#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_36
______
অভ্র নীল এর কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
অভ্র হাসতে হাসতে অফিসের বেলকনি থেকে কেবিনে ঢুকে তারপর টেবিলের উপর ফোন রেখে আবারও ল্যাবটপে কাজে মন দেয় সাথে শুভ, আকাশ ও আছে।
নীল ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে আসে। সারাদিন মিসেস চৌধুরী আর তোয়ার সাথেই কাটিয়ে দেয়। আজ আর নীল এর শরীর খারাপ হয় না তাই নীল আর কাউকে কিছু বলে না। রাতেও ঘুমিয়ে পরে কালকের মতো আর সমস্যা হয় না।
পরেরদিন সকালে নীল খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কিচেনে চলে আসে আর কারো হেল্প ছাড়াই আজ নীল সবার জন্য নাস্তা বানায়।
মিসেস চৌধুরী কিচেনে এসে দেখলো নীল সব কিছু করে ফেলছে নাস্তা বানিয়ে ফেলছে।
মিসেস চৌধুরী- নীল তুই এইসব করতে গেলি কেনো? খিদে লাগলে স্টাফকে বলতি সে করে দিতো স্টাফের কি অভাব আছে নাকি?
নীল- আম্মু আমি ভালোবেসে আমার আম্মু আব্বু আর ছোট্ট বোনের জন্য শুধু ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি আর তুমি এভাবে বলছো আমি কি তোমাদের জন্য এতটুকুও করতে পারি না নাকি?
মিসেস চৌধুরী- পারিস তো মা।
বলেই নীল এর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আর দু’জনেই সব খাবার ডাইনিং টেবিলে নিয়ে রাখে।
কিছুক্ষণ পর তোয়া আর মিস্টার চৌধুরী ব্রেকফাস্ট টেবিলে চলে আসে আর সবাই মিলে নাস্তা করে নীল বেশি কিছু খায় না কোনো রকম একটু খেয়ে কলেজের জন্য বেরোতে যাবে তখন মিস্টার চৌধুরী বললেন আজ নীলকে উনি কলেজে ড্রপ করবে। নীল ও খুশি হয়ে যায়।
তারপর সবাই বেরিয়ে পরে।
নীলকে কলেজে ড্রপ করে মিস্টার চৌধুরী অফিস চলে যায়।
কলেজ ছুটি হতেই নীল জলদি বাড়ি ফিরে আসতে চায়।
তানজু তানিয়া কাজল সবাই মিলে কোথাও যেতে চায় ফুচকা খেতে বা ক্যাফে তে কিন্তু নীল যেতে চায় না।
শরীর ভালো লাগছে না বলেই গাড়িতে উঠে পরে।
নীল কলেজের ক্লাস চলা কালিন নীল এর শরীর খারাপ হয়ে যায়। ক্লাসে তখন ম্যাডাম ছিলো নীল কিছু একটা বলে ওয়াশরুমের জন্য দৌড় দেয়।
২দিন পর আবার আজকে নীল এর ভমি হলো মাথা কেমন জানি জিম ধরে আছে মাথা ঘুরছে শরীর দূর্বল লাগছে। নীল নিজেকে সামলাতে না পেরে অন্য ক্লাস রুমের সামনে এসে মাথা ঘোরাচ্ছে বলে সেখানেই মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পরে।
সেখানের একজন মহিলা ম্যাডাম রুম থেকে বেরিয়ে আসে আর নীলকে সাথে নিয়ে অন্য রুমে বসায়।
তারপর ম্যাডাম নীল এর শরীর খারাপ হলো কিভাবে জিজ্ঞেস করে।
তারপর নীল সব বলে।
ম্যাডাম সাজেস্ট করে নীলকে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে।
নীল- ম্যাম কিন্তু আমি প্রেগনেন্ট নই!
ম্যাডাম- তুমি কি টেস্ট করেছিলে নীল?
নীল- না ম্যাম!
ম্যাডাম- আমি দুই বাচ্চার মা জানোই তো আর তোমার সব সিনটেম বলে দিচ্ছে তুমি প্রেগনেন্ট আর তোমার চোখ মুখ দেখেও তাই বোঝা যাচ্ছে আর তুৃমি বিবাহিত তাই বাড়ি যাওয়ার সময় একটা কিট নিয়ে যেও আর টেস্ট করে দেখো কেমন।
নীল- জি ম্যাম। থ্যাংক ইউ ম্যাম।
ম্যাডাম নীল এর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায় আর নীল ক্লাস রুমে চলে আসে।
গাড়ি চলছে একটা ফার্মেসীর সামনে দিয়ে গাড়ি যেতেই নীল গাড়ি থামাতে বলে।
নীল গাড়ি থেকে নেমে ম্যামের কথা অনুযায়ী একটা প্রেগনেন্সি কিট নিয়ে বাড়ি চলে আসে।
কিট ব্যাগে ঢুকাতে গিয়ে নীল নিজের অজান্তেই কিট রাস্তায় ওই ফার্মেসীর সামনে ফেলে চসে।
সারাদিনের ব্যস্ততায় নীল এর কথা ভুলে যায়।
রাতে যখন ভমি হয় তখন নীল ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই ওর কিটটার কথা মনে পরে পুরো ব্যাগ খুঁজে কোথাও কিট পেলো না।
নীল- কিট গেলো কোথায়? উফফ ওত তেরি আমি কিট টা ফেলে দিছি ধুতততত..!
