#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৫৫
‘ এক পৃষ্ঠা পড়েই ঘৃ’ণার স্থানে রাখলি আমায়,অপর পৃষ্ঠা কেন উল্টে দেখলি না তুই সাফারাত?’
আলো বেগমের অনুভূতিহীন কন্ঠের প্রশ্ন টা তীক্ষ্ণভাবে আঘা’ত হানে সাফারাতের কর্ণকুহরে। চৈত্রিকাকে বুকে লেপ্টে তার নিঃসংকোচ উত্তর,
‘ কারণ অপর পৃষ্ঠায়ও আপনার সত্যটা পাল্টে যাবে না। আপনি আমার আম্মুর খু*নি তা চিরন্তন সত্য হয়ে রবে। ‘
আলো বেগম দীর্ঘ, লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লেন। ভেতরে ভেতরে প্রবল আর্তনাদ করছেন তিনি। বার বার চাইছেন সবটা স্বপ্ন হয়ে যাক। খারাপ কোনো স্বপ্ন। তবুও যেন বাস্তব না হয়। কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। সাফারাত মানে ওনার কাছে সুখ। এই ছেলেটার মাঝে মাতৃত্বের স্বাদ খুঁজে পায় সে,কি করে সহ্য করবে তার ঘৃ’ণা!কেন সি’য়ার প্রতি ক্ষোভ রেখে সুফিয়া এহমাদের সাথে হাত মেলাল?একটা বার কি ঠান্ডা মস্তিষ্কে ভাবতে পারত না সবকিছু? সকল বিষাদ,তিক্ত স্মৃতি ভুলে যাওয়া কি অসম্ভব কিছু ছিল?না তো!বরং সামান্য একটা কষ্ট মনে পুষে রেখে দিনকে দিন, বছরের পর বছর এটাকে ভয়ংকর করে তুলেছে। এতটাই মারাত্মক যে অন্যকে খু’ন করার চিন্তা পর্যন্ত ওনার মাথায় আসতে বেশি সময় নষ্ট হয় নি। স্রেফ!শুধু এক থেকে দু’টো মিনিট লেগেছিল। কতটা নির্দ্বিধায় সেদিন তিনি উচ্চারণ করেছিলেন ‘ সিয়াকে মে’রে ফেলুন। তখনও তার মনে কোনো সংশয়,ভয় ছিল না। নির্ভয়,নির্বিকার ছিলেন তিনি। কারণ সিয়ার মৃ’ত্যুই তো সাফারাতকে কাছে পাওয়ার মন্ত্র,অ*স্ত্র হিসেবে কাজ করেছিল। কিন্তু কে জানত যার মন নিজ হাতে ভেঙে গড়েছেন তার দু’চক্ষে নিজের জন্য অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য, বিতৃষ্ণা দেখতে পাবেন!আজ প্রকৃতি, সময় অত্যধিক নিষ্ঠুর এবং প্রতিকূলে। তিনি আজ ক্ষণে ক্ষণে অনুভব করছেন- “পা’প বাপ কেও ছাড় দেয় না। ” ধীরে ধীরে মুখ খুললেন আলো বেগম,
‘ তুই শুধু আট বছর আগের কথাটুকু জানলি এটা জানলি না তোর মা আমার ভালোবাসা কেঁড়ে নিয়েছে। আমার কোলে দুঃখ ঢেলে দিয়ে সুখের সংসার সাজিয়েছিল ও। আর আমি নির্ঘুম থেকেছি। ফারুক এহমাদকে ভালোবাসতাম আমি। ভালোবাসতাম বললে ভুল হবে,আমার সমগ্র সত্তা জুড়ে ছিল তার বিচরণ। আমার প্রথম প্রেম। চাকরির সুবাদে প্রায়শই ফারুক তোদের বাড়িতে আসত। তেমনই একদিন তোদের বাড়িতে গিয়ে আমি ওকে দেখি প্রথম। সেই দেখায় আমার মনে জায়গা করে নেয় সে। তোর মা’য়ের কাছ থেকে ইনিয়েবিনিয়ে ফারুকের সম্পর্কে অনেক তথ্য জোগাড় করি। বাবা তো আলাদা বাড়ি করে আমাদের নিয়ে অন্যত্র থাকতেন। কিন্তু ফারুককে এক নজর দেখার জন্য তোদের বাড়িতে আমার আসা-যাওয়া ঘন হলো। ওই এক নজর দেখাতেই