সুখের নেশায় পর্ব-৪৫

0
688

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৪৫

নিকষকৃষ্ণ আঁধার কেটে গিয়ে সুখের দেখা মিলল হয়ত।
প্রিয় মানুষ টার মুখে এক চিলতে হাসির চেয়ে মূল্যবান যেন আর কিছুই হয় না। দরজার ধারে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে চৈত্রিকা। এক পা বাড়াচ্ছে তো আবার পিছিয়ে আনছে। কয়েক কদম হাঁটার সাহস করে উঠতে পারছে না। বুকটা কাঁপছে ধুপধাপ। আজ অনুভূত হচ্ছে দুঃখ বিহীন সুখ যে নিরর্থক। কষ্টে জর্জরিত না হলে আজ,এই মুহুর্তের সুখটা যে এত মূল্যবান, স্বস্তির হতো না। সাফারাত ক্যানোলা লাগানো হাত টা বাড়িয়ে ডাকল ইশারায়। ঝড়ের গতিতে চৈত্রিকা ছুটে গেল। থমকালো বেডের কাছে গিয়ে, সাফারাতের পায়ের কাছে। সাফারাত ভ্রুঁ কুঁচকালো প্রিয়তমার থমকে যাওয়া দেখে। বেডের চারপাশে তাকিয়ে মেডিসিন চেক করা নার্সকে ক্ষীণ স্বরে বললো–‘ টুল দিন। ‘

নির্জীব, নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে চৈত্রিকা দুরুদুরু বুক ও অঢেল খুশি নিয়ে। আধবয়স্ক নার্স মৃদু হেসে কিছুটা দূরে রাখা টুল টা টেনে সাফারাতের বেডের কাছে রাখল। বললো,

‘ দাঁড়িয়ে আছেন কেন মিসেস?পেশেন্টের পাশে বসুন। আপনার অনুমতি আছে এখানে থাকার। আপনার শরীর কাঁপছে। বসুন আপনি। ‘

চৈত্রিকা লজ্জা পেল খানিকটা। নত মস্তকে টুলে এসে বসল। নার্স বেরিয়ে গেলেন কেবিন ছেড়ে। গভীর,গাঢ় দৃষ্টিতে সাফারাত চৈত্রিকার সারা মুখে চোখ বুলালো। এক হাতে চৈত্রিকার ডান হাত টা টেনে নিজের হাতের মুঠোয় পুড়ে নিল। চমকে উঠল চৈত্রিকা। সাফারাতের ক্ষীণ কন্ঠস্বর অথচ গম্ভীরতা স্পষ্ট।

‘ এই হাল কেন আপনার? দুর্বল দেখাচ্ছে কেন?’

চৈত্রিকা হকচকালো। আমতাআমতা করে বললো,
‘ ঠিক আছি আমি। আপনি কথা বলবেন না প্লিজ। এতে মাথায় প্রেশার পড়বে। ঘন্টা খানেকই তো হলো জ্ঞান ফিরেছে। ‘

‘ জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে আপনি কেন এলেন না চৈত্র? এলেন তো এলেন দু’ঘন্টা পর। ‘

কথাটা বলে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো সাফারাত। চৈত্রিকা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। যেই মানুষ টা ম’রতে ম’রতে বেঁচে ফিরেছে তাকে কি করে বলবে গত দেড় ঘন্টা ধরে ও বেহুঁশ ছিল। স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল ওকে। যখনই জ্ঞান ফিরে দুর্বল শরীর টা নিয়ে ছুটে আসে এখানে। মিম ফোন দিয়ে জানায় সাফারাতের জ্ঞান ফিরেছে তবে অবস্থার উন্নতি হয় নি। মাথার ক্ষত থেকে নতুন করে রক্ত ঝরছে। এটা শুনে স্থবির হয়ে যায় চৈত্রিকা ক্ষণিকের জন্য। পরমুহূর্তে দৌড়ে হসপিটালে ঢুকে করিডোরে এসে জ্ঞান হারায়। ঢলে পড়ে আলো বেগমের বুকে। মানসিকভাবে বিধস্ত, না খেয়ে থাকায় এ হাল চৈত্রিকার। যদি এভাবে মানসিক অসুস্থতায় ভুগতে থাকে তাহলে যেকোনো সময়ে মিসক্যারেজ হয়ে যেতে পারে ওর। এসব শুনে আঁতকে উঠে চৈত্রিকা। আল্লাহর কাছে শুধু এটাই চায় ওর ভাগের সকল সুখ যেন আল্লাহ ওকে দেয়।

