আর সহ্য করতে পারল না মিম। ঝাপটে ধরল দিহান কে। এলোমেলো, অবিন্যস্তভাবে বললো,
‘ আমিও ভালো,ভালোবাসি আপনাকে। ‘

দিহানের শূন্য বক্ষপিঞ্জর আজ পরিপূর্ণ হলো। তৃপ্তিদায়ক হাসি খেলে গেল অধরে। এই পিচ্চি মেয়েটাকে অল্প কয়েকদিনে তীব্রভাবে ভালোবেসে ফেলেছে ও। ফেলেছে বললে ভুল হয়ে যাবে। বড্ড বড় ভুল। কারণ এই মেয়েই বাধ্য করেছে ওকে ভালোবাসতে। নিজের রাগ,কর্কশ ব্যবহারে রাতের পর রাত নির্ঘুম রেখেছে দিহানকে এই পিচ্চি মেয়েটা। মানুষ নাকি সৌন্দর্য দেখে প্রেমে পড়ে। সুন্দরে বিমোহিত হয়। অথচ প্রথমবার চৈত্রিকাকে দেখতে গিয়ে মায়ের মিম কে পছন্দ হলেও দিহানের কোনো অনুভূতি জাগে নি মিমের প্রতি। মা যখন দিনের পর দিন কানের কাছে প্যান প্যান করে জ্বালিয়ে মেরেছে মিমকে বউ করে আনার জন্য তখন দিহান বাধ্য হয় মিমের মুখোমুখি হতে। তখনও সাফারাতের হবু শালী হিসেবে হালকা মজা করে সে। কিন্তু মিমের রাগ,ব্যবহারে প্রেমে মত্ত হয় দিহান। ডুবে যায় এক প্রকার। যেখান থেকে ফিরে আসার উপায় মেলে নি আর। এখন তার মিম কেই চায়। সারাজীবনের জন্য চায়। মিমের চুলের ভাঁজে গাঢ় চুম্বন আঁকল। নড়েচড়ে উঠল মিম। খামচে ধরে তাকে। দিহান আলতো হেসে বলে উঠল,

‘ আমি কিন্তু প্রেম করতে পারব না মিম। ভালোবাসি বললেও আমার দ্বারা প্রেম সম্ভব নই। ‘

মিম হকচকিয়ে যায়। ভড়কে যায়। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়। মুখে আওড়ায়- ‘ মানে?’

দিহান ওর কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলোকে কানের পিঠে গুঁজে দিল। চক্ষু বুঁজে আসে মিমের প্রগাঢ় স্পর্শে। একটুখানি ঝুঁকে আসে দিহান ওর পানে। বক্ষস্পন্দন বেড়ে যায় তার। গরম, তপ্ত নিঃশ্বাস চোখে মুখে উপচে পড়ছে দু’জনের। উভয়পক্ষের নিঃশ্বাস মিলেমিশে একাকার। মিমের পা দুটো টলছে। হুটহাট নতুন অনুভূতিতে অভ্যন্তর বেসামাল হয়ে পড়ছে। গালে গভীর স্পর্শ পেতেই আরো কেঁপে উঠে দেহখানি। দিহান থামল না। এক হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে পরপর তিনটে চুমু খেল গালে। সরে এসে বললো,
‘ ঠিক এজন্যই প্রেম সম্ভব নই আমার দ্বারা। তোমার যত কাছাকাছি থাকব আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসব। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব না আমি। প্রেম করলেই ভুল হবে। তোমাকে স্পর্শ করতে ইচ্ছে হবে। ‘

মিম ধপ করে নেত্রযুগল মেলে ধরল। চোখে তার একটাই প্রশ্ন – ‘তাহলে?’
দিহান যেন তা পড়ে ফেলল। বললো,
‘ বিয়ে করব পুচকি। তোমায় বউ বানিয়ে দিনরাত কন্ট্রোললেস হলেও ক্যারাক্টারলেস উপাধি তো পেতে হবে না। আজই মা’কে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। ‘