শান্তি,সুখ খুঁজে পেতাম আমি। মেয়ে হিসেবে সেই সময় বড্ড লাজুক ধাঁচের ছিলাম। চেয়েও ফারুকের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারি নি,কখনও মুখ ফুটে প্রেম নিবেদন করা হয় নি আমার। দিন পেরোয়,মাস পেরোয়। বলতে না পেরে আমার ভিতরকার ঝড়ের বেগ বাড়তে লাগে। সবকিছু কেমন বিষাক্ত অনুভব হতে আরম্ভ করলো। এরকম অসহ্য অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না। শীগ্রই ছুটে গেলাম সিয়ার কাছে। ওর দু-হাত ধরে বললাম আমি ঠিক কি অনুভব করি ফারুক নামক মানুষটার জন্য। ওকে বলতে পেরে আমি স্বস্তি ফিরে পেলাম। ও শুধু আমার ছোট বোন ছিল না, বান্ধবীও ছিল। বিনা দ্বিধায় চোখ বুঁজে বিশ্বাস করার মতোন মানুষটা আমার জীবনে একমাত্র সিয়া-ই ছিল।
ওই মুহুর্তে আমার মনে হচ্ছিল আমার বুক থেকে অনেক বড় বোঁজা নেমে গেছে। সিয়াকে জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে। জিজ্ঞেস করলাম –‘ আমার হয়ে তুই বলবি তো ওকে?’ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল ও। খুশিতে আমি কেঁদে দিয়েছিলাম। বাবা-মায়ের পর জীবনে কাউকে আমি এতোটা ভালোবাসি নি। একতরফা প্রেমেও ফারুকের মধ্যে আমি ডুবে ছিলাম। সিয়াকে আমার সুখের প্রদীপ মনে হচ্ছিল তখন। কিন্তু সব ভ্রম ভেঙে গেল। মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়লাম আমি। আর আমাকে মৃত্তিকায় ঢলে পড়তে সহায়তাকারী হিসেবে থাকল তোর মা।
আমার ভালোবাসা কেঁড়ে নিজের সংসার গড়ল। সুখের সংসার। আর আমি কাতর হয়ে গলা কাটা মুরগির ন্যায় তপড়েছি সুখের নেশায়। তোর মা’কে যেদিন নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে বাসায় আসি এর পরের দিনই সন্ধ্যায় বাবার কাছ থেকে জানতে পারি ওর আকদ হয়ে গেছে হুট করে। প্রথমত শুনে চমকে যায় আমি,আবার আনন্দও অনুভব করি। বাবাকে জিজ্ঞেস করি কার সাথে! সঙ্গে সঙ্গে বাবার জবাব শুনে আমার পুরো জগৎ টুকরো টুকরো হয়ে গেল ঠিক ভাঙা কাঁচের মতোন। নিমেষে অন্তরআত্মা চিৎকার করে উঠে,চোখের পলকেই যেন মৃ*ত্যু ঘটে তার। আত্মার মৃ’ত্যু। ফারুকের সাথে ওর বিয়ে হয়ে যায়। সিয়া আমার সাথে প্রতা’রণা করল। ওর যদি এতই ফারুকের প্রতি ভালোবাসা থাকত তাহলে কেন বললো না আমাকে?কই আমি যখন প্রথম বার ওর কাছে ফারুকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি ওর চেহারায় তো কোনো ধরনের অভিব্যক্তি ছিল না। আমি আমার মনের কথা বলতেই ও ছিনিয়ে নিল ফারুককে। উল্টা আমি যখন গেলাম ওর কাছে ও আমার সাথে কথা-ই বলল না। চাচার কাছ থেকে জানলাম বিয়েটা চাচার সম্মতি ও সিয়া-ফারুক দু’জনের সম্মতিতেই হয়েছে। প্রেম-প্রেম সম্পর্ক ছিল দুজনের মধ্যে। সেদিন সদ্য বিবাহিত হাসোজ্জল ফারুকের দিকে এক নজর চেয়ে আমি সেই বাড়ি ছেড়ে আসি। ঢাকা শহর ছাড়ি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবার পছন্দ করা ছেলের কাছে বিয়ে বসে জার্মানি পাড়ি জমায়। ‘