সাফারাত এসব শুনলে চিন্তায় পড়ে যাবে। হাইপার হবে। এতে মাথার আঘা*তে সমস্যা হবে, তাই চৈত্রিকা লুকিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। সুস্থ না হওয়া অব্দি কোনো প্রেশার পড়তে দেওয়া যাবে না সাফারাতের উপর। রিনঝিনে স্বরে আওড়ায় মিথ্যে কয়েকটা বাক্য,
‘ ডাক্তার পরে আসতে বলেছে। তখন জ্ঞান ফিরলেও আপনার অবস্থা ভালো ছিল না। ‘
সাফারাত উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ল। মুঠোয় আবদ্ধ কোমল,নরম হাত টা মুখের কাছে নিয়ে ঠোঁট ছোঁয়াল একবার, দু’বার, তিনবার,ক্রমাগত কয়েকবার। চৈত্রিকার পেটের দিকে একবার তাকিয়ে,চেহারার দিকে চোখ রেখে নরম স্বরে প্রশ্ন করল,

‘ ভালো আছেন আপনারা দু’জন? ‘

শক্ত আবরণ ভেদ করে নিমিষেই চৈত্রিকার নরম রূপ বেরিয়ে এলো। মেয়েটার চোখ থেকে এক ফোঁটা নোনতা জল কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে গেল গলা বরাবর। সাফারাত হাতের বাঁধন শক্ত করলো। ব্যগ্র,অস্থির,উত্তেজিত হয়ে উঠল। কাঠ কাঠ প্রশ্ন তার,

‘ আপনারা ভালো নেই?আমার কিছু ঘন্টার অনুপস্থিতিতে আপনাদের কেউ আঘা*ত করে নি তো চৈত্র মাস?’

চৈত্রিকা কিছুই বলতে পারল না। দ্রুত গতিতে ঝুঁকে অধর যুগল কিঞ্চিৎ স্পর্শ করালো সাফারাতের কপালে। নিমেষে চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু জল সাফারাতের চোখের পাপড়ি স্পর্শ করল। ভাঙা গলায় বলে উঠল,

‘ আমরা ভালো আছি। আপনি জলদি সুস্থ হয়ে উঠুন। আমাদের আপনাকে প্রয়োজন। ভীষণ প্রয়োজন। ‘

‘ জানি চৈত্র। তাই তো সেই রাতে রাগে বাসা থেকে বের হয়েও শান্তি মিলে নি। আমি চাই নি আপনার উপর রাগের প্রভাব পড়ুক। মাঝ পথে গিয়ে মোবাইলে আপনার কাতর স্বর শুনে মনে হয়েছে আমি ম’রে যাচ্ছিলাম। ছুটে আসতে ইচ্ছে করছিল আপনার কাছে। জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছিল আপনি কাঁদবেন না চৈত্র। আমার একটুখানি রাগ তবে তা আপনার ভালোবাসার কাছে তুচ্ছ। গাড়ি ঘুরিয়ে আপনার কাছেই ফিরে আসছিলাম। অকস্মাৎ চোখ বুঁজার ফলে এক্সিডেন্ট হয়ে যায়। জানেন জ্ঞান হারানোর পূর্বে আমি যেন দেখেছিলাম আম্মু উঁচু পেট নিয়ে হাসোজ্জল মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তার সাথে দাঁড়িয়ে আছেন আপনি। মনে প্রাণে চাইছিলাম কেউ আমায় বাঁচাক। আমার চৈত্রর সুখগুলো সজীব থাকে যেন। আপনাকে ভালোবাসি আমি চৈত্র। আর কখনও আমাকে আঘা*ত করবেন না। ‘

ডাক্তার আদি কেবিনের দরজায় নক করলো। ছিটকে সরে গেল চৈত্রিকা। মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে পড়ল এক পাশে। ডাক্তার আদি হাসলেন। নিখুঁত তাহার হাসি। সাফারাত বিরক্তি প্রকাশ করলো। রাগান্বিত কন্ঠস্বর।

