অভ্র নীল পর্ব-৩৭

0
563

#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_37
______
তোয়া- আমরা তো এমনেই প্রশ্ন করছিলাম তাই বলে কি চলে যাবি নাকি?
অভ্র- আচ্ছা মা তুমি কেমন আছো বলো তো। (মিসেস চৌধুরীর দুই হাত ধরে)
মিসেস চৌধুরী- আমরা তো সবাই ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু?
অভ্র- কিন্তু কি?
মিসেস চৌধুরী- নীলকে দেখে সুস্থ মনে হয় না ও মনে হয় অসুস্থ ওর অনেক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি কয়েকদিন যাবৎ কিন্তু ওকে জিজ্ঞেস করেছে কিছুই বলে না আর নিজে থেকেও কিছু বলছে না।
তোয়া- আম্মু ঠিক বলছে ভাইয়া আমিও লক্ষ্য করেছি ভাবির কিছু তো হয়েছে।
অভ্র- হুম নীল কোথায়?
মিসেস চৌধুরী- সকালে বের হয়েছে বান্ধবীদের সাথে দেখা করতে যাবে বলে এখনও আসেনি।
অভ্র- কি বলছো কি কোই সকাল আর এখন কোই
বিকেল এখনো নীল বাড়ি ফিরে বলে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায় পরে তানজু কে কল দেয় সে জানায় নীল এর সাথে আজ ওর কোথাই হয় নাই, তারপর তানিয়া কে তানিয়া ও সেম কথাই বলে এমনি কাজলকে কল দিলেও কাজল ও একই কথা বলে।
অভ্র এখন খুব চিন্তায় পরে যায় আবারও নীল এর নাম্বারে কল দেয় কিন্তু ফোন বন্ধ (চার্জ শেষ হয়ে ফোন বন্ধ হয়ে গেছে সেটা নীল খেয়াল করেনি)
অভ্র- তানজু তানিয়া কাজল ছাড়া নীল এর আর কোনো বন্ধু নেই ওদের সাথে দেখা করতে যায়নি।
কোথায় গেলো আমার নীল সাথে ফোনটাও বন্ধ ওর কোনো বিপদ হয়নি তো।
মিসেস চৌধুরী- চিন্তা করিস বা বাবা নীল ঠিক আছে হয়তো।
অভ্র- কিভাবে চিন্তা না করবো মা জানোই তো এর আগে একবার কি হয়েছিলো।
তোয়া- ভাইয়া আঙ্কেল আন্টিকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে উনাদের বাড়িতেও তো যেতে পারে।
অভ্র- ঠিক বলছিস।
অভ্র কল দিতেই মিসেস সরকার কল রিসিভ করেন তারপর অভ্র নীল এর কথা জিজ্ঞেস করলে তারা কিছু বলতে পারে না।
তাদের কাছে বেপার টা স্বাভাবিক লাগছে না অভ্রর ভয়েস কেমন জেনো অস্বাভাবিক লেগেছে উনাদের মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে কি-না চিন্তায় পরে যায় সাথে সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে উদ্দেশ্য চৌধুরী হাউজ।

অভ্র উনাদের কল কাটার পরেই বাড়ি থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে পরে গাড়ি চালাচ্ছে আর দুই পাশে খুঁজছে নীল কোথায়।
এমন কোনো জায়গা নেই অভ্র নীল কে না খুঁজেছে।
অভ্র এখন হসপিটালের রোডে জ্যামে বসে আছে।
গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেি দেখলো একটা মেয়ে রাস্তার সাইডে নিচে মাটিতে বসে আছে।
অভ্র সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
একটা মেয়েটা এভাবে রাস্তায় বসে আছে কোনো মানুষের কোনো বিবেক নেই গিয়ে দেখবে কি হয়েছে কোনো প্রবলেম নাকি কিন্তু না সবাই আমার কি যাওয়া উচিত হবে ধ্যাত গিয়ে দেখি মেয়েটার কি সমস্যা।
বলে গাড়ির সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে পরলো নীল। কিছু হাঁটার পর অভ্র মেয়েটার ড্রেস চেনা চেনা লাগছে।
অভ্র- নীললললললললল..! (বলেই চিল্লানি দিয়ে দৌঁড় দিলো)
নীল মাটিতে বসে মাথায় হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে প্রচুর মাথা ব্যাথা জেনো মাথা এখনই ফেটে যাবে।

