#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_২০
______
হাঁটতে হাঁটতে আশে পাশে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা দেখতে পেলো। সাথে পশু পাখি হরিণ অনেক কিছু এটা অনেক বড় বাগান অনেকটা দেখতে আইল্যান্ডের মতো কিন্তু আইল্যান্ড না।
বড় বড় গাছ পাশে উঁচু উঁচু পাহাড় অনেক সুন্দর জায়গা যে কেউ জায়গাটার প্রেমে পরে যাবে সাথে মন খারাপ থাকলে ভালো হয়ে যাবে।
নীল- আর কতদূর আমার পা ব্যাথা হয়েগেছে।
তোয়া— ওই তো ভাবি এসে গেছি ওই যে সামনে দেখো ময়ূর…!
নীল- কোই?
তোয়া- ওই তো। হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে।
নীল- ওয়াও কতগুলো একসাথে আর এত কালারের। 😍
তোয়া- তোমাকে হাসলে সুন্দর লাগে অনেক সব সময় হাসবা আর তুমি যখন হাসো তোমার গালে টোল পরে না তখন তো আরও বেশি কিউট লাগে ইচ্ছে করে কিস করি….! (মুখ হাত চেপে ধরে বলে)
নীল- কিহহহহহ?
তোয়া- হিহিহি ছেলেদের বা ভাইয়ার কথা বলছি তাদের ইচ্ছে করে আমার না, হিহিহি আমি ছেলে হলে তো কবেই করতাম.! এবার চোখ টিপ মেরে।
নীল- পাজি মেয়ে….! আচ্ছা তুমি এখানে দাঁড়াও আমি একটা ময়ূরের পাখ ছিড়ে নিয়ে আসছি।
তোয়া- না ভাবি যেয়ো না ময়ূর অনেক চালাক হয় ধরতে পারলে কামড় দিবে। সাথে দৌঁড়ানি ফ্রি…!
নীল- কিচ্ছু হবে না আমি আছি তো শুধু তুমি শব্দ করো না দাঁড়াও এখানে আমি আসছি।
বলেই নীল আসতে আসতে পা টিপে টিপে হাঁটছে সামনেই ছিলো একটা ময়ূর উল্টো দিকে ঘুরে ছিলো….!
নীল ময়ূরের পেছনে গিয়েই একটা পাখ ধরে দিলো টান…!
ময়ূর টা জরে ডাক দিয়ে পেছনে ঘুরে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে নীল এর দিকে। (ময়ূর কিভাবে ডাকে সেভাবেই ডাক দেয়)
নীল একটা শুকনো ঢোক গিলে পেছনে ঘুরে দিলো দৌঁড় ময়ূর টাও নীলকে তারা করছে।
নীল চিল্লিয়ে- তোয়া ভাগ তারাতাড়ি…!
তোয়া নীল এর পেছনে ক্ষীপ্ত ময়ূর দেখে দিলো উড়াধুড়া দৌঁড় দু’জনেই দৌঁড়াচ্ছে..!
দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে দু’জনেই অনেক দূর পর্যন্ত চলে আসে।
ময়ূর ওর সিমানার বাহিরে যায় না তাই মাঝ পথে ফিরে যায়।
তোয়া- ভাবি ময়ূর টা আর আসছে না আমাদের পেছনে। হাঁপাতে হাঁপাতে হাঁটুর উপর দুই হাত চেপে ধরে।
নীল নিচে ঘাসের উপর বসে পরে।
নীল- তো তুমি কি চাচ্ছো? দজ্জাল টা আমাদের পেছনে আসুক!
তোয়া- ওও এখন দজ্জাল। তো কেনো গেছিলা ওর কাছে হুদ্দাই পাখ তো পাইলাই না আরও এত দৌঁড়ানি খাওয়াই লা।
নীল- ঠেঙ্গা……!
তোয়া- কিসের ঠেঙ্গা?
নীল- এই দেখো! (পেছনের হাত সামনে এনে)
তোয়া- ভাবি! তুমি সত্যিই পাখ তুলে আনছো?
নীল- ইয়েস! চোখ টিপ দিয়ে!
তোয়া- ইউ আর জিনিয়াস ভাবি…!
নীল- থ্যাংক ইউ।। সব ঠিক আছে কিন্তু তোয়া মনে হচ্ছে আমরা হারিয়ে গেছি এখন কি করবো আমরা?