‘ তোর এখন না আসলে হতো না আদি?নিজে সারাদিন বউয়ের থেকে দূরে থাকিস এখন আমাকেও রাখার ফন্দি আঁটছিস। ‘

আদি ইনজেকশন পুশ করতে করতে বলে উঠল,
‘ বড় বাঁচা বেঁচেছিস। বলতে হবে কই মাছের প্রাণ তোর। শিরা-উপশিরায় রাগের প্রদাহ বাড়িয়ে মানসিক পাগল হয়ে যাস না আবার। তখন তোকে সবাই সাফারাত এহমাদ নয় সাফারাত পাগলা এহমাদ ডাকবে। আর বউকে খাওয়াস না নাকি?শা*লা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে বউকে খাওয়াতে কিপ্টামি করিস। এজন্যই তোর বউ খাবারের অভাবে ধুম ধাম মানুষের গায়ের উপর বেহুঁশ হয়ে পড়ে। ‘

চৈত্রিকার অধরে হাসি ফুটে উঠেছিল যা আদির শেষোক্ত বাক্যে মূর্ছা গিয়েছে। সাফারাতের ক্ষত বিক্ষত,সাদা ব্যান্ডেজে মুড়ানো কপালে বলিরেখার ভাঁজ ফুটে উঠল। প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টি আদির উপর। আদি যাওয়ার আগে স্রেফ বলে গেল,
‘ শরীরের দিক থেকে দুর্বল হলেও তোর বউ মনের দিক থেকে অত্যাধিক পরিমাণে স্ট্রং। ‘

আদি,সাফারাত, দিহান স্কুল জীবনের বন্ধু। কলেজে উঠে তিনজন তিন দিকে ছিটকে যায়। কেউ পাড়ি জমায় চা’য়ের রাজ্যে, কেউ কেউ থেকে যায় জনপূর্ণ,কোলাহলে ভরপুর, ইট-পাথরের নগরীতে। সাফারাত চৈত্রিকার দিকে তাকালো। অসুস্থ শরীরে দুর্বোধ্য হাসল। চৈত্রিকা মিথ্যে বলায় ধরা পড়ে যাওয়ায় কেঁদে দেবার উপক্রম। কেন?কেন এই একটা মানুষের সমুখে একজন অবলা, ভীতু,লাজুক নারীতে পরিণত হয় সে?
_____________

টানা পনেরো দিন হসপিটালে থেকে বিরক্ত সাফারাত। যদি শরীর টা চলত তাহলে কখনও, এক দন্ড হাসপাতালে থাকত না সে। মাথার আঘা*তের কারণেই তাকে হাসপাতালে রাখা গেল। অসুস্থ অবস্থায়ও শেষ হয়নি তার রাগ। প্রতিদিন চৈত্রিকাকে তার রাগের, বিরক্তির স্বীকার হতে হতে হয়েছে। তবে কারণগুলো ভিন্ন। একেবারেই ভিন্ন। সাফারাতের রাগের কারণ মূলত চৈত্রিকার দুর্বল দেহখানি। নিজে অসুস্থ হয়েও চৈত্রিকাকে খাইয়ে খাইয়ে মেরে ফেলার বুদ্ধি এঁটেছে সে। তার সামনে সারাক্ষণ খাবার নিয়ে বসে থাকতে হয় চৈত্রিকাকে। হাসপাতালের বিদঘুটে স্যাভলন,ফিনাইলের গন্ধে চৈত্রিকার গা গুলিয়ে আসলেও খাবার থেকে রেহাই পায় নি। এমনকি সাফারাতের জন্য আনা সকল ফলমূল সাফারাত চৈত্রিকাকে খাইয়েছে। এ নিয়ে সকলের ফিসফিসের শেষ নেই। পুরো হাসপাতালে একদম রটে গিয়েছে কেবিন নাম্বার ২০২ এর পেশেন্ট সাফারাত এহমাদ নিজে অসুস্থ হয়েও বউয়ের সেবা যত্ন করছেন। আর এসব রটিয়েছে কেবিনে আসা নার্সগুলো।

