#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_38
______
চৌধুরী হাউজ….!
অভ্রর দুই হাত ভর্তি মিষ্টির প্যাকেট দেখে সবাই জিজ্ঞেস করে এত মিষ্টি কেনো?
সাথে নীল সারাদিন কোথায় ছিলো নীলকে অভ্র কোথায় পেলো এই সেই জিজ্ঞেস করতে শুরু করলো।
মিসেস চৌধুরী- কিরে তোরা চুপ করে আছিস কেন? অভ্র বল নীলকে কোথায় পেলি?
মিস্টার চৌধুরী- আর এত মিষ্টি কেনো নিয়ে আসছিস?
তোয়া- কোনো সুখবর টবর আছে না-কি?
অভ্র একটা মিষ্টির প্যাকেট খুলে সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে দিতে দিতে বলল।
অভ্র- খুশির খবর কি বলছিস বল মস্ত বড় খুশির খবর।
মিসেস চৌধুরী- মানে কি?
অভ্র- মা মা আমি বাবা হতে চলেছি আর তুমি দাদু হতে চলেছো।
মিসেস চৌধুরী- কি বললি?
মিস্টার চৌধুরী আর তোয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর নীল এর সামনে এসে নীল কে জরিয়ে ধরে সাথে কপালে চুমু দেয় এত বড় গুড নিউজ দেওয়া জন্য.!
-ঃ আমরা নানা নানী হতে যাচ্ছি।
পেছন থেকে কাদের ভয়েস শুনে পেছনে ঘুরে তাকায় সবাই।
মিসেস ও মিস্টার সরকার!
নীল হাসি দিয়ে তাদের দিয়ে তাকিয়ে থাকে তারাও এসে মেয়েকে জরিয়ে ধরে সাথে কপালে চুমু দেয়।
নীল- আব্বু আম্মু তোমরা হঠাৎ..?
মিসেস সরকার- অভ্র বাবা কল দিয়ে ছিলো আর ওর ভয়েস শুনে আমাদের স্বাভাবিক লাগেনি তোর কোনো বিপদ হয়েছে কি-না দুশ্চিন্তা হচ্ছিল তাই চলে আসছি আর এসেই এত বড় গুড নিউজ শুনলাম আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর কাছে লাক্ষ লাক্ষ শুকরিয়া।
মিস্টার সরকার- আমার সেই ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটা আজ নিজেই মা হতে চলেছে আজ তো আমাদের খুশির সীমানা নেই।
তারপর সবাই হল রুমে বসে গল্প করছে আর মিষ্টি খাচ্ছে.!
২দিন পর থেকে।
এখন চৌধুরী হাউজের মহারানী মনে হচ্ছে নীল কে সবার টার্গেট শুধু নীল।
নীলকে কেউ কোনো কিছুই করতে দেয় না শুধু রেস্ট আর রেস্ট একটা সুস্থ মানুষ কত আর বেডে শুয়ে থাকতে পারে বলুন। অভ্রর কড়া আদেশ নীল রুম থেকে বেরোতে পারবে না দরকার হলে অভ্র নীলকে নিচে নিয়ে যাবে। যেমন কথা তেমন কাজ অভ্র নীলকে কোলে করে নিচে নিয়ে যায় আর কোলে করেই রুমে নিয়ে আসে হাঁটাহাটি করবে রুমে করো সিঁড়ি নামা যাবে না।
অভ্র নীল এর জন্য অফিসের কাজ বাড়ির অন্য একটা খালি রুমে সিফট করে নেয়।
সবসময় নীল এর পাশে থাকার জন্য নীল এর ছোটো থেকে ছোটো জিনিসের খেয়াল অভ্র রাখে কখন কি লাগবে কখন কোন জিনিস প্রয়োজন কখন কি মেডিসিন দিতে হবে।
অভ্র এখন আগের থেকেও বেশি নীল এর যত্ন নেয়। টাইমলি খেতে না চাইলে পেছনে পেছনে হেঁটে খাইয়ে দেয় চুল আঁচড়ে দেয় চুল বেনি করে দেয় তেল দিয়ে দেয়। ঘুম না আসলে কোলে তুলে নিয়ে রুমের মধ্যেই হাটাহাটি করে রাতে অভ্র ওর বুকের মধ্যে নীল এর মাথা নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দেয়।
মাঝে মাঝে অভ্র নীল কে গোসল ও করিয়ে দেয় 🙈 দু’জনে এক সাথে শাওয়ার ও নেয়। হিহিহি
এভাবেই নীল এর জীবন চলছে। কিছুটা বিরক্ত লাগলেও ভাবতেই নীল খুশি হয়ে যায় সবাই ওকে কত বেশি ভালোবাসে। আর বেশি অভ্র..!
