#পবিত্র ভালোবাসার বন্ধন,সূচনা পর্ব
লেখক – আবির চৌধুরী
বিয়ের প্রথম রাতে স্ত্রীর ঘোমটা তুলতেই আমি চমকে উঠে বউয়ের থেকে দূরে সরে গেলাম। নিজের চোখকে আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা যে শেষে কিনা আমি একটা পতিতা মেয়ে কেই বিয়ে করলাম! মেয়েটার মুখ দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। যে মেয়ের সাথে অনেক পুরুষের মেলামেশা হয়েছে। সেই মেয়ের সাথেই আমার বিয়ে হলো ভাবতেই আমার খুব খারাপ লাগছে। বিয়ের আগেই আমার এই মেয়ের সাথে একবার সহবাস হয়েছে। তাও বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে এমন একটা কাজ আমাকে করতে হয়েছে। আর এটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম। হয়তো ভালোই হয়েছে না হলে তো আমি জানতেই পারতাম না যে আমার স্ত্রী একজন পতিত মেয়ে। আমারা ভাবতেই খারাপ লাগছে আমি আমার বন্ধুদের সামনে কোন মুখ নিয়ে যাবো। সবাই তো এখন আমাকে বলবে তুই একটা পতিতালয় মেয়ের জামাই। আব্বু আম্মুর চাপে বিয়েটা আমাকে করতে হয়েছে। বিয়ের আগে ঠিক করে বউ এর মুখ টাও দেখা হয়নি। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলাম। মেয়েটা চোখ বন্ধ করে বসে আছে। এখনও আমাকে দেখে নাই।
আমি এইবার মেয়েটার থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বললাম — তুমি! তুমি এখানে?
এইবার মেয়েটা চোখ খুলে আমার দিকে তাকাতেই সে যেনো আকাশ থেকে পড়ল। সে নিশ্চুপ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল এক দৃষ্টিতে। মেয়েটার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা।
— তুমি এই খানে কেন? তোমার তো অন্য কথাও থাকার কথা! আমার বাসায় কেন?
মেয়েটা নিশ্চুপ,,,, শুধু চোখ দিয়ে পানি ফেলছে।
— শোনো, আর যাইহোক আমি কখনও একটা পতিতা মেয়েকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবোনা। তুমি কখনও স্ত্রীর দাবী নিয়ে আমার কাছে আসবে না। আমি আমার মা বাবার জন্য এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। কিন্তু আমি জানতাম না যে আমার মা বাবা আমার জন্য এমন একটা মেয়ে ঠিল করে রাখবে৷
অনেক্ষন চুপ থাকার পরে মেয়েটা বলে উঠল — আপনার মা বাবার এতে কোনো দোষ নেই। আর আমাকে আপনি বিশ্বাস করুন আপনি একমাত্র মানুষ যে যার সাথে আমার সহবাস হয়েছে বিয়ের আগে।
— চুপ থাকো একদম, আর একটা মিথ্যা কথাও বলবেনা তুমি। আমি যানি তোমরা কেমন।সো আমাকে এসব বুঝাতে আসবেনা। নিজের যায়গায় থেকে কথা বলার চেষ্টা করবে। আমার কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসবে না। আর আমি তোমাকে কিছুদিনের মধ্যে ডিভোর্স দিয়ে দেবো। আমি পারবনা কোনো পতিতা মেয়ের সাথে একি ছাদের নিচে বসবাস করতে৷
— প্লিজ এমন করবেন না। আমি সত্যি কথা বলছি বিশ্বাস করুন আমাকে। আর আপনার মা বাবা আমাকে অনেক আশা নিয়ে আপনাদের বাসায় নিয়ে এসেছে। আমি আপনার থেকে তেমন কিছুই চাইনা শুধু আমাকে আপনার বাসার একটা কোণে থাকতে দিলেই হবে।
— আমার মা বাবার কথা তোমাকে ভাবতে হবে না। সেটা আমি দেখব। আর তোমার সাথে এক বিছানায় থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি রুমে থাকো আমি বাহিরে চলে যাচ্ছি।
এই কথা বলে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। আর বাহিরে চলে যাবো তখন অনুভব করতে পারলাম কেউ আমার পা দুটো জড়িয়ে ধরে আছে। আমি তাকিয়ে দেখি সেই পতিতা মেয়েটা।
— আমার পা ছেড়ে দাও।
— প্লিজ আপনি যাবেননা, এই ভাবে চলে গেলে সবাই খারাপ ভাব্বে আপনি খাটের উপরে ঘুমান আমি না হয় নিচে বিছানা করে শুয়ে থাকবো।
— তোমার মতো মেয়ের সাথে একি রুমে আমি থাকতে পারবোনা বললাম তো!
— প্লিজ আমি হাত জোড় করে আপনার কাছে মিনতি করছি। আপনি যাবেন না প্লিজ। না হলে সবাই আমাকে খারাপ ভাব্বে। আর আমাকে বিশ্বাস করুন আপনি আমার জীবনের প্রথম মানুষ যার কাছে আমার সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছি। আমি জানতাম না আপনার সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। না হলে আমি কখনও বিয়েতে রাজি হতাম না। আমি একটা পরিস্থিতির শিকার হয়ে এমন একটা কাজ করতে হয়েছে।
— এতো কিছু আমার জানার কোনো প্রয়োজন নেই। তোমার সাথে আমি এক রুমে থাকতে পারি তবে আমার কিছু শর্ত আছে।
— আপনি যা বলবেই আমি সব মেনে নিতে রাজি।
— ওকে, কখনও আমার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইতে আসবে না। আমার কোনো জিনিসে হাত দিতে পারবেনা। আমার কোনো কিছু নিয়ে কথা বলতে পারবেনা। আমি আমার ইচ্ছে মতেই চলব। আমার কোনো কিছু নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবে না।
— ঠিক আছে। আমি সব মানতে রাজি আছি। প্লিজ আমার একটা কথা রাখবেন আপনি?