অভ্র দৌঁড়ে এসে নীল এর সামনে বসে পরে আর নীল নীল বলতে বলতে নীল এর গালে হাত দিয়ে নীলকে নিজের দিকে ঘুরালো।

নীল এর চোখ বেয়ে পানি পরছে।
অভ্র পানি হাত দিয়ে মুছে দিলো।
অভ্র- কি হয়েছে তোমার জানপাখি বলো কাদছো কেনো কি হয়েছে বলো তুমি সারাদিন কোথায় ছিলে তুমি আর এখানে এমন ভাবে বসে আছো কেনো জানপাখি বলো কি হয়েছে।
নীল- অভ্র তুমি কখন এসেছো?
অভ্র- সেটা বড় কথা নয় জানপাখি বড় কথা তুমি এখানে কি করছো?
অভ্র নীলকে উঠিয়ে পাশের একটা দোকানের বেঞ্চে বসায়।
অভ্র মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে একহাত নীল এর গালে আরেক হাত অভ্রর হাতের উপর রাখে।
অভ্র- জানপাখি বলো কি হয়েছে তোমার কোথায় ছিলে ফোনই বা বন্ধ কেন কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি তুমি জানো আর তোমাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে চলো হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে যাবো।
নীল- আমি এতক্ষণ হাসপাতালেই ছিলাম।
অভ্র- হাসপাতালে..?
নীল- হুমমম।
অভ্র- কি হয়েছে তোমার জানপাখি নীলপরী বলো কি হয়েছে তোমার নীল বলো না। (অভ্রর চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে)
নীল সে পানিটা মুছে দিয়ে বলে..!
নীল- মিস্টার অভ্র চৌধুরী…! আমার কিছু হয়নি আমাদের হয়েছে।
অভ্র- মানে? (ঘোড়ার ডিম কি বললো কিছুই বুঝতে পারে নাই)

নীল পাশের টেস্ট রিপোর্ট টা অভ্রর দিকে বাড়িয়ে দিলো।
অভ্র- কি এটা?
নীল- আমার টেস্ট রিপোর্ট।
অভ্র ভয় পেয়ে যায়।
অভ্র- কিসের টেস্ট রিপোর্ট নীল এর কোনো বড় অসুখ হয়নি তো আবার না না আল্লাহ না করুক এমন জেনো কিছুই না হয়। (মনে মনে)
নীল- কি হলো ধরো দেখো।
অভ্র- আ… আমি পারবো না নীল।
নীল- দেখো প্লিজ আমার জন্য প্লিজ।
অভ্র রিপোর্ট ফাইলটা হাতে নিলো আর সেটা খুলে যা দেখলো পরে অভ্র…
অভ্র- নীল এটা তো প্রেগনেন্সি টেস্ট রিপোর্ট.!
নীল- হুম হুম। (হাসি দিয়ে)
অভ্র- মানে তুমি প্রেগন্যান্ট তুমি আম্মু আর আমি আব্বু হতে চলেছি।
নীল- হ্যাঁ…!
এখন তো দু’জনেই খুশিতে কেঁদেই ফেলে অভ্র রাস্তাতেই চিৎকার করে বলে.!
অভ্র- আমি বাবা হতে চলেছি আমার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট.! ইয়াহহহহুু….!
আশে পাশের সবাই অভ্র আর নীল এর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
নীল- কি বলছো কি এটা পাবলিক প্লেস আমার লজ্জা করছে প্লিজ চুপ করো।
অভ্র- আমি আজ কোনো বাধা মানবো না। আজ যে আমি অনেক খুশি আজ যে আমার নীল আমাকে দুনিয়ার সব থেকে বড় খুশির খবর শুনিয়েছে।
আ’ম সে হ্যাপি…!
বলেই রাস্তার মধ্যে নীলকে কলে তুলে নেয় অভ্র আর ঘোরাতে শুরু করে।
সবাই অভ্রর পাগলামো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আর হাসছে।
নীল- অভ্র আমার মাথা ঘুরছে।
অভ্র- ও সরি সরি জানপাখি। বলে নীলকে নিচে নামিয়ে নীল এর কপালে একটা চুমু দেয় আর নীল এর জামার উপর দিয়েই পেটের উপর চুমু দেয়।
অভ্র- আমাদের বেবি টা এখানে আছে তাই না। পেটের উপর হাত দিয়ে।
নীল- আশেপাশে তাকাচ্ছে আর হাসার চেষ্টা করছে।
নীল- হুম এখানেই আছে এখন বাড়ি চলো।
অভ্র- দাঁড়াও..!
বলে অভ্র মিষ্টির দোকানের সব মিষ্টি কিনে নিয়ে আসলো আর অর্ধেক মিষ্টি সেখানের সবগুলো মানুষ কে দিলো আর ওদের জন্য দোয়া করতে বললো।
তারপর নীলকে গাড়ি বসালো সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো অভ্র ড্রাইব করছে আর একটু পর পর জিজ্ঞেস করছে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো।