বড় বড় নিঃশ্বাস ফেললেন আলো আনিয়া। চৈত্রিকা ততক্ষণে সোফায় বসে ওনার সকল কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। ওনার থেমে যাওয়াতে যেন ওর মনোযোগ ভঙ্গ হলো। আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করতে অভিলাষ জাগে তারপর কি হয়েছিল জানার নিমিত্তে। ওর দৃঢ় বিশ্বাস সিয়া মা কোনো অপরাধ করে নি। বরঞ্চ ভয়াবহ, নি’কৃষ্ট কাজ করেছে আলো। কি করে একটা মানুষ অন্য একটা মানুষকে মারার মতো ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারে!তাহলে কি আলো বেগম মানুষ নয়?অমানুষ! চৈত্রিকার পাশেই জায়গা দখল করে বসে আছে সাফারাত। চোখ মুখে বিরক্তি ভাব বিশাদ,স্পষ্ট। মেজাজ তার আকাশচুম্বী তবুও আজ আলো বেগমের সম্পূর্ণ কথা না শুনে উঠবে না সে।
অতিকায় তৃষ্ণার্ত আলো বেগমের কন্ঠনালি। কিন্তু পানি চাইতে সংকোচ হচ্ছে। সামনের মানুষ দুটোর আঁখিযুগলে ক্রোধ, ঘৃ’ণা বিহীন কিছুই দেখতে পারছেন না। শুকিয়ে যাওয়া কন্ঠেই ফের বলে উঠলেন,
‘ তোরা যাকে খালু বলে ডাকিস সেই মানুষটা একটা নর’পশু ছিল। বলতে চাই না নিজের স্বামীর কু-কীর্তির কথা তবুও সব সত্য যেহেতু জানিস আজ কিছুই লুকাবো না। বাবা-মা, আপনজন ছেড়ে জার্মানি আসলাম এমন একটা মানুষের হাত ধরে যার মেয়েলি নেশা আছে। এক,দু-মাস পর পর তাকে নিত্যনতুন মেয়ে মানুষের সঙ্গে দেখা যেত। সব দেখেও নিশ্চুপ,নির্বিকার থাকতাম আমি। বিয়ের শুরুতে প্রতিবাদ করলেও লাভ হতো না। আমার কোনো কথাই কানে তুলত না সেই মানুষ টা। এমনিতেই আমি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলাম তোর মা’য়ের ধোঁকায়, আবার তোর খালুর এসব আমার জীবনে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করল। প্রতিনিয়ত ধুঁকে ধুঁকে মরতাম আমি। একসময় নিজের উদরে কারো অস্তিত্ব অনুভব করি। যেই আমি কাঠখড় পোড়াচ্ছিলাম বদ মানুষটার সঙ্গ ছাড়ার জন্য, সেই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম গর্ভে আসা বাচ্চাটার জন্য হলেও আমি সংসার করবো। কিন্তু তখনও তোর মা’য়ের প্রতি জেদ,রাগ এক বিন্দুও কমে নি আমার। জার্মানি বসে যখন ওর সুখের কথা শুনতাম তখনই তোর খালুর করা প্রত্যেক টা অত্যাচার আমার দগদগে ক্ষত আরো সতেজ করে তুলত। তীব্র ঘৃ’ণা জন্মাতো সিয়ার প্রতি। সর্বদা ওকে আমার এই পরিণতির জন্য দোষী সাব্যস্ত করতাম আমি।