সবাই সাফারাতকে দেখতে এলেও চাচা-চাচী আসেন নি৷ পাঁচ দিন আগে পৃথক মা’রা গিয়েছে। তা-ও সুই/সাইড করে। নিজের সেলে ফ্যানের সাথে ঝুলছিল সে। সুইসাইডের কারণ ড্রা*গস নিতে না পারা। অতিরিক্ত পরিমাণে ড্রা’গস এডিক্টেড ছিল সে। দীর্ঘ দিন জেলে থাকার দরুন ড্রা*গস নিতে না পেরে প্রায়শই চিল্লাচিল্লি করত,পাগলামি করত। একটা সময় মৃ*ত্যুকে বেছে নেয়। চৈত্রিকা যায় নি দেখতে। দিহানের কাছ থেকে শুনেছে ওর বাবা কে পৃথক গাড়ি চাপা দিয়েছিল ও সাফারাতকে কয়েকবার মা’রা’র চেষ্টা করেছিল। এসব জেনে চৈত্রিকার ইচ্ছে জাগে নিজ হাতে পৃথককে সহস্রবার গাড়ি চাপা দিয়ে মা’রতে। বাবার ভালোবাসা না পেলেও আজও যে খুব করে বাবাকে চায়। ছেলে হারা হয়ে নিজেদের যেন লুকিয়ে রেখেছেন পৃথকের বাবা-মা। চৈত্রিকার বলতে ইচ্ছে করে বেশ –‘ সবই পাপের ফল। ‘

হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে সাফারাতকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। সম্পূর্ণ রেস্টে থাকতে হবে। নয়ত কোনোপ্রকার স্নায়ুবিক চাপ পড়লে পরিণতি খুব একটা ভালো হবে না। বরঞ্চ ভয়াবহ হবে৷
নিস্তব্ধ বাড়িটা পুনরায় মানুষের সমাগমে উৎফুল্ল হয়ে উঠে। জেরিন, মৌসুমি বেগম আসেন সাফারাত কে দেখতে। দিহান, মিম,সিনথিয়া, আলো বেগম সবাই এখানেই থাকছে কয়েকটা দিন। মৌসুমি বেগমের এবারের আচরণ, রূপ ছিল একদম ঠান্ডা। চৈত্রিকার সাথে কোনো প্রকার খারাপ ব্যবহার করলেন না তিনি। এতে অবশ্য অবাক হলো না চৈত্রিকা। সবই যে পাওয়ারের খেল। এখন কম বেশ সবাই জানে এই বাড়িটা সাফারাত চৈত্রিকার নামে লিখে দিয়েছে। জেরিন একটু আকটু উগ্র আচরণের প্রয়াস চালিয়েছে কিন্তু সবটাই বিফলে। পারল না শক্ত, কঠোর চৈত্রিকার সাথে জিতে যেতে।

চৈত্রিকা সাদার মাঝে লাল পাড়ের একটা শাড়ি পড়ল আজ। কিচেনে এসে সাফারাতের খাবার গুছিয়ে নিল। যাওয়ার সময় দেখল মিনা মলিন মুখে কিচেনের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। সর্বদা চঞ্চল, হাসিতে মত্ত মেয়েটার এহেন রূপ বোধগম্য হলো না চৈত্রিকার। হাতের ট্রে টা রেখে মিনার কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখল। সাথে সাথে পিছন ফিরে ঝাপটে ধরল মিনা। অঝোরে কাঁদল মেয়েটা। চৈত্রিকা থামাতে পারল না। মিনা কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো ,
‘ সবাই খারাপ ভাবী। সবাই খারাপ। আমার মা-ও খারাপ আছিল। আমি ক্যান বাঁইচা আছি?স্যার সুস্থ হলে আমারে তাড়ায় দিব না?আমি তো উনার অপরাধী। ‘

চৈত্রিকা ছোট মিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। গলা ধরে আসল ওর। বললো,
‘ তোমার মা অন্যায় করেছে, তুমি নও। তুমি আমার ও সাফারাতের চোখে একটা অবুঝ কিশোরী। তুমি জানতে না তোমার মায়ের অপরাধ। আমার কারণেই জানতে পারলে। তুমি অপরাধ করো নি, একদম মন খারাপ করে রাখবে না। ‘

খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে অগ্রসর হলো চৈত্রিকা। মিনা পিছু ডেকে জিজ্ঞেস করে উঠল,
‘ স্যার রে বলবেন না?শা*স্তি দিবেন না শয়তান গুলোরে?’
চৈত্রিকা বাঁক ফিরে চাইল সঙ্গে সঙ্গে। মৃদু নাড়ালো ঠোঁট দুটো,
‘ লড়াই টা নিজের ঘাড়ে তুলে নিলাম। আর কাউকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিচ্ছি না আমি। আগুনে পুড়াবো না। তবে একেকজনের মৃ*ত্যুর ধরন,শা*স্তি ভয়ংকর হবে। খুবই ভয়ংকর। ‘
__________

সাফারাত শুয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাটছে। চৈত্রিকা খাবার নিয়ে আসতেই উঠে বসল। মোবাইলের দিকে নজর রেখেই গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,

‘ সাদা পড়েছেন কেন চৈত্র? লাল পড়বেন আপনি। টুকটুকে লাল। এই শাড়ি টা পড়ে আরেকবার চোখের সামনে আসলে টেনে সবটা খুলে জ্বালিয়ে দিব। টুকটুকে লাল বউ হয়ে আসুন। ‘

সাফারাত কি থ্রে’ট দিল?অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেল চৈত্রিকা। সেই সাথে দু’গালে গরম অনুভব করলো মনে মনে থ্রে’ট টা আওড়াতেই। চলে যেতে নিলে সাফারাত হাত ধরে আঁটকে ফেলল। লহু স্বরে বললো,
‘ আমাকে খাইয়ে দিন। তারপর শাড়ি বদলাবেন। ‘

বাধ্য মেয়ের মতো খাইয়ে দিতে শুরু করলো চৈত্রিকা। তবে হাত কাঁপছে। হাসপাতালে থাকা দিন গুলো থেকে এমন হয়ে আসছে। যতবার সাফারাতের ওষ্ঠাধর ঠেকছে আঙ্গুলে, শরীরে কাঁপুনি সৃষ্ট হচ্ছে ততবার। চৈত্রিকার এবার চুলকানি হচ্ছে কোমরে। বাম হাত টা নিয়ে ডান কোমরে চুলকাতে যাবে সাফারাত বাঁধ সাধল। তুখোড় দৃষ্টিতে তাকালো কোমরের দিকে। সোজাসাপ্টা প্রশ্ন তার,
‘ চুলকানি হচ্ছে? ‘
চৈত্রিকার চোখ বড়সড় হয়ে এলো। একবার মাথা উপর নিচ করল তো আরেকবার দু’পাশে নাড়ালো। মুখে কিছু বলার আগেই নখ বিঁধিয়ে দিল সাফারাত। পেট মোচড় দিয়ে উঠল চৈত্রিকার। তরঙ্গ খেলে গেল সারা অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে।

রুম হতে বেরিয়ে সুফিয়া বেগমের রুমে এলো। বিছানায় পড়ে কাতরাচ্ছেন তিনি। শরীরের বিভিন্ন স্থানে পচন ধরেছে। বিশ্রী গন্ধে রুমটায় আসতে চায় না কেউ। সাফারাতের এক্সিডেন্টের দিন সকালে তিনি স্ট্রোক করেন। সেই থেকে মরা’র মতো পড়ে আছেন বিছানায়। বাড়িতেই ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করিয়েছে সাফারাত। চৈত্রিকার একটুখানি মায়া হয়। কাছে এগিয়ে আসে সে। ফিসফিস করে বলে,
‘ আপনাকে এভাবেই ভালো লাগছে। মিথ্যে রোগের বাহানা দিয়ে হসপিটালে পড়ে থাকার চেয়ে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে থাকা নিঃসন্দেহে ভালো কাজ দাদি। আমার শাশুড়ি মায়ের বিয়ের বেনারসি টা কই রেখেছেন বলেন তো?ও আপনি তো কথা বলতে পারেন না। আমি নিজেই খুঁজে নিব। ‘

সুফিয়া বেগমের চক্ষু কোটর হতে কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে গেল। চৈত্রিকা আলমিরা খুলে সিয়ার বহু পুরোনো বিয়ের লাল টুকটুকে শাড়ি টা নিয়ে বেরিয়ে যায়।

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here