#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_৪২
______
ডাক্তার অভ্রর কাঁধে হাত দিয়ে অভ্রকে উঠিয়ে দাঁড় করালেন আর বললেন।
ডাক্তার- অভ্র নিজেকে সামলাও..! আর কেউ কথা বলা শুরু করলে তার কথা সম্পূর্ণ শুনতে হয় তার কথা শেষ হলে তারপরে রিয়েক্ট করতে হয়।
অভ্র এখনও কেঁদেই যাচ্ছে.!
ডাক্তার- আমি বলতে চেয়েছিলাম তোমার নীল রুমে বা কোথাও পরে গেছিলো কি না?
মিসেস চৌধুরী- হ্যাঁ আমরা যখন ওর রুমে যাই তখন নীল ফ্লোরে পরে চিৎকার করছিলো।
অভ্র- সব আমার দোষ আমি অফিস না গেলে আজ আমার নীল আমার কাছেই থাকতো.! সব দোষ আমার আমি অফিস না গেলে আজ নীল পরেও যেতো না। আর আমাকে ছেড়েও যেতো না।
ডাক্তার- অভ্র চুপ করো তুমি। আমি বলতে চাচ্ছিলাম নীল পরে গিয়ে হাতে ব্যাথা পায় নীল পরে যাওয়ার সময় ওর হাত দিয়ে ওর বাচ্চাদের প্রোটেক্ট করে যার ফলে নীলের এক হাতে বেশ আঘাত লাগে আমরা ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি আর নীলকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে রাখবেন ভাবি কমপক্ষে দুই দিন পর্যন্ত নীল এর কোলে বাচ্চাদের তেমন দেবেন না ওর হাতে কোনো রকম পেসার জেনো না পরে। ওর কোলে দিলেও আপনারা ধরে রাখবেন।
অভ্র- মানে বেড রেস্ট হাত.?
মিসেস চৌধুরী- কি বলছেন ভাই বুঝছি না তো?
ডাক্তার- নীল সম্পূর্ণ সুস্থ আছে আর ওকে কেবিনে সিফট করাও হয়েছে আধাঘন্টা পর তোমরা সবাই ওর সাথে দেখা করতে পারবে। আর হ্যাঁ অভ্র তোমার নীলকে আল্লাহ তোমার কাছ থেকে কেঁড়ে নেয়নি খুব বেশি ভালোবাসো নিজের জান পাখি কে তাই না যাও ২০২ নাম্বার কেবিনে গিয়ে নীল এর সাথে দেখা করে আসো যাও..!
অভ্র আবারও কেঁদে দেয়। এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে।
অভ্র- আমার জানপাখি আমার নীল ঠিক আছে আঙ্কেল?
ডাক্তার- হ্যাঁ সম্পূর্ণ সুস্থ আছে আর তোমার কাছেই আছে। ওর কাছে যাও গিয়ে দেখা করো শুধু খেয়াল রেখো হাতে জেনো কোনো রকম পেসার না পরে।
অভ্র কে শোনে কার কথা দিলো দৌঁড়।
ডাক্তার- অভ্র অভ্র.!
আকাশ- ওকে আর কেউ আটকাতে পারবে না।
সবাই অভ্রর দৌঁড় দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
বাচ্চা দু’টো এখন কান্না শুরু করে দেয়।
ওয়া ওয়া ওয়া..!
অভ্র ২০২ নাম্বার কেবিনে এসে ভেতরে ঢুকতে যাবে কিন্তু ঢুকতে পারছে না একটু আগের ঘটনা গুলো অভ্রর চোখে ভেসে উঠছে।
অভ্র চোখের জল মুছে নিজেকে সামলে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে। নীল সেন্সলেস হয়ে আছে সেন্স এখনো আসেনি বেডের উপর শুয়ে আছে।
অভ্র হাঁটতে হাঁটতে নীল এর পাশে চেয়ার টেনে বসে অভ্র নীল এর গালে হাত রাখে।
নীল আজ তো তুমি আমাকে মৃত্যুর মতো যন্ত্রণা দিয়েছিলে জানপাখি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো ভেবে আমি তো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমার তো পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো তুমি প্লিজ আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না। বলেই অভ্র নীল এর বুকের উপর মাথা রাখে আর কাঁদছে.!