মিমের সারা মুখশ্রী নিমিষেই লাল হয়ে উঠল। বিয়ে?এই শব্দ যে তার মনপ্রাণে ছুটে চলেছে উদভ্রান্তের মতোন। বান্ধবীদের মুখে কত যে লাভ স্টোরি শুনে। সাথে ব্রেকআপ এর গল্প’ও। কেউ কেউ বলে বয়ফ্রেন্ড চিট করেছে। বিয়ের নাম করে এটা সেটা করে ঠকিয়েছে। বিয়ের কথায় বেঁকে গিয়েছে। মিম কল্পনাও করে নি ভালোবাসা প্রকাশ হতে না হতেই বিয়ে নামক শব্দ তার শ্রবণগ্রন্থি দিয়ে সোজা কলিজায় এসে বিধঁবে। সাথে একরাশ মুগ্ধতা, বিস্ময় নিয়ে। মনে মনে যখন খুশির জোয়ার তখনই মায়ের নিঃসঙ্গতার কথা মনে পড়তেই আঁতকে উঠে ও। আমতাআমতা করে,রয়ে সয়ে বলে,

‘ আমাকে ছাড়া আমার মা একা হয়ে যাবে দিহান। আম্মু কে ছাড়া থাকতে পারব না আমি। আপু তো এই ভয়েই আমাদের ছেড়ে থাকতে রাজি হয় নি। ‘

দিহান ফুঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ক্ষীণ সময় ভাবে। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,

‘ বউ আনতে পারব, সাথে একটা মা আনতে পারব না?’

চকিতে মুখ তুলে তাকালো মিম। চোখে মুগ্ধতা। সে কেমন মানুষকে ভালোবাসল?সবসময় বোন কে বলে আসল তুমি খুব লাকি আপু। কিন্তু আজ,এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে সে নিজেও খুব ভাগ্যবতী। খুব বেশি। চিন্তিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল ,
‘ কিন্তু আপনার পরিবার? ‘
‘ আমার পরিবারের আমি ও আমার মা ব্যতীত কেউ নেই। আর আম্মু তুমি বলতে পাগল। আশায় বসে আছেন কবে উনার পুত্রবধূ হয়ে পায়ের পদলি ফেলবে তার বাড়িতে। আম্মুকে আমি ম্যানেজ করবো। একদিন তুমি দেখবে আমার দুই মা বেস্টফ্রেন্ড হয়ে উঠবেন। ‘
মিম পাশের সোফায় বসল। দিহান পানির গ্লাস এগিয়ে দিল। কন্ঠে তার উৎকন্ঠা -‘ খারাপ লাগছে তোমার?’
-‘ উঁহু! ক্লান্তি। ‘
দিহান অপরাধী স্বরে বললো,-‘ আমি ভেবেছিলাম বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত ছিলে তাই আজ কলেজে যাবে না। তোমার পরীক্ষা ছিল সেটা জানতাম না আমি। আ’ম রিয়েলি স্যরি। ‘
-‘ ইট’স ওকে। প্রবলেম নেই। ‘

দিহান রিসিপশনের মেয়েটাকে ফোন দিল। সঙ্গে সঙ্গে হাজির হলো মেয়েটা। চোখ ঘুরিয়ে এক পলক তাকালো অবসন্ন, মায়া যুক্ত ফর্সা মুখের মেয়েটার দিক। মিম’ও একবার তাকালো। দিহান কাঠ কাঠ গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে মেয়েটার উদ্দেশ্যে,

‘ আপনি আমাকে জানান নি কেন যে কেউ আমার সাথে দেখা করতে এসেছে? কেন বসিয়ে রাখলেন মিম কে এতো সময়?’