হঠাৎ একদিন মা জানালো বাবা খুব অসুস্থ। তোর খালুর পায়ে পড়ে আমি অনুরোধ করতে থাকি বাংলাদেশ যাবার। ওর আবার তাতে মাথা ব্যাথা ছিল না। বাবা হবে জেনেও কোনো খুশি কাজ করে নি তার মাঝে। সুদূর ওই জার্মানি থেকে একা একা পাঠিয়ে দিল আমাকে। প্ল্যানে বসে আমি চোখের জল ফেলেছি, প্রতি বার মস্তিষ্ক চারা দিয়ে উঠেছে তোর মা আমার অসুখের কারণ। বিতৃষ্ণার জন্য দায়ী। বাংলাদেশ আসার দু’দিনের মাথায় এক বিকেলে সিয়া আমাদের বাসায় ছুটে আসে নয় মাসের ভরা পেট নিয়ে। কি স্নিগ্ধ, সুন্দর লাগছিল ওকে!আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদল। অনেক কিছু বলতে চাইল। আমি শুধু এতটুকুই বললাম পুরোনো ঘা তাজা করবে এমন কথা আমি শুনব না। তুই আমার বোন তোর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে তো লাভ নেই। ও খুশি হয়ে আবারও আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। কিন্তু বোকা মেয়ে একটা বারও আমার মুখের মেকি হাসি ও মিথ্যে কথাগুলো আঁচ করতে পারল না। মনে মনে তো আমার ইচ্ছে করছিল খু*ন করে জলে ভাসিয়ে দেই ওর দেহটা। ওর সুখ, ওর মা হওয়ার পূর্বের সুন্দর চেহারা আমার একদম সহ্য হচ্ছিল না। এই সুন্দরের জালেই তো ফাঁসিয়েছিল ও ফারুককে। আমার ওপর ভরসা করে জীবনের সব কথা শেয়ার করত। আমি বাংলাদেশ থাকতেই কোনো এক ভোরে ও একটা ছেলে সন্তান জন্ম দিল। ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা চালিয়ে সেই বৃষ্টিমাখা ভোরেই আমি হসপিটালে ছুটে যায়। নরমাল ডেলিভারি হওয়ায় ও একদম সুস্থ ছিল। আমাকে দেখে নার্স কে বললো বাচ্চা টাকে আমার কোলে দিতে। তখনও আমি ওর বেবি কে দেখি নি। নার্স কোল হতে বাচ্চা টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিতেই আমি থমকে গেলাম। হুট করেই মাতৃত্ব অনুভব করলাম। ঠিক কতক্ষণ, কতক সময় সেই বাচ্চা টা মানে তোকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলাম তার ইয়ত্তা নেই। অন্য রকম এক মায়া জন্মে গিয়েছিল তোর প্রতি,যেই মায়া আমি আজও কারো জন্য খুঁজে পাই নি।
জার্মানি ফিরে এসে আমার মিসক্যারেজ হয়ে যায়। জীবনে কখনও মা হবো না এই বাক্য টা আমার কানে ঢেলে দেন ডাক্তার। জীবনে সুখ ছিল না, সুখের দেখাও আর মিলল না। বাচ্চা মিসক্যারেজ হওয়ার পর তোর খালু সন্তান হারানোর শোক বুঝতে পারে। একটু একটু করে মেয়েলি সঙ্গ ছেড়ে দেয়। সবসময় বলতে থাকে আল্লাহ আমার পাপের শাস্তি দিয়েছেন। ওনার এসব কথা আমার কানে পৌঁছালেও মনে ধরত না। কারণ আমি তখন সর্বস্ব হারিয়ে একজন অসুখী নারী। হিংসার আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছিল আমার অন্তর। সিয়া সুখী অথচ আমি অসুখী। ছেলে,হাসবেন্ড নিয়ে ওর সুখের পরিবারের গল্প শুনে আমার মনে হতো আমার হৃদয়ে ছুরিঘাত করতো সে। কয়েক মাস বাদে একটা ছোট দুধের শিশুকে এডপ্ট করে নিয়ে আসে তোর খালু। মা হিসেবে ওকে কোনো কিছুতে অপূর্ণ রাখি নি। আদরে বড় করেছি ওকে। কিন্তু আমার অভ্যন্তরে জ্বলন্ত অগ্নি কখনও নিভে নি। বছরের পর বছর পেরিয়ে নতুন বছর আসে,তবুও না। আমার পালিত সেই ছেলে আয়ান বড় হয়,তুইও বড় হোস। সবকিছু পাল্টে যায়,শুধু আমার সিয়ার প্রতি আমার ঘৃ’ণা,হিংসা ব্যতীত।