এবার কালকে হাসপাতাল যেতে হবে ইশশ।
বলেই নীল বিছানার উপর সোজা হয়ে শুয়ে পরে।
নীল ওর দুই হাত পেটের উপর রেখে.!
নীল- সত্যিই কি তুমি আছো ম্যাম যা বলছে তাই কি সত্যি নাকি ভুল আমি কি বিনা কারণে খুশি হচ্ছি আর যদি তুমি না হও তখন না না আমাকে সিউর হতেই হবে।
নীল সারারাত পেটের উপর হাত রেখেই ঘুমিয়ে পরে।।
সকালে উঠেই নীল ব্রেকফাস্ট করে বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
সবাই জানে অভ্র আরও ২দিন পর আসবে কিন্তু ওইদিকে অভ্রদের কাজ শেষ হয়েগেছে বলে ওরা গাজীপুর ফিরে আসছে।
এই টা পুরোই সারপ্রাইজ।
নীল সকালে বের হয়েছে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েগেছে আর ফোন ও বন্ধ।
হসপিটালে এসে ২ঘন্টা সিরিয়ালে বসে থাকার পর নীল এর সিরিয়াল আসে। ডাক্তার দেখানোর পর ডাক্তার নীলকে এত্তো গুলা টেস্ট দেয়।
সবগুলো টেস্ট করতে করতে প্রায় ১ঘন্টা লাগে। আর রিপোর্ট আসবে আরও ৩/৪ ঘন্টা পর।
রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে কনফার্ম হয়েই আজ নীল বাড়িতে যাবে বলেই ঠিক করে নেয়।
চার ঘন্টা পর।
রিসিপশনে মিসেস নীলানঞ্জনা নীল নাম এনাউন্সমেন্ট হতেই নীল রিসিেশনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর ফাইল গুলো নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারের দিকে হাঁটছে।
নীল- ডাক্তার ম্যাম আসবো?
ডাক্তার- হ্যাঁ আসো।
নীল- ম্যাম রিপোর্ট গুলো.!
ডাক্তার- হ্যাঁ দাও…!
ডাক্তার ১০মিনিট ধরে সবগুলো রিপোর্ট সব গুলো ফাইল দেখছে তো দেখছেই।
ডাক্তারকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে নীল প্রচুর ভয় পাচ্ছে।
১০ মিনিট পর।
ডাক্তার- Congratulations.! মিসেস নীলাঞ্জনা নীল আপনি মা হতে চলেছেন আপনি প্রেগনেন্ট.!
নীল- সত্যি বলছেন ডাক্তার? (একগাল হাসি দিয়ে)
ডাক্তার- জি আর আপনার এখন অনেক সতর্ক থাকবে হবে বাচ্চার খেয়াল রাখবেন।
আর কিছু মেডিসিন লিখে দিয়েছি সেগুলো খাবেন সাথে কিছু টিপস ফলো করবেন আপনার বেবির জন্যই ভালো হবে।
নীল কোনো কিছুই ভাবতে পারছে না চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে এ যে কান্না কষ্টের নয় সুখের..!
ডাক্তার- নিজেকে সামলান।
নীল- আমি ঠিক আছি ডক্টর আমি মা হতে চলেছি,,, (দুই চোখ বেয়ে পানি পরছে আর মুখে ফুটে উঠেছে এক মিষ্টি হাসি তৃপ্তিময় হাসি)
ডাক্তার নীল এর হাতের উপর হাত রাখলেন আর বলেন এই রকম ফিলিংস সব মেয়ের হয় যখন সে এই গুড নিউজ টা শুনে।
নীল- জি ডক্টর..! (হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে)
ডক্টর তারপর কিভাবে চলাফেরা করতে হবে কি কি খেতে হবে কি কি খাওয়া যাবে না আরও অনেক কিছু নীলকে বুঝিয়ে বলে।
তারপর নীল হাসপাতাল থেকে মেডিসিন নিয়ে বেরিয়ে পরে। নীল আসার সময় গাড়ি নিয়ে আসেনি রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে…!
ওইদিকে অভ্র বাড়ি ফিরে যায়।
অভ্র বাড়িতে ঢুকেই চিৎকার দিয়ে বলে।
অভ্র- আ’ম বেক.!
অভ্র কে দেখে মিসেস চৌধুরী আর তোয়া দৌড়ে গিয়ে অভ্র জরিয়ে ধরে। সাথে হাজার টা প্রশ্ন করে দুই দিন পর আসার কথা আর আজকেই চলে আসলি যে।
অভ্র – কেন আমি যে আজকে আসছি তোমরা খুশি হওনি না-কি তাহলে আবারও চলে যাই দুইদিন পরেই আসবো।
তোয়া- আমরা তো এমনেই প্রশ্ন করছিলাম তাই বলে কি চলে যাবি নাকি?
অভ্র- আচ্ছা মা তুমি কেমন আছো বলো তো। (মিসেস চৌধুরীর দুই হাত ধরে)
মিসেস চৌধুরী- আমরা তো সবাই ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু?
অভ্র- কিন্তু কি?
.
.
#চলবে …..?
.
“হ্যাপি রিডিং”………
.
“কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ”……… ❌