মেয়েটা মাথা নত করে জবাব দিল,

‘ স্যরি স্যার। আজকের মিটিং টা খুব জরুরি ছিল। তাই ডিস্টার্ব করতে চাই নি। ‘

দিহানের মাথার রগ দপদপ করে উঠল। তবুও মেয়েটার সাথে চেঁচাল না সে। মেয়েটা তো নিজের কর্তব্য, কাজ করেছে।

‘ ঠিক আছে। নেক্সট টাইম কেউ ইমারজেন্সি দেখা করতে চাইলে আমাকে বলবেন। আর ইনি আপনাদের ম্যাম। অফিসে আসলে ওর যেন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়। ‘

মেয়েটা বিস্ফোরিত নয়নে মিমের দিকে তাকায়। মিম লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ফিরে যায়। কারণ বয়সে মেয়েটা চৈত্রিকার সমান হবে। এতো বড় একটা মেয়ের সামনে দিহান ওকে ম্যাম সম্বোধন করায় জড়তা কাজ করছে। ‘ ওকে স্যার’ বলে দ্রুত বেগে প্রস্থান করে মেয়েটা। যাওয়ার আগে দিহান বলে দিল মিমের জন্য ক্যান্টিন থেকে বার্গার পাঠাতে।
_______________

শান্তশিষ্ট, নম্র,ভদ্র হয়ে খাবার টেবিলে বসে আছে চৈত্রিকা সবার সাথে। সকালে যে এই বাড়িতে কাল বৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে তার ছিটেফোঁটাও নেই আনাচে কানাচে। সাফারাত নিজের প্লেটে খাবার তুলে নিল। চৈত্রিকার সামনে প্লেট দেওয়া হয় নি। কেন দেওয়া হয় নি তা লজ্জায় আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করতে পারছে না ও। সুফিয়া,প্রিয়ন্তী,চাচা-চাচী নিজেদের মতো করে খাবার খেয়ে যাচ্ছেন। দুপুরের সময় চলছে। ঘড়ির কাঁটায় দু’টো ছুঁই ছুঁই। মৌসুমি বেগম সেই সকালে নিজের ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে বিদায় নিয়েছেন। চৈত্রিকার এতে বেশ খারাপ লাগে। কিন্তু সাফারাতের কড়া নির্দেশে মৌসুমির সাথে ক্ষমা চাওয়া বা কথার বলার সুযোগ টুকুও মিলে নি। আর না এই বাড়ির কোনো সদস্যের সাথে। এই প্রাচুর্যে ভরপুর বাড়িটায় যেন মানুষ নয়। যতসব যান্ত্রিকতার ছড়াছড়ি। কারো সাথে কারো মিল বন্ধন নেই। আন্তরিকভাবে কথা পর্যন্ত বলে না। চৈত্রিকার মনে হচ্ছে এতো আত্মীয় স্বজনদের ভিড়ের মাঝেও সাফারাত একা। ভীষণ একা। এখন কথা হলো সবাই গ্রোগাসে খেয়ে যাচ্ছে অথচ মিনা ওর সামনে প্লেট দিল না,খাবার দূরে থাক!সাফারাত নিজের প্লেটে খাবার নিয়ে এক লোকমা মুখে পুড়ে বললো,
‘ আপনি খেতে পারবেন না চৈত্র। আপনার হাত পুড়ে গেছে। ‘