তোকে আর সিনথিয়াকে জার্মানি পাঠানোর পর সিয়া ওর দ্বিতীয় বার প্রেগন্যান্সির কথা জানায়। তোকেও জানাতে চায় ওর জীবনে কি চলছে সব কথা। কিন্তু আমি জীবনে প্রথম বার ওর জীবন বরবাদ করার সুযোগ পেয়ে একটা চাল চালি। ওকে বলি তোকে যেন এসব না বলে। তাহলে ফারুকের মতো তুইও বুড়ো বয়সে বাচ্চা নেওয়ার বিষয় টা ছি!ছি!করবি। সিয়া মানতে চাইছিল না। বার বার বলছিল আমার সাফারাতের প্রাণ আমার মাঝে। ওর মা’কে ঘৃ’ণা করতে পারবে না ও কখনও। রাগ লাগছিল তবুও ওকে অনেক বুঝালাম। একটা সময় আমার সিদ্ধান্ত টা মেনে নেয় সে। তোর কাছ থেকে ফারুকের অত্যাচারের বিষয় টা আড়াল করে শুধু প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা জানালাম। যদিও আমি নিজেই সিয়াকে না করেছিলাম, কিন্তু পরে তোর বিশস্ত হওয়ার জন্য জানাতে বাধ্য হলাম। ফারুক পরকীয়া করে শুনতে পেয়ে স্বস্তি পাচ্ছিলাম। প্রকৃতি যেন প্রতি’শোধ নিল। কিন্তু নিজ থেকে প্রতি/শোধ নেওয়ার ইচ্ছেটুকু দমন করতে পারলাম না। সুফিয়া এহমাদের সাথে যোগাযোগ করি। ওনি অবশ্যই আমার কাছে সিয়ার প্রতি এতো ক্ষোভের কারণ জানতে চেয়েছিল, প্রত্যুত্তরে বলেছি কারণ জানা যাবে না। নিজের কু-কর্মে কারো সাপোর্ট পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন তিনি। সিয়াকে মৃ’ত্যু’র প্ল্যান টা আমি করে দিলেও পরে আমি বেঁকে বসি৷ ওনাকে না করি। কারণ হঠাৎ উপলব্ধি করি এত বড় অন্যায় আমি করতে পারব না। তিনি আমাকে কথা দেন এই কাজটা করবেন না। কিন্তু ওনি ওনার কথার খেলাপ করেন। আমার দেয়া বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সিয়াকে জ্বালিয়ে দেয় অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়। বিশ্বাস কর সাফারাত আমি এমনটা চাই নি। আমি জানিনা আমার কি হয়েছিল!না করেছিলাম আমি ওনাকে। কিন্তু ওনি!
আলো বেগম আর বলতে পারলেন না। কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। চৈত্রিকার নেত্রজল শুকিয়ে গিয়েছে। একেকটা সত্য এতটা তিক্ত কেন?পাশ ফিরে দেখল সাফারাত নেই। শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে চৈত্রিকার। এই মুহুর্তে চোখের সামনে ও কেবল একজন খারাপ মানুষ দেখতে পাচ্ছে। কিয়ৎক্ষণ পর সাফারাত ফিরল। একটা ডায়েরির কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টে এক প্রকার ছুঁড়ে মারল সে ডায়েরি টা আলোর বেগমের দিক।
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)