হঠাৎ করেই অভ্র টের পায় ওর মাথার চুলেগুলো তে হাত বুলাচ্ছে।
অভ্র মাথা তুলে তাকায় আর দেখে নীল ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
অভ্র- নীল নীল তুমি চোখ মেলে তাকিয়েছো তোমার সেন্স আসছে নীল নীল.!
নীল- অভ্র শান্ত হও অভ্র আমি ঠিক আছি। কিন্তু তুমি আগে এটা বলো আমাদের মেয়েরা কোথায়?
অভ্র- মেয়েরা? তুমি কিভাবে জানলে মেয়েরা হয়েছে মানে মেয়ে হয়েছে.?
নীল- আমি জানতাম ৯মাসের আলট্রাস্নোগ্রাফি তে ডাক্তার বলেছিলো আমাদের জমজ দু’টি মেয়ে সন্তান হবে আর সেজন্যই তো সেদিনের তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমার মেয়ে চাই নাকি ছেলে.!
অভ্র- মানে তুমি আগে থেকে জানতে আর আমাকে বলোনি?
নীল- হুম হুম জানতাম.!
নীল- তুমি দেখেছো আমাদের মেয়েদেরকে কেমন হয়েছে ওরা? ওরা কোথায় কোলে নিয়েছো তুমি ওদেরকে বলো না।
দরজার সামনে থেকে।
মিসেস চৌধুরী ও মিসেস সরকার- এই তো তোর মেয়েরা.!
নীল- দরজার দিকে তাকিয়ে ওদেরকে ওর কাছে নিয়ে আসতে বলল।
অভ্র নীলকে ধরে বসিয়ে দেয়। আর উনারা নীল এর সামনে বাচ্চাদের ধরে।
নীল ওদের কে দুই হাতে নিয়ে দুই কোলে নেয় নিচ থেকে মিসেস চৌধুরী আর মিসের সরকার বাচ্চাদের ধরে যাতে নীল এর হাতে বেশি চাপ না লাগে।
নীল বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দেয় আর বাচ্চাদের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে।
নীল ডান হাতের মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল।
নীল- মাইশা..!
বাম হাতের মেয়ের দিকে তাকিয়ে.!
নীল- মাইরা.!
অভ্র নীল এর দুই চোখের মনি মাইশা ও মাইরা।
মিসেস চৌধুরী- ওও বাচ্চাদের নামও ঠিক করে ফেলেছিস আগে থেকেই।
নীল- হুমমম কেনো তোমাদের নাম পছন্দ হয় নাই।
সবাই- কেনো পছন্দ হবে না আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে আমাদের নীল নাম রেখেছে খুব সুন্দর নাম মাইশা মাইরা।
নীল- অভ্র তুমি ওদের কোলে নিয়েছো?
অভ্র- নিশ্চুপ.! (কি উত্তর দিবে অভ্র নিজেও জানে না কারণ অভ্র তো এখন পর্যন্ত ওদের দিকে তাকায়ওনি।)
অভ্র মাথা নিচু করে বসে আছে।
নীল- অভ্র কিছু বলছো না কেনো?
তোয়া- কি বলবে এখন ভাইয়া যা বলছিলো ওদের দুইজনকে নিয়ে।
নীল- কি বলছে তোমার ভাইয়া আমার মেয়েদেরকে নিয়ে।
অভ্র শুকনা ঢোক গিলছে।
তোয়া- থাক ভাবি ওইসব কথা।
নীল- তোয়া বলো বলতে বলছি.!