— কি কথা? বলো!
— আপনি কাওকে বলবেন না ওই দিনের ঘটনা টা না হলে আমার আম্মু জানতে পারলে অনেক কষ্ট পাবে। তাকে হয়তো আর বাঁচাতে পারবোনা। আমার আম্মু অনেক অসুস্থ। আপনি শুধু আমার এই কথা টা রাখলেই হবে আমার আর কিছুই চাইনা আপনার কাছে।
— ঠিক আছে কাওকে বলব না। এখন তুমি ঘুমিয়ে যাও আমি আসছি।
— এতো রাতে কই জাবেন আপনি?
— একটু আগে কি বললাম? আমার কোনো কিছুতেই কথা বলতে আসবে না। আমার রুমে থাকতে দিয়েছি তার মানে এই নয় যে আমার স্ত্রীর অধিকার দিয়েছি। আর তোমাকে বলতে আমি বাদ্যও না।
— এতো রাতে বের হবেন্না প্লিজ। অনেক রাত হয়েছে।
মেয়েটার আধিক্ষেতা দেখে আমার শরীর জ্বলছে। কি আর করার আছে আমি গিয়ে খাটের উপরে শুয়ে পড়লাম।
— আমাকে একটা বালিশ আর একটা চাদর দিলেই হবে। আমার আর কিছু লাগবে না।
তারপর আমি ওর দিকে একটা চাদর আর বালিশ দিয়ে অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম।
এইবারের পরিচয় টা দিয়ে দেই। আমাদের গল্পের হিরো নিশান চৌধুরী। মা বাবার এক মাত্র ছেলে। খুব রাগী, রাগী হলে-ও মনটা তার খুব নরম। অল্পতেই রেগে যায়। যাকে বলে বদমেজাজী। বাবা তুহিন চৌধুরী। অনেক বড় ব্যাবসায়ী। মা রাবেয়া বেগম, একজন ডাক্তার। নিশান কে দেখলে যে কোনো মেয়ে ক্রাশ খাবে বড়লোক বাপের এক মাত্র ছেলে দেখতে কোনো দিন দিয়ে খারাপ না। গায়ের রঙ ফর্সা লম্বা ৫ফিট১০ ইঞ্চি। পড়াশোনা শেষ করে বেকার ঘুরছে। বাবার ব্যবসার দেখা শোনা করতে বলে কিন্তু সে এসব এখন করতে চায়না। সারাক্ষণ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েই দিন কাটাতে তার ভালো লাগে।
অন্যদিকে আমাদের গল্পের নায়িকা নীলা। নীলা ইন্টারেএ পরিক্ষা দেওয়ার পরে তার আর পড়াশোনা করা হলো। কারণ তার বাবা কিছুদিন পরেই রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। তারপর থেকে তারা মা মেয়ে এক সাথে থাকে। নীলাও দেখতে খারাপ না। বেশি ফর্সা না হলেও মুখে মায়াবী একটা টান আছে। যে কোনো ছেলের নজরে পড়বেই। লম্বাও বেশ ভালো।
এবার গল্পে মুল গল্পে ফিরে আসি। আমি অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে শুয়ে ভাবছি। এ আমার কার সাথে বিয়ে হলো! আমার মা বাবা আমার জন্য এ কোন মেয়েকে ঠিক করল! এসব ভাতেই আমার খুব খারাপ লাগছে। এসব ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
অন্যদিকে নীলা শুয়ে শুয়ে কান্না করছে। শব্দহীন কান্না। যে কান্নার কোনো শব্দ হয়না। শুধুই নিরবে চোখের পানি ফেলছে। সে বুঝতে গেছে সে কখনও নিশানের ভালোবাসা পাবেনা তবে সেও হাল ছাড়বেনা। এসব ভাবতে ভাবতে নীলাও ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে নিশানের আগেই ঘুম থেকে উঠে গেলো নীলা। তারপর নীলা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো আর নিশানকে ডাকতে শুরু করে দিল।
— উঠুন সকাল হয়ে গেছে নাস্তা করবেননা?
নীলা এই ভাবে ঈশানকে অনেক্ষন ডাকার পরে যখন কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিলনা তখন নীলা নিশানের গায়ে হাত দিয়ে নিশানকে ডাক দিল। তখন নিশান চোখ খুলে দেখে নীলা তার গায়ে হাত দিয়েছে৷
নিশান ঘুমঘুম চোখে তার গায়ের উপরে নীলার হাত দেখতে পেয়ে রেগে গিয়ে নীলার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল। সাথে সাথে নীলা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে চোখে পানি ফেলতে লাগলো।
— তোর সাহস তো কমনা আমার গায়ে হাত দিলি! তোকে আমার গায়ে হাত দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে?
নীলা নিশ্চুপ,,,,,
— শোন! নেক্সট টাইম আমাকে স্পর্শ করার আগে ভেবে নিবি ওকে? সকাল সকাল আমার মুড টাই নষ্ট করে দিল। বের হয়ে যাও আমার রুম থেকে। তোমার মুখ দেখলেও আমার দিন খারাপ যাবে।
তারপর নীলা আর কিছু না বলে চোখ মুছে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পরে,,,,
চলবে,,,,