সাত মাস পর আজ নীল এর সাধ….!
বাচ্চার সাত মাস তো সাধ…!
চৌধুরী হাউজ আবারও সাজানো হয়েছে গাজীপুরের নামি-দামি মানুষদের ইনভাইট করা হয়েছে সাথে পথও শিশু ও মানুষদের। দুই টা পেন্ডেল করা হয়েছে দুই শ্রেনির মানুষের জন্য কারণ গরীবের অহংকার নেই তারা তো নিষ্পাপ মনের মানুষ তারা সবার সাথেই মিশতে চায় কিন্তু বড়লোক রা তারা উল্টো গরীবদেরকে মানুষই মনে করে না আর সে খানে একই পেন্ডেলে খেতে দিলে যদি কোনো সিন ক্রিয়েট করে সে ভয়েই মিস্টার চৌধুরী দুইটা পেন্ডেল করেছেন সে চায় না তার জন্য কোনো গরীবের অপমান হোক।
এদিকে সাধের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। সবাই অনেক খুশি।
তোয়া গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে একটা ছেলের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছিলো।
এরই মধ্যে ওইদিক দিয়ে আসছে শুভ তানিয়া আকাশ কাজল ও তন্ময় শুভর সাথে ওর কাজিন শাওন ও আছে।
শাওন দেখতে পেলো তোয়া একটা ছেলের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে আর সেটা দেখে শাওনের মেজাজ গেলো বিগড়ে.!
ওরা সবাই ভেতরে চলে গেলে শাওন পেছন থেকে তোয়ার হাত ধরে তোয়াকে নিজের দিকে ঘুরায় আর এই সবের মানে জিজ্ঞেস করে।
তোয়া- আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে টাচ করার?
শাওন- আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড.! আর তুমি আমাকে আপনি আপনি করছো কেনো?
তোয়া- আহহ আহহ সরি ভুল হচ্ছে আপনার কোথাও
আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড না আপনি তো পাবলিক নষ্টা মেয়েদের নষ্টা বয়ফ্রেন্ড ছিহহ ভাবতেও গা ঘিনঘিন করে। (বলেই তোয়া পাশ কাটিয়ে চলে গেলো)
শাওন পেছন থেকে তোয়ার হাত ধরে অন্য দিকে টেনে নিয়ে গেলো।
তোয়া শাওনের হাত ছাড়িয়ে শাওনের গালে ঠাসসসস একটা চড় মেরে দেয়।
শাওন- একটা নয় ১০টা মারো আমি কিচ্ছু বলবো না। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাওয়ায় আমি বুঝতে পেরেছি আমি শুধুই তোমাকে ভালোবাসি আর কাউকে না আমি আমার কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত প্লিজ তোয়া আমাকে মাফ করে দাও আমি তোমার পায়ে ধরে বলছি প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।
তোয়া- সরি আপনি আমাকে মাফ করবেন আমার মন অত বড় না আমি আপনাকে ক্ষমা করতে পারবো না। এ চোখে আপনাকে অন্য একটা মেয়ের বিছানায় দেখার পরেও আপনাকে কিভাবে মাফ করে দিবো। আপনি মাফ করতেন আমাকে যদি আপনার জায়গায় আমি থাকতাম কখনো করতেন না। আমার কাছে ক্ষমা আশা করবেন না আর আপনার নোংরা চেহারা আমাকে কখনো দেখাবেন না।