তোয়া- নো টেনশন ভাবি আমি এখানের সব চিনি চলো!
দুজনে আবার হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির কাছে চলে আছে।
এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে তারপর গাড়িতে উঠে চলে আসে ফার্ম হাউজ।
রাতে খেয়ে দেয়ে সবাই গিয়ে শুয়ে পরে..!
পরেরদিন সকালে….!
ব্রেকফাস্ট করে সবাই ফার্ম হাউজ থেকে বেরিয়ে পরে আজ সারাদিন ঘুরবে প্লেন করেছে।
এখানে আসার পর নীল এর মুখে উজ্জ্বল হাসি ফুটে উঠে.!
এখানে আসার পর অভ্রর কথা নীল এর কমই মনে পরে।
সবাই হাটছে ঘুরতে দেখছে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের কাছে চলে আসে। তারপর সবাই সব চাইতে উঁচু পাহাড়ে উঠে…! এখান থেকে সম্পূর্ণ জায়গা স্পষ্ট দেখা যায় অনেক অনেক সুন্দর জায়গা। পাহাড়ের উঁচু থেকেই দেখা যাচ্ছে কিছুটা দূরেই নদী সেখানের পানি অনেক সুন্দর।
নীল- আমি ওই নদীর কাছে যাবো!
মিস্টার চৌধুরী- ওখানে যাওয়া সবার জন্য নিষেধ। ওখানে কুমির আছে.!
নীল- ওওও.!
এই জঙ্গলে বা বাগানে সব পশু আছে…!
মিসেস চৌধুরী- হিংস্র পশু বাধে প্রায় সবই আছে….!
নীল- ওওও….
এভাবেই দুদিন সম্পূর্ণ বাগান ঘুরে দেখে সবাই তারপর আবার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয় কাল অভ্র ফিরবে নীল ছাড়া সবাই জানে….!
চৌধুরী হাউজ রাতে…..!
নীল সাদে বসে আছে পেছন থেকে তোয়া এসে বসে।
তোয়া- ভাবি ভাইয়ার প্লেনটা কিন্তু দারুণ ছিলো!
নীল- ভাইয়ার প্লেন? ভ্রু কুচকে তোয়ার দিকে তাকায়!
তোয়া- হ্যাঁ ভাইয়াই তো তোমার মন খারাপ শুনে আব্বুকে সেদিন কল দিয়ে বলে তোমাকে নিয়ে সবাই জেনো আমাদের ফার্ম হাউজে গিয়ে ঘুরে আসতে তাতে তোমার মন ও ভালো হয়ে যাবে।
নীল- সত্যি?
তোয়া- হুম….! ভাইয়া তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে এত দূরে থেকেও তোমার মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
নীল- সত্যি বলেছে।
তোয়া- আরও একটা কথা…! ভাইয়া বলছিলো তোমাকে বলতে না কিন্তু আমি না বলে থাকতে পারছি না।
নীল- কিহ??
তোয়া- কাল ভোরের ফ্লাইটে ভাইয়া বাংলাদেশ বেক করছে।
নীল- সত্যি বলছো?
তোয়া- হুম!
নীল- অনেক খুশি হয়। খবর টা শুনে জেনো চাঁদ হাতে পেয়ে গেছে।
নীল- তাহলে তো আমাদের ও তোমার ভাইয়ার জন্য কিছু করা উচিত…!
তোয়া- হুম!
নীল- প্লেন শুনো কানে কানে।
পরেরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নীল তোয়া মার্কেট চলে যায় আর রুম সাজানোর অনেক সামগ্রী কিনে নিয়ে আসে।
দু’জনে মিলে সুন্দর করে রুম সাজাচ্ছে পুরো রুমের সবকিছু চেঞ্জ করে নতুন লাগিয়েছে পর্দা থেকে বেড শিট সহ সব কিছু। ফুলদানি তে ফুল মোমবাতি আরও অনেক কিছু….!
রুমটা দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে।
অভ্র এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি করে বাড়ি ফিরছে..!
নীল ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নীল শাড়ি পরে নেয় ভিজে চুল ছেড়ে দেয়। চোখে গাড় করে কাজল দেয় ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক…!