নীল- এত স্লো কেনো ড্রাইব করছো?
অভ্র- এই সময়ে এর থেকে বেশি স্পিডে গাড়ি চালানো ঠিক না বেবির সমস্যা হতে পারে।

নীল- উফফ আসছে এমবিবিএস ডাক্তার.! মুখ ভেংচি দিয়ে।
অভ্র- কি বললে?
নীল- কিচ্ছু না।
অভ্র- কিছু খাবে? নেবো কোনো কিছু?
নীল- না , শুধু বাড়ি চলো!
অভ্র- বাড়িতেই তো যাচ্ছি।
আনরোমান্টিক মাইয়া। মুখ ভেংচি দিয়ে,,
নীল- কি বললে তুমি আমাকে?
অভ্র- আমি আবার কখন কি বললাম।
নীল- তুমি আমাকে আনরোমান্টিক মাইয়া বলছো।
অভ্র- আচ্ছা আমি এইটা বলছিলাম কোই আমার তো মনে পরছে না।
নীল- গাড়ি থামাও.!
অভ্র- কেনো?
নীল- থামাতে বলছি থামাও.!
অভ্র গাড়ি ব্রেক করে নীল এর দিকে ঘুরে তাকালো।
অভ্র- বলো কি হয়েছে।
নীল- বসা থেকে উঠে গাড়ির সিটের উপর দুই পা তুলে বসে।
অভ্র- কি করছো নীল পেটে ব্যাথা পাবে।
বলতে বলতেই নীল অভ্রকে ধরে সোজা অভ্রর ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয় নীল এর ঠোঁট জোড়ার সাথে নীল অভ্রর ঠোঁট জোড়া মিশিয়ে দেয়।
৫মিনিট পর নীল অভ্র কে ছেড়ে দেয়।
নীল- এখন বলো আমি আনরোমান্টিক।
অভ্র- তুমি খুব রোমান্টিক এখন তো আমি হ**********ট হয়ে গেছি এখন।
নীল- ইইইহহহহ ড্রাইব করো বাড়ি যেতে হবে।
অভ্র- একটু একটু প্লিজ প্লিজ।
নীল- না না না।
অভ্র- একটু..!
নীল- না।
অভ্র- পাঁজি মেয়ে একটা…!
নীল- লুচ্চা ছেলে একটা…! (মুখ ভেংচি দিয়ে)
অভ্র- কি বললা আমি লুচ্চা ওকে বোঝাবো নে রাতে মজা।
.
.
#চলবে …..?
.
“গল্পটা শেষ করতে চাচ্ছি কিন্তু পর্ব শুধু বাড়তেই যাচ্ছে।..”
“হ্যাপি রিডিং”………
.
“কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ”……… ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here