শাওন চুপ করে মাটিতে বসে মাথা নিচু করে আছে। বলার যে তার কিছুই নেই।
তোয়া শাওনের সামনে থেকে চলে আসে।
শাওন মাটিতেই বসে আছে। পেছন থেকে কারো হাতের স্পর্শ পেলো কে জেনো ঘাড়ে হাত রেখেছে শাওন মাথা তুলে তাকালো।
শুভ- নিজের দোষে তোয়াকে হারালি তোয়া খুবই সাধারণ মেয়ে আমি ছোট্ট থেকেই তোয়াকে চিনি ও তোর জন্য পারফেক্ট ছিলো কিন্তু তুই অন্য মেয়েদের সাথে এতটাই ব্যস্ত ছিলি যে বুঝতেই পারিসনি তুই আসলে তোয়াকে ভালোবাসিস এখন সব হারিয়ে বুঝতে পারলি তুই শুধু তোয়াকেই ভালোবাসিস আমি তোদের সব কথাই শুনেছি তুই আমার ছোটো ভাই এই জন্য তোকে কিছু বলিনি তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে কষিয়ে থাপ্পড় মারতাম তুই আমার কাছে যেমন তোয়া ও আমার কাছে তেমন কোনো অংশে কম নয় তোয়া আমারই বেস্ট ফ্রেন্ড অভ্রর ছোটো বোন আর অভ্রর বোন আমারও বোন তুই তোয়ার সাথে কখনো কিছু করিসনি তোয়ার সাথে কখনো খারাপ কোনো কিছু করার চিন্তা ও তোর মাথায় আসেনি কারণ তুই তোয়ার দিকে সেই ভাবে কখনো তাকাসনি যেভাবে তুই অন্য মেয়েদের দিকে তাকাস কারণ কি জানিস কারণ তুই শুরু থেকেই মন থেকে তোয়াকে ভালোবাসতি কিন্তু বুঝতে পারিসনি আর এখন বুঝলি কিন্তু তোয়া বুঝলো না তোয়ার জায়গায় অন্য যেকোনো মেয়ে থাকলে এটাই করতো অভ্রর জান তোয়া আর অভ্র যদি এই ব্যাপারে কিচ্ছু জানতে পারে তাহলে তোকে আমি ওর হাত থেকে বাঁচাতে পারবো না জানিসই তো অভ্র শান্ত সৃষ্ট ভদ্র ছেলে কিন্তু রেগে গেলে বাঘের মতো ডেঞ্জারাস তাই তোর জন্যই ভালো হবে তোয়ার থেকে দূরে থাক।
শাওন শুভকে জরিয়ে ধরে।
শাওন- ভাই আমাকে লাস্ট বারের মতো ও একটা সুযোগ দিলো না তোয়া ও আমার মুখও দেখতে চায় না
ভাই আমি বাংলাদেশে আর থাকবো না আমি আমেরিকা ফেরত চলে যাবো। আমার ভালোবাসা আমি বুঝিনি ঠিকই কিন্তু এখন আমি ঠিকই বুঝতে পারছি আমি তোয়াকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমার লাইফের সবটুকু জুড়ে শুধু তোয়া আছে আর থাকবে আমি তোয়ার জায়গা কাউকে কখনো দেবে না সারাজীবন আমেরিকায় বসে তোয়ার স্মৃতি গুলো বুকে জরিয়ে জীবন পার করে দিবো। আমি যে তোয়াকে খুব বেশি ভালোবাসি।
শুভ- নিজেকে সামলা ভাই চল ভেতরে চল।
শাওন- আমি বাড়ি যাচ্ছি আর কালকের মধ্যেই আমেরিকা যাওয়ার ব্যবস্থা করছি আমাকে মাফ করে দিস ভাই,, আর আমার তোয়াকে দেখে রাখিস ওকে বলিস জেনো আমাকে কখনো ক্ষমা না করে।