চৌধুরী হাউজ গাড়ির হন বাজার সাউন্ডে তোয়া- ভাবি ভাইয়া এসে গেছে তারাতাড়ি এসো।
নীল তোয়ার ডাক শুনে দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেইটের সামনে আসছে।
কলিংবেল বাজতেই মিসেস চৌধুরী মেইন গেইট খুলে দিলো।
অভ্র কে জরিয়ে ধরে কেমন আছে টাছে জিজ্ঞেস করে।
মিসেস চৌধুরী- ও কে.?
অভ্র- ভেতরে চলো বলছি….!
নীল অভ্রর সাথে অন্য একটা মেয়েকে দেখে অভ্রর সামনে আর যায়নি।
দূরে দাঁড়িয়ে থাকে।
অভ্র হল রুমে সোফায় বসে পাশের মেয়েটাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
অভ্র- মা ও হচ্ছে মারিয়া আমার ছোটো বেলার ফ্রেন্ড যার কথা বলেছিলাম না তোমাদের যাকে এতদিন খুঁজেছি ওই সেই আজ এয়ারপোর্ট থেকে আসার সময় রাস্তায় আমার গাড়ির সামনে চলে আসে তারপরেই কথায় কথায় জনতে পারি ও ওর সম্পর্কে বলে এতবছর পর খুঁজে পেলাম তাই আমার সাথেই নিয়ে আসছি আমাদের সাথে কিছুদিন থাকবে।
নীল অভ্র ওকে ইগনোর করছে একবারও তাকায়নি। সেটা দেখে চোখের কোনে পানি মুছে উপরে চলে যায়।
অভ্র ওখানেই সবার সাথে গল্প করছে।
নীল রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে চলে যায়।
অভ্র এদিকে রুমে এসে নীলকে দেখতে না পেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে হলে আসে…!
লাঞ্চ টাইম ডাইনিং টেবিলে সবাই বসে খাচ্ছে সার্ভেন্ট দু’জন দু পাশে দাঁড়িয়ে আছে যদি কারো কিছু লাগে দেওয়ার জন্য…!
অভ্র- আজ রান্না টা অনেক ভালো হয়েছে। অনেকদিন পর বাড়ির রান্না খাচ্ছি।
মিসেস চৌধুরী- আজ সব রান্না নীল করেছে।
মারিয়া- নীল কে…!
তোয়া- নীলাঞ্জনা নীল….! আমার ভাবি। (নীলকে দেখিয়ে)
নীল- এই মারিয়া কে আমার একটু ও সহ্য হচ্ছে না।
আর তারপর মারিয়াকে নিয়ে অভ্রর বারাবাড়ি।
মারিয়া এটা নাও ওটা নাও সেটা নাও আরও নাও খাচ্ছো না কেনো উফফ অসহ্য ধ্যাত….!
অভ্র- নীল রান্না করতে জানে। বাহ জানা ছিলো না।
নীল- জানবেন কিভাবে আমার দিকে খেয়াল থাকলে না জানবেন.! (বিড়বিড় করে বলে মুখ ভেংচি দেয়)
দুপুরে খাওয়ার পর সবাই রেস্ট নেওয়ার জন্য যার যার রুমে চলে যায়। নীল রেগে আগেই রুমে চলে আসে আর দাঁড়িয়ে থাকে রুমের মধ্যে অভ্র মারিয়াকে গেস্ট রুমে নিয়ে যায়।
অভ্র রুমে প্রবেশ করে খুব অবাক হয়….!
অভ্র- এত সুন্দর করে রুম কে সাজিয়েছে আর কেনো?
নীল- রুমে আমি ছাড়া অন্য কেউ থাকে বলে তো আমার জানা নেই।
অভ্র- তুমি সাজিয়েছো কিন্তু কেনো?
নীল- মন চাইছে তাই…! আর হ্যাঁ ভাববেন না আপনার জন্য সাজিয়েছি কারণ আপনার জন্যই সাজিয়েছিলাম কিন্তু সব কষ্ট বিফলে গেলো।
বলেই রুম সাথে সাথে ত্যাগ করলো অভ্র কে কিছু বলার সুযোগই দিলো না।
অভ্র বেক্কেলের মতো নীল এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে এই সব কিছু নীল আমার জন্য করেছে?
বিকেলে তোয়া নীল অভ্র মারিয়া বাহিরে ঘুরতে যায়.!