তারপর তোয়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নীলকে খুলে বলে।
নীল চোখ বড়বড় করে অভ্রর দিকে তাকায় আর অভ্রর ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।
নীল- অভ্র তুমি এরকম কি করে বলতে পারো ওরা তোমার মেয়ে আর তুমি ওদের বলছো ওরা তোমার লাইফের অভিশাপ ওদের চেহারাও কখনো দেখবে না ওদের মেয়ের পরিচয় দিবে না।
অভ্র- সরি নীল আমি ভাবছিলাম।
নীল- কি ভাবছিলে তুমি আমি মরে গেছি আর সেজন্য তুমি ওদের কে এইসব বলবে কারো মরা বাঁচার উপর কারো হাত থাকে না সব আল্লাহর ইচ্ছা অভ্র আমার কিছু হয়েগেলে ওদের সব থেকে বেশি প্রয়োজন হবে তোমার আর সেখানে যদি তুমি এমন করে বলো কিভাবে চলবে আর আজ যদি সত্যি সত্যি আমার কিছু হয়ে যেতো তাহলে তো তুমি সত্যি সত্যি ওদের একা করে লন্ডন চলে যেতে অভ্র তুমি এমন ভাবলে কি করে অভ্র।
মিসেস চৌধুরী- নীল মা শান্ত হো মা তোর একটু আগেই ডেলিভারি হয়েছে মা।
নীল- তুমি চলে যাবে তাই না আমার মেয়েদের নিজের পরিচয় দিবে না, তো চলে যাও কাল কেনো আজ ও এখনই চলে যাও আমি আমার মেয়েদের একা লালন পালন করতে পারবো আর তোমার পরিচয়ের দরকার হবে না আমি তোমাকে ছাড়াই ওদের নিজের পরিচয়ে বড় করবো তোমার সাহস হয় কি করে আমার বাচ্চাদের এমন বলার ওদের মা এখনো মরে যায়নি।
অভ্র এখন মাথা তুলে নীল এর দিকে তাকায়। অভ্র চেয়ার থেকে উঠে নীলকে জরিয়ে ধরে।
অভ্র- নীল প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও আমি তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে খেয়ে যাচ্ছিলো তখন আমার মাথা কাজ করছি না আর আমি যা তা বলে ফেলেছি প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ জানপাখি।
নীল- আমার সাথে কথা বলবে না।
অভ্র এক এক করে কেবিনে উপস্থিত সবার দিকে তাকায় কিন্তু সবার ফেস রিয়াকশন দেখে অভ্রর রাগ উঠে সবাই এখন অভ্রকে সাপোর্ট করবে কিন্তু না সবাই হাসছে।
নরমাল ডেলিভারিতে প্রসব হয়েছে তাই ৪ঘন্টা পর হাসপাতাল থেকে নীলকে রিলিজ করে দেয় সবাই নীলকে সহ বাচ্চাদের নিয়ে বাড়ি চলে আসে। চৌধুরী হাউজে তো মনে হচ্ছে আজ উৎসব।
বাচ্চাদের দেখতে প্রতিবেশীরা সবাই আশে।
সবাই একই কথা বলে পুরো বাপ মায়ের মতো হয়েছে।
নীল এখন পর্যন্ত অভ্রর সাথে একটা কথাও বলে না আর বাচ্চাদের ও দেখতেও দেয় না।
.
.
#চলবে …..?
(“গত পর্বে সবাই কমেন্টে বলছো নীলকে কেনো মারছি কিছু আপু ও ভাইয়ারা তো ইনবক্সেও বলছে আমি নাকি পঁচা 😒 আমি নীলকে মারি নাই.. এখন আপনাদের অভ্র যদি বেশি বুঝে তাতে আমার কি দোষ ডাক্তারের কথা সম্পূর্ণ শোনা দরকার ছিলো। কথা পুরো না শুনেই কান্না কাটি করলে আমার কি দোষ তোমরা বলো এখন সব দোষ অভ্রর😐…. “)
.
“হ্যাপি রিডিং”………
.
–রি-চেইক করা হয়নি ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
.
“কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ”……… ❌