চোখের জল মুছতে মুছতে চৌধুরী হাউজ থেকে চলে আসলো শাওন, তোয়া ওখানের টেবিলের পেছনে লুকিয়ে ছিলো আর ওদের সব কথা শুনেছে শাওন যেতেই তোয়া সেখান থেকে বেরিয়ে দৌঁড়ে রুমে চলে আসে রুমের দরজা ঠাস করে ধাক্কা দিয়ে বেডের উপর চিত হয়ে শুয়ে অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে।
কাঁদারই কথা ভালোবাসার মানুষ যত বড়ই অন্যায় করুক ভালোবাসা কখনো কমে না আর তাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া তার নিজের থেকে দূরে অনেক দূরে চলে যাওয়া খুব কষ্টের কলিজায় লাগে আঘাত টা বলে বোঝানো যাবে না।
দরজা খুলে কে জেনো রুমে ঢুকে গেলো আর দরজা হালকা চাপিয়ে দিলো।
বিছানার এক সাইডে বসে তোয়ার মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
তোয়া উঠে বসে পরে আর কাঁদতে থাকে।
তোয়া- শুভ ভাইয়া…… শুভকে তোয়া জরিয়ে ধরে আর কেঁদেই যাচ্ছে।
শুভ- কাঁদিস না পাগলী ও তো ওর ভুল বুঝতে পেরেছে তাই না বল আর শাওন জন্মেরপর থেকেই আমেরিকায় থাকে আর সেখানে এইসব খুব নরমাল আমাদের বাংলাদেশে এই সব নরমাল না আর ইসলামেও জায়েজ না কিন্তু শাওন বুঝতে পেরেছে শাওন শুধু তোকেই ভালোবাসে আর তুই তো সবই শুনলি কাল চলে যাবে। তুইও শাওনকো ভালোবাসিস ভালোবাসার মানুষকে ক্ষমা করে দিতে হয় তোয়া। শাওন আমার ভাই বলে বলছি না তুইও তো আমার বোন নিজের মনকে জিজ্ঞেস কর তুই কি চাস, শাওন চলে যাক না-কি সারাজীবন তোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক মন থেকে ভাববি হুম। আজ রাত পর্যন্তই টাইম আছে তোর কাছে। এখন কান্না কাটি বন্ধ কর আর নিচে চল।
তোয়া- শাওন…?
শুভ- চিন্তা করিস না তোর তানিয়া ভাবি শাওনকে আনতে গেছে। তানিয়াকে শাওন না করতে পারবে না ঠিক তানিয়া শাওনকে নিয়েই আসবে এখন একটু হাস আর নিচে চল।
তোয়া- হুমমমম..!
শাওন- শাওনের একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত তাই শোন কানে কানে….
তারপর দুইজনে মিলে প্লেন কষলো কিভাবে শাওনকে শায়েস্তা করা যায়।
তোয়া এখন একটু খুশি।
দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো। তারপর শুভর পিছু পিছু হাসতে হাসতে নিচে চলে এলো আর নিচে এসেই দেখে শাওন হল রুমের এক কোনায় দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে.!
তোয়া সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো।
তোয়া- Attention Please…!
.
.
#চলবে …..?
.
“আমার কিউট কিউট পাঠক ও পাঠিকারা তোমরা এখন বলে দাও কি করবো শাওন আর তোয়ার মিল দেবো নাকি বিচ্ছেদ…..”
“হ্যাপি রিডিং”………
.
“কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ”……… ❌