চৈত্রিকা বোকা বনে গেল। কতটা দায়সারাভাব মিশ্রিত বাক্য সাফারাতের! যদি না-ই খেতে পারে তাহলে তাকে ডাইনিং টেবিলে এনে বসিয়ে রাখার মানে টা কি?এটা ঠিক কোন জাতের মানুষ? অভিমানে কতগুলো অভিমান্য শব্দমালা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে পোষণ করল চৈত্রিকা। মুখ গোমড়া করে বসে রইল। অপরদিকে মিনা, প্রিয়ন্তী মিটমিট করে হাসছে। সুফিয়া বেগম, চাচা-চাচী নিরবে খেয়ে উঠে গেলেন। কারো যেন কারো খাওয়া বা না খাওয়া নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। একটা বার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করলেন না চৈত্রিকাকে খাবার কেন দেওয়া হচ্ছে না। ফিরলেনও না। চৈত্রিকার বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। সাফারাত এর দিকে ছলছল চোখ তাকালো ও। এই মানুষগুলোর সাথে কেমন করে থাকত সাফারাত? এক একজন স্বার্থপর, যান্ত্রিক মানব। বড়রা উঠে যেতেই সাফারাত নিজের প্লেট থেকে এক লোকমা ভাত চৈত্রিকার মুখের সামনে ধরল। অবাক হলো চৈত্রিকা। সঙ্গে সঙ্গে নত মস্তকে মুখে নিয়ে নিল। প্রিয়ন্তী সুর টেনে বললো,
‘ বেশি করে খেয়ো ভাবী। কিপ্টামি করো না। ‘
সাফারাত চোখ রাঙ্গাতেই প্রিয়ন্তী, মিনা কেটে পড়ে। চৈত্রিকা মুখে খাবার নিয়ে মৃদু হাসে। পরক্ষণেই শ্রবণ হলো নরম স্বরের ডাক।
‘ চৈত্র! ‘
– ‘জ্বি। ‘
– ‘ খারাপ লাগছে আপনার?’
চৈত্রিকা জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। বললো,
– ‘ খারাপ লাগবে কেন?’
– ‘ আমার জীবনে এসে?’
চৈত্রিকা মাথা নাড়ালো। কন্ঠনালি হতে বেরিয়ে আসা বাক্যে অগাধ বিশ্বাস মিশ্রিত।
– ‘ চৈত্র ম*রে যাবে। তবুও আপনাকে নিয়ে আফসোস জাগবে না৷ আপনি আমার সুখের আরেক নাম সাফারাত। ‘
সাফারাত এক ভ্রুঁ উঁচিয়ে বললো ,
– ‘ আপনি কি জানেন চৈত্র সুখ হাওয়ায় মিঠাই?’
চৈত্রিকা চমকালো না। বরং সাদা-মাটা উত্তর দিল,
– ‘ জানি। সুখ কখনও চিরস্থায়ী হয় না। হাওয়ায় মিঠাইয়ের মতো চুপসে যায়। ‘
প্রগাঢ় চাহনি নিক্ষেপ করল সাফারাত চৈত্রিকার দিক। নিমিষেই এক হয় চার চোখ। হৃদযন্ত্রের গতি হয় নিয়ন্ত্রণ হারা। সাফারাত তেজি স্বরে বললো,
– ‘ সুখ কে আমি অসুখ বানিয়ে বেঁধে রাখব চৈত্র। এই অসুখ কখনও সাড়বে না। তবে তার মেয়াদ আপনাতেই সীমাবদ্ধ। আপনি আছেন মানে কারো সাধ্যি হবে না আমাদের সুখ কেঁড়ে নেবার। ‘

চৈত্রিকা নিঃশব্দে হাসে। বলতে চায় আমার সুখ’ও আপনাতে সীমাবদ্ধ সাফারাত। কিন্তু বলতে পারল না। প্রশান্তি অনুভব করল কেবল।
____________

‘ আমি পারব না সাফারাত কে কন্ট্রোল করতে। এবার জার্মানি থেকে ফেরার পর ছেলেটা আরো জেদি হয়ে উঠেছে। কথা বলতেও অনেক মেপে মেপে বলে। আমার সাথেও আজকাল কথা বলে না। ওর জীবনের ব্যাপারে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারছি না। আমি যদি বিয়েতে না করে দিতাম তাহলে কি সাফারাত শুনত?আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি জেরিনকে এই বাড়ির বউ করে আনতে। তোরা তো কানাডা বসে আছিস। পারলে ছেলেটার সামনে এসে দাঁড়া। এই সাহস নেই তোদের। আমার জন্যই পারলি এহমাদ পরিবারের বউ হতে। নাহলে কবেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতি। আমার ছেলেকেও পাওয়া হতো না তোর। দেখি আমি ওই মেয়েকে নিয়ে কি করা যায়। ছেলেটার মাথা একদম খেয়ে ফেলেছে ওই ছোট ঘরের মেয়েটা। ফোন রাখ এখন। ‘

সুফিয়া বেগমের সাথে কথা বলতে এসেছিল চৈত্রিকা। দরজার মুখে দাঁড়িয়ে এসব শুনে প্রচন্ড অবাক হলো। সুফিয়া বেগমের কথাগুলো কিছু কিছু ঠাহর করতে পারলেও পুরোপুরি বোধগম্য হলো না ওর।

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রি-চেক করা হয় নি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here