অভ্র নীল এর পাশে পাশে না হেঁটে মারিয়ার পাশে পাশে হাঁটছে বা পাশে অভ্র ডান পাশে তোয়া আমি পেছনে আমার দিকে কারো কোনো খেয়ালই নেই নীল বিরক্ত হয়ে মাঝ পথে দাঁড়িয়ে যায়। ২/১ বার বলে নীল বাড়ি যেতে চায়। সবাই নীল এর কথা শুনেনি এমন একটা ভাব নিয়ে হাঁটছে।
নীল- অনেক হইছে। হলেই এক চিৎকার দিয়ে বলে।
নীল- আ..মি বাড়ি যাবো।
নীল এত জরেই চিৎকার দেয় ওর চিৎকারে আশে পাশের মানুষ সহ অভ্র তোয়া মারিয়া পেছনে ঘুরে তাকালো।
নীল- সবাই আমার দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আমি কোনো আস্বামী।
নীল- আমার ভালো লাগছে না আমি বাড়ি যাবো।
মারিয়া- এত তারাতাড়ি চলে যাবো একটু আগেই তো আসলাম।
নীল- একটু আগে ২ঘন্টা হয়ে গেছে। জরে বলে।
নীল- তাছাড়া অন্যের স্বামীর পাশাপাশি হাঁটলে তো সময়ের খেয়ালই থাকে। বিড়বিড় করে বলে।
তোয়া- চল ভাইয়া এখন বাড়ি ফিরে যাই আমার পড়তে হবে আবার।
অভ্র- আচ্ছা চলো সবাই।
চৌধুরী হাউজ……
রাতে খাবার খেয়ে নীল এর ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও মারিয়ার জোরাজরিতে সাদে আসতে হয়।
তোয়া মারিয়া অভ্র বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে একটু একটু শীত পড়েছে তাই মিসেস চৌধুরী পিঠা বানিয়েছেন হরেক রকমের পিঠা…!
সবাই খাচ্ছে আর গল্প করছে।
মারিয়া খুব মিশুক একটা মেয়ে সবার সাথে একদিনের মধ্যেই মিশে গেছে সবাই ওকেও আপন করে নিছে। মনে হচ্ছে মারিয়া এ বাড়িরই একজন.!
নীল বিরক্তি নিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে…!
রাত সাড়ে ১১টা….
নীল- আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাতে গেলাম।
মারিয়া- আর একটু থাকো।
নীল সাদ থেকে সোজা রুমে চলে আসে এটা ভাবে অভ্রও চলে আসবে কিন্তু না অভ্র আসে না ওই মেয়ের সাথে গল্প করছে ভাবতেই শরীর জ্বলে যাচ্ছে নীল এর কোই ভাবছিলো আজকে অভ্রকে আমার মনে কথা বলবো কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে বসলো মারিয়া.! শাঁকচুন্নি একটা আমি তো এখন আর অভ্রর Priority না এখন তো অভ্রর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মারিয়া….!
পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলো অভ্র শুরুতে কথা গুলো না শুনলেও শেষের Priority কথা গুলো শুনেছে।
অভ্র- তুমি ১৫দিনে কি আমাকে একটুও মিস করেছো নীল?
দরজার সাথে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র,, নীল অভ্রর কথা শুনতে পেয়ে পেছনে তাকায় দেখে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে।
নীল- কখন এলো আমার কথা গুলো শুনে নিলো না তো আবার?
নীল- কিহহহহ.?
অভ্র- কল দাওনি তো তাই বললাম মিস করলে তো কল দিতে।
বলেই রুমে প্রবেশ করে দরজা আটকিয়ে দেয়।
নীল- আপনিও তো কল দেননি মানে আপনিও মিস করেননি?
অভ্র- আমি বলেছিলাম তুমি কল না দেওয়া পর্যন্ত আমি কল দেবো না।
নীল- আমিও বলেছিলাম খুব বেশি বিপদে না পরলে আপনাকে কল দেবো না।
বলেই দু’জনে দু দিকে ঘুরে যায়।
নীল বেডে গিয়ে শুয়ে পরে অভ্র সোফাতে…!
.
.
.
কিছু কথা……★
.
আগের পর্ব গুলোর সাথে মেলানোর চেষ্টা করবেন না কেউ… আমার যতটুকু মনে পরছে আমি ততটুকুর মধ্যেই আবার নতুন করে লিখছি……!
.
.
.
#চলবে …..?
.
রি-চেইক করা হয়নি ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!
ভালো থাকবেন সবাই!
“হ্যাপি রিডিং”………
.
“কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ”……… ❌